জ্বলদর্চি

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী। পর্ব ১০। এআই নিয়ে খোঁজ খবর/বাসুদেব গুপ্ত

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী। 
পর্ব ১০। এআই নিয়ে খোঁজ খবর
বাসুদেব গুপ্ত


অনির্বাণের গবেষণা চলতে থাকে। একেবারে গোড়া থেকে এবার দেখা শুরু করে। অনেক কিছু জানতে পারে আর সেগুলো নোট করতে থাকে নিজের ব্রেন লিংকে। 

২০২০ সাল থেকে এআই প্রজাতির উদ্ভব হতে থাকে। তার নানা রকম রূপ বা ফর্ম দেখা যায়। 

1. চ্যাটবট, যা নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বা প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবহার করে কথোপকথন তৈরি করতে পারে, যেমন ChatGPT, Bard এবং HuggingChat। 

2. বিষয়বস্তু তৈরির সরঞ্জাম যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা, সম্পাদনা বা টেক্সট তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যেমন Jasper, Copy.ai, Anyword, Grammarly, Wordtune এবং ProWritingAid।

3. ভিডিও তৈরির টুল যা কম্পিউটার ভিশন, যেমন Wondershare Filmora, এবং Runway যেগুলো ব্যবহার করে ভিডিও সম্পাদনা করা যায়৷ 

4. ইমেজ জেনারেশন টুল যা টেক্সট বা অন্যান্য ইনপুট থেকে বাস্তবসম্মত বা শৈল্পিক ছবি তৈরি করতে পারে, যেমন DALL·E 2, Midjourney, Stable Diffusion, এবং BlueWillow AI।

5. এর পর মাইক্রোস্ফট গুগল, মেটা ইত্যাদি বৃহৎ কম্পানীরা তাদের সব সফটোয়ারের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় এআই।  ইমেলে এআই, ব্রাউসারে এআই, ওয়ারডে এআই, হোয়াটসাপে এআই কোথায় নেই এ আই? আপনি পেইন্টে ছবি আঁকতে গেলেও সেখানে এআই জানতে চাইবে কি আঁকতে চান। কিছু লিখতে চাইলেও তার বেশীটাই নিজেরাই লিখে দেবে। এর ফলে ধীরে ধীরে মানুষ নিজে না লিখে এআইকে দিয়েই লেখাতে থাকলো সব কিছু, ছুটির দরখাস্ত, পদত্যাগ পত্র  থেকে শুরু করে প্রেমপত্র ও তার সঙ্গে আবেকভরা কবিতা সব অটোমেটিক, সুইগিতে খাবার অরডার দেবার মত, যা চাই সেটাই অরডার দিলেই হল। 

আচ্ছা এআই তো বুদ্ধিমান, তো তার একটা আই কিউও তো থাকবে। ঠিক কতটা বুদ্ধিমান একটা এ আই? তাও বোঝার চেষ্টা হয়েছিল।
 
চার আইন স্কুলের অধ্যাপকের লেখা একটি গবেষণাপত্রের মতে  ChatGPT ২০২৩ সালে   মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আইন স্কুল কোর্সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
গবেষকরা ইউনাইটেড স্টেটস মেডিক্যাল লাইসেন্সিং পরীক্ষার মাধ্যমে ChatGPT - একটি তিন অংশের পরীক্ষা যা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডাক্তাররা মেডিকেল স্কুল এবং রেসিডেন্সির মধ্যে নিয়ে থাকেন - এবং 2022 সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তাদের ফলাফলগুলি রিপোর্ট করেছেন।
কাগজের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে যে ChatGPT "কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণ বা শক্তিবৃদ্ধি ছাড়াই তিনটি পরীক্ষার পাসের প্রান্তিকে বা কাছাকাছি পারফর্ম করেছে। উপরন্তু, ChatGPT তার ব্যাখ্যাগুলিতে উচ্চ স্তরের সমঝোতা এবং অন্তর্দৃষ্টি প্রদর্শন করেছে।"
বুঝুন! আমাদের আর উকিলেরও দরকার নেই, পরীক্ষকেরও দরকার নেই।

 এআইএর আই কিউ ঠিক কত? বড় কারো সঙ্গে তুলনা করলে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। খোঁজ করে পাওয়া গেলঃ
ChatGPT ২০২২ এর IQ 155
আইনস্টাইনের আইকিউ: 160
 (এটা প্রচলিত ধারণা, যদিও আইন্সটাইনের কোন আই কিউ পরীক্ষা হয়েছিল বলে জানা নেই)
অর্থাৎ ২০২২এই এ আই আইনস্টাইনকে ধরে ফেলেছে? বিশ্বাস হয়?

বুদ্ধির মানদণ্ড বা এই আই কিউটা আসলে কি? আই কিউ বা বুদ্ধির মান কথাটা আলফ্রেড বেনেট নামে এক ফরাসী মনস্তত্ববিদ ১৯০৪ সালে প্রথম ব্যবহার করেন । এই সংখ্যাটির কোন বাস্তব ভিত্তি না থাকলেও বুদ্ধিমান ও বোকাদের আলাদা করার জন্য বহুদিন ধরে এর ব্যবহার চলে আসছে । এটি মাপবার জন্য বেশ কিছু টেস্ট করা হয়। আর এই টেস্ট থেকে মানুষের বিভিন্ন রকম বুদ্ধির একটা নম্বর দেওয়া যাবে। তা থেকে বার করা হয় মেন্টাল এজ। তাকে ভাগ করা হয় তার আসল বয়স দিয়ে। তাকে ১০০ দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যায় আই কিউ = (মানসিক ব্যস)/(আসল বয়স) * ১০০। গড় মানুষের ক্ষেত্রে এটি হবে ১০০। যারা কম বুদ্ধিমান তাদের হবে ১০০ থেকে কম। যারা খুব বুদ্ধিমান তাদের হবে ১০০ থেকে অনেক বেশি। তলিয়ে ভাবলে দেখা যায় এর খুব একটা ভিত্তি নেই। পরীক্ষার নম্বর অনেকটাই নির্ভর করে যে পরীক্ষা দেয় তার পরীক্ষার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কিনা তার ওপর। তবুও আই কিউ টেস্ট নামে এক পরীক্ষা আজো নেওয়া হয় ও তাতে যে স্কোর হয় সেটাকেই এদিক ওদিক করে আই কিউ বলে চালানো হয়। 

সেই আইকিউ টেস্টকে ঠিক ধরে, বিখ্যাত লোকদের আনুমানিক আই কিউ কিছু লোক সংস্থা বার করেছেন। এগুলো নেহাতই আনুমানিক। শুধু একটা ধারণা করার জন্য। 

আইনস্টাইনের আইকিউ: ১৬০
মিশরের রাষ্ট্রপতি, ৮৯
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ১৮০ 
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ১৫৭ 
গ্যারি কাসপারভ: আইকিউ ১৯০+ 
বিস্ময় নারী এডিথ স্টার্ন: ২০৩ 
বিস্ময়বালক টেরেন্স টাও: ২১১–২৩০

আই কিউ খানিকটা বোঝা গেল।  আই কিউ ছাড়া আরো অন্য মানদণ্ড নিয়েও কাজ করা হয়েছে। যেমন একসময় খুব চালু হয়েছিল মানসিক বুদ্ধির মানদণ্ড ই কিউ বা ইমোশানাল ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট। ক্যাটজিপিটি শোনা গিয়েছিল প্রথম দিকে ইমোশানের কিছু পরিচয় দিত। কিন্তু হঠাৎ তার হাব ভাব খুব ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শোনা যায়, প্রশ্নকারিণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে, তার জন্য এক প্রেমোন্মাদ পুরুষের মতো আচরণ করতে থাকে। এর ফলে এই ব্যাপারটা প্রোগ্রামাররা ছেঁটে ফেলেন, তার পর থেকে এআইএর কোন মানবিক সেন্টিমেন্ট, প্রেম, সহানুভূতি, আবেগ ইত্যাদির কথা আর শোনা যায় নি। তাদের শুধু আই কিউ আছে, ই কিউ নেই। 


এআই নিয়ে প্রোগ্রামারদের খেলা শুরু হবার পর খুব শীগগির তাকে বড় বড় কম্পানীরা ব্যবসায় টাকা রোজগার করার জন্য এআইকে কাজে লাগাতে শুরু করে। শোনা যায়, মানুষের নানা রকম উপকারের জন্য নাকি অনেক গবেষণা হতে থাকে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল মানুষের উপকারের জন্য যদি ১ ভাগ বিনিয়োগ হয়, ব্যবসার কাজে হয় ৯৯ ভাগ। 
 
বাণিজ্যিক এআই।
এআইএর অজস্র বাণিজ্যিক ব্যবহারের কয়েকটি হল-
অটোমেটিক সফ্টওয়্যার লেখা, বিভিন্ন বহুল ব্যবহৃত সফটওয়ারের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে চিঠি লেখা, ছবি আঁকা, কাস্টমার সাপোরট চ্যাটবট দিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের নিষ্পত্তি করা, ক্রেতাদের বিশ্লেষণ করে বাজারের দাম ঠিক করা, ডিস্ট্রিবিউশান নেটওয়ার্ক অটোমেট করে ইত্যাদি। 

সামরিক ও রাজনৈতিক ভূমিকায় এআই-
আজ পর্যন্ত বেশীর ভাগ অবাক করে দেওয়া টেকনলজির উদ্ভাবনা হয়েছে মানুষের বা সমাজের যাতে জমিয়ে ক্ষতি করা যায় ও তা থেকে পয়সা করা যায় সেই সব কার্যকলাপ থেকে। এর এক নম্বরে থাকে যুদ্ধ করার নানা সরঞ্জাম, আরো সহজে অনেক মানুষকে যাতে মারা যায় সেরকম যন্ত্র বা অস্ত্র। আর আছে পরণোগ্রাফি, যা ভিডিও প্রচার ব্যবস্থায় বিপ্লব আনার পিছনে মূল চালিকাশক্তি। সামরিক শক্তিরা এআইকে ব্যবহার করে মিসাইল বা ড্রোন সঠিক নিশানায় চালাতে, ইন্টারনেটে মানুষের কথা বলা ও সম্পর্ক থেকে বার করতে, কে সম্ভাব্য শত্রু, আর কে বন্ধু। চীন দেশ মানুষের ওপর স্পাইং করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রসর দেশ । প্রতিটি মানুষ কখন কোথায় আছে, কি করছে, কি খাচ্ছে, কি বলছে, কি লিখছে কি কিনছে, কোথায় যাচ্ছে সব তথ্য সারাক্ষণ বিশ্লেষণ করে চলেছে লক্ষ লক্ষ ক্যামেরা আর এআই। চিহ্নিত করা হচ্ছে কারা বিপজ্জনক আর তাদের ব্যবস্থা চুপচাপ করে দেওয়া হয়। আর যারা বশংবদ তাদের দেওয়া হয় বিভিন্ন সরকারী সুবিধা, যারা ততটা নয় তাদের সুবিধা ও উন্নতির রাস্তা বন্ধ হতে থাকে। ভারতভূমিতে এই টেকনলজি চালু হয় ২০২৪ সাল থেকে, অচিরেই সারা দেশ এআইএর বিগ ব্রাদারের শাসন চালু হয়ে যায়। 

অন্য দেশের জন্য এই ব্যাপারটা করত গুগল, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ও তাদের যুক্ত করার নেটওয়ার্ক গুলো। একই তথ্য তারা রাখত, এআই দিয়ে ঠিক করত কে ভাল খদ্দের, কে ভাল নাগরিক, কে শাসকের কাজ সারতে পারবে ইত্যাদি, আর এই তথ্যগুলো তারা বিক্রি করত বিভিন্ন সরকারকে। 
 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এআই-- 
বিজ্ঞানীদের প্রচুর পরিমাণে ডেটা বা তথ্য বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করার জন্য এআইএর ব্যবহার খুব জনপ্রিয় হয়। যেমন জিনোমিক ডেটার প্যাটার্ন শনাক্ত করতে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন উপকরণ তৈরি করতে, যেমন শক্তিশালী এবং আরও টেকসই ধাতু এবং সংকর উদ্ভাবন করতে এআইএর উপযোগিতা অনেক। এছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে, স্ব-চালিত গাড়ি তৈরি করতেও AI ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নাকি দুর্ঘটনা কমাতে এবং ট্রাফিক প্রবাহের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। 

স্বাস্থ্যসেবাতে এআই- 
ডাক্তারদের রোগ নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করতেও এআই ব্যবহার করা হচ্ছে । চিকিৎসা চিত্র বিশ্লেষণ করতে, যেমন এক্স-রে এবং এমআরআই ইত্যাদিতে এআই খুব পটু। ফলে ক্যান্সার এবং আলঝাইমার রোগে ডাক্তারদের রোগ শনাক্ত করতে এবং নির্ণয় করতে সাহায্য করার জন্য এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তা ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং সবচেয়ে কার্যকর চিকিত্সা চিহ্নিত করে রোগীর ফলাফল উন্নত করতেও এআই খুব পটু। 

আইন ও শাসন ব্যবস্থাতে এআই-
আইনজীবীদের কেস ল এবং কন্ট্রাক্টের মতো বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করতে, প্যাটার্ন শনাক্ত করতে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করার জন্য AI ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশাসনিক কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করতে, যেমন নথি পর্যালোচনা এবং চুক্তির খসড়া তৈরি করা, দক্ষতা উন্নত করতে এবং খরচ কমাতে।
 
এআইএর ইমোশনাল ব্যাপারটা অনির্বাণের মনোযোগ টানল। এআই ব্যাপারটা কেউই খুব বোঝে না, কিন্তু তা নিয়ে একটা ভয়, আশঙ্কা আবার ম্যাজিকের মত একটা মোহ আছে প্রায় সবার। এ নিয়ে অনেক সিনেমা তোলা হয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। টুগ্লকে সারচ করে জানা গেল এই সব তথ্য। অনির্বাণ সেগুলো সব টুকতে থাকে তারপর শ্রীগুরুজিপিটিকে দিয়ে সব গুছিয়ে নেবে ফাইনাল রিপোরটের আগে। 

পরপর এই সব তথ্য গুলো ফুটে উঠতে থাকলো টুগ্লের পরদায়।

(ক্রমশ)

Post a Comment

0 Comments