জ্বলদর্চি

সদ্ভাবনা দিবস (২০শে অগাস্ট)/ দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

সদ্ভাবনা দিবস (২০শে অগাস্ট)
 দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ 'বিশ্ব সদ্ভাবনা দিবস'। সদ্ভাবনা কথাটির অর্থ, ভালো কিছুর ভাবনা, যা খারাপ কিছুর বিপরীতে কাজ করে। মানুষের মনের মধ্যে যে শুভ বুদ্ধি থাকে, যে শুভ ভাবনা থাকে, তাকেই সদ্ভাবনা বলে।
জাতীয় সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি ধর্মীয়, ভাষাগত বা আঞ্চলিক পার্থক্য নির্বিশেষে ব্যক্তিদের মধ্যে ঐক্যেকে উৎসাহিত করে।

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্মরণে তাঁর জন্মজয়ন্তী অগাস্টের ২০ তারিখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দিবস উদযাপিত হয়। এই দিনে জনগণকে জাতীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পালন করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।ভারতীয়রা এবছর রাজীব গান্ধীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে সদ্ভাবনা দিবস ২০২৪ উদযাপন করবে। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধায় ভারতে প্রতিবছর ২০শে অগাস্ট সদ্ভাবনা দিবস পালিত হয়।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কমিটি সদ্ভাবনা দিবসে একটি পুরস্কার প্রচলন করে, যার স্বীকৃতি স্বরূপ একটি মানপত্র ও নগদ ১০লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয় ২০শে অগাস্ট অর্থাৎ রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী যা ( সদ্ভাবনা দিবস) সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা হয় যে দিন। ২০শে অগাস্ট দিল্লিতে তাঁর সমাধিস্থল বীরভূমিতে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাজীব গান্ধী ১৯৪৪ সালের ২০শে অগাস্ট মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর এক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ২০শে অগাস্ট সদ্ভাবনা পুরস্কারটির প্রচলন হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালের ২১শে মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমপুদূরে এলটিটিই জঙ্গির মানব বোমার হানায় নিহত হন তিনি।
এই দিনটি পালন করার উদ্দেশ্য হলো, রাজীব গান্ধীর অবিস্মরণীয় প্রচেষ্টা, জাতীর অগ্ৰগতির কাজ এবং তাঁর দ্বারা অন্যান্য অভূতপূর্ব অবদান কে স্মরণ করা। এছাড়াও বলতে পারি, সদ্ভাবনা দিবস পালিত হয়, দেশের মানুষের আবেগ এবং অবদানকে স্মরণ করে। ভারত যেন একটি মহান উন্নত দেশ হয়ে ওঠে এবং ভারতের উন্নয়নই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, রাজীব গান্ধী এটাই চেয়েছিলেন এবং বিশ্বাসও করতেন।রাজীব গান্ধী ছিলেন, সেই সময়ের এক যুব নেতা। দেশের উন্নয়নে তিনি যুব শক্তিকে প্রথম সারিতে রেখেছিলেন।  তিনি যখনই বক্তৃতা দিতেন, তখনই দেশের উন্নয়নের কথা বলতেন,তাই প্রত্যেক বছর সদ্ভাবনা দিবসে ( তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে) তাঁকে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর দেশপ্রেম মূলক বক্তৃতা শুনে যুবশক্তি আজও অনুপ্রাণিত হয়।

🍂

ভারত একটি প্রাচীন দেশ, এখানে যুবরা, যেমন নতুন কিছু করতে চায়,সেরকম ভারত দেশটিও নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে। তিনি বলতেন যে, ভারতকে স্বনির্ভর হতে হবে। তিনি ভারতকে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে আনতে চেয়েছিলেন।মানবতার অগ্রভাগে ভারতের থাকা উচিত বলে তিনি মনে করতেন।রাজীব গান্ধীর এই চিন্তা ভাবনা আজও ভারতের যুবা শক্তিকে অনুপ্রাণিত করে।বিশেষ করে সদ্ভাবনা দিবস উপলক্ষে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সদস্যরা এবং দেশবাসীরা এই শপথ গ্রহণ করেন যে, দেশের প্রতিটি নাগরিক ভারতের সংবিধান রক্ষার জন্য জাতি- ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেকের মনের দূরত্ব কমাতে হবে এবং সব থেকে আগে রাখতে হবে মানবতা বোধকে।এই দিনে দেশের ঐক্য এবং অখন্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে সকল সরকারি দপ্তরে সম্প্রীতি বজায় রাখার সংকল্প নেওয়া হয় এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলকে সম্মানজনক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করা হয়।এই দিনে দেশের সমস্ত রাজ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সবুজ পরিবেশ প্রকৃতিকে বাঁচানোর শপথ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা সদ্ভাবনা দিবস পালন করি।

২০২৪সালের সদ্ভাবনা  দিবসের থিম হলো,"বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য: আমাদের পার্থক্যকে আলিঙ্গন করা"এই থিমটি ভারতের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত গোষ্ঠীর মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
সদ্ভাবনা দিবসের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করা।
রাষ্ট্রীয় সদ্ভাবনা দিবস উদযাপনের মূল ভাবনা হলো, দ্বেষ, হিংসা বিসর্জন দিয়ে সংহতি ও ঐক্যের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতাকে অক্ষুন্ন রাখা। তাই মনে করা হয়, পরিবর্তিত সময়েও এই বিষয়টিকে আরো প্রাধান্য দিয়ে সংকল্পের সাথে উদযাপন করতে হবে।
সদ্ভাবনা দিবসের তাৎপর্য হলো,
১. বিভিন্ন ধর্মের ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় ঐক্য, শান্তি, সহানুভূতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদযাপন 
২. 'সদ্ভাবনা' শব্দটি  'শুভেচ্ছা' কে নির্দেশ করে। এই দিবসের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক সদ্ভাব গড়ে তোলা।
৩. সদ্ভাবনা দিবস উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
৪.এই দিবসে সবুজের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রশংসা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের সাথে জড়িত।
৫.এই দিবসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 
৬.সদ্ভাবনা দিবসে চারা রোপণেও উৎসাহিত করা হয়।

  ২০২৪ সালের ২০ই অগাস্ট আমরা সারাদেশে সদ্ভাবনা বা সম্প্রীতি দিবস পালন  করা হবে এছাড়াও জাতীয় সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত এই তাৎপর্যপূর্ণ  দিনটি ধর্মীয় ভাষাগত বা আঞ্চলিক পার্থক্য নির্বিশেষে ব্যক্তিদের মধ্যে ঐক্যকে উৎসাহিত করে। আসুন আমরা সকলে সম্প্রীতির চেতনা আলিঙ্গন করি এবং আরো সংহত ও ঐক্যবদ্ধ সমাজের দিকে অগ্রসর হয়ে কাজ করি।

Post a Comment

0 Comments