দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ ৬ই অগাস্ট হিরোশিমা দিবস, এটি কোন খুশি উদযাপনের দিন নয়, বরং প্রতিবছর সে দেশের অর্থাৎ জাপানের তথা বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের মৃত্যুতে
শোক ও শ্রদ্ধা যাপনের দিন।
৬ইঅগাস্ট, ১৯৪৫সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, একটি US B-29 সুপারফরট্রেস এনোলা কগে জাপানের হিরোশিমায় "লিটল বয়" নামে একটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,সেই থেকে ৭৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে এবং প্রতি বছর বিশ্ব ৬ই অগাস্ট দিনটিকে স্মরণ করে এই দিবসটি পালন করা হয়।
জানা যায়, ৬ই অগাস্ট সকাল আটটা পনের মিনিট নাগাদ ইনোলা কগে নামক যুদ্ধবিমান নিয়ে জাপানের হিরোশিমাতে মার্কিন সেনাবাহিনী হামলা চালায়। যে পরমাণু বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাকে মার্কিনিরা ভালোবেসে নাম দিয়েছিল 'লিটিল বয়'। নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমাটির নাম দেওয়া হয়েছিলো,'ফ্যাট মন'। 'লিটল বয়' ছিল ইউরেনিয়াম দিয়ে তৈরী আর 'ফ্যাট মন' ছিলো প্লুটোনিয়া দিয়ে তৈরি বোমা।
সেই লিটিল বয় অর্থাৎ পরমাণু বোমাটির তীব্রতা এত বেশি ছিলো যে, তা প্রায় ১৫ হাজার টন বিস্ফোরণের সমান।
🍂
আরও পড়ুন 👇
হিরোশিমা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে এবার জেনে নিই।
আজ থেকে ঠিক ৭৭বছর আগে ৬ই অগাষ্ট তারিখে পৃথিবীর বুকে কোন যুদ্ধে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল, এই গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র পরমাণু বোমা। জাপানের হিরোশিমা শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই পরমাণু বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল হাজার, হাজার নিরীহ মানুষের। এর ঠিক তিনদিন পরে ৯ই অগাস্ট দ্বিতীয় বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়, জাপানের আরেকটি সমৃদ্ধ শহর নাগাসাকিতে। আজ সেই ঘটনার ৭৭বছর পেরিয়ে গেছে পূর্ব এশিয়ার এই প্রান্তিক দেশটির। বর্তমানে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতমের শিরোপা পেয়েছে জাপান। বিজ্ঞান প্রযুক্তি কোনদিক থেকেই আজ পিছিয়ে নেই ,বরং বলা যায়,বিশ্বের তাবড়, তাবড় দেশের থেকেও প্রযুক্তিতে জাপান এখন অনেক এগিয়ে, তবে সেদিনের সেই ধ্বংসলীলার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ওয়াকোকু চিনে ( এই নামে পরিচিত জাপান)।
আজ হিরোশিমা দিবস, খুশির উদযাপন নয়, বরং সেই দেশের হাজার, হাজার মানুষ চোখের জলে স্মরণ করেন হারিয়ে যাওয়া, প্রিয় মানুষদের স্মৃতি। এখনো অনেকেই আছেন, যা সেদিনের সেই বীভৎস স্মৃতিকে মনে করে আঁতকে ওঠেন।এই ঘটনায় ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছিল,তা গোটা বিশ্বের কাছে আজও অজানা। তবে, জাপান সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, হিরোশিমাতে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ঠিক তিনদিন পর ৯ই অগাস্ট নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। মনে করা হয়, সেই সময় এই দুই শহরের মানুষের সংখ্যা ছিলো,প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষের কাছাকাছি।সেই বোমায় তাপ এবং কেমিক্যাল রিআ্যকশনের ফলে, পরবর্তী কয়েক বছর পর্যন্ত বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যারা এই ঘটনায় বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁরা শরীরে নানান ধরনের সমস্যা বহন করে চলেছেন, এমন কি সেই সময় মাতৃগর্ভে যারা ছিলো, তারাও বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছিল। বলা হয়, আজও পর্যন্ত সেই পরমাণু বোমার রিঅ্যাকশনে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়(এদের বিশ্ব হিবাকুশা নামে চেনে), এই ভয়াবহ ঘটনার পরপরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতি টানা হয়। আত্মসমর্পণ করে জাপান, এই পরমাণু বোমার ভয়ে আত্মসমর্পণ করে, তবে এই নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ আছে।
১৯৪৫ সালে সবার প্রথমে ইউরোপে থেমে যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এরপরে মিত্রবাহিনীর জাপানকে ২৮শে জুলায়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বললে, জাপান সেই নির্দেশ অমান্য করার পরেই, ওই বছর ৬ই অগাস্ট হিরোশিমার ওপর হামলা চালায়,আমেরিকার সৈন্য। এই বোমা মুহূর্তে যেন গ্রাস করে ফেলেছিল, একটি সভ্যতা কে।
হিরোশিমা দিবস কেন পালন করি? এর উত্তরে বলা যায়,
হিরোশিমা দিবস, ৬ই আগস্ট পালন করা হয়,১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলার দিন হিসেবে। এই দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে কাজ করে,যেমন,
হিরোশিমায়,সেই দিন হাজার লোকের স্মৃতিকে সম্মান করে, যারা বোমা যুদ্ধ এবং তারপর ভর্তি প্রভাবে মারা গেছে।
প্রায় ৭০০০ থেকে ৮০,০০০ মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে মারা যায়।
শান্তির প্রচার-দিবসটি পরমাণু অস্ত্রের বিপর্যয়কর দিকের প্রকাশ করে, বিশ্ব শান্তি প্রয়োগ এবং এর প্রভাব ও ট্র্যাজেডির প্রতিরোধে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূলের কথা বলে।
শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য - হিরোশিমায় পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।
মানবজাতি এবং মানবিক পালনে, উদ্বেগের ফলে মানবিক এবং মানবিক বিষয়ের উপর জোর দেয়, এই দিনটি পালনের মাধ্যমে। যুদ্ধের নৈতিক প্রভাব এবং বেসামরিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এই দিনটিতে।
স্থায়ীতা এবং পুনর্নির্মাণ স্মৃতিতে হিরোশিমা দিবসটি পালন করা হয়।হিবাকুশা নামে পরিচিতদের স্থিতি-স্থাপকতা এবং শান্তির পুনরুদ্ধারে প্রসারিত চেষ্টা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়, হিরোশিমা দিবস।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয়, শান্তির শহর নামে। নির্মিত হয়, শান্তি-স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী স্লোগান ও প্রচার।
তবে বলা বাহুল্য, জাপান নতুন করে এক সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছে, যা এতোই তাড়াতাড়ি,যা অভাবনীয়। আজ সমৃদ্ধ হয়েছে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর কিন্তু সেদিনের, সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় শহর দুটিকে, এবং এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জা জনক বিশ্বের ইতিহাসে।
0 Comments