জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /বাসুদেব গুপ্ত


গুচ্ছ কবিতা
বাসুদেব গুপ্ত


              
কলকেতা শহরে এত ফুটফুট তারা 
ঘটনা ঘটেছে আজ কিছু? এলেন যে তাঁরা! 
ফেসবুকে টুইটারে হৈহৈ কান পাতা দায় 
ফাটা জিন্স ফাঁপা চোখ  কতদিন দেখিনা তোমায়। 

একে একে পাতাগুলো তারাদের মুখ পোস্টায় 
বক্তৃতা বাইট ঝরে মাইকে আগুন ঝলসায় 
মোম গলে টুপটাপ মোমবাতি হাঁটে দলে দলে 
স্মার্ট ফোনে আলো নাচে একেই তো প্রতিবাদ বলে। 

সবকিছু রীতি মেনে। পুলিশের  গোঁফ টানাটানি 
রহস্য কাহিনী   প্লট  পুজোয় কাঁপাবে সিরিয়াল
সন্দেহজনক টেকো লোক, উচ্ছন্নে যাওয়া লুম্পেন
পদত্যাগ চাই শুনে   বিধাতাও লুকিয়ে গেলেন। 

এককোণে শুয়ে  থাকে কালো দুখী রক্তের দাগ-
চুপিচুপি হাওয়া ফেলে লুকিয়ে 
মৃত সেই মেয়েটির রাগ। 
মৃত সব মেয়েদের রাগ।


         

বৃষ্টি যদি ডাকেই  তখন যাবো
নদী যদি ধরে হাত, করে খুব টানাটানি
মাটি খসে পড়ে  ঘর হয় টলমলো
যাবো। 
মাটি ছেড়ে  আমি জলে নেবো বিশ্বাস 
বৃষ্টিই হবো ডুবে যাক  লীন আকাশ। 

গুহা দেখে গেছি সতত অন্ধকার 
হয়ত রয়েছে আলো  নেই কনীনিকা
চোখে জ্বলে ত্রাস  সবুজ ফসফরাস
রুদ্ধশ্বাস। বাঁচা। 
গুহামানবের প্রেম নেই আছে বাঘলাফ 
যদিনা  শিকার করে শিস দেওয়া বুলেটে। 

বৃষ্টি যদি ডাকে  তুমি আসবেতো? 
নৈলে জ্যৈষ্ঠ হবে বারান্দা যাবে রোদে পুড়ে
না এলেই ভালো হতো? 
ইজিচেয়ার, ছানিধরা কাপ, মৃত সিল্কেন চা। 
দিন ঠিক কেটে যেত।


          

মুখের আড়ালে মুখের আড়ালে মুখ 
পর্দা সরালে পর্দা সরালে পর্দা 
গোলাপ শরীরে ঘূর্ণি সীসের পাপড়ি 
ভোরের হাওয়ায় বারুদে সুবাস জর্দার ।

কোথায় পালাবে? 
পালাতে গেলেই গুঁড়ো হবে স্পেসটাইম 
কোন কবি আর বেঁচে নেই, কবিতা ভেসেছে কবে 
গাঙুড়ের জলে বেহুলা, নদী ভরে গেল কত শবে। 

হাওয়া বয় পূরবৈঁয়া 
ঝড়ে উড়ে যায় মেরুঢাকা জ্বলে অরোরা 
পশ্চিমে মাটি  উজ্জ্বল হয় আগুনের জিভ লালসায় 
দক্ষিণ কাঁপে একর্ডিয়ানের কর্ডের বিস্ফোরণে।

ছিটকে যাচ্ছে লাল বল ফাটে পাথুরে টাউন স্কোয়ার
টাঙানো হচ্ছে লাল টুকটুকে ক্রশ। 
এখন আর কেউ বেঁচে থাকবার কথা ভাবি না
নোয়া নিয়ে যাও শেষ প্রজাতি এ কবিতা।

🍂
             

যা মা তুই অন্য বাড়ি যা।  
এইখানে তোর চোখের কোলে 
আগুন হয়ে রক্ত ঝরে
আমরা যে আর দেখতে পারি না
এই বাদাবন শহর তো নয়
কোথায় যে কার ইচ্ছে হবে
ছিঁড়তে শরীর শুধুই রাগে 
গজিয়ে ওঠে হঠাৎ নখে হঠাৎ দাঁতে
আকাশ জুড়ে চাঁদের আলোয়
রক্ত ঝরে ঝরণা  হয়ে
ভিজছে তাতে আইনশাসন 
ভিজছে তাতে মিথ্যে মুখোশ শয়তানেরই গা
যা মা তুই অন্য কোথাও 
ঐ আকাশের ছোট্ট তারার
থেকেও আরো অনেক দূরে
আমরা যে আর সইতে পারি না। 

এইখানে তোর শরীর কেটে 
ওজন করে লিটার দরে
বিক্রি হবে টিভির হাটে
শরীরটা তোর খুবলে খাবে
জুলজুলে চোখ সুশীলজনের ছা
মাছির থেকেও কীটের থেকেও
নোংরা ঘেয়ো কুকুর থেকেও
জিভ লকলক রক্তচোষা
আমরা সবাই এক্ষুনি চাই
তোর শরীরের ক্ষতের হিসাব
চাটতে থাকে রক্তে রাঙা গা
যা মেয়ে তুই অনেক দূরে যা। 

আজকে যাদের নেইকো বিকার 
কাল কি হবে তারাও শিকার
প্রশ্নটা যে ঘুরছে গলি গলি
প্রশ্নটা যে বাঘের মত
ঘুরছে শহর গাঁ।


             

মরেও নিস্তার নেই তার। 
মাংস নিয়ে টানাটানি রসাল  ইথার। 
হয়ত স্বপ্ন দেখছিলো  পৃথিবী আলোয় আলো হয়ে গেছে
হয়ত সেবার মত হয়ত বা ভালোবাসা 
সংবিধানে লেখা হবে গাঢ় অক্ষরে
হয়ত স্বপ্নে পেয়েছিল তাকে, দুঃস্বপ্নের দাঁতে
কুচিকুচি হবার ঠিক আগে। 

এখন বিক্রি হয় কেটেকুটে অসহায় ছিন্ন শরীর
মিডিয়ার দোকানে আসে দলে দলে খদ্দের
সংগে চায় ফাউ তার শরীরের গোপন খবর
একল্ট্রা ফ্লুইড কিছু উৎসুক আড়ালে 
সারাদিন মহিলারা বসে বসে হোয়াটসাপে
গ্রাম আর মিলিগ্রামে তাই মাপে 
রক্তে কাঁপে বাজের ব্যগ্র খুনী ডানা
আরো রক্ত না পেলে এই ডার্বি থামবে না। 

কেউ তার স্বপ্নের খরিদ্দার নেই
যে গেছে চুলোয় যাক রোজ কত যায়
এখন এই মাংস কেটে কেটে
শিকে গেঁথে জিভ ভরে সুস্বাদু ঘৃণায়। 
দুঃস্বপ্ন বড় হয় আর এক অন্ধকার মনে
আর এক স্বপ্নভরা চোখ আকাশে আলোর খোঁজ করে
আর এক নতুন ভোর 
আর এক শিকার। 
ভয়ে ভয়ে কেটে যায় যতদিন প্রাণ থাকে তার।

Post a Comment

0 Comments