জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /তাপস বিশ্বাস

গুচ্ছ কবিতা 
তাপস বিশ্বাস


ভাঙার কারিগর

গড়ার কোনও কারিগর নই
মোরা শুধু ভাঙতেই পারি,
অবিরত ভেঙেই চলেছি
বিধাতার গড়া সুন্দর এই পৃথিবী।

শৈশব ভাঙছি, কৈশোর ভাঙছি, যৌবন ভাঙছি
অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধার হৃদয় ভাঙছি!
জীবন কবিতা ভাঙছি, হৃদয় গল্প ভাঙছি
স্মৃতির উপন্যাস ভাঙছি―
মোরা শুধু ভাঙতেই শিখেছি!

প্রতিটা বাক্যের শব্দ ভাঙছি
প্রতিটা শব্দের বর্ণ ভাঙছি
প্রতিটা বর্ণের হৃদয় ভাঙছি
ভেঙে-ভেঙে সব মিলিয়ে দিচ্ছি শূন্যতেই!

মানবিক বোধ ভাঙছি, বোধের গরিমা ভাঙছি
হৃদয়ের প্রেম ভাঙছি, প্রেমের বাঁধন ভাঙছি
অন্তরের বিশ্বাস ভাঙছি, বিশ্বাসের ঘর ভাঙছি
সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর ওই সীমারেখা ভাঙছি!

যুদ্ধ চলছে―
হৃদয় ভুবনের যুদ্ধ
অবিরত মৃত্যু মিছিল―
অম্বরে-সমীরণে পোড়া বারুদের গন্ধ,
গোটা ভুবনের এই হৃদয়-জগৎটা
কেন মোরা সুন্দর রূপে গড়তে পারিনে!



অচেনা মুখ

প্রতিটা প্রেমের শেষ একটা রেখাঙ্কন থাকে
শেষ একটা কথা থাকে, শেষ একটা দেখা থাকে
আমারও তেমন ছিল বুঝি!

সেদিন জৈষ্ঠ্যের আগুন খরা আকাশ
বাতাসে বইছিল প্রেমের বহ্নিশিখা।
কথা হল, শেষ কথা; দূরভাষে
যে কথা কেউ কোনওদিন বলেনি―
আগুন আর বাতাসের ফুলকি ঝরা কথা!

সেদিন দেখা হয়েছিল; প্রেম নদীর শেষ বাঁকে
শেষ বেলার; শেষ অপরাহ্নের দেখা।
দূরত্বের একটা ব্যবধান ছিল চেহারার চোখে-মুখে,
হৃদয়ের অনেক না বলা কথা ছিল
না বলা কবিতার সব ভাষা ছিল―
কিছুই বলতে পারিনি মুখে, 
দৃষ্টিপথে শুধু একপলক দেখেছি
স্নিগ্ধ চাঁদের মুখে আগুন ঝরা বাতাস!
পুড়ে গেছে হৃদয়ের না বলা সব কথা
ঝলসে গেছে হৃদয় কবিতার না বলা সব ভাষা!

পেরিয়ে এসেছি হাজার বছরের পাহাড়ি ইতিহাস
কথা আর দেখা হয়নি আজও দু'জনার,
তবু স্মৃতিরা সব ভিড় করে, তাড়া করে ফেরে 
হৃদয় অসুখে, গভীর কালো সব নিশীথে!

ঘুম ভাঙলেই দু'চোখে দেখি
মুখোশের আড়ালে আরেকটা মুখ,
চেনা-চেনা মনে হয়, তবু যেন ভীষণ অচেনা।
কার মুখ, জানো তুমি
রাত্রের আকাশে শ্রাবণী পূর্ণিমাচাঁদ?

🍂

অকালমৃত্যু

আমরা সকলে দুর্দিনে ছুটে আসি বেসরকারি নামিদামি হাসপাতালে
উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য।
সত্যি কি সুস্থ-বিকশিত-মানবিক পরিষেবা পাই সকলে?

প্রতিটা হাসপাতালের উপর-নীচে, অলিগলির চতুরপার্শে 
শুধু চোখ ধাঁধানো বৃষ্টিঝরা সাতরঙা রামধনু রঙের সব রঙ লাগানো,
নিশিতে ফাগুনের পূর্ণিমাচাঁদের মায়াবী সব রংবাহারি আলো
দিবানিশি শুধু হাতছানি দেয়―
কিন্তু অন্দরে অমাবস্যার ঘনঘোর কালো এক রাত্রি,
অদ্ভুত নিগূঢ় কালো এক আঁধারে ঢাকা―

মুমূর্ষু রুগী প্রাণ হাতে করে ছুটে আসে তীব্র যন্ত্রণার উপশমে
নব্য এক প্রাণের তরে,
কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নতুন প্রাণ ফিরে পায়ও বটে,
কিন্তু প্রতিটা রুগীর পরিবারের অর্থনৈতিক প্রাণের হয় অকালমৃত্যু!



 চিতার অনল

হে বঙ্গবধূ,
কোথায় পালাবে?
কোনও পথ নেই আর;
অলিগলি সব পথ অবরুদ্ধ!

―ওই শ্মশানেই পুড়তে হবে
চিতার অনলে জ্বলে-পুড়ে-পুড়ে―
যেমন করে সর্বদা পুড়েছিল অবোলা বঙ্গের বধূ,
যেমন করে আজও সে সর্বত্র তীব্র দহনে পোড়ে!

কোমল মাটি পুড়ে ইট হয়
ইট পুড়ে-পুড়ে হয় ঝামা,
হাতুড়ির ঘায়ে কিছুতেই সে-ঝামা আর ভাঙে না—
জীবনের কোনও আগুনে সে আর পোড়ে না;
আমরণ চিতার অনলে পুড়ে-পুড়ে খাঁটি...



 হৃদ্ দর্পণ

এই পৃথিবীর বুকে প্রখর রোদ
অবিরত পুড়ছে মাটি, পুড়ছে পিঞ্জরে হৃদয়
সেই হৃদয়ে তুমি আমার কল্প জগৎ।

এই জগতে তুমি চিন্ময়ী হতে মৃন্ময়ী 
জীবন মৃত্তিকার জননী হতে হৃদ-প্রেমী―
টুপটাপ বৃষ্টির মতো ঝরে পড় কাব্য কাননে,
বর্ণ-শব্দ-বাক্য, কমা-হাইফেন-দাড়িতে তোমাকেই গড়ি―
কী অপরূপ রূপের 'কবিতা' তুমি!
জলছবি হয়ে ধরা দাও হৃদ্ দর্পণে,
তোমাকে নিয়েই আমার স্বপ্নময় এক জগৎ
সুখের ঘর।


শহুরে রোদ্দুর

জীবন্ত বলেই
অবিরত পুড়ছি 
গ্রীষ্মের তীব্র অনলে!

কোথাও জলকণা নেই—
আকাশে কিংবা বাতাসে
নেই কোথাও প্রাণকণা—
নদীতে কিংবা নদে।

যতদূর দু'চোখের দৃষ্টি
শুধু চোখ ঝলসানো শহুরে রোদ্দুর―
গ্রামেও পড়েছে তার ছায়া,
কোথাও বঙ্গহৃদে সবুজতা নেই,
কোথাও বটবৃক্ষের শীতলতা নেই!

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

1 Comments