বার্লিনের ডায়েরি -- ৪৭পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(রোমের পথে পরবর্তী অংশ )
শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় ভরে আছে পিয়াজ্জার চারদিক। প্রকৃতির শান্ত সমাহিত রূপে বৈদ্যুতিক আলোর প্লাবনে ভাসা শহরের এই চত্বরগুলোতে পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে শ্রী ও অদ্রিজা কখনো এগিয়ে কখনো পিছিয়ে যা কিছু দেখছে তাতেই অনাবিল আনন্দে মুগ্ধ।ঋষভের থেকে গাইডবুক ও রোড ম্যাপটি নিয়ে শ্ৰীময়ী রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত সেই শিল্প সান্তামারিয়া সোপরা মিনার্ভার বিস্তারিত বিবরণ খুঁজছিল। বাইরে থেকে এই গীর্জাটি কে দেখে ঋষভের খুব সাধারণ মনে হলেও অন্দরে প্রবেশ করে বিস্ময়ে মুদ্ধ হয়ে দেখেছিল অমর শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর হাতের ছোঁয়ায় এক অনবদ্য সৃষ্টি। ধবধবে সাদা মার্বেল পাথরের তৈরী রাইজিংক্রাইস্টের অপূর্ব মূর্তিটি এতো সজীব প্রাণবন্ত উজ্জ্বল যে ভাস্কর্য্য টি দেখে নির্বাক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মূর্তিটির পাদপীঠের সামনে রুপোর কারুকার্য্যে তৈরী মোমস্ট্যান্ডে মোমবাতির স্নিদ্ধআলো সমস্ত পরিবেশ টিকে এক শুচি শুদ্ধ পবিত্রতায় ভরে দিয়েছিল। সেখানে সেন্ট ক্যাথারিনের সমাধি ,ফ্রাএঞ্জেলিকা এবং ১৬ শতকের মেডিসির পোপ এর অনবদ্য শিল্প সংগ্রহ শ্রীর মন স্পর্শ করেছিল। ওর কলেজ লাইফের সেই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি কে বাস্তবে আর এক মহাদেশের মাটিতে এ ভাবে আবিষ্কারের কী যে অনির্বচনীয় আনন্দ! তা কেমন করে কাকে বোঝাবে?
পিয়াজ্জা নভোনা।
শ্ৰীময়ী স্মৃতির বালুচরে হারিয়ে ফন্টানা ডেলার সামনে পিয়াজ্জা ডি স্প্যাগনার বিখ্যাত সেই স্প্যানিশস্টেপসে পৌঁছলো। সান্ধ্যঅন্ধকার এবারে গাঢ়তর হলেও টুনি বাল্ব ও নিয়নবাতির ঔজ্জ্বল্যে আলোময়। এখানেই সাদামার্বেল পাথর বিছানো লম্বা আকারের ১৩৫টা সিঁড়ির ধাপ বেঁয়ে ওপরে উঠলে একটি সুবিশাল সুন্দর চার্চ রয়েছে " ত্রিনিতা ডি মন্টি চার্চ "। সেখান থেকে তাকালে নীচের এই পিয়াজ্জা ডি স্প্যাগনা (piazza di Spagna ) কে ভারী সুন্দর দেখায়। শ্রীর ক্লান্ত পায়ে আর জোর নেই ,ধুপ করে স্প্যানিশ স্টেপেই বসে পড়লে ,ঋষভ অদ্রিজা উপরের চার্চের দিকে এগিয়ে যায়। বয়স্ক মানুষেরাও সিঁড়িতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন,নানান আলোচনায় আড্ডা মারছে সদ্য ইয়ংষ্টারে রা। তারা অল্প বয়সী কাপেল বা স্কুল কলেজের স্টুডেন্ট। ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নতুন জীবনের স্বপ্নে স্বর্গরচনায় বিভোর হয়ে গড়ে তুলতে চায় এক মায়াবী পৃথিবী।
পিয়াজ্জাতে বেশ হকারের ভীড়। এই শহরের বেড়ানো দ্রষ্টব্য স্থানগুলোয় প্রায়ই দেখা যায় ছোট মাঝারি অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্ম সূত্রে জড়িত নানাদেশের অভিবাসী মানুষের সাথে বাংলাদেশের মানুষ ও রয়েছে। গিফ্টশপ ,লটারীর টিকিট কনভেনিয়েন্ট স্টোরে ট্যুরিস্টদের গাইডবুক টিকিট ,আইসক্রিম, পিৎজা ,কেক, কুকিজ ছাড়াও ঘর সাজানোর উপকরণ ইত্যাদি ব্যবসা গুলোতে বাংলাদেশী দের ব্যাপক রমরমা। ওদের দুই এক জনের সাথে শ্রীময়ী কিছু উপহারের সামগ্রী কেনাকাটার সূত্রে আলাপ জমিয়ে তুললো। মাতৃভাষা বাংলার টানে সুদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরের মাঝে যেন এক আত্মীয়তার সম্পর্ক। মাঝারি উচ্চতার তামাটে রঙের উন্নত নাসা সুঠাম স্বাস্থ্যের ২৬ বছরের মইদুল ঢাকার বিক্রমপুরের ছেলে। সে অকপটে বলে কিছু টাকা বাড়তি রোজগার করে সংসারের সুখ কেনার জন্য দেশ ঘর ছেড়ে এসে এই বিদেশের মাটিতে কি কঠিন জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত কাটাতে হয় সে খবর কে রাখে ?
স্প্যানিশ স্টেপস
শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে অভিবাসীরা কিছুদিনের ভিসা নিয়ে আসেন এবং অফিস হোটেল হসপিটালের যে কোনো ছোট কাজ বা টয়লেট পরিষ্কার থেকে রোড বা বাড়ি ঘর নির্মাণে দিনমজুর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ ঐ দেশের লেবারদের বাজার দরের থেকে অপেক্ষাকৃত কম রেটে কাজ করে। এখানে ঘন্টা প্রতি যা ইউরো রোজগার হয় তা তাদের দেশের অঙ্কের তুলনায় অন্ততঃ পাঁচ গুন তো বেশী হবেই। এবং বেকার সময়ে মহাজনের কাছ থেকে জিনিসপত্র নিয়ে লাঠি দিয়ে ষ্ট্যান্ড বানিয়ে তাতে ঝুলিয়ে ঘাড়ে ফেরী করে বেড়ায়। ট্যুরিষ্টরা কিনলে বেশ সুবিধা ও হয় এবং পুলিশের নজরে পড়লে তাড়া খেয়ে পালিয়ে আত্মগোপন করা নিত্য নৈমিত্তিক অভ্যাস। যদিও এঁদের জীবন সংগ্রামের গল্প শ্রী কিছুটা শুনেছিলো মিলানের রেস্তোরাঁতে ।
জিনিসের সুদৃশ্য মোড়কের প্যাকেট টি শ্রীর হাতে দিয়ে মইদুল বলে , ঠিক তিন বছর হোলো বাড়ি যায়নি। এবং যথেষ্ট উপার্জন করে টাকা না জমাতে পারলে বাড়ি ফেরার প্রশ্নও নেই। প্রিয়তমা সালেমাকে ও কথা দিয়েছে আরো কিছুটাকা জমাতে পারলেই দেশেফিরে সংসার পাতবে গাঁয়ে ঘরে থাকবে আর বিদেশে আসবে না । এখানে চল্লিশ কিঃমিঃ দূরে শহরের উপকণ্ঠে এক ঘিঞ্জি বস্তিতে দশ বাই আট মাপের এক কামরায় দেওয়ালের গায়ে একই মাপের ব্যাংক করা আছে। ছয় জন বাংলাদেশী সহ দুইজন ভিয়েতনামী ও একসাথে থাকে যদিও তাতে সমস্যা বিশেষ নেই।
🍂
আরও পড়ুন 👇
প্রায় কুড়ি মিনিট পিতা কন্যার দেখা নেই ,শ্রীময়ী সিঁড়িতেই বসে। এর পরের দ্রষ্টব্য স্থান কাছেই-- পিয়াজ্জা নাভোনাতে ফিউমি ফাউন্টেইন। মন ক্রমশঃ অস্থির হচ্ছিল জায়গা ছেড়ে গেলে এরা এসে না দেখতে পেলে আবার নতুন অসুবিধা। চঞ্চল হয়ে স্প্যানিশষ্টেপের সামনেই পায়চারি করছিল ,সেই সময় দুজনের উদয় গালভরা হাসি নিয়ে কয়েক প্যাকেট ক্রসেন্ট ও হাত ভর্তি গোলাপি বুড়ির চুল বা কটন ক্যান্ডি নিয়ে। কি আশ্চর্য্য! শ্রী রাগের বদলে খুশিতে আত্মহারা ,উল্লাসে লাফিয়ে উঠে বলে বুড়ির চুল !ক্যান্ডিফ্লস ! তিতির বলে ছোটবেলার কটনক্যান্ডি। মা , উঃ সেই কলকাতার ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালে প্রায় ২৫বছর আগে লাস্ট দেখা বুড়ির চুল এখানে ও পাওয়া গেল ?
কতকাল আগের পুরোনো স্মৃতি গোলাপী রঙের বুড়ির চুল ! তার সদব্যবহার করতে গিয়ে মন উদাস হয়ে যায়। শ্রী ভাবে কলকাতার মিউজিয়ামে, চিড়িয়াখানায় ,ভিক্টরিয়ার মাঠে বা মেলায় ছোট্টবেলায় ওদের নিয়ে বেড়াতে গিয়ে কয়েক বার বুড়ির চুল খাওয়া হয়েছিল সেই কবে ? এক দুরন্ত হাওয়ায় স্মৃতির সরণি বেয়ে ও চলে গিয়েছিল অন্ততঃ প্রায় পঞ্চান্ন বছর আগের নিজের হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলায়। এমন ই পড়ন্ত বিকেল বা অলস দুপুরগুলোতে বাড়ির পাশের চওড়া গোলির ধারে বা মেনরাস্তা থেকে ম্যাজিকের মত টিঙ -টিঙ টিলি -টিল শব্দে পুজোর ঘন্টা বাজিয়ে হাওয়াই মেঠাই চাই বলে নকুলদাদার হাঁকে ভাত ঘুমে ঢুলে পড়া চোখ গুলো চকচক করে উঠতো। কাঁচের বাক্স ভরা গোলাপি রঙের বুড়ির চুলের সুদৃশ্য প্যাকেটে।তখন বোধহয় দশ পয়সায় চারটে প্যাকেট পাওয়া যেত। শ্রী এখনো চোখ বুজলেই দেখতে পায় হাল্কা এক খন্ড উড়ো মেঘের মত বুড়ির চুল যদিও গোলাপী রঙের। ছোট্ট ঠোঁট ছোট্টো হাতের আঙ্গুল কতটা রঙিন হয়েছে গোলাপি রঙে। বাড়ির নিষেধ। মোটেই খাবে না বাজে রঙ দাঁতে পোকা লাগবে। কিন্তু কচি মনের আগ্রহ বারণ মানেনি।ঐ টিং টিং ঘন্টার ধ্বনি শোনার জন্য চারজোড়া কান উদগ্রীব হয়ে থাকতো ! ঐ বুঝি নকুল দাদা চলে গেল বুড়ির চুল নিয়ে।
বুড়ির চুল নিমেষে মিলিয়ে যায় মুখের গহ্বরে। বেশ উৎসাহে পিয়াজ্জা নাভোনার দিকে চলতে গিয়ে তিতিরের মনে প্রশ্ন জাগে ঐ বুড়ির চুল আমাদের দেশের কত পুরোনো মিষ্টি এ দেশে কেন ? শ্রী বলে না না সে তো এ দেশেরই আবিষ্কার। ১৫০০ শতকে এক ইতালীয়ান রাধুনী চিনির সিরাকে কাঁটা চামচ দিয়ে টেনে সুতোর মত লম্বা নিজের অজান্তেই তৈরী করে ফেলেছিল তারপর তাকে পাকিয়ে ঘুরিয়ে সুস্বাদু ক্যান্ডিফ্লপ তৈরী করলো। প্রথম এই হাওয়াই মিঠাই বা কটনক্যান্ডি বা ক্যান্ডিফ্লপ এই ইতালীয়ানরাই বানিয়েছিল।
তারপর ১৬০০ শতকে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় হেনরিকে ভেনিস ভ্রমণের সময় যে মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল তারমধ্যে এই কটনক্যান্ডির মিষ্টির ডিশ টি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তাছাড়া ও শুনেছি ১৯শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকার টেনেসির একজন ডেন্টিস্ট উইলিয়াম মরিসন এই কটনক্যান্ডি কে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় করেছিল শিশুদের হাতে তুলে দিয়ে। যার মধ্যে মাত্র ৩০শতাংশ থাকে চিনি বাকীটা হাওয়া এবং সে হাওয়াই মিঠাই হাওয়ার মতই ছোটদের প্রিয় হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বুড়ির চুল নিয়ে গল্প চলতে চলতেই ,ওরা ও কয়েকটি ছোট রাস্তা পার হয়ে আবার বড় রাস্তার মোড়ে পিয়াজ্জা নাভোনাতে ফিউমি ফাউন্টেনের বিরাট চত্বরে পৌঁছয়। রোম কে যেমন বলা হয়ে থাকে সিটি অফ সেভেন হিলস তেমনি এতো চারিদিকে ঝর্ণা ধারা বইছে জলের এতো উৎস ছড়িয়ে আছে যে একে অনায়াসে বলা যায় সিটি অফ ফাউন্টেনস। যেখানেই যাও দেখবে পানীয় জলের কৃত্রিম উৎস ধারা। সারাদিন দেশী বিদেশি পর্যটকদের ভীড় । অবসন্ন সাঁঝ গড়িয়ে যায় পাখির পাখায় আলোক লুকিয়ে ধীর পায়ে রাতের আঁধার নামলে এই ফাউন্টেন গুলো সেজে ওঠে আলোর রোশনাইতে। এ এক অপূর্ব সৌন্দর্য। এক অদ্ভুত অনুভূতির টান। এখানের স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস মাতা মেরী তাঁর পরিশ্রান্ত তৃষ্ণার্ত সন্তান দের মুখে এই স্নিগ্ধ ঝর্ণার বারি ধারা তুলে দিয়ে স্বয়ং নিজে তৃপ্ত হচ্ছেন।
নাভোনাতে ফিউমি ফাউন্টেনে চারটে মহাদেশের নদীদেবতার মিলনের যে স্থাপত্য শিল্প টি রয়েছে গাইডবুকের বিবরণ থেকে এই জায়গাটি সম্পর্কে কিছু তথ্য শ্রী জেনেছিল। তা দেখে ঋষভ ও তিতির দুজনেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে তর্কে মেতেছিল। তখনই তিতিরের ম্যাক্সপ্ল্যাংকের সিনিয়র বন্ধু মিসেস কোর্ডিলিয়ার সাথে দেখা হয়ে যাওয়াতে তর্ক থামিয়ে আলোচনায় ফিউমি ফাউন্টেনের গল্প উঠে এলো। রোমান সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে কথা উঠতেই কোর্ডিলিয়া বেশ উৎসাহিত হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছিলেন। শ্রীময়ী তখন মুগ্ধ শ্রোতা। ফন্তনা ডেই কোয়াট্টা ফিউমি
প্রাচীনযুগে ফিউমি ফাউন্টেন প্রথমদিকে খৃস্টীয় প্রথম শতকে , ৮০ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট টিটিয়ান ফ্লেভিয়াস ডোমিটিয়ান্স রোমনগরীর জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। ঋষভ বলে যতদূর জানি সেকালে ক্রীড়া মোদী রোমানদের এই স্টেডিয়াম টি এথলেটিক্স প্রতিযোগিতার জন্য একটি বিশেষ উপযোগী গুরুত্ব পূর্ন প্রাঙ্গণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এবং কালক্ৰমে এই প্রাঙ্গন টি সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত স্কোয়্যার বা পিয়াজ্জা হিসেবে দান করা হয়েছিল। কোর্ডিলিয়া বলেন একবারে ঠিক বলেছেন। পোপের রাজত্ত্ব কালে পোপ ইনোসেন্ট দশমের ইচ্ছায় এবং শিল্পী বার্নিনি কর্তৃক এই স্থাপত্য শিল্প টি ১৬৫১ খ্রীষ্টাব্দে গড়ে উঠেছিল। খ্রীষ্ট ধর্মীয় জগতের সর্বেসর্বা তখন প্রধান গুরু পোপ সমস্ত পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব ও তাঁর প্রভুত্ব আরোপের চেষ্টায় তারই দৃষ্টান্ত হিসাবে ফন্টানা ডি কোয়াট্রো ফিউমি (fontana dei quattro fiumi ) মানে চারটি নদীর ফোয়ারার মিলন ধারা দিয়ে বিখ্যাত এক স্থাপত্য শিল্প সৌন্দর্য গড়ে তুলেছিলেন। যা এখনো ভারী সুন্দর,দৃষ্টি নন্দন। ভ্রমণার্থী কে কৌতূহলী করে তোলে।
শ্রী ইতিহাসের পাতায় ফিরে যায় বলে সে সময়ে সর্ব ক্ষমতা সম্পন্ন পোপের প্যালাজিয়া পামফিলি প্রাসাদের চত্বরে একটি বিশাল অর্দ্ধ চন্দ্রাকৃতি পুস্করিণীর মত জায়গাতে গড়ে ওঠেছিল এক সাদা ধবধবে চুনা পাথরের স্তূপের ওপর পৃথিবীর চারটে মহাদেশের বিখ্যাত চারটি নদী দেবতার মূর্তির ভাস্কর্য। চুনা পাথরের খনিজ জলের উষ্ণ প্রস্রবনে বিস্তর ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা চুনের ঢিবি স্তূপাকৃত হয়ে জমে উঠেছিল।
সেকালে পোপ নিজেকে প্রচার করতেন ঈশ্বরের প্রেরিত দূত তিনি এসেছেন নির্লোভ পূজারী রূপে। মানুষের হিত করতেই পৃথিবীতে তাঁর আগমন। তাই তিনি পুরোহিত। কিন্তু বাস্তবে দেখাগেল ক্ষমতা লোভী তিনিই অধীশ্বর হয়ে সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করে মুঠোয় পুরতে চান। এবং স্বীয় অনুশাসনের অধীনে এনে সর্বেসর্বা হবেন । রাজা সম্রাট এঁরা কিছুই নয় তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই প্রমানের জন্য তিনি এখানে পৃথিবীর চার মহাদেশের চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নদীর কল্পিত রূপ কে স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে আবদ্ধ করেন। আফ্রিকার নীলনদী ,এশিয়ার গঙ্গা ,ইউরোপের ড্যানিউব ,ও আমেরিকার রিও ডি লা প্ল্যাটার এই চারটি নদীর কল্পিত জল ধারা নিয়ে দেবতার মূর্তি গড়ে তোলা হলো। এবং প্রতিটি মূর্তির পাস থেকে ভিন্ন রূপে জলের ধারা প্রবাহিত হয়ে বয়ে চলেছে দেখালেন ।
মিসেস কোর্ডিলিয়া খুশি হয়ে শ্রী কে বলেন রোমের সভ্যতা ও ইতিহাসের কত খবর জানো তোমরা । কিন্তু ওই যে জলের ধারার মধ্যে বৃহদাকার চুনা পাথরটির কেন্দ্র বিন্দুতে একটি মিশরীয় বিজয় স্তম্ভ দেখছো ওটি ,একটি দীর্ঘ্যদেহী কলাম। আকাশের দিকে শির সটান উঁচু করে রয়েছে। এবং কলামের নীচের দিকে ঘিরে আছে লক্ষ্য করে দেখ কত রকম ভাস্কর্য্য। ক্রমশঃ
1 Comments
ভারী চমৎকার স্মৃতিচারণা সংগে বিদেশের পটভৃমিকা।এযেন মনে হয় বিদেশের মাটিতে পা না রেখেও চোখের সামনে সব স্পষ্ট দেখতে পাই।চিত্রা তোর লেখনী ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আরো এগিয়ে চল্।😊
ReplyDelete