জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন /পর্ব ১৬/ সারারাত জ্বলেছে নিবিড়

ভাঙা আয়নার মন 
পর্ব ১৬

 সারারাত জ্বলেছে নিবিড় 

       
 পুজো এলে সারা দিনমান ভরে এদিক সেদিক আলাদা এক গন্ধে ভাসে বাতাস। বাগানে ঝাঁকড়া হয়ে ওঠা শিউলি গাছদুটোয় কোত্থেকে যে এতো ফুল থই থই করে আর রাতভর শিশির জলে ভিজে ভিজে ভোরবেলা মাটিতে বিছিয়ে দেয় নিজেদের। সন্ধে হলেই তো হাওয়া তার  উলোঝুলো জামায় পরে নেয় হাসনুহানা,কামিনীর ঘন সৌরভ আর রাত্তিরে পাকা রাস্তার ধারে ছাতিমের ঝাঁঝালো সুবাস এমন ভারি লাগে যে বেশিক্ষণ তার তলায় দাঁড়িয়ে থাকলে নিঃশ্বাসও ভারি হয়ে আসে।ঝিনি অবশ্য ফুল টুল কুড়োতে আর যায় না। তবু সে টের পায়, না চাইতেই গন্ধরা পায় পায় ঘুরছে বাতাসের। এবং তার।
       এক একদিন সন্ধের দিকেই হাওয়া এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে যেন সব ভয় ঢাকা চাপা দিয়ে রুবিদির ধুনুচির ধুঁয়োয় সে সেঁকে নিতে পারে হাত পা।তারাবাতি ভেবে পাট কাঠি জ্বেলে ঘুরপাক দিতে চায় তাদের দাওয়া।যেন বাংলাদেশ থেকে আগের মতোই  এসে বিজয়া দশমীর জন্য নাড়ু গড়ছে দিদুন,নারকেলের ছাঁচ তুলছে আর গন্ধে মউ মউ করছে পাকঘর।দেদার হাওয়ায় তার ইচ্ছে যায আমোদ করে সবাই।উঠোনে চাঁদ জ্বেলে ফের ক'ভাইবোন মিলে ঘুরপাক খায়। গুড়মাখা ঢ‍্যাপের খই নেয় কোঁচড় ভরে।
       বিদ্যুৎহীন তাদের গ্ৰামে চাঁদ উঠলেই পাড়া পড়শিরা হাঁটাহাঁটি শুরু করে পাকা রাস্তা ধরে।ও বাড়ি থেকে সন্নেসী কাকা,হরু মামারা রাস্তায় বেরুলো তো কঞ্চির গেট ঠেলে সুধা মাইমা, বিজু বৌদি,অবিয়েতো হারু পিসিরা গোল হয়ে দাঁড়ালো।কালভার্টে বসে কেউ কেউ।পাড়ার বড় দিদিরা ক্যালভার্টের ঝুঁকে দেখে নয়ানজুলির জল। বিকেলে ঝড়ু মামা দোর পেতেছে জলে। ওপর থেকে যতটা সম্ভব মুণ্ডু বাড়িয়ে মণি টেনি খোকনরা  দোরে মাছ দেখার চেষ্টা করে।       
      বাড়ির শাড়ি জামা বা ন্যাতানো সালোয়ার কামিজ পরে কল্পাদি,ভোদিদি, সুবিদিরাও বেরিয়ে আসে।জোছনায় সেসব কাপড়ও এতো অন্যরকম দেখায় যে দূর থেকে মনে হয় ছাতিমের গন্ধে নেশা করছে ওরা।
       হয় না এমন ম্যাজিক? হঠাৎ করেই ফিরে আসবে তাদের বাবা।নতুন শাড়ি জামা নিয়ে বাবার ডাকাডাকি শুনে বেশ হেসে উঠবে মা?
      যখন ভোরবেলা ধানবতী মাঠ কুয়াশার দুধে ভেসে যায় আর কাছে দূরে সব বাড়িতে যা দেবী সর্বভূতেষু বাজতে শুরু করে আর চোখ খুললেই রূপং দেহি জয়ং দেহি ভোর উঠে বসে শক্ত তোষকের বিছানায়।মাইকে বীরেন ভদ্র আলে কালেই তো ঘুরে  আসে পুজোগন্ডার দিনে।
🍂
       ছোট পুকুরের জলে  শাদা নাল ফুল টুকটুক করে মাথা তোলে।রুবিদি সেই শাপলা তুলে এনে চচ্চড়ি বা টক রাঁধে। ফুলগুলো আধমরা হয়ে চোখ বোজে রান্নাঘরের মেঝেয়। আগে হলে জলের গেলাসে বা বাটিতে শাপলা রেখে দিতো সে। দেখতো রাত হলেই আবার চোখ খোলে ওরা। 
     বচ্ছরকার দিনে এবারেও নিশ্চয়ই  শিউলির পুরনো ছায়া হাতে  হাটখোলায় হ‍্যাজাকের আলো উঁচু  করে দাঁড়াবে তাদের গ্ৰামের নিচু পুজো মন্ডপ।
      কাঁসাভরনের মতো মাজাঘসা রোদ্দুর উঠলেও শরতের দুপুর ফুরিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি আর ঝুপ করে নেমে আসে মনখারাপ বিকেল।পুজোর ছুটি শুরু হয়েছে তাদের।মহুলকে নিয়ে হেম আর ছোট্ট ঝুমকে নিয়ে ছোট এসেছে পুজোর ক'দিন। 
       উকিলের  অনেক খরচ জানিস,মাকে বলেছি পুজোয় জামা কিনতে হবে না।দাদামণির কথায় সে জিজ্ঞেস করে উকিলের খরচ কী দানি? বাপিকে যে জেলের বাইরে বার করে আনবে তাকে বলে উকিল। তাকে টাকা দিতে হয় তো।মার কাছে  জামা কেনার টাকা নেই। আমারও জামা লাগবে না দানি। জামা ফামা কে চায়?ছোড়দা বলল,বাপি ফিরলেই হবে ।
    হেম অবশ্য তাদের তিনজনের জামা নিয়ে এল। কিন্তু দাদারা  কেউ ঠাকুর দেখতে যাবে না ঠিক করেছে।ঝিনিরও আজকাল কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।মা বাড়িতে থাকলে মা'র গায়ের কাছে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।
         ছুটির দিন হলেও মা গম্ভীর  মুখে বেরিয়ে গেছে সাত সকালে। এতো কম কথা বলে মা আজকাল।থমথমে  তার মুখে তাকিয়ে কোথায় যাচ্ছ,কখন ফিরবে এসব কথা জিজ্ঞেস করতেও  ভয় লাগে। 
      পুকুরে চান করতে গিয়ে ছোট মাটি তুলে এনে মহুল আর ঝুমের জন্য পুতুল বানিয়েছিল। কোনটা নিবি ঝিনি?রোদে শুকিয়ে তাদের শাড়ি পরাতে পরাতে ছোট জিজ্ঞেস করে। লাগবে না বলে সে জানলার তাকে চড়ে বসেছিল চুপচাপ।রাত তত হয়নি।লাস্ট বাস চলে গেছে নাকি? ছোটকে জিজ্ঞেস করবে ভাবছিল। লাস্ট বাস চলে যাওয়া মানে মা আজ আর ফিরবে না।
          অরু,মিতু, ঝিনিইই শিগগির আয় ;দেখে যা কে এসেছে,পঞ্চমীর সন্ধে রাতের গোড়ায়  রাঙা মেসোর হাঁকডাকে বাইরে এসে হকচকিয়ে গেল তারা সবাই।শাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে মেসোর সঙ্গে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসছে তাদের বাবা।ঝিনির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেও ঝিনি ছুটে যেতে পারল না। কতদূর থেকে যেন অন্য কোন আকাশ থেকে অচেনা কেউ হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে।বারান্দার সিঁড়ির তিনটে ধাপ আর উঠোনের কয়েক পা দূরত্ব ছায়াপথের মতো সময়ের বহু যোজন দূরে সরে গেছে আর তার পা দুখানাও  মেঝেতে পেরেক ঠুকে গেঁথে দিয়েছে কেউ। দাদারা দৌড়ে বাপির কাঁধ ধরে ঝুলে পড়ল। বাপিও দাদাদের আঁকড়ে ধরে আদর করছিল।
        একখানা সাদামাটা খড়কে ডুরে শাড়ি পরে কালো হ্যান্ডব্যাগ হাতে মাও হাসতে হাসতে উঠে এল বারান্দায়।মা  তাহলে বাপিকেই আনতে গিয়েছিল। কলকাতা থেকে রাঙা মেসোও গেছিলো।হেমও জানতো।আবার যদি শেষ মুহূর্তে আশাভঙ্গ হয় তাই নাকি কাউকে বলেনি।কী হলো ঝিনি,যাও বাবার কাছে।মা আস্তে পিঠে ঠেলা দিল। ওকে ছেড়ে দাও বিনু। জোর করোনা; বাপি বলল বোধহয় একটু সময় লাগবে ওর।
        উজ্জ্বল জলের ফোয়ারা খুলে যাওয়ার মতো মা,ছোটমাসি,হেম,দাদারা,রুবিদি সবাই একসঙ্গে  কথা বলছে। হাসছে অকারণ।কেউ কারো কথা শুনছে না। অবশ্য দরকারও হচ্ছে না। রাঙা মেসো এর ফাঁকে কখন হাটখোলা চলে গেছে।গরম জিলিপি, রসগোল্লা আর হাঁসের ডিম কিনে এনেছে মেসো। 
     হেম এসে বাপির মুখে রসগোল্লা ভরে দিয়ে প্রণাম করল। সবাই মিষ্টি খেল ইচ্ছে মতো। নাম নাম ঘাড় থেকে। তিষ্ঠোতে দে মানুষটাকে।মার ধমক কানেই গেল না দাদাদের। উঠোনে দৌড়োদৌড়ি করছিল ওরা। চেঁচামেচি করে হাত তালি দিচ্ছিল। দুতিন পাক দৌড়ে এসেই আবার জড়িয়ে ধরছিল তাদের বাবাকে।
    আমি শ্রীকৃষ্ণ এই আমার সুদর্শন চক্র বলে আঙুলের ডগায় জিলিপি ভরে উঠোনে লাফ দিতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ল মিতু।লাগেনি মোটেও বলে তক্ষুনি উঠে ধুলো ঝেড়ে হাসতে লাগল সবার সাথে এবং জিলিপির ঠোঙায় তক্ষুনি ছোঁ মারল।
     বিনু চা করো দেখি বাপি স্নান করে কাচা জামাকাপড় পরে মাকে বলল। বারান্দার তক্তপোষে বসেছিল ঝিনি। আমার ঝিনুক মা কি রাগ করেছে নাকি? বাপি এসে আস্তে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। চুপ করে থাকল সে কিছুক্ষন।ফুলে ফুলে উঠল বুক আর খুব জোরে আঁকড়ে ধরল সে বাবার হাত। শেষমেষ না পেরে কেঁদে উঠল। ছোটদের অবুঝ কোনো কান্না না। বড়দের গভীর  হাহাকারের যে কান্না সে গিলে ফেলেছিল সেই রাতে।সবার সামনে থেকে যা লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন। মার কাপড় মুখে গুঁজে রাতে দেওয়ালের দিকে মুখ করে কেবল ফোঁপাতো কেননা কাঁদতেও যেন তার ভয় করত। যেন শুরু করলে সে আর থামতে পারবে না।
     মমতা ভরা হাতদুখানা জড়িয়ে আজ নির্ভয়ে সে জানান দিতে পারে কষ্ট তার।যে হাত সব চাইতে ভরসার। সারা পৃথিবীর ভয় হঠিয়ে দেয় নিমেষে; সব অশ্রু মুছে দেয় যে হাত। তার ছোট্ট জগতের সব চে' গভীর জায়গাটুকু যে জুড়ে থাকে;সমস্ত আশ্চর্য সমস্ত ভালো যে হাতে ধরে  চিনিয়ে দেয় অথচ অচেনা এক রাত্তিরে সে হারিয়ে ফেলেছিল হাত দুটো!
      বোধহয় তাইই সে সর্বস্ব দিয়ে আঁকড়ে থাকে বাবার হাত যেন ছাড়লেই পালিয়ে যাবে এমন কোথাও যেখানে ঝিনি পৌঁছতে পারবে না।ভয় নেই কোনো ভয় নেই কোত্থাও যাব না আর।তোমাদের কাউকে ছেড়ে কক্ষনো যাব না।বাপি তাকে কোলে তুলে নিল।কি করে তাদের বাবা বুঝতে পারল ঝিনি বলতে চায় কী?কারণ বাপিইতো সব জানে ।  সব'চে বেশি জানে তাকে। মা ধমক দিতে এলো না,কেউ কিচ্ছু বললো না তাকে, বাবাকে আঁকড়ে অনেক কেঁদে সে শান্ত হলো।
      চা জুড়িয়ে গেছিল কখন। নতুন করে চা এনে  মা বারান্দায় এসে দেখল বাপির ঘাড়ে ঝুলে ঝিনি কিসব বকবক করছে ঠিক আগের মতোই আর বাপি মাথা নেড়ে ঠিক, একদম ঠিক বলে তাতে সায় দিচ্ছে। থামবি তুই,ঝিনুক রাণী কলকলানী নাম ঘাড় থেকে নাম। জামাইবাবুকে রেস্ট নিতে দে।ছোট মাসি এসে বলল। 
      তুই থাম। অঞ্জনা না খঞ্জনা!দেখছেন জামাইবাবু আস্পদ্দাটা দেখছেন?সেজদি আর আমার নাম ধরে ডাকে ,তুই তোকারি করে আবার সে ভ্যাঙ্গায়! আহা অঞ্জু,নাম তো ডাকার জন্যই এটা বুঝলি না? হ ' বোঝলাম!আপনে তো বাপসোহাগী মাইয়ার জইন্য কইবেনই ছোট মাসি লম্বা বিনুনি দুলিয়ে হাত পা নেড়ে মজার ভঙ্গি করে হাসে।
    কোত্থেকে ছোড়দা এসে বলে এই ঝিনি নাম বলছি আমিও ঘাড়ে চড়বো।নামবো না। পাঁচশো বার নামবি। আহ্ মিতু তুমি এসে আমার কোলে বোসো না।অরুও এসে বাবার কোল ঘেঁষে বসে। ঘাড়ে চড়তে না পেরে ঝিনিকে জিভ ভেংচিয়ে মিতু বাবার কোলে বসে আর ঝিনি মাথা নেড়ে বলে আ্যঙ্গাও ভ্যাঙ্গাও মরা গরুর ঠ্যাঙ খাও। ছি ঝিনুক মা পচা কথা বলতে নেই। খেয়েছে মন্টু বিড়ি বকুনি, খেয়েছে! পুরনো নাম ধরে ছোড়দামণি হাততালি দেয়। সকলের কথা চেঁচামেচিতে গাছগাছালি সমেত বাড়িটা  আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল আবার ।     
      হেলেঞ্চা আর আলু ভাতে একসাথে কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে মাখা, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বেগুন পোড়া,ও বেলার পুঁটি মাছ ভাজা,ডেঙো ডাঁটা দিয়ে মুসুর ডাল আর নারকেলের দুধ দিয়ে হেম হাঁসের ডিম রান্না করেছিল। রাতে হিঞ্চে শাক করলি?মার কথায় , আলু বেশি শাক অল্প দিয়ে মেখেছি; জামাইবাবু বড্ড ভালবাসে বলে হাসল হেম।ডিম রান্না হলে মা সেদ্ধ ডিম নুন হলুদ মেখে অল্প ভেজে তোলে। তারপর সুতো দিয়ে কেটে দু আধখানা করে কুসুম আর শাদা অংশে একটা লবঙ্গ গেঁথে দেয় যাতে কাটা কুসুম ছাড়িয়ে না যায় শাদা থেকে।আজ কিন্তু ডিম কাটা হয়নি। দাদামণির সামনে বুড়ো আঙুল নেড়ে নেড়ে ছোড়দা লাফাচ্ছিল আজ হংস ডিম্ব কেয়া মজা আজ গোটা ডিম!কেয়া মজা! 
      ছোড়দামণি,কাল সকালে শিউলি কুড়োতে যাবি? বাপি ওঠার আগেই আমারা কুড়িয়ে আনব বেশ অনেক ফুল।আলবাৎ যাব। তোর চাইতে একঝুড়ি বেশি কুড়োবো হাঁদাই কটকটি! ছোড়দা তার মাথায় হালকা চাটি দিলেও ঝিনি হাসে।
       রান্না ঘরের মেঝেতে সবাই মিলে  খেতে বসেছে।মা,হেম দিচ্ছে।রুবিদি লেবু কাটছে। গন্ধরাজ আর কাগজি দুই গাছেই লেবু হয়েছে খুব। মহুল আর ঝুমকে ঘুম পাড়িয়ে ছোটমাসিও খাচ্ছিল মন দিয়ে। অঞ্জু ডাঁটা নিবি?দেখনা এত দিয়েছে হেমটা,খেতে পারছি না আর।ছোট তো সাদাসিধে সরল মনে বাপির বাড়িয়ে ধরা ডাঁটাখানা চিবিয়েই খাইছে খাইছে উরেম্মা রে বলে লাফিয়ে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে জল খেয়ে হিক্কা তুলে একাকার।ডাঁটা আর লংকার তফাতও বুঝিস না অঞ্জু! রাঙা মেসো তার পিঠ থাবড়াতে লাগল।জিলিপি মুখে দে, আস্তে চিবিয়ে জল খা বললো হেম আর সবাই মিলে এমন হোহো হাহা শুরু করল বাড়িও ফুরফুরে মেজাজে মাথা নেড়ে হাসতে শুরু করলো।আর সারারাত শিশিরে ভিজে নিবিড় হয়ে উঠল শিউলি ফুলেরা। শান্ত জলোচ্ছ্বাসের মতো ঝাঁক বেঁধে ধুসর নীলাভ সেই তারাদল রাতভর ঝরে পড়তে লাগল ছোট তিনটে ছেলেমেয়ের ঘুম আর স্বপ্ন জুড়ে...

Post a Comment

0 Comments