জ্বলদর্চি

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী। বাসুদেব গুপ্তঅন্তিম পর্ব ১৮। এক্সের দিন শেষ

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনী। বাসুদেব গুপ্ত
অন্তিম পর্ব ১৮। এক্সের দিন শেষ 


লাখমান কেমন মুহ্যমান গ্ল্যাডিয়েটরের মত মুখ করে হাঁ করে বসে আছে। চোখদুটো বড় বড়, এখন আর যীশুর অবতার মনে হচ্ছে না, খানিকটা মারক জুকারবারগ লাগছে। কি হল ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে নি। বিশু ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-মিস্টার লাখমান কফি খাবেন নাকি? ভ্যানিলা দিয়ে? আপনাকে কিছু জিনিষ দেখাবো। তার জন্য একটু বুকের জোর লাগবে। 
লাখমান মুখ বিকৃত করে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নীচু করে দিল। 
-ঠিক আছে তোকেই বলি। লক্ষণ সাহেব কী খুজছেন, এক্সএর কন্ট্রোল নিয়ে বিশ্বের অধীশ্বর হবেন বলে তাই তো? কিন্তু কীটা কি, এটা কি একটা মেটালের চাবি, তা তো নয়। এটা একটা বাইটের সিকয়েন্স, জিরো আর ওয়ান দিয়ে। এটা টাইপ করে এক্সের ইউআরেলে লগিন করলেই এক্সের পুরো কন্ট্রোল পাওয়া যাবে। 


বুঝতেই পারছিস এটা লুকিয়ে রাখা কত সহজ। গোপীনাথ আমাকে এটা পাঠিয়ে দিয়েছিল ঠিক ধরা পড়ার আগে। অনেকদিন ধরেই ও আমার কাছে টেকনলজির পরামর্শ নিত। কিন্তু যখন থেকে ও দু নম্বরি ধান্দা শুরু করে লাখমানের সঙ্গে তখন থেকেই আর যোগাযোগ ছিল না। সেদিন হঠাত আমাকে ফোন করে কাঁদতে লাগল,
-বিশুস্যার, আমি নিজে আমার মেয়েকে খুন করেছি। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি করে করব আমি জানি না। 
ধীরে ধীরে যখন সব কথা জানা গেল, আমি ওকে বললাম, 
-তুমি সব কিছু টুগ্লোপিডিয়াতে লিখে পাবলিকের জন্য দিয়ে দাও। তোমাকে শাস্তি তো কেউ দিতে পারবে না, তুমি একেবারে দেশাধিপতির কাছের লোক। পাব্লিকেও তোমাকে ক্ষমা করবে না। তবে এটাই হবে মেয়ের প্রতি যে পাপ করেছ তার প্রায়শ্চিত্তের উপায়। 
ও তখন বলল আমি আর এ আই নিয়ে কোন কাজ করতে চাই না, এ বড় ভয়ঙ্কর জিনিষ, মানুষের সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি এটাকে শেষ করে দিয়ে যাবো। আমি অনেক কষ্টে ওকে থামাই। বলি, তুমি এক্সের কীটা আমাকে দাও, আমি ওটাকে সাবধানে রাখব আর দেখব কেউ যেন এক্সকে সভ্যতার ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার না করতে পারে। আর তোমার কাছে যে কীটা আছে সেটা নষ্ট করে ফেল। 
🍂
সেই কী আমাকে দেওয়ার পরেই কি হল সেটা তো লক্ষণ সাহেব জানেন। আজ ওর বিচারও হবে কিন্তু তার আগে আমি দেখাই ওকে একবার কীটা। 
এই বলে বিশু একটা ছবি খুললেন ওর বিশাল স্ক্রীনে। নীপা ঠাকুমার ছবি, হলুদ শাড়ী, হলুদ ফুল হলুদ রোদ চারদিক হলুদ হয়ে আছে। অনির্বাণ বিহ্বল হয়ে দেখতে থাকলো সেই চলে যাওয়া দিনের অপ্রাকৃত চিত্রাভাস।
স্টেগানোগ্রাফি জানিস কাকে বলে? দাদু আবার টিচার টিজার মোডে চলে গেছে। আর অনির্বাণ যেন এক টিন এজার। 
-না। কোন ডাইনসারের ফটোগ্রাফি টাফি কিছু?
-ধুর, এই কথাটা 1499 সালের জোহানেস ট্রাইথেমিউস বলে একজন ব্যবহার করেন। এর মানে হচ্ছে ছবির ভিতর লুকিয়ে রাখা সিক্রেট। কিন্তু এই টেকনিকের ব্যবহার শোনা যায় হেরোডোটাসও করেছিলেন, তিনি একজন দূতের মাথা কামিয়ে সেখানে নোট লিখে দিয়েছিলেন। যখন সে গন্তব্যে পৌঁছয় ততদিনে তার চুল গজিয়ে গেছে। সেই চুল না কামালে সেই নোট আর কেউ জানতেও পারবে না দেখতেও পাবে না। আবার একরকম হয় লেখার ভাষার কারচুপি করে। এমন কিছু ভাষা লিখতে যাতে যে পড়বে সে বুঝতে পারবে এর মধ্যে কিছু একটা সাঙ্কেতিক বার্তা আছে। অনি হয়ত জানিস এরকম হয়ে থাকে। যাই হোক, আধুনিক স্টেগানোগ্রাফি হল ডিজিটাল, একটা ছবি যা আমরা কম্পিউটারে বা ফোনে রেখে দিই তার হরেক রকম নাম হয় যেমন জেপেগ, পিএঞ্জি, বিএমপি এচ ই আই সি ইত্যাদি। এগুলো সবই আসল ছবির পিক্সেল গুলোকে কোন ভাবে সাজিয়ে রাখে। যখন দেখাবার দরকার হয় তখন সেই প্রোগ্রাম পিক্সেল গুলো পর পর তুলে পরদায় দেখিয়ে দিলেই আমরা ছবি দেখি। যেমন এই ছবিটা দেখছি। ঠিক তো?

-এইবারে আমি দেখাই এর মধ্যে পিক্সেল গুলো কিভাবে রাখা আছে। 
পরদায় ভেসে ওঠে অসংখ্য শূন্য আর একের লাইনের পর লাইন। 
-এইগুলোই হল পিক্সেল এবারে দেখ আমি হাতে করে পালটে দিচ্ছি কয়েকটি লাইন। 
এখানে অখানে শূন্য আর একগুলোকে বেশ কয়েকজায়গা উলটে পালটে দেন বিশু। 
-এবারে দেখ ছবিটা। 
ছবিটা যা তেমনি আছে। আর আমি যেগুলো উলটে পালটে দিয়েছি সেগুলোকে এবার দেখ টেক্সট করে দেখালে কি হয়। 
পরদার ওপর ফুটে ওঠে
লাখমান ইস এ ফুল। 
বিচ্ছু আর অনির্বাণ দুজনেই হেসে গড়িয়ে পড়ে। লাখমান হাঁ করে শুনছিল, ও এমন জোরে দাঁতে দাঁত ঘষে যেন টি রেক্স হাওড়া ব্রিজ চিবোচ্ছে। 
-এই ছবিটার মধ্যেই লুকনো আছে সেই কী। এক্সের। আমি এবারে দেখ কি করি। কীটা কপি করলাম একটা ফাইলে। এবারে দেখ লগ ইন করলাম এক্সে। ফাইলের নামটা টাইপ করলাম, 
কি হল?
ওয়েল্কম টু এক্স কন্ট্রোল সেন্টার ফুটে উঠল পরদায়। 
এবারে আমি যা খুশি করতে পারি। কি করব বল তো? লাখমান তুমি কি করতে?
লাখমান গরগর করে ওঠে। বলে, 
-আই উইল টেক কন্ট্রোল এন্ড মেক দি সুপার এডমিন মি। আই উইল দেন কন্ট্রল দি ওয়রল্ড। 
-ঠিক, যুদ্ধবাজ দেশের ব্যবসায়ীর মতই কথা। এবারে আমি কি করি দেখ। 
বিস্ফারিত চোখে তিনজনেই দেখে দাদু টাইপ করলেন
ডিলিট *.*
এক্স মরে যেতে শুরু করে নিজেকে সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিয়ে। যেখানে যত সুপার এ আই চলছিল সব এক নিমেষে বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিটারী ড্রোন অকেজো হয়ে যায়। যত মিসাইল তাক করা ছিল এদেশ ওদেশ, সব তাদের মুখ নীচে নামিয়ে সুইচ অফ হয়ে যায়। পৃথিবীর সব এ আই আসতে আসতে ব্রেক কষতে কষতে চলে যায় পারমানেনট হল্ট অবস্থায়। 

বিচ্ছুও হঠাত মাটিতে নেতিয়ে পড়ে। বিশু সেদিকে স্নেহ ভরে তাকায়, গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অনেক দিনের সঙ্গী ছিল, কিন্তু ওর মধ্যেও ছিল এক্সের ভূত। তাই ওকেও যেতে হল। 
একটা হেলিকপ্টার নামার শব্দ হয়। একদল আরমড পুলিশ এসে লাখমানের হাতে হাতকড়া পড়ায়। ওদের অফিসার গোছের একজন এসে স্যালুট করে বিশুকে। বলে,
=আপনি ঠিক খবর পেয়েছিলেন। আজকে এক্স অরডার দিয়েছিল ভারতভূমিতে নিউক্লিয়ার এটাক করা। কিন্তু এখন অরডার ক্যান্সেল হয়ে যেতে সব মিসাইল গুলো সেলফ ডেস্ট্রয় করেছে বে অফ বেংগলে। 
এ আই থেকে আপাতত রেহাই। কিন্তু আবার এ আই উঠবে। ভাল এ আই খারাপ এ আই। আর তাদের চালাবে ভাল মানুষ, একনায়কেরা। খ্যাপা বিশু চিরকাল থাকবে না। পৃথিবীর ভাগ্য পৃথিবীর হাতে। 
দাদু চলে যান ৯০ বছর বয়সে। অনির্বাণ এখন ভারতভূমির ইন্টেলিজেন্সের উঁচুপদের অফিসার। দাদুর স্মরণসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মনে পড়া সেই হলুদ ছবির কথা। দাদুও হয়ত এখন স্টেগানোগ্রাফ হয়ে ঐ ছবির মধ্যে গিয়ে বসে আছেন। আমাদের দেখছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি না। 
(শেষ)

Post a Comment

0 Comments