জ্বলদর্চি

বিশ্ব পর্যটন দিবস /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্ব পর্যটন দিবস
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২৭শে সেপ্টেম্বর 'বিশ্ব পর্যটন' দিবস-এই কথাটি বলার সাথে,সাথে আমাদের মনে হতে পারে, পর্যটন মানে কি? বা পর্যটন কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায় যে,
যিনি আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে অন্যত্র ভ্রমণ করেন, তিনি পর্যটক নামে পরিচিত। ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটন সংস্থা প্রমূখ পর্যটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই জড়িত রয়েছে

পর্যটন হলো, একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক যা, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক ও পেশাগত উদ্দেশ্যে মানুষ স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে দেশ বা স্থানে যাতায়াত করে।

যে কোনও দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের যাতায়াত থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটন স্থানের টিকিট সব কিছুতেই অর্থ ব্যয় করে। যার কারণে রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। যারা ভ্রমণবিলাসি, তারা নতুন নতুন পর্যটন গন্তব্য খুঁজতে থাকেন। বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়, প্রতি বছর পর্যটকদের আকর্ষণ, পর্যটনকে উন্নত এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যটন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যাতে দেশগুলি পর্যটনের ক্ষেত্রে একে,অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। নিজের দেশ ছাড়াও ভ্রমণকারীরা বিদেশি পর্যটন স্থান সম্পর্কে জানতে পারেন এবং অন্যান্য দেশের পর্যটনের মাধ্যমে বিদেশি সংস্কৃতিকে ঘনিষ্ঠভাবে বুঝতে পারেন,কিন্তু কীভাবে এই দিনটি উদযাপন শুরু হয়েছিল? আসুন জেনে নিই।

২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী, 'বিশ্ব পর্যটন দিবস' পালিত হয়।১৯৭০ সালে এই দিনটি পালনের কথা গৃহীত হয়েছিলো,যা বিশ্ব পর্যটনের মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হয়।পর্যটনের গুরুত্ব এবং আমাদের সমাজে এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়।১৯৮০ সালে প্রথম বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয় । তার পর থেকে বিশ্ব পর্যটন দিনটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শান্তি ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সংরক্ষণে পর্যটনের অবদান থিমের অধীনে পালিত হয়ে আসছে। দিনটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো,পর্যটনের প্রভাব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া । পর্যটন বিশ্বকে সংযুক্ত করে এবং একে, অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে সাহায্য করে ৷ ২০৩০সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এর পাশাপাশি পর্যটন শিল্পও যাতে বৃদ্ধি পায়, সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO) বিশ্ব পর্যটন দিবসটি চালু করে।
ভারত বৈচিত্র্যেপূর্ণ একটা দেশ ৷ সকল মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এবং লক্ষ,লক্ষ মানুষ প্রতি বছর ভারতে আসেন। পর্যটন মন্ত্রকের মতে,প্রায়১৪ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক ভারতে ভ্রমণ করেন ৷ প্রতি বছর এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এইভাবে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভারতে পর্যটন খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে । এটি বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও বলা যেতে পারে। আসুন এই দিনটি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নিই ।
🍂
২০২২সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসটি ভারতের রাজস্থান পর্যটন বিভাগ সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শনকারী পর্যটকদের তিলক ও মালা দিয়ে পালন করা হয়েছিলো। সেই সময়ের পর্যটনের উপ-পরিচালক উপেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এটি ঘোষণা করেছিলেন যে,'এতে রয়েছে হেরিটেজ ওয়াকও'। ২৭শে সেপ্টেম্বর, সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এই অনুষ্ঠান।

বিশ্ব পর্যটন দিবস সম্পর্কে আরও জানার আগে এই দিনে শুরু হওয়া সংস্থা সম্পর্কে জানা জরুরি । জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে ৷ সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে  পর্যটনকে উন্নত করা, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত পর্যটনকে উন্নত করাই অন্যতম লক্ষ্য । এটির সদর দফতর মাদ্রিদ,স্পেনে অবস্থিত । জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়, এটি পর্যটন নীতি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে জ্ঞান বিকাশে নেতৃত্ব দেয় ।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা স্পেনের তোরেমলিনের তৃতীয় অধিবেশনে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,সেই থেকে প্রতি বছর ২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । ২৭শে সেপ্টেম্বর এই দিনটি পালনের কারণ হলো, ১৯৭০ সালের এই দিনে ইউএনডবলিউটিও সংবিধি গৃহীত হয়েছিল।পাঁচ বছর পর ১৯৭৫সালে ইউএনডবলিউটিও প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাঁচ বছর পর বিশ্ব পর্যটন দিবস চালু হয়। ১৯৯৭ সালে তুরস্কের ইস্তানবুলে তার পঞ্চম অধিবেশনে ইউএনডবলিউটিও প্রতি বছর একটি দেশে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় । ২০০৩ সালে বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত ইউএনডব্লিউটিওর ১৫তম অধিবেশনে ভৌগোলিক ক্রমে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পর্যটন,বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীর হতে পারে, যেমন, 'ব্যসায়িক পর্যটন','ক্রীড়া পর্যটন,'এবং 'গ্লোয়ার ট্যুরিজম' (চিকিৎসা সেবার জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করা) 
এই শতকের প্রথম দিকে পর্যটন দেশ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাবে পরিণত হয়েছিলো, যেমন,আর্কটিক থেকে অন্টার্কটিক পর্যন্ত ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে উঠছিলো । তাই পর্যটনের ইতিহাস অত্যন্ত আগ্রহের ও গুরুত্বের । 
প্রাচীনতম বৌদ্ধ স্থানে তীর্থযাত্রা মূলক পর্যটন ২০০০ বছরেরও বেশি আগে শুরু হয়েছিলো, যদিও সন্ন্যাসদের দল অস্থায়ী ব্যক্তিগত পর্যটন থেকে সরকার  স্বীকৃত পর্যটনে রূপান্তর হয়।মক্কার তীর্থযাত্রা একই রকম প্রাচীন। হজের পর্যটন সমস্যাযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবছর হাজার, হাজার মানুষ সেখানে যান।
আধুনিক পর্যায়ে পর্যটন হলো, একটি ক্রমবর্ধমান নিবিড় এবং ব্যবসায়িকভাবে সংগঠিত একটি বাণিজ্য। পূর্বে পর্যটন পরিবহণ ও আবাসন ব্যবস্থা দ্বারা মসৃণ করা হয়েছিলো।বিংশ শতকের শেষার্ধে,পর্যটন আন্তর্জাতিকভাবে আরও বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছিলো, যা বর্তমান সময় পর্যন্ত অব্যাহত।
প্রতি বছর 'বিশ্ব পর্যটন দিবস' বিশ্বের এক,একটি দেশ আয়োজন করে। ২০২২ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক দেশ ছিল ইন্দোনেশিয়া। সৌদি আরব ২০২৩ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজন করছিলো। ২০২২সালের থিম ছিল ‘রিথিংকিং ট্যুরিজম’। করোনা মহামারির কারণে পর্যটনের যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে সেদিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার জন্য এই থিমটি নির্ধারণ করা হয়েছিলো। বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩ সালের থিম ছিলো, 'পর্যটন এবং সবুজ বিনিয়োগ'।
আন্তর্জাতিক পর্যটন, বিশ্বায়ন একটি একমুখী প্রক্রিয়া নয়।নিঃসন্দেহে, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় পর্যটন একটি শক্তি। এটি আন্তঃসংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে চালিত করে, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং বিশ্ব আবিষ্কারকে উপলব্ধি করে। এটি স্থপতি, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং সুবিধার ন্যায়সঙ্গত বন্টন সম্পর্কিত, পর্যটনের ইতিবাচক দৃষ্টিকোণগুলিকে সমাজে তুলে ধরার জন্য এই প্রভাবগুলি প্রয়োগ করা নির্বাচন এবং বিশ্ব পরীক্ষা ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক পরিবর্তনগুলি কমিয়ে আনা প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র পর্যটনের মাধ্যমেই সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments