জ্বলদর্চি

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী/পর্ব ৮ গোপীনাথের গোপন কথা /বাসুদেব গুপ্ত

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী
পর্ব ৮ গোপীনাথের গোপন কথা
বাসুদেব গুপ্ত

পরদিন সকালে উঠতে দেরী হয় অনির্বাণের। ভাল ঘুম হয় নি, মাথার মধ্যে খালি মনে হচ্ছে আলো জ্বলছে নিভছে, ডেন্ড্রাঈট এক্সনেরা সিগ্ন্যাল হারিয়ে ফেলছে আর অনির্বাণ সব ভুলে যাচ্ছে। স্বপ্নে দেখল ভারচুয়াল জগত থেকে আর ফিরতে পারছে না, রিটারণ পাসওয়ার্ড ভুলে গেছে। ভেরার নম্বর পর্যন্ত ভুলে গেছে। এইভাবে ছটফট করতে করতে ঘুমিয়েছে অনেক রাতে। সকালে যখন উঠল তখন ওর টারমিনালে অনেক গুলো মেসেজ অফিস থেকে। কাজের স্টেটাস পাঠানো হয় নি কাল রাতে।

চটপট তৈরি হয়ে অনির্বাণ কাজ শুরু করে। তার রিপোরট দেবার আর দু মাস বাকি। এখন আর কোন পিছুটান নেই। দায়িত্ব নেই। কাজ আর কাজ। ভিভিরামা খুলে বসে টুগ্ল থেকে একটা এআই হেল্পার ডাউনলোড করে। টুগ্ল পাবলিক প্যাকেজ, কোন ডাটা লিক হবে কিনা তাই নিয়ে একটা সন্দেহ থেকে যায়। জেড পারসোনালাইজড ব্যক্তিগত এআই এসিস্ট্যান্ড। অনির্বাণ জেডকে চালু করে। তারপর একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে ডারট ছোঁড়ার মত। আশা করে কোন একটা বুলস আইতে ঠিক লাগবে। 

-জেড, ময়নাদ্বীপের লোকেশান দেখাও। 
জেড অনেকক্ষণ চুপচাপ। এআইএর পক্ষে যেন একটু বেশীই সময় নিচ্ছে। তারপর স্ক্রীনে ফূটে উঠলো
-রিয়াল দ্বীপ না ভারচুয়াল দ্বীপ?
রিয়াল দ্বীপ অবশ্যই। অনির্বাণ অবাক হয়ে যায় জেডের এমন অদ্ভুত প্রশ্ন দেখে। 
রিয়াল কোন দ্বীপ কোন ডেটা বেসে নেই। আমি এক পেটাবাইট যা এখানে পাবলিক এক্সেস আছে সেখানে পাই নি। ভারচুয়াল দেখতে চাইলে স্পেশাল এক্সেস পাসওয়ার্ড চাই। 

অনির্বাণ স্টেটাস রিপোরট পাঠিয়ে দিল, সঙ্গে সঙ্গে জানালো তার স্পেশাল এক্সেস পাসওয়ার্ড দরকার। এক মিনিটের মধ্যে তার ব্রেন লিংকে পৌঁছে গেল পাসওয়ার্ড। সেটা ফুটে উঠল চোখের সামনে টুগ্ল গ্লাসে। হাল্কা এই চশমাতে কোন ইলেক্ট্রনিক্স নেই, শুধু আছে একটা গ্লাস আর রিসিভিং সারকিট। গুগল গ্লাস ফটো তুলে বাড়াত বলে একসময় তাকে ব্যান করা হয়েছিল তারপর সিলিকন কনসরটিয়াম এই ডিজাইন অনুমোদন করে। অনির্বাণ চটপট সেটা টাইপ করে দিয়ে জেড কে বলে ভারচুয়াল ময়না দ্বীপ সম্বন্ধে কি জানো বলো। 

জেড বলতে লাগলো আর অনির্বাণের চোখ বড় হতে লাগল। সুইচ টিপে পর্দাগুলো টেনে দিল। 
 টেবিলে পা তুলে দিয়ে নিজেকে একটু সুস্থির করে শুনতে লাগলো মন দিয়ে। 

🍂

 “ময়নাদ্বীপ প্রথম পাওয়া যায় এক বেংগলি মুভিতে, নাম পদ্মানদীর মাঝি। কিন্তু তার থেকেও জনপ্রিয় হয় আর এক ময়নাদ্বীপ, সেটা ভিডিও গেম থেকে নেওয়া। ভিডিও গেমটির নাম ছিল “রিভার অ্যান্ড দি সেলর”। যে খেলবে সে হবে বেচুবাবু। বেচুবাবু একটা দ্বীপ খুঁজে পাবে একটা নদীর মোহনায়, যার নাম পদমা। সেখানে সে একটা বসতি তৈরি করবে। মানুষজন আসবে, ঘর বাঁধবে, সব কিছু সুন্দর শান্তিতে চলতে থাকবে। কিন্তু হঠাৎ নদী এসে একদিন সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। আবার দ্বীপ ফাঁকা, কোন মানুষ নেই, চারদিকে শুধু বাঁকা জল করিছে খেলা। এভাবেই খেলা চলবে। লেভেল ১,লেভেল ২, লেভেল ৩ ইত্যাদি। বেচুবাবুর হাতে আছে নানা ধরণের মারণ অস্ত্র। সব রকম অশুভ শক্তি ভূত রাক্ষস মারার জন্য। আছে বাঁধ বাঁধার সব যন্ত্রপাতি, নদীর তীরে উঁচু দেওয়াল গড়ে জলোচ্ছাস আটকাবার জন্য। আর আছে ইচ্ছেমত যত খুসি কাজ করার লোক, লেবার, মিস্ত্রী। বাঁধ বড় হতে থাকবে। নদীর ঢেউও আরো উঁচু হতে থাকবে। খেলা কখন শেষ হবে কেউ জানে না। তারপর একদিন হঠাৎ নদী অন্য দিকে ঘুরে যাবে আর বন্যা আসবে না। সেটাই খেলার শেষ।“

এই গেমটি বানাতো জি এন ডি গেমস নামে এক কোম্পানি। কোম্পানিটি মালদিভ থেকে চালানো হত। ভারতভূমির অনেক কোম্পানিই এভাবে চলত, তাদের কোন ট্যাক্স দিতে হত না, শুধু আমলা বা সরকারী দলকে খুসি রাখলেই চলত। 

“এর মালিক বা ডাইরেক্টরের নাম পাওয়া যাচ্ছে?
“আছে একজন চীনা নাম লুং সিন। আর দুজন ডাইরেক্ট্রের নাম কোথাও নেই, কেউ যেন মুছে দিয়েছে রেকর্ড থেকে”

“ময়না দ্বীপের ছবি একটা দেখাতে পারবে?

জেড খানিক পরে একটা ছবি এসে হাজির করে। 
একটা ভাঙা নৌকো, দুটো গরীব গরীব দেখতে মানুষ, একজন পুরুষ, একজন নারী। পিছনে নদীর মত একটা কি বয়ে যাচ্ছে, মেঘ করে এসেছে। 
-এটা তো মনে হচ্ছে, সত্যিকারের কোন দ্বীপ। আর কোন?
এবারের ছবিটা জমকালো, চোখ ধাধিয়ে যায় দেখে। এক কিলোমিটার পরিধির বৃত্তাকার তিনটি ৩৩৩তলা মাল্টিপ্লেক্স। বড় বড় করে সোনার ব্লক দিয়ে নাম লেখা, ত্রিভূমি। একদিকে চলে গেছে লম্বা ট্রেনের লাইন, সেখানে ভেসে ভেসে যাচ্ছে ম্যগ্লেভ ট্রেন। চারটে ড্রোন উড়ে যাচ্ছে, তা থেকে ঝুলছে বড় বড় প্যাকেট, তাতে লেখা মিসিসিপি। একটা ২০০ ফুট বাই ২০০ ফুট খেলার মাঠ তার একেক ভাগে একেক মাঠের রঙ। নানারকম খেলা চলছে সেখানে। 



বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা বিজ্ঞাপন হিসেবে তৈরী করা, কিন্তু দেখতে একেবারেই বাস্তব, ভিডিও ছবি, অতি হাই রেজলুশানে তোলা বা আঁকা এই ছবি। অনির্বাণ তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে থাকে, মাঠের ধারে ধারে সাঁটা ব্যানারগুলোর দিকে চোখ পড়ে, জেডকে বলে আরো ম্যাগ্নিফাই করতে। 
বড় বড় হতে হতে একসময় চেঁচিয়ে ওঠে, থামাও থামাও বলে। 
একটা ছবির এক কোণে ছোট্ট করে লেখা G.O.D. 
জেড ছবিটার একটা স্টেগানোগ্রাফিক সারচ করে দেখাও তো G.O.D. কথাটা পাওয়া যাচ্ছে কিনা?
জেড এসব কাজে পটু। নিমেষের মধ্যেই জবাব আসে,
-১৭২৯ বার। 
-১৭২৯ ১৭২৯ কোথায় দেখেছি কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে যায় রামানুজন সংখ্যার কথা। 
১৭২৯ একমাত্র সংখ্যা যা দু দুটি কিউবের যোগফল। 1^3+12^3 আর 10^3+9^3. 
হঠাৎ রামানুজন সংখ্যা কেন। আর দু টি কিউবের যোগফল কেন? রামানুজন, রাম+অনুজ, অর্থাৎ লক্ষণ। কারো নাম? 

জেড, লক্ষণ নামে কোন ব্যবসায়ীর নাম জানো, ঐ টাইমলাইনে?
জেড চটপট উত্তর দেয়, ‘নট ফাউন্ড’
নিরবাণ থমকে যায় এখানে। ঐ অঙকের কায়দাটা না খাটায় ক্রস ওয়ারড আটকে গেল ওর।
ক্রস ওয়ারড এখন কেউ খেলে না, কারণ যা এ আই করে দিতে পারে সেটা কষ্ট করে খেলার মানে হয় না। ছোটবেলায় দাদুর পিঠে ভর দিয়ে পিছন দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখত, দাদু মন দিয়ে ক্রস ওয়ারড করে যাচ্ছে খবরের কাগজে। ওকে মাঝে মাঝে মজা করে জিজ্ঞেস করত দাদু। ও যা খুশি একটা বলে দিত। লেগে গেলে একটা করে হাজমোলা গুলি। নিঃশ্বাস পড়ে একটা জোর, চোখটা জোর করে ঘষে নিয়ে অনির্বাণ আবার কাজে মন দেয়। 

অনির্বাণ শিল্প, সিনেমা, গেমস এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার খুব সময় পায় নি। ওর মনে হয় এ নিয়ে একটু রিসারচ করাটা প্রয়োজন। জেডকে বন্ধ করে, অরডার দেয় অনলাইনে একটা পিজা, মারগারিটা উইথ পেপারনি। 
কাল আবার শুরু হবে তদন্ত। ভেরাকে একটা মেসেজ পাঠায়, “লাভ” ভেরা ঠিক এই সময়েই অরবিটে এখানে দিয়ে ক্রস করা। ভেরার থেকে উত্তর আসে, গো টু স্লিপ। উই আর অন এ স্পেসোয়াক নাও। 

(ক্রমশ)

Post a Comment

0 Comments