জ্বলদর্চি

সাইড মিরর/কমলিকা ভট্টাচার্য

চিত্র- মণিদীপা দাস 

সাইড মিরর  

কমলিকা ভট্টাচার্য

নীলা আর জীবনের সকালটা আরো অনেকের মত খুবই ব্যস্ততায় কাটে। প্রত্যেক দিন সকালে উঠে নীলা মজা করে বলে, "যমরাজ যদি আজ আমাকে নিয়ে যেতে আসে, তবে ১১টা পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করে। তখন পর্যন্ত এত ব্যস্ত থাকি, স্বস্তিতে মরার সময় তখন পাব না।" তার মতে মরাটা একটু রিল্যাক্স টাইমে হওয়া উচিত ,যেমন চা খেতে খেতে, রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে ,এই রকম তাড়াহুড়োর সময়তো একবারেই নয়।

সেদিন সকালে নীলা রান্নাঘরে ব্যস্ত, হঠাৎ টিপ টাপ শব্দে বাইরে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি পড়ছে। মেঘ সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারেনি, আলো তখনও গজগজ করছে। কদিন ধরে এই হঠাৎ বৃষ্টি, যেন মধ্যবয়সী প্রেম। 

নীলার বারান্দায় অনেকগুলো জামাকাপড় মেলে রাখা, তার পছন্দের কয়েকটা শাড়িও রোদ্দুরে দিয়েছে। বৃষ্টি দেখে নীলা ছুটে যায়। তখনও বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা ব্যালকনির মেঝেটাকে ভেজায়নি।
বৃষ্টির উপর ভীষণ রাগ করে সে। জামাকাপড়গুলো উঠাতে থাকে। লাল পাড়ের গরদের শাড়িটা উড়ে গিয়ে নিচে বোগেনভিলা গাছের কাঁটায় আটকে যায়। টানতে গেলে ছিঁড়ে যাবে, বুঝে পায় না কী করবে।

তখন সিকিউরিটি নিচ থেকে বলে, "ম্যাডাম, শাড়িটা নিচে ফেলে দিন, আমি খুলে নিচ্ছি। আপনি ভেতরে যান, ভিজে যাবেন।" নীলা শাড়িটা ফেলে দেয়। ঘরের ভিতর থেকে জীবন ডাক দেয়, "তাড়াতাড়ি খাবার প্যাক করে নিচে চলো, বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাস্তায় অনেক জ্যাম হবে, অনেক দেরি হয়ে গেছে অফিসে আজ মিটিং আছে।" 

নীলা তাড়াতাড়ি লাঞ্চ ব্যাগটা প্যাক করে গাড়ির চাবি হাতে নিচে যায়। জীবনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে গাছের ফুল তুলে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে রাখা গণেশ আর হনুমানজীকে সাজিয়ে দেয়। জীবন নিচে আসে, গাড়িতে বসে, গেটের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত নীলা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। গেটের কাছে পৌঁছে জীবন সাইড মিররে নীলাকে একবার দেখে। সিকিউরিটির চোখ এড়িয়ে নীলা হাত তুলে জীবনকে বাই করে। 

এ তাদের রোজকার অভ্যাস। এইভাবেই তারা ছোট ছোট অভ্যাসে দাম্পত্য প্রেমে বাঁধা থাকে। আজ জীবন সাইড মিররে যখন দেখলো, তখন নীলা কেন জানি না নিজেকে সেই লাল পাড় সাদা গরদের শাড়িতে দেখলো। পিছন থেকে মনে হলো কেউ তাকে রানী বলে ডাকলো, বলে উঠলো, "ঠিক রানীর মত লাগছে।" 

পিছন ঘুরতে সিকিউরিটি তার হাতে শাড়িটা দিয়ে বলল, "ম্যাডাম, এই নিন আপনার শাড়ি। আমি অনেক কষ্ট করে ছাড়িয়ে দিয়েছি, না হলে কাঁটায় বিঁধে ছিঁড়ে যেত।" 

নীলা দেখে সিকিউরিটি একদম ভিজে গেছে। সে বলে, "সিকিউরিটি ভাই, তুমি তো একদম ভিজে গেছ।" 

সিকিউরিটি বলে, "না ম্যাডাম, কিছু হবে না। এটা তো আপনার খুব দামী শাড়ি তাই না, ছিঁড়ে গেলে আপনার খুব খারাপ লাগতো।" 

নীলা ভাবে, সিকিউরিটি না জেনেও ঠিক বলেছে,এটা সত্যিই অনেক দামী শাড়ি। এই শাড়িতে সে যে কারুর রানী...

Post a Comment

0 Comments