জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি/পর্ব ৩৫ / চিত্রা ভট্টাচার্য্য

জলকন্যা ভেনিস

বার্লিনের ডায়েরি 
পর্ব ৩৫    
চিত্রা ভট্টাচার্য্য 

 জলকন্যা ভেনিস 

নীলদিগন্তে ঢেউ তুলে সাদা বলাকার ঝাঁক উড়ে চলেছিল মহাশূন্যের প্রান্তে। এক নবীন বসন্তের সুর বেজেছিল পথভোলা পথিকের অচেনা যাত্রাপথে। শ্রীময়ীর সুদূরের পিয়াসী মন তারই সাথে ভাবনার ডানা মেলে মুহূর্তে চলে গিয়েছে ইতিহাসের রাজপথ পেরিয়ে ইতালীর রোম্যান্টিক নগরী জলকন্যা ভেনিসের সাগর কিনারে । সেই মুহূর্তে বেড়ানোর আনন্দে ওর উদাসী বাউল মন ভেসে চলেছিল কল্পনার কুসুমবনে। সে কোনো মন ভোলানো কল্পলোকের গল্প  বা রূপকথার দেশ নয় বাস্তবের সবজেনীল সাগর জলের মাঝে স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার দেশ।'  মিলানো দেখার পরে অদ্রিজার প্ল্যান অনুযায়ী ওরা এবার যাবে আড্রিয়াটিক সাগরের মাঝে গড়ে ওঠা আস্ত এক আধুনিক শহর ভেনিসের সন্ধানে। যে শহরের রাস্তাঘাট সরকারী কার্যালয় ,প্রাসাদ ঘর বাড়ি স্কুল কলেজ এমনকি হসপিটাল  যা কিছু সব শুধুই ভাসমান  লবণাক্ত সাগরের জলের ওপর। যে শহরের খ্যাতির আসন জগৎ জুড়ে প্রতিষ্ঠিত সেই ইতালীর ভালোবাসার ভেনিৎসিয়ায়।

 বাস্তবের এই সমৃদ্ধশালী ভেনিস নগরটির সাথে শ্রীর কিশোরী মনের প্রথম পরিচয় হয়েছিল স্কুল কলেজে ,নাট্যকার শেক্সপিয়ারের ''মার্চেন্ট অফ ভেনিস''  পড়তে গিয়ে। গল্পের নায়িকা অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও মেধার অধিকারী পোর্শিয়া ছিলেন বিলাস ব্যসনে পূর্ণ ভেনিৎসিয়ার কন্যা।  শ্রী একান্তে বসে তখন কল্পনার রং তুলিতে এ শহরটির কত ছবি এঁকেছিল । তার ও অনেক আগে স্মৃতির রাজপথ পেরিয়ে  শ্রীর বালিকা মনের স্বপ্নে ভীড় জমিয়েছিল ভেনিসের রাজকুমার মার্কোপোলো। এক অসম সাহসী নায়ক ,ইতালীয়ান ভূপর্যটক বণিক তথা দেশ আবিস্কারক। বহুশতাব্দী আগে যাঁদের রোমাঞ্চকর সমুদ্র যাত্রা --নতুন পথের সন্ধানে উত্তাল অজানার অভিযানে পাড়ি দিয়ে  লবণাক্ত সাগরের বুকে জাহাজে ভেসে দুঃসাহসী ভ্রমনে আত্মউৎসর্গ করেছিলেন।  
আর্কটিক সাগর

 পরবর্তীকালে হলিউড বলিউডের সিনেমায় হাজারো গানের ছবির শুটিংয়ে ভেনিস শহরের অপরূপ সৌন্দর্য শ্রী কে মুগ্ধ করেছে। প্রতিনিয়ত চোখের ওপর ভেসে উঠেছে এক সুসজ্জিত দৃষ্টিনন্দন পরিপূর্ন রোমান্টিক শহরের প্রতিচ্ছবি।সিনেমাতে দেখা ভেনিস হ্রদের অগাধ নীল জলরাশিতে গান গেয়ে গন্ডোলায় ভেসে নায়ক নায়িকার প্রেম নিবেদনের মনোরম  দৃশ্য। প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে প্রেমের সাগরে বিলীন হয়ে চিত্তাকর্ষক ঘটনার ঘনঘটায় রঞ্জিত দৃশ্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র ও পটভূমি সাগর জলের ঢেউয়ে ভেসে থাকা অনুপম সুন্দর জল থেকে জেগে ওঠা বৃত্তশালী ভেনিস শহর টি ।   

ভূমধ্য সাগরের বুকে দেড় হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা সেই নিরালা রোমান্টিক প্রেমের শহর স্বপ্নের নগরী ভেনিসে বেড়ানোর কথা , সুখের স্মৃতি রোমন্থনে শ্রীর  মন অকারণে অব্যক্ত আনন্দে ভরে ওঠে। প্রতিদিনের ডায়েরি লেখার অভ্যাসে অজানা পৃথিবীর কত গল্প দিয়ে গাঁথা স্মৃতির মালা সযত্নে গেঁথে রাখায় বিদেশে সেই  নানা ''রঙের দিনগুলি " ভারী অমূল্য। তখন ডিসেম্বরের শেষ  প্রবল শীত   জাঁকিয়ে বসেছে। অদ্রিজার ট্যুর প্রোগ্রাম ও আপাততঃ শেষের দিক।    

 ইতিমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে ওরা দেখেছিল রেনেসাঁ যুগের যুগান্তকারী বিপ্লবে শিল্পে সাহিত্যে সংস্কৃতিতে বিজ্ঞানে প্রযুক্তিতে ধর্মে ইউরোপের গোড়াপত্তন --এক বিশাল পরিবর্তনের নব ধারার নব যুগের সূত্রপাত হয়েছিল। ভেনিসের ইতিহাসের পাতায় কালজয়ী রেনেসাঁ সভ্যতার নিদর্শন এই নগরীর ও প্রতিটি প্রাসাদে দালানে স্থাপত্য কীর্তিতে। শুধু রোমান নয় ভেনিসিয় ও গথিক সভ্যতার স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে এর প্রাসাদ চার্চের গায়ের বিভিন্ন চিত্র লিপিতে।বইয়ে পড়া অদেখা ভেনিসের চিত্র  ছায়াছবি র মত চোখের ওপর ঘুরছিল।সাগর জলে ভেসে থাকা দূরের দেশ টির জল হাওয়া সঙ্গী হয়েছি ভাবতেই অপরিসীম আনন্দে ওদের মা মেয়ের মন চঞ্চল হয়ে উঠেছিল।  

  আনন্দেআত্মহারা শ্রী ঋষভ কে বলে ,আজ তিতিরের জন্যই কবেকার সেই কিশোরী মনের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি,বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। কল্পনার সেই জগৎ ভেনিসে ,--ঘুরবো বেড়াবো ভাবতেই অন্যরকম শিহরণ বোধ করছি। শ্রীর মত অদ্রিজা ও ভারী খুশি। ওদের সকল সত্বা জুড়ে অজস্র ভালোলাগার সুখ বাতাসের দোলায় পারিজাতের মত ঝরে পড়ছিল । অদ্রিজার বেপরোয়া বেড়ানোর উৎসাহে সব প্ল্যানটাই কেমন অবিশ্বাস্য লাগছিল।ও আগের মতই নিজস্ব প্ল্যান অনুযায়ী টিকিট কাটা  হোটেল বুকিং ইত্যাদি অন লাইনে সেরে রেখেছিল।  
                                 
  বিকেলের ট্রেনে মিলানো থেকে ভেনিস যাওয়া হাতে অনেকটা সময় , এই হোটেল  থেকে সকাল বেলায় চেক আউট করে মিলানোর  আশিক সাহেবের  আ জনবী রেস্তোরাঁয়  লাগেজ জমা রেখে ব্রেডটোস্ট  ওমলেট কফি সহযোগে ব্রেকফাষ্টের পর্ব  চুকিয়ে বেশ খুশি মনে আবার ওরা হেঁটে এসেছিল ডুমোর  পিয়াজ্জায়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা এশিয়া অস্ট্রেলিয়া লাতিন আমেরিকা ইউরোপ প্রভৃতি মহাদেশের ভ্রমণ পাগল পর্যটক দের খুব কাছের থেকে দেখে  বিভিন্ন দেশের মানুষের নানা জাতির নানা ভাষার মেলা ও ভীড় ওরা বেশ উপভোগ করছিল। এখানে এসেই অদ্রিজার বার্লিনের ল্যাবের পরিচিত  এক সাংবাদিক বন্ধু মিলানোর  স্টিফানো বার্তোলো সাহেবের সাথে ঋষভের ও শ্রীময়ীর  আলাপ পরিচয়     জমে উঠলো ।  

  সহজ সরল, ৪০বছর বয়স্ক ,হলদেটে ফর্সা মাঝারি গোলগাল গড়ন ,পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির মত লম্বা হবে   ,--গল্প বাজছেলেটি এখানে ওর গ্ৰুপ মেম্বার দের জন্য অপেক্ষা রত। পরিষ্কার ইংলিশে কথা বলে। ভেনিস ওর মাতৃভূমি এবং কর্ম সূত্রে মিলানো এসেছে। আজ ওরা ভেনিসে বেড়াতে যাচ্ছে  শুনে ভারী খুশি। শ্রীময়ী সাগ্রহে বলে  তাহলে তো ' আমাদের খুব সুবিধা হবে ,নতুন দেশটি সম্বন্ধে কত অজানা তথ্য জানতে পারবো। মিলানোর চত্বরে এক নিরিবিলি জায়গায় ওরা আড্ডায় মশগুল হলো। ঋষভের হাতে হাত মিলিয়ে  হ্যান্ডশেক করে বললো , তোমাদের সঙ্গে গল্পে করে আড্ডা দিয়ে সময় আমি যথেষ্ট উপভোগ করবো। গাল ভরা হাসি নিয়ে ভেনিসের গল্প শুরু হলো -- 

এ শহর ইউরোপের তথা ভেনিসবাসীর আদরের শহর ,স্থানীয় লোকেরা ভালোবেসে এ শহরের নাম দিয়েছে ভেনিৎসিয়া বা ভেনিসিয়া। কেউবা বলে জলকন্যা ,কারো চোখে মৎস কন্যা ভেনিস। জলকন্যা নামটি শ্রী ও তিতিরের বেশ পছন্দের। স্টিফানো সাহেবের' মুখ আনন্দে আবেগে লাল --বলেন ,তোমরা কি জানো ?ঐ জলের ওপর ভাসমান আমার  প্রিয় মাতৃভূমি দেশ টি ভেনিসিয়া বা ভেনিস কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে এক অবাস্তব রোম্যান্টিক নগরী। ''  অদ্রিজা হেসে  বলে ,পৃথিবীর সুন্দর তম শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্টিফানো বলেনএবং সুন্দরতম শহর গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাতিক্রমী এক নগরী । যে শুধুই জলের ওপর দীর্ঘ শতাব্দী ধরে ভেসে থাকার স্থাপত্য ভাবনায় যেমন  শহরটির পরিকল্পনাতে ও ঠিক তেমন  ই চমৎকার। ভাবতে পারো একদিন যে ছিল ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা মাছুড়ে ,আঁশটে গন্ধের কারবারিদের গ্রাম ,যেখানে ছিল প্রাণভয়ে ভীত  অত্যাচারিত আতঙ্কে জর্জরিত ,অথবা নেশায় বুদ হয়ে  হৈহল্লায় নাচে গানে মত্ত মানুষের বসবাস। সেই দ্বীপ গুলোই একদিন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সভ্যতার করস্পর্শে এসে ক্রমশ আমূল বদলে গিয়ে হয়ে উঠেছিল সুসভ্য  উজ্জ্বল ঝলমলে এক দেশ। পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ডিউক শাসিত আধুনিক সংস্কৃতি বান রুচির অধিকারী এক আদর্শ নগরী।

🍂
  সাহেবের কাছে  শোনা ঐতিহাসিক বিবরণ গুলো শুনে শ্রী প্রতিবারের মত ওর হাতের নোটবুকে কলম টি ও সমান তালে চালাতে  থাকলে স্টিফানো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে  Are you too a reporter ?  শ্রীময়ী হেসে ফেলে ,Oh !,no -no it is just only my favourite hobby ---    

এইসময়  চোখে পড়লো  এক দীর্ঘ দেহী তন্বি শ্যামাঙ্গী  বছর ২৩ এর  সুন্দরী যুবতী,  লম্বাঝুলের কালচে খয়েরী স্কার্ট মলিন গোলাপী টেনিস শার্ট  গায়ে , উদ্ভ্রান্তের মত বাঁশের স্টিক হাতে ঘুরছে। ওর অবোধ্য ভাষায় কাতর চোখে জনে জনে প্রশ্ন করছে।  জীবনের পরম ধন  কিছু হারিয়ে গিয়েছে তাকে ফিরে  পাওয়ার জন্য ওর ব্যাকুল আবেদন। সাংবাদিক বলে ও ভেনেজুয়েলার মেয়ে  দিশান ,ওর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে গত একমাস ধরে ও এ ভাবেই  দিনেরাতে মিলানোর পিয়াজ্জার মেলায় হারিয়ে যাওয়া পাঁচ  বছরের মেয়েকে খুঁজছে। 
শ্রীর মনে অজস্র প্রশ্ন অদ্রিজার হাত শক্ত করে ধরে বলে , এদেশে ও মানুষ হারিয়ে যায় ? পুলিশ খুঁজে পায় না ? এদেশে ও ছেলে চুরির ক্রাইম আছে ?  সাংবাদিক হেসে বলে ,এ পৃথিবী ময় সর্বত্র সব ক্রাইম   আছে। তুমি যা কল্পনাও করতে পারবে  না।                   জলের ওপর গোটা শহর                                                                                                      
    একটু পরেই ফোন বেজে উঠলে   বিদায়ী জানিয়ে  স্টিফানো বার্তোলো দৌড় লাগালো ।  বিশাল চত্বরটিতে সাজানো ফোয়ারার পাশে বসে সকাল বেলার সূর্যের আলো গায়ে মেখে  ক্যাথিড্রাল চার্চ টি  কেমন রূপ পরিবর্তন করে অপরূপা মায়াবী এক সোনালী স্বপ্ন পুরীর মত পাল্টে যাচ্ছে ।  এই দিনের বেলাতে ও কেউ  বাজনা বাজিয়ে উদাত্ত সুরে গান গাইছে ।  কোনো শিল্পী একান্ত মনে বসে নিবিড় চিত্তে  ক্যানভাসে ক্যাথিড্রালের ছবি আঁকছে। কেউ বা বেহালা কাঁধে চেপে ছর টেনে গানের সুর বাজায়  ।    

  পড়ন্ত বেলায় বেড়ানোর শেষে আবার রেস্তোরাঁ য় ফিরে এসে  ইতালীর বিখ্যাত পিৎজ্জা কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি দিয়ে  লাঞ্চ সেরে ,বন্ধুত্বের  প্রীতি উপহার স্বরূপ ফ্রেঞ্চফ্রাই স্যান্ডউইচের সাথে  চকলেট কেকের দুটো গিফ্ট প্যাকেট ও  লাগেজ নিয়ে আশিক ভাই  বিদায়ী   জানালে   নতুন উদ্যমে পথ  চলা শুরু হলো। বিদেশের মাটিতে এমন অচেনা মানুষের সহৃদয়  উষ্ণ আন্তরিকতা মন স্পর্শ করে  গিয়েছিল। বিকেল ৪ টের শেষবেলার ঘোলাটে আলোয় অজানা জলকন্যা ভেনিসিয়ার উদ্দেশে  নির্বিঘ্নে   ওরা ভুগর্ভস্থ মেট্রো রেলে মিলানো সেন্টার স্টেশনে পৌঁছলো।      
   ভুগর্ভস্থ রেল স্টেশন।      
                                       
এখান থেকে দূর পাল্লার ট্রেন ধরে ভেনিসের মেস্ত্রের স্টেশনে যেতে হবে । অবাক হয়ে বিস্ফারিত  চোখ মেলে শ্রী দেখেছিল ছবির মত নিখুঁত ভাবে সাজানো ঝকঝকে দ্রূতগামী  ট্রেন গুলো এবং এত বড় ঐতিহ্যময়  স্টেশনটি । আশ্চর্য্য লেগেছিল একের ওপর এক করে পরপর চার লাইনে আপ ডাউনে ট্রেনের চলমানতা দেখে। ওর মানসিক অবস্থা ঠিক যেন পথের পাঁচালির সদ্য ট্রেন দেখে বিস্ময়াতুর নাবালক অপুর মত।  তিতির এক তাড়া লাগালে ওর সম্বিৎ ফিরে আসে। মিনিট দশেকের মত হবে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করে যাত্রীদের তুলে নিয়ে তড়িঘড়ি পাড়ি জমালো ভেনিসের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মিলানো সেন্টার স্টেশনের এমন প্রযুক্তির অনিন্দ্য সৃস্টি ট্রেন লাইন ও স্টেশন চত্বর , প্লাটফর্ম ,ট্রেনের যাতায়াতের অভিনব ব্যাবস্থার দৃশ্য  প্রথম দেখে শ্রী সত্যি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। 
 বিশাল আকৃতির স্টেশনের ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে ইতালীর বিভিন্ন শহর সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একের পর এক  তারা  তীব্র হুইসেল বাজিয়ে চলে যাচ্ছে এবং আসছে এক মিনিট আগে বা পরে নয় একদম  কাঁটায় কাঁটায় নির্দিষ্ট সময় মেপে।  পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভেনিস যাবার ট্রেন এসে দাঁড়ালো সামনের প্ল্যাটফর্মে ,রাজকীয় চেহারা তার ভঙ্গিতে। 

 মিনিট দশেকের মত হবে  ট্রেন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করে যাত্রীদের তুলে নিয়ে তড়িঘড়ি পাড়ি জমালো ভেনিসের উদ্দেশ্যে। মিলানো থেকে ভেনিসের দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার ,ট্রেন দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে , অদ্রিজা  জানালো ভেনিসে পৌঁছোতে ঘন্টা দুই-আড়াই য়ের মত সময় লাগবে।  শহরের সাজানো বাড়ি ঘর একে একে  অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। আশে পাশের সবুজ শ্যামল অলিভের বন , চাষের ক্ষেত স্ট্রবেড়ী বা রোজবেড়ী যা কিছুই হতে পারে।  চলন্ত ট্রেন থেকে এক ঝলক দেখে বোঝা যায় না।  ভেতরের অন্দর সজ্জা  আরো চমক প্রদ। আধুনিকতায়  ভরা  ভারী সুন্দর বসার সিট্ গুলো ,পুরু গদীতে  ইচ্ছে হলে ঘাড় মাথা হেলিয়ে সিটে বসেই বেশ আরামের এক ঘুম লাগাতে পারা যায়। ট্রেন ছুটছে  মৃদু দুলনি ও উষ্ণতায় শ্ৰীময়ীর ক্লান্ত চোখের পাতা জড়িয়ে এলে  ও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে  ।                                                                 ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments