জ্বলদর্চি

World Music Day /A Tribute To Musicians /তনুশ্রী ভট্টাচার্য

World Music Day
A Tribute To Musicians

তনুশ্রী ভট্টাচার্য


ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে। আমরা বাংলায় বলছি বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। যদি সুর দিবস বা বাদ্যযন্ত্র দিবস বলি ভুল হবে?  সে যাই হোক- গীতিকার সুরকার আর গায়ক বা গায়িকার ত্রিবেণী সঙ্গমেই তো সংগীতের সৃষ্টি, কিন্তু তাও কি ঠিক ?বাদ্যযন্ত্রীরা কি অপ্রধান? স্রোতের বাইরে? তারাই তো আসল সুরের ঢেউ টা তোলেন, তাই না? তবে আজকের দিনটা মিউজিক দিবসই থাক। মিউজিকের চতুরঙ্গ।  আমরা জানতে চাই মিউজিক কার-- আর ডি বর্মন না সলিল চৌধুরী? শচীন কর্তা না নৌসাদ?নচিকেতা ঘোষ না রবিন চট্টোপাধ্যায়?  গৌরী প্রসন্ন মজুমদার না অনল চট্টোপাধ্যায়?হেমন্তের সুরে না মান্নার সুরে ? জিৎ না অনুপম। দেবজ্যোতি মিশ্র  বা শান্তনু মৈত্র না কি এ আর রহমান ! তালিকা দীর্ঘ না করেই সমস্ত মিউজিক কম্পোজারের প্রতি আজ শ্রদ্ধা জানাই। একবার এক দেশের কিছু বাদ্যযন্ত্রী সেতুর রেলিং বাজিয়ে সুর সৃষ্টি করেছিল।   আমাদের হাওড়া ব্রিজের ওপরে উঠেও ওইভাবে বাজনা বাজিয়ে সুর তোলার প্রস্তাব এসেছিল। বিক্রম ঘোষ ত হাতা,খুন্তি পেট,পিঠ ফোলাগাল,চওড়া কপাল ---সবই বাজাচ্ছে এখন। সুর উঠছে নামছে ,এটাই শেষ কথা,তাই নয় কি? দক্ষিণ ভারতে আমাদের তবলার কতরকমফের যে আছে ,আর কী উৎকৃষ্টই যে সে তাল বাদ্য ,যিনি উপভোগ করেছেন তিনিই জানেন। আসলে সুর তাল লয়ের ছন্দবদ্ধ মেল বন্ধন হলেই তো সুরের মায়াজাল তৈরি হয়। চলন্ত রেলগাড়িরও কিন্তু একটা লয় থাকে। কোকিলের মধুর স্বরে হোক বা    কাঠঠোকরার    ঠোকরানো বা কুবো পাখির কুবকুব ডাক  হোক-------প্রকৃতির নিজস্ব সুর তাল লয় ছন্দ ত আছেই। রোম্যান্টিক কবি জন কীটস  ত ঘাসফড়িং আর ঝিঁঝিঁর ডাকেও সুর খুঁজেছেন। তবেই না তিনি সৌন্দর্যের উপাসক! শিলংয়ের একটি প্রতিষ্ঠান এক হাজার শিল্পীকে নিয়ে সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর বসিয়েছিল । বেস্ট চয়েস নো ডাউট।

এই দুঃসহ গরমে  জীবন যেন বড্ড পানসে লাগছে।  মহামারী এলো গেলো।  কারা কারা যেন মাঝে মাঝে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। মেরুতে বরফ গলল,সমুদ্র কেঁপে উঠল,কলকাতা পঞ্চাশ ডিগ্রী ছুঁল,গঙ্গার তলায় রেলগাড়ি ছুটল,ধ্বস নামল,ট্রেন বেলাইন হলো  ভোট হলো জোট হলো--দুনিয়া রসাতলে গেল!!!  লাগাম ছাড়া দূষণ । পরিবেশ ও মনন---কে শুদ্ধ করবে ?কে শুদ্ধ করে? হ্যাঁ,করে সঙ্গীত। করে মিউজিক। বেসুরো জীবনকে সুরে টেনে আনে। কী দুখে বা কী সুখে! পুরুলিয়ার মেঠো সুর বা  পাহাড়ীয়া সুর, বাউল হোক বা ভাটিয়ালী --সবই জীবন অন্তর্গত। প্রসন্ন বা বিষণ্ণ প্রান্তরে পাক খেয়ে জীবনকেই খোঁজে।---আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয় /বাঁশী নিয়ে আয়/হাসি নিয়ে আয়--------------বাকী টা গেয়ে উঠুন।

🍂

বিসমিল্লার সানাই,রবিশঙ্করজীর সেতার, জাকির হোসেনের তবলা,হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি শিবকুমার শর্মার সন্তুর ----পারে দূষিত মনকে শুদ্ধ স্নান করাতে,মৃত্যুর বিষাদকে অতিন্দ্রীয় করাতে,ধ্বস্ত মনকে শক্তি সাহস অথবা কিঞ্চিৎ আশার আলো মাখাতে বা আনন্দের প্রলেপ দিতে।যদি একবার ঐ সুরসমুদ্রের ঢেউয়ে একটু হলেও ভিজে ওঠে মন তবে নিশ্চিদ্র আঁধারেও আশার রূপোলি রেখা ফুটে ওঠে ।সঙ্গীতের জয় সেখানেই। কালের অতীত। তাই ত বেঠোফেন আজো অমর।তাঁর সেভেন্থ এইটথ,নাইন্থ সিম্ফনি র আশ্চর্য মাধুর্য হৃদয়ের তন্ত্রী আর মস্তিস্কের কোষ --+দুটোকেই শিক্ষিত করে তোলে ,শুধু আচ্ছন্ন করে না।মোৎজার্টের অপেরায় আজো সঙ্গীত পিপাসু  মানুষ বুঁদ হয়ে আছে। জন লেনন, পিট সিগার,জাস্টিন বিবার দুনিয়াকে  সেবা করে যাচ্ছে।এখনো। সঙ্গীত দিয়ে ।বব ডিলান নোবেল পেলেন সঙ্গীত ও সুর রচনার জন্য।ভি জি যোগ ,দুর্বাদল চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা অতি নিরস মানুষকেও নাড়িয়ে দেয়। ভি বালসারার মত মিউজিক কম্পোজার আর কি জন্মাবে বা সত্যজিৎ রায়ের মতো মিউজিক ডিরেক্টর? হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার ডাক পড়তো রাষ্ট্রপতি ভবনে বাঁশি শুনিয়ে আসার জন্য ।  যদি আজকের রাষ্ট্রপ্রধানরা  একটু গানবাজনা শুনতেন , গা ধা করতেন। কী যে হোত!!!কিছু একটা হতো। এতটা "আমি আমি "অস্মিতা টা অন্তত কাটত। সঙ্গীত ত আসলে সমর্পণ শেখায়।বিনয় শেখায়। যাক্ ।থাক ওসব কথা।

বরং আমরাই বিনত হই। আজ তাঁদের প্রতি বিনত হওয়ার দিন। আমাদের অতি পরিচিত ফিল্ম ডিরেক্টর কৌশিক গাঙ্গুলীর পিতা সুনীল গাঙ্গুলীর ইলেকট্রিক গিটারে নজরুল গীতির মত কঠিন সুরের কারুকার্য ছিল অনায়াস এবং সাবলীল।কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা গানটির সুর   যেন চোখের সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠত। রাধাকান্ত নন্দী বা চন্দ্রকান্ত নন্দী আলি হোসেন, আসগার হোসেন পঙ্কজ মল্লিক না থাকলে মহালয়া এত আকর্ষণীয় হতো না । তাঁরা চিরকালের প্রণম্য। সমস্ত শিল্পী স্বীকার করেন সলিল চৌধুরী একজনই জন্মায়। শুধু "কোন এক গাঁয়ের বধূ"র জন্যই গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া উচিত তাঁর। আজকের দিনটা তো তাকেই উৎসর্গ করা যায়। রবীন্দ্রনাথের পর  একজন টোটাল মিউজিক কম্পোজার বলতে এই খেয়ালী বাঙালীমানুষটির স্থান সর্বাগ্রে।  বর্তমানের সমস্ত বাদ্যযন্ত্রী কে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি কবীর  সুমন কে মাপা বা বোঝার মত প্রতিভা বিরল । ঠিক কতগুলো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে তিনি  জানেন তা নিয়ে ক্যুইজ হতে পারে।পিট সিগার তাঁর গীটারটি সুমনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন-- এটা নোবেলের সমান সম্মান। অধুনালুপ্ত ভূমিব্যান্ডের কুশলীদের প্রতিভা শুধু গান গাওয়ায় নয় বাদ্যযন্ত্রের  অভিনবত্বে প্রকাশিত হতো। অন্বেষা দত্ত গুপ্তর কন্ঠে দেবজ্যোতি মিশ্রের সুরে একটা টি ভি  সিরিয়ালের টাইটেল সং   সিরিয়াল দেখার আগ্রহটা বাড়িয়ে দেয়।ক্যান্সারজয়ী সুপমা অনুপমা স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত  বা ইমন চক্রবর্তী শ্রেয়া ঘোষাল  সঙ্গীতকে সেই স্বর্গীয় সুষমায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। এঁদের কন্ঠ শোনার জন্য ও দীক্ষিত হতে হয়। মিউজিক থেরাপী দিয়ে চলছে  রোগীর সুশ্রুষা। 
সুরের সাধনা কঠিনতম। আদনান স্বামী র কীবোর্ড বাজানো  শুধু চোখে দেখা আর কানে শোনার জন্যই মনে হয় সাধনা করতে হয়। পিয়ানো এ্যকোর্ডিয়ানে বা কি বোর্ডে সম্মাননীয় প্রতাপ বসুর নাম চোখ বুজে বলা যায়। জি বাংলার বাদ্যযন্ত্রীরা সত্যিই গুণী শিল্পী।


ভিনরাজ্যের এক যুবকের ভাড়ার গাড়িতে উঠেছি। সে চালিয়ে দিল সন্ধ্যা মুখার্জির মায়াবতী মেঘের তন্দ্রা--- চমকে উঠেও  ধাতস্থ হলাম তার উত্তর শুনে। ভাষা জানে না শুধু সুরের টানেই  সে শোনে গানটা আর তার যাত্রীদেরও শোনায়। সূরমাতা লতা, সুরসম্রাজ্ঞী আশা,সুমনকল্যাণপুর গীতাদত্ত,কিশোর কুমার মহম্মদ রফি  বাণীজয়রাম ---বলা না বলা  ---সব সঙ্গীত শিল্পীকেই আজ দিনটি ঊৎসর্গ করে গান শোনার দিন। 
  সুর টান সুখটান ও বটে।
মাত্রই কয়েকদিন আগে সুরকন্যা অলকা ইয়াগ্নিক শ্রবণবিপর্যয়ে পড়েছেন।  ওনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আজকের এই বিশেষ দিনে।

আজ আষাঢ়ের প্রারম্ভিক বর্ষায়  মন ভরুক বৃষ্টিসঙ্গীতে।  ঝিরিঝিরি ঝিমঝিম ঝমঝম  টপটপ টিপটিপ । মেঘ কি একজন মিউজিক কম্পোজার?

মেঘের কথাই যদি এলো তবে তো সেই মেঘবর্ণ কৃষ্ণকানাইয়া বাদ যায় কি করে?

শুধু একটা মোহন বাঁশি। ছয় রাগ ৩৬ রাগিনী। কুপোকাত হলো ১৬ হাজার গোপিনী।
 আজ মিউজিক ডে তে সেই বংশীধারীই তো হিরো।
  অলটাইম গ্রেট। 
  আসুন মিউজিক শুনি।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করুন। 👇

Post a Comment

2 Comments

  1. খুব সুন্দর লেখা। সুখপাঠ্য লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
    সিদ্ধার্থ সাঁতরা

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা। সুখপাঠ্য লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
    সিদ্ধার্থ সাঁতরা

    ReplyDelete