জ্বলদর্চি

চোরাবালি /পুলককান্তি কর

চোরাবালি
পুলককান্তি কর 

১ 
চেনা ঢঙে একটা অচেনা নাম্বার থেকে দু'বার ফোন বেজে উঠতেই মায়ের থেকে একটু দুরত্ব বাড়িয়ে নিল মলি। নিশ্চয়ই রনির ফোন। হাজার বার তাকে সাবধান করেছে স্কুল থেকে ফেরার এই সময়টায় যেন ও ফোন না করে, মা সন্দেহ করবে। কিন্তু কথা শোনার বান্দাই নয় ওই ছৌঁড়াটা। ঠিক পাঁচ মিনিট বাদে আবার ফোন করবে, আজ বিকেলে দেখা করার জায়গাটা ফাইনাল করতে। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাড়ি ফেরা হবে না তার। কী করবে ভাবতে না ভাবতেই মা জিজ্ঞাসা করল, কার ফোন রে ? 
-- কী জানি, অচেনা নাস্বার। 
-- অচেনা নাম্বার থেকে তোর কাছে ফোন আসে কেন ? 
-- তার আমি কী জানি ! 
-- কী বলছে ফোনে ? 
-- শুনলে তো কেটে গেল। 
-- এবার ফোনটা এলে আমায় দিস তো। 
-- ঠিক আছে। একটু থেমে মলি আবার বলল, টিফিনে আজ কী করেছ মা ? 
-- মটরের ডাল করা আছে। বাড়ি গিয়ে একটু পরোটা ভেজে দেব। 
-- রোজ রোজ রুটি-পরোটা ভাল্লাগে ? দু'টো রোল কেনো না ! 
-- দু'টো কী হবে ? 
-- তোমার একটা, আমার একটা। 
-- না রে। আমার একটু অম্বল মত হয়েছে। এই তো ভাত খেয়ে উঠলাম। তুইও খাস না। বাইরের তেলেভাজা রোজ রোজ খাওয়া কি ভালো ? কালকে বরং বাড়িতে বানিয়ে দেব। 
-- না, মা। আজই আনো। আজই খেতে ইচ্ছে করছে আমার। 
অগত্যা মা একটু নিমরাজি হয়ে পাশের রোলের দোকানে যেতেই মলি পটাপট রনিকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিল। আজ বিকেল পাঁচটায় ঝিলটার পেছনে বাইক নিয়ে আসে যেন। লিখেই মেসেজ বক্স থেকে মেসেজটা ডিলিট করে দিয়ে মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। 
-- মা, রিক্সায় চলো না ! 
-- এইটুকু তো পথ৷ সারাদিন তো হাঁটিসই না। এইটুকু হেঁটে চল। 
-- স্কুলে কত পরিশ্রম হয় বলো তো ? তারপর কি আর হাঁটতে ভালো লাগে ? 
-- স্কুল কি আর আমরা করিনি ? আর নিজের চেহারাটাও তো দেখবি ! 
-- এইটুকু হাঁটলে ও কমবে না। ওই রিক্সা আসছে, ডাকি ? এই রিক্সা -- 
বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে দ্রুত কাপড় বদলে নিল মলি। একটা লেগ ইন আর নীল রঙের সুন্দর দেখতে একটা কুর্তি পরে নিল সে। এগরোলে কামড় বসিয়ে বলল, মা একটু শম্পার বাড়ি যাব। 
-- কেন, আজ মাস্টারমশাই আসবেন না ? 
-- না৷ 
-- কই, কিছু বলে যাননি তো ? 
-- আমাকে বলে গেছেন। 
-- তা, শম্পার বাড়ি যাবি কেন ?

-- নোটস নেওয়ার আছে৷ 
-- স্কুলে নিতে পারিস না ? 
-- তুমিও যেমন ! পারসোন্যাল নোট কেউ স্কুলে নিয়ে যায় ? অন্যরা দেখে নেবে না ? 
-- তাহলে তোকে দেবে কেন ? 
-- অত কৈফিয়ত তোমায় দিতে পারব না মা। সন্দেহ হলে ওকে ফোন করে জেনে নিও। 
-- তাহলে তোর নোটসও তুই ওকে দিস ? 
-- কী যে বলো না ! না দিলে এমনি এমনি আমায় দেবে ? তুমি হলে দিতে ? ফোঁস করে উঠল মলি। 
-- কিন্তু আজ মাস্টার মশাই আসবেন না যখন, একটু শপিং করতে গেলে তো হত! তোর জন্য একটা সালোয়ার-স্যুট কিনতে তোর বাবা টাকা রেখে গেছে৷ 
-- সালোয়ার নেব না মা। এবারের জন্মদিনে জিনস আর টপ নেব। 
-- ঠিক আছে৷ তাই নিয়ে আসি গে চল। 
-- না, আজ না। কাল যাব। 
-- কালকে তো তোর অঙ্কের মাস্টারমশাই আসবেন। 
-- সে আধঘণ্টা পরে আসতে বলে দিও। একদিন একটু কম পড়লে কী যাবে আসবে! মলি দ্রুত বেরিয়ে গেল। পার্কে গিয়ে দেখল, শম্পা আগে থাকতেই এসে একটা বেঞ্চে বসে আছে৷ জিজ্ঞাসা করল, কী রে কখন এলি? 
-- এই তো মিনিট পাঁচেক। তা আজ এখানে তোর কোন মহাপুরুষটি আসবেন ? আগেরটা না রানিং ? 
-- রানিং। তবে আজ এলে মালটাকে এমন ঝাড় দেব না, বুঝবে মজা ! 
-- কেন, কী করেছে সে ? 
-- আরে হাজার বার বলেছি, স্কুল থেকে ফেরার সময় মা সঙ্গে থাকে। ও ঠিক সেই সময়েই ফোন করবে। আজ মা তো ধরেই ফেলেছিল প্রায়। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি। 
-- বললে ও শোনে না কেন ? 
-- ও একটু ডেয়ার ডেভিল টাইপ। আগেরটার মতো আতুপাতু না। আমার অবশ্য এমনটাই ভালো লাগে। তা তোর বয়ফ্রেন্ডকে একবার নিয়ে আয় না এখানে। চোখের দেখাই তো দেখলাম না কোনওদিন। 
-- ও আসবে না রে। 
-- কেন, কেউ দেখে ফেলবে ? আচ্ছা  ভীতুরাম তো ! 
-- আমার সাথেই নিয়ম করে দেখা হয় না, কী আর বলব বল। 
-- এক কাজ কর না। রনিকে বলি কাল চারটে সিনেমার টিকিট কাটতে। ম্যাটিনি শো দেখে একটু সিটি সেন্টার ঘুরে আসব। তুই অভিজিৎকে বলে দে একটু ক্লাশ ম্যানেজ করে চলে আসতে। 
-- না রে। ও এসব একদম পছন্দ করে না। আমি বললে খুব রাগ করবে৷ 
-- তাহলে ওকে বাদ দে। তুই আমাদের সাথে চল। আমার আর একটা বয়ফ্রেণ্ড ছিল না – সুজয়? ও এখন ফাঁকা যাচ্ছে। ওকেও ডেকে নেব, তুই ওর সাথে ঘুরবি। 
-- না রে, আমি যাব না। 
-- কেন ? 
-- আমি ক্লাশ কাটতে পারব না। তাছাড়া অভিজিৎ জানলে রাগ করবে। 
-- তুই ওকে বলবি কেন ? 
-- বা রে! ওকে বলব না তো কাকে বলব ? 
-- শোন শম্পা, জীবন একটাই। এনজয় কর, মজা লোট। এই রকম আলুভাতে ছেলে নিয়ে তোর চলবে কী করে ? 
চুপ করে রইল শম্পা। সত্যি, তার কি ইচ্ছে করে না সপ্তাহে অন্তত দু'দিন অভির সাথে একটু ঘোরে, একটু গল্প করে ? কিন্তু ও এসব ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট। স্কুলে যাবার পথে ঘাটে কখনও সখনও দেখা হয় তাদের। যেদিন ওরা সবাই মিলে ওদের বাড়ি বেড়াতে যায় বা অভিরা ওদের বাড়ি আসে, সেদিনই যা একটু কথাবার্তা হয়। অভির বাবা আর শম্পার মা এক অফিসে কাজ করে। ওই থেকে বন্ধুত্ব। ওদের দুই পরিবারের সম্পর্ক ভালো। 

🍂

-- তোর মাকে বল না একটা মোবাইল কিনে দিতে। তোকে কোনও খবর দিতে হলে তোর বাড়িতে ফোন করতে হয়, ভাল্লাগে বল ? মলি বলল। 
-- বলেছিলাম। বলেছে ইলেভেনে উঠলে তবে দেবে। 
-- বাব্বা ! সে তো আরও তিন বছর। 
-- না কিনে দিলে কী করব বল ? 
-- বায়না ধরবি। বোঝাবি, রাস্তাঘাটে মোবাইলের ইউটিলিটি। এই করে তো আমারটা বাগিয়েছি। 
-- ও আমি পারব না রে। 
-- মর তাহলে ! অভিজিতের নিশ্চয়ই মোবাইল আছে ? 
-- না৷ 
-- সে কী রে ? ও তো ধেড়ে খোকা ! ওর নেই কেন ? 
-- ওর বাবা মা কিনে দিয়েছে৷ কিন্তু ও ব্যবহার করে না। 
-- তাহলে ওর সাথে কথাবার্তা কীভাবে হয় ? 
-- ও বলেছে, কোনও দরকার হলে বাড়ির ফোনে কথা বলতে। 
-- বাড়ির ফোনে কি সব কথা বলা যায় ? 
-- তাহলেই বোঝ, আমি কী নিয়ে চলি। 
-- ওকে নিয়ে চলতে তোকে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে ? বাজারে কি ছেলের অভাব ? লাগলে বল, হাতে আছে। 
-- জানিস তো, মাঝে মাঝে আমিও ভেবেছি ওকে ছেড়ে দেব। সব সময়ে জ্যাঠা জ্যাঠা ভাব। পড়াশুনো ঠিক মতো করছি কি না, রেজাল্ট খারাপ হল কেন … 
-- সে কী রে, তোর রেজাল্ট নিয়েও মাথা ব্যথা ? 
-- আমার বাবা-মায়ের থেকেও বেশি। দেখ, আমি তো ক্লাশে স্ট্যান্ড-ফ্যান্ড করি না। মোটামুটি পাশ করলেই খুশি। কোনও সাবজেক্টে একটু আধটু কম নাম্বার পেলে বাবা মা তেমন কিছু বলে না। কিন্তু ওর তড়পানি যদি দেখতিস || 
-- কেন রে, তোকে লেডি বিদ্যাসাগর বানাবে নাকি ? 
-- আসলে ও পড়াশুনোয় খুব ভালো তো ! মাধ্যমিকে ও বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিল। 
-- তাহলে তো তোকে ও বই এর পোকা করে ছাড়বে। ভেবে দেখ, এখনও সময় আছে৷ 
-- ভেবেছি রে। অনেক বার ভেবেছি দেখা হলেও আর কথা বলব না, যেচে যেচে ফোন করব না। কিন্তু এসব করে তিন চার দিনও আমি থাকতে পারিনি। কে যেন জোর করে আমাকে ফোনের কাছে নিয়ে যায়। ওকে বাদ দিয়ে আমি নিজেকে ভাবতে পারি না মলি। 
-- বুঝেছি। তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দাঁড়া, আমি একটা দারুণ জায়গায় তোকে নিয়ে যাব। দেখবি জীবনে কত মজা, কত ফান ! সারা জীবন বাধ্য খুকি সেজে থেকে কী পাবি ? লোকে বলবে ভালো মেয়ে, এই তো ? 
-- তোর বুঝি এসব শুনতে ভালো লাগে না ? 
-- দুর ! কেমন ন্যাকা, ন্যাকা লাগে। আচ্ছা শোন না, আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি। রনি এসে গেছে৷ 
-- কই ? 
-- ওই যে, বাইকটা পার্ক করছে৷ তুই একটু বোস। আমি একটু চক্কর দিয়ে আসি, তারপর তোর সাথে আলাপ করিয়ে দেব। 
-- না রে। আমি বরং যাই। 
-- সে কী রে! তুই ওর বাইকে চড়বি না ? বাইকে চড়ার দারুণ মজা কিন্তু ! আচ্ছা, এক কাজ কর। তুই আমার সাথে চল। আগে তুই বিলের চারপাশটা বাইকে চড়ে ঘুরে নে, তারপর না হয় আমি যাব। 
-- না রে মলি। মায়ের অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেল। আমি বাড়ি যাই।
-- তোর মা তো আর তোর পেছনে ট্যাকস ট্যাকস করে না। তোর ভয় কী ? 
-- ভয়ের জন্য না। তাছাড়া মাস্টার মশাই আসবেন। আজ চলি বরং। 
-- ঠিক আছে। কাল স্কুলে দেখা হবে। কালকে সব গল্প বলব।

 
  ২ 

-- হ্যালো, অনির্বাণ ঘোষের বাড়ি এটা ? 
-- হ্যাঁ। আপনি কে কথা বলছেন ? 
-- আমি পার্কস্ট্রিট থানা থেকে বলছি। মিস্টার ঘোষকে একটু ফোনটা দিন তো। 
-- উনি তো বাড়ি নেই। 
-- কোথায় গেছেন ? 
-- অফিসের কাজে দিল্লি গেছেন। কাল ফিরবেন। কী হয়েছে বলবেন কাইন্ডলি ? 
-- আপনি কে বলছেন ? 
-- আমি মিসেস ঘোষ। 
-- আপনাদের মেয়ের নাম অনুমিতি ঘোষ ? 
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ। কী হয়েছে মলির? আ্যক্সিডেন্ট ? ব্যাকুল শোনাল তাঁর গলা। 
-- না, না। ওসব নয়। ও এখন থানায় আছে। ইমিডিয়েটলি আপনি আসুন। 
-- থানায় কেন ? কী করেছে সে ? 
-- আজ পুলিশ একটা বাড়িতে রেড করেছিল। সেখানে অনুমিতি, ওর বয়েসী আর একটি মেয়ে ও চারটি ছেলেকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে৷ 
-- আমি এখনই আসছি স্যর। 

দৌড়ে ট্যাক্সি ধরে থানায় এলেন মিসেস ঘোষ। নির্ঘাত ওই শম্পার বুদ্ধি এসব। আজ ওর মা থানায় আসুক। দেবেন দু'কথা শুনিয়ে। হন্তদন্ত হয়ে ওসির ঘরে ঢুকলেন তিনি। 

-- কী ব্যাপার ? 
-- স্যর, আমি অনুমিতির মা। বলে মলির দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি৷ 
-- বসুন ওই চেয়ারটায়। একটু থেমে ওসি বললেন, আপনি কী করেন ? 
-- হাউস ওয়াইফ। 
-- আপনার হাজব্যান্ড কী করেন ? 
-- ও ব্যাঙেক চাকরি করে৷ 
-- কোন পোস্টে ? 
-- ম্যানেজার। 
-- আপনার মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে ? 
-- এইট। 
-- মেয়ে পড়াশুনায় কেমন ? 
-- ভালোই। স্কুলে প্রথম দশে থাকে। 
-- আপনি সারাদিন বাড়িতে থাকেন, মেয়ের দিকে নজর রাখতে পারেন না ? 
-- স্যর, আমি তো সারাদিনই ওর সাথে থাকি। ওকে স্কুলে নিয়ে যাই, স্কুল থেকে নিয়ে আসি। টিউশানের টিচার এলেও আমি ঘরেই থাকি। ও খুব ভালো মেয়ে স্যর। ওর এই মতিভ্রম হল কী করে বুঝতেই পারছি না। নির্ঘাত ওই মেয়েটির বদ সঙ্গই ওকে নষ্ট করেছে স্যর। বলে মলির পাশের মেয়েটিকে ইশারায় দেখালেন তিনি৷ 
-- আপনি মেয়েটিকে চেনেন ? 
-- চোখে দেখিনি। তবে মেয়ের মুখেই শুনেছি, ওর নাম শম্পা। ওদের সঙ্গে পড়ে। হাজার বার বলেছি, যার তার সাথে মিশিস না। তা স্কুল থেকে এসে প্রায়দিনই ও ওর বাড়ি যেত। 
-- কিন্তু ওর নাম তো ববি। শম্পা নয়। 
-- দেখুন ওর ডাক নাম হয়তো ববি। 
-- না, ওর ডাক নাম, ভালো নাম ওই একটাই। ওর বাবা মা এসে আইডেন্টিফাই করেছে। আচ্ছা, আপনার মেয়ে কি খুব জেদি ? 
-- না স্যর। ও একেবারেই জেদি নয়। ওই কিশোর বয়সে যতটুকু হয়, ততটুকুই। 
-- ও বায়নাক্কা করলে আপনারা সঙ্গে সঙ্গে তা পূরণ করেন ? 
-- আমাদের এক মেয়ে তো। বুঝতেই পারছেন খুব আদরে মানুষ হয়েছে। আমি যদিও স্ট্রিক্ট, তবু ওর বাবার একটু এই স্বভাব আছে স্যর। মেয়ে কিছু চাইলেই সাথে সাথে কিনে দেয়। 
-- মেয়েকে মোবাইল দিয়েছেন কেন ? 
-- বাইরে ওকে স্ট্রেস করতে সুবিধে হয়। তাছাড়া নানান দায় দরকারে মোবাইল তো সত্যি কাজে লাগে স্যর। 
-- আপনি স্কুলে সাথে করে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন – তবে আর প্রয়োজনটা কী!
-- যেদিন ওদের স্কুল আগে ছুটি হয় বা যেদিন ওর ফিরতে দেরি হয়, আমাকে আগে থাকতে জানিয়ে দিতে পারে। 
-- ফোনে কোনও উল্টোপাল্টা কল বা মেসেজ আসতে দেখেছেন ? 
-- কোনওদিনই না। আমি মাঝে মাঝেই ওর কল লগ এবং মেসেজ বক্স চেক করি৷ 
-- ঠিক আছে। একটা মুচলেকা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে যান। ওর অল্প বয়সের কথা বিবেচনা করে এবারে কোনও কেস দিচ্ছি না। তবে দেখবেন, ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়। 
-- স্যর, একটা অনুরোধ রাখবেন কাইন্ডলি? দেখবেন যেন টিভি বা খবরের কাগজে ওর ছবিটবি না বের হয়। আমরা তবে আর মুখ দেখাতে পারব না স্যর। কেঁদে ফেললেন মিসেস ঘোষ। 
-- ও আপনি চিন্তা করবেন না৷ সে খেয়াল আমাদেরও আছে। 
রাস্তায় বেরিয়ে মলিকে একবার কড়া চোখে জরিপ করে নিয়েই ধমকে উঠলেন মিসেস ঘোষ। ‘অসভ্য মেয়ে, লজ্জা করে না তোর। এর পর পাড়ায় মুখ দেখাব কী করে ?’ 
-- রাস্তাঘাটে বেরিও না। তাহলেই কেউ মুখ দেখতে পাবে না তোমার ! 
-- ফের মুখে মুখে কথা ? যত বড় হচ্ছ, অসভ্যতা ততই বেড়ে যাচ্ছে তোমার ! 
-- তুমি জানতে চাইলে, তাই উত্তর দিলাম। এরপর জিজ্ঞাসা করলে না হয় চুপ করে থাকব। 

আর সহ্য হল না মিসেস ঘোষের। রাস্তার মাঝেই সপাটে চড় কষিয়ে দিলেন মেয়ের গালে। 

-- রাস্তার মাঝে সিন করো না মা। বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু বাড়ি যাব না তোমার সাথে। 
-- ঠিক আছে৷ বাড়ি চল। তোর বাবা আসুক। দেখাচ্ছি মজা। 
-- বাপি এলে কিন্তু তুমি এসব কিছুই বলবে না। 
-- কেন ? এতবড় কথা গোপন করব কেন ? 
-- অনেক কথা তুমি গোপন করো বলে ! 
-- কী কথা গোপন করি তোর বাবাকে ? 
-- এই, বাপি অফিসের ট্যুরে বাইরে গেলে দুপুরবেলা কারা তোমার কাছে আসে, আমাকে স্কুল থেকে আনতে যাবার আগে তুমি কোথায় যাও - এইসব। 
-- কী, কী বললি ? কে বলেছে তোকে এসব কথা ? 
-- পর্ণা। ওর আর টুসীর মা যখন এসব কথা বলাবলি করছিল, ও শুনেছে। 

ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন মিসেস ঘোষ। আত্মজাকে এসব কথার কী জবাব দেবেন তিনি। কোনও ক্রমে শুধু বললেন, মিথ্যে কথা ! তারপর একটা ফাঁকা ট্যাক্সিকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, পালপাড়া যাবে ?
আরও পড়ুন 
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

Post a Comment

0 Comments