পর্ব ১৬। ভয়ঙ্করের মুখোমুখি
বাসুদেব গুপ্ত
-লাখমান
-ঐ হল, তো আপনার আবার আমাকে ভয় করল কেন? অনেক কিছু জেনে ফেলেছি বলে?
-আপনার সেলফ এস্টিম একটু বেশি। আপনি জেনে ফেললেন তাতে আমার ভয়ের কি? আপনি গোপীদাদাকে ম্যানেজ করে পালাবার চেষ্টা করছিলেন? লাখমানের ভুরুদুটো কুঁচকে যায়, কিন্তু ঠোঁটের কোণে ঝোলা বাঁকা হাসিটা যায় না।
-আপনার গোপীদাদাই তো আপনার সিক্রেট ফাঁস করছিলেন এতক্ষণ।
-ও কিছু করার নেই, পুরনো ক্যাটজিপিটি দিয়ে ট্রেন করা, মাঝে মাঝে হ্যালুসিনেট করে। তবে এমন কিছু বলতে পারবে না যাতে আমার কোন ড্যামেজ হয়। যাই হোল, পাওয়ার রিসেট করলেই আবার ঠিক হয়ে যায়। দেখুন।
বলে লাখমান গডের মাথায় একটা সুইচ টিপে ২০ সেকেন্ড টিপে আবার ছেড়ে দেয়।
গড নড়ে চড়ে ওঠে, একবারও চোখ তোলে না, তারপর অনির্বাণের হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে ধীরে ধীরে চলে যায়, গডকে এমন চায়ের দোকানের বেয়ারার মত দেখে অনির্বাণের একটু দুঃখই হয়। যাও বা ভারতভূমির একজনের গডাভিষেক হল, সেই ইউরোপিয়ানদের চাকর হওয়াটা আর গেল না।
-দেখলেন তো? আপনার গড বাবাজীর করিশ্মা?
-আপনার হাতে ঐ কালো লাঠিটা কি?
-গডের থান্ডার রড। ও কিছু না, ভয় পাবেন না, সাধারণ লেজার রড। আপনি ঝামেলা করলে একটা শট দিলেই আপনি ঠাণ্ডা মেরে যাবেন। আপনি সে চেষ্টাও করবেন না আমি জানি।
-আমাকে মারতে হলে তো আগেই মেরে দিতেন। আপনি আমাকে জীবন্ত চান তাই তো? কিন্তু কেন? আমার কাছে তো এমন কোন তথ্য নেই যা আপনারা জানেন না।
-ধুর আপনার কাছে কোন তথ্যই নেই। এসব তো ডারক টুগ্লে সারচ করে আপনি বার করেছেন। ও দিয়ে কিছু হবে না, আমার আপনি কিছুই করতে পারবে না। কে শুনবে আপনার কথা? সব চ্যানেলে তো আমাদের লোক।
🍂
আরও পড়ুন 👇
-তাহলে আমাকে মেরে ফেললেন না কেন?
-গুড কোশ্চেন। লাখমান এবারে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে একেবারে কাছে এসে বসে, তার গা থেকে ভেসে আসে একটা বুনো পারফিউমের গন্ধ। মারিয়ুয়ানা? হঠাত কালো রডটা তুলে লাখমান এম করে অনির্বাণের দিকে। অনির্বাণ একবার কেঁপে ওঠে, কিন্তু তারপরই বুঝতে পারে এটা ওর মজা। মারবার হলে, এখানে কষ্ট করে আনবে কেন? একটা কিছু চাই, যেটা শুধু আমিই দিতে পারি। সেটা কি? সেটা কি?
-হ্যাঁ, একটা কিছু চাই যেটা আপনিই দিতে পারেন। আপনি ভেবে যান, আর আমরা বিম লিঙ্কের হুকিং থেকে সব পেয়ে যাই, আমার টুগ্ল গ্লাসে সব দেখা যায়।
-আমার পিঠে খুব ব্যথা, স্পন্ডিলাইসিস আছে। আমি একটু সোজা চেয়ারে বসতে চাই।
-ঠিক আছে বসুন। কিন্তু চালাকি করবেন না একদম। তাহলে, দেখছেন তো এই জিউসের থান্ডার রড। লাখমান হাসে কিন্তু দাঁত দেখা যায় না, ঠোঁটটা একবার ইমোজি হাসি হয়ে আবার ইমোজি গোমড়া হয়ে যায়।
অনির্বাণ একটা কৌচে একটু হাত পা ছড়িয়ে বসে, অল্প স্ট্রেচ করে নেয়। ঘাড়ে ব্যথা, মাথায় তো বেশ ব্যথা, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে কপালের একদিকটা প্রচুর ফুলে। মাথাটা হাত বোলাবার সময় বিম লিংকের একটা ছোট্ট সুইচ আসতে বাঁদিকে টেনে দেয়, যাতে ওর ভাবনা গুলো লকড হয়ে যাবে বিম লিংকে যাবে না। তার বদলে এলোমেলো শব্দ ব্রডকাস্ট হবে।
-নিন এবারে বলুন, কি চান।
-সোজা কাজ। আমাকে নিয়ে যেতে হবে আপনার দাদু মিস্টার ভিশুর কাছে।
-ভিশু? অনির্বাণ স্তব্ধ হয়ে যায় কথাটা শুনে। খ্যাপা বিশুর কাছে? কি জন্য? এ কি আবদার? দাদুর কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে না কিছুতেই। তবু জিজ্ঞেস করে-
-ভিশু নয়, বিশু, বিশ্বপতি। তাঁর কাছে আপনার কি দরকার? আর আমি আপনাকে নিয়ে যাবোই বা কেন? পারব না।
--আপনার ভিসুভিয়্যাসের কোন ক্ষতি আমরা করব না। শুধু একটা জিনিষ চাই। সেটা শুধু উনিই পারবেন দিতে ।
-কি?
-অ্যাক্সের ডুপ্লিকেট কী। আপনি মেসেজ পাঠান আপনি দেখা করতে আসছেন। আপনার ভাই মরে গেছে, তাই খুব দুঃখ হয়েছে। কিছুদিন থাকতে চান। আপনাকে আমরা ট্রেসারে রাখবো। তারপর সময়মত ব্যবস্থা হবে।
-ডুপ্লিকেট কী বা কিসের আর আপনি নিয়েই বা কি করবেন? আর আমার দাদুর কাছে সেই কী আছে কে বলল?
-অরিজিনাল কীটা এই গোপি শয়তান নষ্ট করে দিয়েছিল। এখন আর একজনের কাছেই কী আছে। যেটা দিয়ে এক্সের মেন প্রোগ্রাম কন্ট্রোল খোলা যাবে। তারপর তাকে ইচ্ছে মত পালটানো, এলগরিদম লাগানো সব করতে পারব। আর সেটা পারলেই…
-গড হয়ে যাবেন, তাই? আমি পারবো না। আর আমার দাদুর কাছে কী আছে এমন অদ্ভুত খবর আপনি পেলেন কোথায়? উনি বুড়ো রিটায়ারড, সাতে পাঁচে থাকেন না, আগে কাজ করতেন এসব ফিল্ডে, এখন পোয়েট্রি লেখেন আবার মুছে দেন নিজেই।
-এক্সে গোপীকে ক্রায়ো করার পর দুবার মেজর চেঞ্জ হয়েছে। সবাই জানে এক্স এখন অটোনমাস, নিজে নিজেই চলে। কিন্তু দুবার কয়েক বিলিয়ন ডলার উবে গেছে দশজন বড় বিজনেসম্যানএর একাউন্ট থেকে। আর সেগুলো চলে গেছে ডাইরেক্ট এক মিলিয়ন একাউন্টে, একদম লোয়ার লেভেল লোকের একাউন্টে, ফুড ডেলিভারি ম্যান, সিউয়ারেজ ক্লিনার যে সব কাজ এখনো রোবট করে না, তাদের একাউন্টে।
-আর দশজনের মধ্যে একজন আপনি…
-ঠিক তাই।
-তো এই গড ইস কামিং বলে ভয় দেখালোটা কে?
-সেটাই তো আর একটা রহস্য। আমরা কেউই সেটা করি নি। আমাদের কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমরা চাই চুপি চুপি এক্সের কন্ট্রোল। আর তাই চাই হদিশ ডুপ্লিকেট কীটা আর সেটা আপনি আমাদের এনে দিচ্ছেন। নইলে কি হবে সেটা বুঝতেই পারছেন।
-আমি এর মধ্যে কেন। আপনারা নিজেরা খুঁজে বা বিশুকে ডাইরেক্ট চ্যালেঞ্জ করে নিয়ে নিন। মনে হয়, আপনাদের এই সিক্রেট সারভিস তো খুবই পাওয়ারফুল
-আমরা নেটওয়ারক কন্ট্রোল করতে পারি, সেটা গোপীর কাছ থেকে আমরা পেয়ে গেছি। কিন্তু এক্সের কিটা…
-সেটা বিশুর কাছে আছে কি করে জানলেন?
-লোকেশান থেকে। দুবারি লগ ইন হয়েছে বে লেক সিটি থেকে, আপনার দাদুর লোকেশান থেকে। উনি ডাবল ভিপিএন ব্যবহার করেছেন ঠিকই , কিন্তু ভিপিএনের চিপ সব আমার কারখানায় বানানো, আর প্রত্যেকটাতে ব্যাকডোর আছে একটা করে। লোকেশান আমরা ঠিক পেয়ে যাই। মেসেজ অবশ্য আমরা ট্র্যাক করতে পারি না, তাহলে তো কীটা পেয়েই যেতাম।
-আমি আপনাকে সাহায্য করলে আমার কি লাভ? প্রথমতঃ আপনারা আমার ওপর এসল্ট করেছেন, আমার মাথায় প্রবল ব্যথা, খিদে পেয়েছে খুব, আর ঘুম পাচ্ছে, আপনাদের সিডেটিভের জন্য। আমাকে বিশ্রাম করতে দিন আর ভাবতে দিন।
লাখমান সব আবদারই মেনে নেয় দেখে অনির্বাণ বুঝতে পারে, দরকারটা সত্যিই খুব। ও আবার মাথায় হাত বুলিয়ে বিম্লিংক্টা চালু করে দেয়। তারপর ভাবতে থাকে, কি খাওয়া যায়। বিরিয়ানী, না ফিস ফ্রাই? বে লেক সিটির স্পেশাল।
-ফিশ ফ্রাই আর বিরিয়ানী। লাখমান অরডার করে ভিঞ্চির বাপ ওরফে গোপীকে। তারপর বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। অনির্বাণ পা তুলে দেয় সোফায়, আধ শোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে, ভাবতে চেষ্টা করে ভেরার ছবি, একঝাঁক অবাধ্য চুল ওর মুখের ওপর ঝেঁপে আসে, ভেরা সবসময় নিজেই শুরু করত চুমু খাওয়ার এপিসোড, মনে মনে সেই চাঁপা ফুলের নির্যাস থেকে তৈরী বেংগল পারফিউমের সুবাসে ভরে যায়। ঘুমে গড়িয়ে পড়ে অনির্বাণ।
কপালে লেজার রডের ঠান্ডা ছোঁয়াতে ঘুম ভেঙ্গে যায় হঠাত। একদিকে দাঁড়িয়ে শ্রী গোপী অন্যদিকে লাখমান, হাতে লেজার রড।
-মেসেজ করুন আপনার ফোন থেকে। বিশুকে। তারপর বিরিয়ানী।
-লোভ দেখাচ্ছেন না ভয়?
-একে বলে ইন্সট্রাকশন। আপনার ভালো আপনি বুঝুন।
-আমি মেসেজ পাঠালে আমাকে ছেড়ে দেবেন? তার কি গ্যারান্টী? আর দাদুর সঙ্গে কি করবেন তারই বা কি গ্যারান্টী?
-ছেড়ে কাউকেই দেব না। তবে কথা শুনলে ক্রায়ো করে রেখে দেব। গোপীর সঙ্গে গল্পসল্প করবেন। আর আপনার দাদুর সঙ্গে কি করব তা তো জানা নেই এখনো। দেখতে হবে।
-শয়তান।
-গড বা শয়তান একজনকে তো ভোট দিতেই হবে। একে বলে পারলামেন্টারী সিস্টেম। আপনার ইচ্ছা। ভাবুন। ভাবা শেষ হলে আপনার বিরিয়ানী পাবেন।
খাবার ইচ্ছে উবে গেছে কখন। এখন মাথায় একটাই ভাবনা, কি করে বেঁচে বেরোন যায়। একমাত্র দাদুই পারবে কিছু করতে। কিন্তু আমি যদি দাদুর কাছে যাই, এও ফলো করবে, দাদু তো জানবেই না।
মাথাটা একবার চুলকে নেয়, বিম্লিংক্টা টিপে র্যান্ডমে দিয়ে চটপট ভাবতে শুরু করে। ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যায় দাদুর বলা কিছু কথা।
-একটা লেখা মানুষের না ক্যাটজিপিটির কি করে বুঝবি? দেখবি কিছু গুরু গম্ভীর কথা কেবলই ব্যবহার করে জিপিটি। ঠিক তেমনি যদি তুই কোন মেসেজ পাঠাতে চাস আর জানাতে চাস, এই মেসেজটা ফলস, তুই কি করবি? কিছু সাধারণ কথা একটু গুরুগ্মভীর কথা দিয়ে লিখবি। আমি বুঝে নেব।
হাত বাড়িয়ে অনির্বাণ লাখমানকে ডাকে, বলে আমি রাজী। দিন আপনার মবিপ্যাড, আমি লিখে দিচ্ছি।
-দাদু, তোমার তবিয়ত ভালো না, আমার হৃদয়ও খুব কাঠিন্যে। তোমার কাছে আসব। কাল সকাল নটায়। তুমি রেটিনা পারমিশান অন করে দিও।
লাখমান এটাকে ইংলিশে অনুবাদ করে নেয় চটপট।
Grandfather, you are not well, my heart is also in distress. Will come to you tomorrow at nine. Keep the retina permission on.
লাখমানের ইমোজি গম্ভীর থেকে অল্প হাসির ইমোজি হয়। মনে হয় খুশি। গোপীকে আদেশ দেয় বিরিয়ানীটা হাতে দিতে। অনির্বাণ হাতে নিয়ে একটু একটু খায়, স্বাদ ভালোই যদিও প্যারাডাইসের মত না। সব শেষ হলেও এখনো প্যারাডাইস তার বিরিয়ানী চালিয়ে যাচ্ছে।
এরপর ঘটনা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে ভয়ঙ্কর এক সমাপ্তির দিকে।
0 Comments