জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় /নির্মল‌ বর্মন

বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় 

নির্মল‌ বর্মন

কথাসাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ''কল্লোল' সাহিত্যগোষ্ঠীর পরবর্তী সময়ে যেসব সাহিত্যিক কথাসাহিত্যে পাতায় আজও অম্লান অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে  গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন । কেবলমাত্র উপন্যাস বা ছোটগল্প না  হলেও  ছোটদের মনের মণিকোঠার জন্যও সৃষ্টি রচনা করে গেছেন "'ভয়ের মুখোস'', ''পাথরের চোখ' ইত্যাদি'। 
কথাসাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসগুলি :-
''ইরাবতী'', ''উপকূল'', ''অন্যতম'', ''নারী ও নাগরী'' ''স্মরগরল'', ''সর্বনাশের স্বাদ'', ''বন্ধনহীন গ্রন্থি'' ইত্যাদি।
এছাড়াও ছোটগল্প গ্ৰন্থ গুলি :-
' 'প্রান্তিক'' ও  ''সুরবাহার'' প্রভৃতি।
সাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় মহোদয়ের জন্ম ও বড় হওয়া পড়াশোনা  ব্রহ্মদেশে। তাঁর প্রথমসারির উপন্যাস ''ইরাবতী''তে দেখা মেলে --
"দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রহ্মদেশে জাপানী বোমাবর্ষণ ও ব্রহ্মের স্বাধীনতাকামী নেতৃবৃন্দের জনসাধারণকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার ঐকান্তিক প্রয়াসের পটভূমিকায় রোমান্সের কাহিনি"। সুতরাং 'স্বাজাত্যবোধ ও বোমাবর্ষণ এ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত  ব্রহ্মহ্মদেশের চিত্রণ সুচিত্রিত করলেও  শিল্পরূপের মূল্য প্রায় নগণ্য।
🍂
          হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এর নাকে দৈবাৎ রহস্যময় আঁশটে গন্ধ লাগার ফলে "সর্বনাশের স্বাদ' ' কৌতূকমন্ডিত উপন্যাস লিখে ফেললেন। নায়ক  অবনীশ বাবু। নায়কের কোন্ ছেলেবেলায় চামচা তুল্য চামচিকে সাধারণ উনুনের‌ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ফলতঃ চামড়া দুর্গন্ধ  বিশ্রী। প্রায়ই সেই গন্ধটা পুনঃ পুনঃ আচমকা আসে।সেই সময়েই, কী আশ্চর্য মিরাকল ঘটে যায়, সর্বনাশের জটিল খবর। এরকমই খবর টেলিগ্রামে পৌঁছেছিল - "মেদিনীপুরে পিকনিক করতে গিয়ে একমাত্র ছেলে বিজয় জলে ডুবে মারা গেছে"। ঠিক একদিন পরেই আবার পচা গন্ধ। বস্তুতঃ  এবার কে??  কন্যা, মিসেস, না  অবনীশ স্বয়ং? সুতরাং এই সব প্রশ্নের যাবতীয় তত্বতালাশ  উপন্যাসে লিপিবদ্ধ ।
        কথাসাহিত্যিকের "বন্ধনহীন গ্রন্থি''  উপন্যাসটি বাস্তব নাটকীয় ঘটনার প্রেক্ষিতে রচিত। অজানা অপরিচিত  কুমারী। তথাপি অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে হঠাৎ হাজির বাগদত্ত যুবার হৃদয় ভাবনায়। কালের অমোঘ আকর্ষণে কীভাবে  পরস্পর জড়িয়ে পড়ল ? তারা বন্ধনহীনতা থেকে আবহমান প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ার দিকটি সুললিত ভাবনায় বর্ণিত ।
                 ‌ কথা সাহিত্যিক হরিনারায়ণের ভৌতিক গল্প প্রশংসার দাবিদার ।তাঁর ''ভূত নেই'' (১৯৬৪) গল্পটি দুটি কাহিনিতে  পরিকল্পিত:-  "ভৌতিক অস্তিত্ব ও জাতিস্মর"। রাজস্থানের বিখ্যাত "মরুপথে বাবার সঙ্গে উটের পিঠে চড়ে যাবার সময় ছেলে তার আগের জন্মের বাড়ি, ঘর, পরিবেশ, এমন কি কুয়ো থেকে জল তুলতে ব্যস্ত থাকা তার স্ত্রী চন্দ্রা নামে একটি মহিলাকে চিনতে পারে"। সুতরাং  বিষয়টি আত্মহননের দৃশ্যে রূপায়িত কিন্তু এই দৃশ্য কারোর পক্ষে দেখা অসম্ভব। তবে হয়তো আরতি শুনতে পারে।
লেখকের  "আরণ্যক"' ছোটগল্পটিও ভয়ানক। তিনি ''আদিম চিতার ভূত'কে এই গল্পে স্থান দিয়েছেন।আসলে সাহিত্যিক সময় ভাবনার প্রেক্ষাপটে ছোটগল্পগুলি রচিত হওয়ার ফলে পরিবেশ রচনায়  লেখকের অসাধারণ অবদান প্রশংসনীয়।
কথাসাহিত্যিক হরিনারায়ণ বাবু তাঁর 'গোধূলি রঙ' ছোটগল্পে  নায়িকার স্মৃতিচারণ সূত্রে প্রেমের রহস্য  "বিরহ বিধুর রোমান্টিক" ভাবটি উপস্থাপন করে প্রেমের চিরন্তনী ভাবনা কে মনোরঞ্জন করে তুলেছেন। ফলতঃ "গোধূলি রঙ"ছোটগল্পে 'প্রেমের জটিলতা বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নারীকে কেন্দ্র করে' আবর্তিত । আসলে বর্তমান সময় ভাবনায় রাজীব ও মায়ার শাশ্বত প্রেমের  ভয়াবহ রূপ সুচিত্রিত। বিষয়টি 'প্রৌঢ়া রমণীর স্মৃতিপটে'কথিকা।
              পরিশেষে কথাসাহিত্যিক বর্তমান সময় ও সমাজে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ভবিষ্যত ভাবনা ও পরিকল্পনা আজকে পুরোপুরি প্রকাশিতব্য। লেখকের পরকীয়া ভাবনা  আজকে প্রকটিত। তাসত্ত্বেও বলবো কালের অমোঘ নিয়মে বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিকে হতে চলেছেন হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।

Post a Comment

0 Comments