পুলককান্তি কর
-- আপনি নবেন্দু স্যার না ?
-- কিন্তু আমি তো আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!
-- স্যার, আমি মুন্নি। ছোটবেলায় আপনি আমাকে পড়াতেন।
ভালো করে এবার ভদ্রমহিলাকে চেয়ে দেখল নবেন্দু। পঁয়তিরিশের কাছাকাছি বয়েস হবে। বেশ সুন্দর গড়ন। কপালে একটা বড় টিপ। সিঁথিতে সিঁদুরের দাগ, তবে বড় ক্ষীণ; কষ্ট করে দেখতে হয়। বলল, তূমি কৃষ্ণানন্দবাবুর মেয়ে কি? বেহালায় থাকতে?
-- হ্যাঁ।
-- এবার বুঝতে পেরেছি। প্রায় তেইশ চব্বিশ বছর পরে দেখছি তো ! চিনতে পারিনি। তা তুমি কলকাতা ছেড়ে এখানে কেন ?
-- এখানেই আমার শ্বশুর বাড়ি।
-- এটা কে ? তোমার মেয়ে ?
-- হ্যাঁ। এই তুতুল, আঙ্কেলকে প্রণাম করো।
-- আরে থাক থাক। মেয়ে কিসে পড়ে ?
-- ক্লাস সিক্স-এ।
নবেন্দুর মনে পড়ল, সে যখন মুন্নিকে পড়াতে যেত তখন মুন্নি সবে ক্লাস সিক্স-এ উঠেছে। ও তখন বি.এস.সি পড়ে। কেমিস্ট্রিতে অনার্স ছিল তার। নিজের হস্টেল আর পড়ার খরচ সামলাতে খান চারেক টিউশান পড়াতে হতো তাকে। টাকার প্রয়োজন এতটাই ছিল যে, উঁচু ক্লাশ, নীচু ক্লাশ বাছ-বিচার করার সুযোগ ছিল না তার। সর্বোপরি, পড়ানোর সাথে জলখাবারটা ফ্রি তে হয়ে যেত - এটাও কম ছিল না তার কাছে৷
-- কিন্তু স্যার, আপনি এখন এখানে কী করছেন ?
-- আমি কিছুদিন হল এখানে একটা চাকরি পেয়েছি।
-- কী চাকরি স্যার ?
-- প্রাইমারি স্কুলের টিচার। এই এবছর প্রাইমারিতে কয়েক হাজার চাকরি হল না ! ওতেই পেয়েছি।
-- এই ক'বছর তবে কী করতেন স্যার?
-- ওই কলকাতাতে টিউশান পড়াতাম।
-- ব্যস? আর পড়াশুনো কদ্দুর হয়েছিল?
-- আমার কথা থাক না মুন্নি। বরং তোমার কথা বলো। বিয়ে কবে হল শুনি ?
-- তা এগারো বারো বছর হবে।
-- হাজব্যান্ড কী করেন ?
-- নেভিতে চাকরি করে।
-- সে কী গো ! তাহলে তো বছরে একবার বাড়ি আসে?
-- হ্যাঁ।
-- এমন বিয়ে করলে কেন তবে ? পছন্দের বিয়ে নাকি ?
-- না, না। বি.এ পড়তে পড়তেই আমাদের এক আত্মীয় সম্বন্ধটা আনলেন৷ সবাই বলল, ভালো। অমনি বিয়েটাও হয়ে গেল। কিন্তু আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন ?
-- এই একটু দোকানে কেনাকাটা আছে৷ সবকিছু এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি৷
-- স্যার একদিন আমাদের বাড়ি আসুন না !
-- কোথায় তোমাদের বাড়ি?
-- ওই তো। ওই রাস্তা দিয়ে গিয়ে ডান দিকে যাবেন। কিছু দুর গিয়ে একটা রাধাকৃষ্ণের মন্দির। তার পরের বাড়িটাই। অসুবিধে হলে একটা ফোন করে নেবেন। ফোন নম্বরটা দিল মুন্নি।
বাজারে টুকটাক কিছু কাজ সেরে বাসায় ফিরে এল নবেন্দু। দু'কামরার একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে সে। আহামরি কিছু নয়। বেশি বড় ঘর নিয়েই বা কী করবে সে ? বাবা-মা মারা গেছেন বেশ কিছু বছর৷ ও এখন একদম ঝাড়া হাত-পা। পৈতৃক বাড়ি গ্রামে আছে বটে, তবে ওখানে কাকারা থাকেন৷ ওর বিশেষ কোনও টান নেই। গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে জীবনের কোনও কিছুতেই আর টান অনুভব করে না সে। যন্ত্রের মতো তার জীবন রুটিনে বাঁধা। শুধু দিনগত পাপ ক্ষয়। অথচ একটা সময় সেও স্বপ্ন দেখত। হায়ার সেকেন্ডারিতে ভালো রেজাল্ট করে কলকাতায় এসেছিল সে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। মফস্বলের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বড় হয়ে কলেজের প্রোফেসার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার৷ এই মুন্নির জন্য সবকিছু শেষ হয়ে গেল। প্রথম দিকে এজন্য রাগ হত তার। পরে এল হতাশা। ইদানীং অবশ্য কিছুই মনে হয় না এসব নিয়ে। ভাত চাপাতে গিয়েও আর রান্নায় ইচ্ছে হল না তার। মুন্নির সাথে এতদিন পর দেখা, তার ভেতর-বাইরে অবিন্যস্ত হয়ে গেছে সব।
মুন্নির বাড়িতে সপ্তাহে চারদিন করে যাওয়ার কথা ছিল নবেন্দুর। তবে প্রায়ই ওটা পাঁচ দিনে গিয়ে দাঁড়াতো। কলেজ শেষ করেই ও চলে যেত ওদের বাড়ি। মুন্নির মা, ঠাকুমা তখন ঘরে থাকতেন। মুন্নির বাবার সাথে প্রায় দিনই দেখা হত না তার৷। অফিস থেকে ওঁর ফেরার আগেই হস্টেলে চলে যেত সে৷। বেশ ঘরোয়া একটা সম্পর্কও তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওনাদের বাড়ির সাথে। ছ'মাস যেতে না যেতেই রবিবার দুপুরের নেমন্তন্ন বা কোনও ভালোমন্দ রান্না হলে সেদিনের রাতের খাওয়াটাও ওদের বাড়িতে হতে লাগল ভ্রমশ। মুন্নি নিজের চেয়ারে বসার বদলে বেশির ভাগ সময়ে নবেন্দুর কোলে বসেই পড়াশুনোটা সেরে ফেলতো। ছোট বলে কেউ গায়েও মাখতেন না। একদিন জলখাবার দিতে এসে মুন্নির মা দরজা খুলে আবিস্কার করলেন, মুন্নি নবেন্দুর চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে নবেন্দুকে জড়িয়ে ধরে পড়া মুখস্থ বলছে। হঠাৎ কী হল তাঁর, বললেন, ‘মাস্টারমশাই, একবার এ’ঘরে আসবেন; কথা আছে।‘ বলেই চলে গেলেন অন্য ঘরে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নবেন্দু ওঁর ঘরে এসে উপস্থিত হলো।
-- হ্যাঁ বৌদি, বলুন।
-- আপনাকে আর কাল থেকে পড়াতে আসতে হবে না।
-- কেন বৌদি, হঠাৎ কী হল ?
-- ছিঃ মাস্টার মশাই। এমনটা আমি আপনার থেকে আশা করিনি।
-- কী আশা করেননি ?
-- এরপরও আপনি না বোঝার ভান করছেন ? আপনি আসুন।
কথার মধ্যে এতখানি জোর ছিল যে নবেন্দু তখনই চলে এসেছিল হস্টেলে। সারা রাত অনেক ভেবেও মনে করতে পারল না কী এমন অপরাধ করে ফেলেছে সে। মুন্নির জড়িয়ে ধরা দেখে কী বৌদি এমন রি-অ্যাক্ট করলেন ? কিন্তু ও তো সবার সামনেই ওর কোলে বসে। অন্য সময়ে তো কেউ কিছু মনে করে না ! কয়েকদিন পরেই ওর পার্ট-ওয়ানের ফাইন্যাল পরীক্ষা। কিছুতেই মন স্থির হল না তার। আচ্ছা, এসব কি মুন্নি জানে? বহুদিন থেকেই এই কৌতুহল তার মনে। দু'চারদিনের মধ্যেই মুন্নির বাড়ি যাওয়া মনস্থ করল সে।
২
সন্ধেবেলা ক্যাডবেরির একটা বড় পাকেট নিয়ে মুন্নিদের বাড়ি হাজির হল নবেন্দু। ফোন করে আসেনি। সুতরাং ওকে দেখে মুন্নি একটু অবাক যেমন হল, খুশি হল অনেক বেশি।
-- আসুন, আসুন স্যার। এই সোফাটায় বসুন।
-- কী ব্যাপার, কাউকে দেখছি না ! তোমার শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ নেই ?
-- শ্বশুর তো বিয়ের আগেই গত হয়েছেন। শাশুড়িও নেই প্রায় বছর চারেক।
-- তাহলে তুমি এত বড় বাড়িতে একা থাকো ?
-- হ্যাঁ। পাড়াটা ভালোই। অসুবিধে হয় না।
-- মেয়ে কোথায় ?
-- ওঘরে পড়ছে। টিউশানের টিচার এসেছেন। বলেই পাশের দরজার দিকে ইঙ্গিত করল মুন্নি।
-- আসলে টিভি-ফিভি দেখি তো। যদি আওয়াজ বাইরে যায়, তাই ভেজিয়ে রাখি।
-- টিচারটি ম্যাডাম না স্যার ?
-- স্যার। তবে বয়স্ক।
যাক। এই লোকটার হাল অন্তত তার মতো হবে না৷ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নবেন্দু।
-- একটা কথা বলব স্যার, যদি কিছু মনে না করেন ?
-- বলো।
-- আপনি এস.এস.সি দিলেন না কেন ?
-- এখন আর বয়স নেই।
-- যখন বয়স ছিল, তখন দিয়েছিলেন ?
-- না।
-- কেন ?
-- ইচ্ছে হয়নি তাই।
-- অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষা ?
-- কিছুই দিইনি মুন্নি। পাস গ্র্যাজুয়েটকে কে চাকরি দেবে?
-- কেন ? আপনার তো অনার্স ছিল ! আমার যতদূর মনে পড়ে কেমিস্ট্রিতে।
-- অনার্স কেটে গিয়েছিল।
-- সে কী! কী করে? বাবা-মা বলতেন আপনি নাকি ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ছিলেন!
একটু চুপ করে রইল নবেন্দু। কিছুক্ষণ পরে বলল, আমি তোমার বাড়িতে কেন আর পড়াতে যাইনি, তুমি জানো ?
-- ঠিক জানি না। তবে আন্দাজ করি৷
-- কী আন্দাজ করো?
-- আমার মা সম্ভবত আমার সাথে আপনার রিলেশান নিয়ে কিছু সন্দেহ করতো।
-- কিন্তু এ তো অহেতুক সন্দেহ। তুমি কি জানো, বিনা কারণে আমাকে তোমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ? সে অপমান আমি আজও ভুলতে পারিনি।
-- স্যার, আপনি আমায় ক্ষমা করুন! দোষ যা কিছু ছিল, সব আমার। তবে আপনার যে কোনও ভূমিকা ছিল না, আপনি মা কে বোঝালেন না কেন?
-- বলতে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কোনও কথা শোনেননি। ভাবলাম রাগ পড়ে গেলে নিশ্চয়ই বুঝবেন৷ দিন দশেক বাদে আবার তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম, তিনি আমার সাথে দেখাই করেননি। কিন্তু তিনি ওদিন হঠাৎ এতটা সিরিয়াস কেন হয়েছিলেন, আমার মাথায় আজও ঢোকে না।
-- আপনি পুরুষ মানুষ তো, আপনি ঠিক বুঝবেন না৷ মায়ের মন ঠিক টের পেয়ে যায়৷
-- কিন্তু তুমি তো সেদিন নতুন করে কোনও অসংলগ্ন আচরণ করোনি !
-- ভুলে যাবেন না স্যার আমার তখন পিউবার্টি। আজ এসব কথায় দু'পক্ষের কোনও কিছুই যাবে আসবে না বলেই বলছি, তখন আমি আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। একটা প্রেমপত্রও লিখে ফেলেছিলাম। মা মনে হয় দেখে থাকবে।
-- এতে আমার কী দোষ বলো?
-- মনে হয় মা দুয়ে দুয়ে চার করে থাকবে। মায়ের হয়তো মনে হয়েছিল, আপনার ইন্ধন ছাড়া মেয়ে এমন কাজ করতে পারে না।
-- তুমি তাহলে কিছু বলোনি কেন ?
-- স্যার, আমার নিজেরই তখন আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। আপনাকে তো ছাড়িয়ে দিয়ে খালাস! আমাকে যে ওই বাড়িতেই থাকতে হতো! তাছাড়া মা এই নিয়ে আমাকে সরাসরি কিছু বলেনি৷। দু'একদিন আপনি না আসায় যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মা বলল, আপনার ফাইন্যাল পরীক্ষা বলে আপনি নাকি টিউশান পড়ানো ছেড়ে দিয়েছেন।
🍂
আরও পড়ুন 👇
খানিকক্ষণ ঢুপ করে রইল নবেন্দু। তাকে চুপ থাকতে দেখে মুন্নি আবার বলল, স্যার সত্যিই কি আমার প্রতি আপনার তখন কোনও ফিলিংস ছিল না ?
-- আজ আর এসব কথার কী প্রয়োজন মুন্নি ?
-- শুধু কোনও বাড়িতে অপমানিত হয়ে কি স্যার কেউ নিজের কেরিয়ার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে? তখন ডিস্টার্বড ছিলেন বলে না হয় আপনার পার্ট-ওয়ানটা খারাপ হতেই পারে! কিন্তু তারপরও কেন স্যার নষ্ট করলেন নিজেকে? কেন আমার অপরাধের বোঝা বাড়িয়ে দিলেন এতখানি? কেঁদে ফেলল মুন্নি।
সত্যি, নবেন্দু নিজেও ভেবেছে, সে কি সত্যি সত্যি মুন্নির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছিল? যেদিন ঘটনাটা ঘটল, সেদিনও সে নিজের কাছে পরিস্কার ছিল। কিন্তু যত দিন যেতে লাগল, ক্রমশ যেন তার ভেতরে একটা হাহাকার জেগে উঠলো। যখন তখন মুন্নিদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘরাঘুরি বেড়ে গেল তার, যদি কোনও ভেবে দেখা হয়ে যায় – এই ভেবে। কত রকম লৌকিক-অলৌকিক, আকাশ-কুসুম ভাবনা এসে জুড়ে বসল মাথায়। যখন স্বপ্নে এসে হানা দিল মুন্নি, তখন নবেন্দু তার চলার স্রোত থেকে কখন ছিটকে গেছে বাইরে।
-- জানেন স্যার, নাইন-টেনে ওঠার পর যখন একা একা স্কুলে যাওয়ার অনুমতি মিলল, তখন স্কুল থেকে ফেরার পথে কতবার আপনাদের হস্টেলের সামনে দিয়ে গিয়েছি। জানি, তখন আপনার ওখানে থাকার কথা নয়, তবু মনে হত যদি কোনও ভাবে কোনও দিন দেখা হয়! আপনার কলেজেই আমি আর্টস নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কোনও কাজ নিয়ে যদি আপনি ওখানে এসে থাকেন!
-- এতটাই যদি কনসার্নড ছিলে মুন্নি, কাজলদার থেকে আমার ঠিকানা বা ফোন নাম্বার নাওনি কেন?
-- সাহস হয়নি। আপনি আমাদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর আরও দু'বছর আমি ওনার কাছে পড়েছিলাম। যখন বড় হলাম, তখন কাজলদা আমাদের পাড়া ছেড়ে দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন।
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নবেন্দু। কাজলদাই এই টিউশানটা তাকে জোগাড় করে দিয়েছিলেন। এই ঘটনা ঘটার পর সে আর লজ্জায় ওঁর সাথে বড় একটা দেখা করতে যেত না৷ মুন্নির মা তাঁকে কিছু বলেছিলেন কিনা কে জানে? কাজলদার সাথেও তার দেখা হয় না প্রায় বিশ বছর। ওঁদের দেশের বাড়ির ঠিকানা কি আছে তার কাছে? কে জানে! খুঁজে দেখতে হবে আজকেই। মুন্নি চায়ের কাপ নিয়ে এসে বসল ঠিক তার পাশটাতে। আজ কিন্তু স্যার আমাদের সাথে রাতের খাবার খেয়ে যাবেন।
-- না, না৷ আজ থাক।
-- থাকুন না স্যার ! তুতুলও খুব খুশি হবে। ও তো ওর বাবাকে কাছে পায় না।
-- ওর বাবা লাস্ট কবে এসেছিলেন ?
-- তা প্রায় বছর তিনেক হল।
-- সে কী! আমি যদ্দুর জানি, ওরা বছরে অন্তত ছ”মাস ছুটি পায়।
-- তা পায়। তবে কথায় বলে কিনা, নাবিকদের বন্দরে বন্দরে বউ রাখা থাকে।
-- যা, ইয়ার্কি মেরো না !
-- না স্যার, সত্যি কথা। শুনেছি ওর আর একটা বউ আছে।
-- বলো কী ! তোমার চলে কী করে?
-- সব কথা কি একদিনে শুনবেন স্যার? পরে বলব কখনও। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুন্নি। বলল, ‘রাতে কী খান ? রুটি, না ভাত ?’
-- যা পাই, তাই খাই। আমার মতো লোকের বাছ-বিচার চলে না।
-- বিয়ে করলরন না কেন স্যার?
-- বিয়ে করেছি কিনা এটা কি গায়ে লেখা থাকে? আমি তো তোমাকে এই নিয়ে কোনও কথা বলিনি।
-- ও বোঝা যায়। এবার একটা বিয়ে করুন৷
-- বয়েস অনেক হয়েছে মুন্নি, মেয়ে পাওয়া যাবে না।
-- বাংলাদেশে মেয়ের অভাব ? তাছাড়া সরকারি চাকরি!
-- তুমি খুঁজে দেখো তবে ! ছোট করে হাসল নবেন্দু।
রাতে খাওয়ার পর, একটা প্লেটে মৌরি নিয়ে নবেন্দুর একদম বুকের কাছ ঘেঁসে দাঁড়াল মুন্নি। ঘনিষ্ঠতার সুরে বলল, আবার কবে আসবেন স্যার ?
-- দেখি।
-- আমি কিন্তু সন্ধেবেলায় কলিংবেল শুনলে আপনার কথা ভেবেই দরজা খুলতে যাব স্যার!
0 Comments