জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প—জাপান (এশিয়া)হুলো আর পুশি-- দুই বেড়ালের গল্প /চিন্ময় দাশ


চিত্র- অর্ণব মিত্র 
দূর দেশের লোকগল্প—জাপান (এশিয়া)

হুলো আর পুশি-- দুই বেড়ালের গল্প

চিন্ময় দাশ


জাপানি বেড়ালদের ভারি সুনাম আছে। কদরও আছে তাদের। সেখানে এক গরীব লোকের একটা হুলো বেড়াল ছিল। ঘরে অভাব। কিন্তু বেড়ালের জন্য যত্নের অভাব হতে দেয় না লোকটি। হুলোটাও আনন্দেই থাকে সে বাড়িতে। 

সে বাড়ির পাশেই এক ধনির বাড়ি। বাড়ির মালকিনেরও পুশি বেড়াল আছে একটা। মালকিন ভারি তোয়াজ করেন বেড়ালের। একেবারে রাজার হালে থাকে  পুশিটা।

হোল কী, একদিন একটা বাগানে দুজনের দেখা। হুলোর ভালো লেগ গেল পুশিকে। পুশিরও বেশ পছন্দ হয়েছে হুলোকে।

হুলো বলল—আমরা আলাদা বাড়িতে থাকি কেন? একসঙ্গে থাকলে কেমন হয়? 

পুশি কলকল করে উঠল—আমি এক কথায় রাজি। বেশ ভালো হয় তাহলে। একা একা ভালো লাগে না। 

সেদিন ঘরে ফিরে, হুলো বলল—মালিক, ও বাড়ির পুশিকে বিয়ে করতে চাই আমি। 

বিড়ালের আবদার শুনে, তার মালিক পাশের বাড়িতে গিয়ে হাজির। বলল—আপনাদের বেড়ালটা কিনতে চাই আমি। বেড়াল দুটো বিয়ে করবে বলে ঠিক করেছে।

মালকিন জবাব দিল—আহা, কী আহ্লাদের কথা! বেড়ালরা বিয়ে করবে? তা, তোমার বেড়ালটা আমাকে বিক্রি করে দিচ্ছ না কেন? 

অত আদরের পোষা বেড়াল তার। হলামই বা গরীব! আমি হুলোকে বিক্রি করব না। মালিক ফিরে চলে এল।

বেড়াল দুটো মন মরা হয়ে পড়েছে। দুজন মালিক রাজি না হলে, বিয়েই হবে না তাদের। হুলো বলল—এখানে থেকে লাভ নাই। চলো, দুজনে পালাই।

যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। রাতের খাওয়া সেরে, দুই বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে পড়েছে। তক্কে তক্কে ছিল দুই বেড়াল। মাঝ রাতের দিকে পালিয়ে গেল দুজনে। 

রাতভর চলে একটা বাগানে পৌঁছল যখন, সকাল হয়ে গেল। দুজনেই সেখানে বসে পড়ল। বেশ ধকল গেছে শরীরে। একটু জিরিয়ে নেওয়া দরকার। 

বগানে তো ঢুকে পড়েছে। কিন্তু সেখানে যে এক কুকুরের ডেরা, সে সংবাদ জানা নাই তাদের। 

হঠাৎই ঘেউ-ঘেউ ডাক। ডাক তো নয়, যেন আকাশের বাজ ভেঙে পড়ল। কুকুরটা বাগানে ঢুকেই দুজনকে দেখতে পেয়ে গেছে। অমনি চেঁচিয়ে উঠেছে জোর গলায়।

বেশ বড়সড় চেহারা কুকুরটার। হুলো বুঝে গিয়েছে, এ বিপদ থেকে রেহাই নাই। সে চেঁচিয়ে উঠল—পুশি, চটপট একটা গাছে উঠে পড়। এক্টুও দেরি নয়। বলেই, রুখে দাঁড়াল হুলো। রাগে তার সারা শরীরে লোম খাড়া হয়ে উঠেছে। 

হুলো যে বড়সড় একটা কুকুরের সাথে পেরে উঠবে না, পুশির সেটা বুঝতে বাকি নাই। গাছের উপর থেকে চেঁচাতে লাগল— কে কোথায় আছো, বাঁচাও। এ শয়তানটা মেরে ফেলবে আমাদের। 

🍂

বাগানটা ছিল এক রাজার। চিৎকার শুনে, মালিরা দৌড়ে এসেছে। কুকুরটা তখন ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছে হুলোর উপর। কিন্তু মালিরা তাড়া করে আসছে লাঠি নিয়ে। কী আর করে?  সুড়ুৎ করে সরে পড়ল কুকুরটা। 

হুলোর তেজ আর সাহস দেখে, ভারি পছন্দ হয়ে গেল লোকগুলোর। হুলোকে কোলে তুলে নিয়ে, সোজা রাজকুমারির কাছে চলল মালির দল। কিন্তু পুশি যে গাছে চড়ে আছে, সে-ই যে চেঁচিয়ে সাহায্য চেয়েছিল, সেটা জানতেই পারল না লোকগুলো।

হুলোকে রাজার মেয়ের কাছে নিয়ে হাজির হয়েছে মালিরা—আপনার জন্য কী সুন্দর একটা উপহার এনেছি, রাজকুমারি। 

হুলোকে দেখেই, সে মেয়ে তো আহ্লাদে আটখানা। আদর করে কাছে রেখে দিল হুলোকে।

বেশ রাজার হালে থাকে হুলো। এলাহি খাওয়া-দাওয়া। শোওয়ার জন্য একেবারে রাজকীয় ব্যবস্থা। রাজকুমারির ঘরেই আলাদা খাট হয়েছে তার জন্য। তুলতুলে নরম বিছানায় ঘুমোয় সে।

কিন্তু হলে কী হবে? ভারি মন খারাপ হুলোর। সব সময় পুশির কথাই মাথায় ঘুরপাক খায় তার। কত আদর করে রাজকুমারি। হুলো কিন্তু মনমরা হয়ে থাকে সারাটা সময়।

এদিকে পুশিরও মন খারাপ। কত শলা-পরামর্শ করে পালিয়ে এল দুজনে। কিন্তু একসাথে থাকা হোল না। অচেনা জায়গা। এখানে কোথায় খুঁজবে সে হুলোকে? আবার না কেউ তেড়ে আসে। সাত-পাঁচ ভেবে, সেই বাগানেই থেকে গেল পুশি। 

একদিন বিকেল। রাজকুমারি বাগানে এসেছে বেড়াতে। হুলোকেও সাথে এনেছে সেদিন। দুজনে বাগানে এসেছে, একটা চেঁচামেচি কানে গেল তাদের। আর ঝটাপটির শব্দ। তাকিয়ে দেখে, দুটো বেড়াল মারামারি করছে। 

হয়েছে কী, বাগানে অপরিচিত একটা পুশিকে দেখেছে সেখানকার একটা হুলো। ভারি পছন্দ হয়েছে তার পুশিকে। লেজ নাচিয়ে নাচিয়ে ভাব জমাতে গিয়েছিল। কিন্তু পুশির তাতে মন গলবে কেন? সে তো একমাত্র হুলোকেই পছন্দ করে!

সেও ভারি রেগে গিয়েছে। লেজ ফুলিয়ে একেবারে তেড়ে ফুড়ে উঠেছে পুশি। ঠিক সে সময়েই রাজার মেয়ে বাগানে ঢুকেছে হুলোকে নিয়ে।

হুলো দেখেই চিনতে পেরেছে পুশিকে। ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগেনি তার। রাগের চোটে মাথায় আগুন। অমনি এক লাফ। সোজা গিয়ে পড়েছে নতুন বেড়ালটার উপরে। চেঁচিয়ে-মেচিয়ে, আঁচড়ে-কামড়ে নাজেহাল দশা করে দিয়েছে তার। কোন রকমে পালিয়ে বাঁচল বেচারি।

দুই বেড়ালের তখন আনন্দ দেখে কে। রাজকুমারি পুশিকেও ঘরে নিয়ে এসেছে। তার জন্যও রাজকীয় ব্যবস্থা হয়েছে। 

স্বয়ং রাজকুমারি তাদের মালিক। সারা বাড়িতে খুব খাতির দুজনের। একেবারে রাজার হালেই থাকে হুলো আর পুশি।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments