জ্বলদর্চি

শিক্ষক দিবস (৫ই সেপ্টেম্বর)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

শিক্ষক দিবস (৫ই সেপ্টেম্বর)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ শিক্ষক দিবস (৫ই সেপ্টেম্বর) এবং সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন।
আমরা ছোট থেকে মা বাবার মত করে শিক্ষকের কাছেও অনেক কিছু শিখি। শিক্ষক কে বা কাদের বলব? এবং কেনই বা শিক্ষক দিবস পালিত হয়? তা আমরা জেনে নেব সবিস্তারে।
শিক্ষক হল, এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাঁদের জন্য আমরা প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে পারি। শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমেই নয়, আমাদের প্রাত্যহীক জীবনে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করেন  শিক্ষক। শিক্ষক আমাদের শেখান, কিভাবে আমাদের ভয়ের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে এবং কিভাবে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হয়। তাই বলা হয়, যে শিক্ষকরা সর্বদা প্রতিটি ছাত্রী- ছাত্রের হৃদয়ে উচ্চ সম্মানে থাকেন। এমনকি তাদের মাতা-পিতার চেয়েও উচ্চতর হয়ে থাকেন। তাই তো বলা হয়েছে,
" গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বরা, গুরু সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম, তস্ময়ী শ্রী গুরুভে নমহা"।
শিক্ষকরা সর্বদা প্রতিটি ছাত্রের জীবনের স্তম্ভ হয়ে থাকেন,তারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপভোগ করানোর জন্য ছাত্রদের অন্ধকার সময়ের মধ্যেও পথপ্রদর্শক হয়ে চলেন। শিক্ষকেরাই ছাত্রদের শেখান, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হতে। শেখান শৃঙ্খলা ও কর্তব্য পরায়ন হতে। শিক্ষকেরা তাঁদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যায় করেন, ছাত্রদের সঠিক পথে পরিচালনার জন্য।
বর্তমানে আমরা ভারতের বিশিষ্ট শিক্ষক,পন্ডিত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন উদযাপন করি শিক্ষক দিবসের মাধ্যমে(৫ই সেপ্টেম্বর)। তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ও দার্শনিক ।দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই মহান দার্শনিকের জন্ম দিনটিকে "শিক্ষক দিবস" হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনটি প্রত্যেক ছাত্রী-ছাত্র ও শিক্ষকদের  জন্য এক বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।  এই দিনে আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এমনকি মহামারী করোনার সময়ও শিক্ষকেরা আমাদের পাঠদান বন্ধ করেননি, তারা ভার্চুয়াল পারফর্মেও আমাদের শিখিয়েছেন, আমাদের ভালোবাসা দেওয়ার জন্য আমরা আমাদের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা আমাদের এই মারাত্মক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দিয়েছেন।

শিক্ষক দিবস হল, একটি অন্যতম উপলক্ষ, যা সমাজ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁদের বিশাল অবদানের জন্য শিক্ষকদের স্বীকৃতি স্বরূপ, শিক্ষক দিবস উদযাপন করা হয়।শিক্ষক দিবস হল, শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি বিশেষ দিন, যা বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন বহু দেশে ভিন্ন, ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয়। এদিন শিক্ষকদের, নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। ভিন্ন, ভিন্ন দিনে উদযাপিত হলেও ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখটিতে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়।

অমূল্য জ্ঞান-প্রদান এবং সঠিক পথে পরিচালনা করা পর্যন্ত একজন শিক্ষকের অবদান অপরিসীম, তাই শিক্ষকদের সম্মান উদযাপন করার জন্য প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর সারা ভারত জুড়ে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এই দিনটি ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়, ডক্টর রাধাকৃষ্ণন একজন পণ্ডিত শিক্ষক এবং একজন দার্শনিক ছিলেন তিনি মরনোত্তর ভারতরত্ন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত হন।দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কে সম্মান জানাতে ভারতে ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উদযাপন হয়। 
 সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন  জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৮ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর। 
ডক্টর রাধাকৃষ্ণন বৃত্তির মাধ্যমে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সহ তাঁর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯১৭ সালে তিনি 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন' নামে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং তারপর ১৯৩৯ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৫৪ সালে ভারতরত্ন লাভ করেন ১৯৬৩ সালে তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত সদস্য হিসেবে ভর্তি হন ব্রিটিশ রয়েল অর্ডার অফ মেরিটে। 
🍂
 যখন ১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তখন তাঁর ছাত্রেরা ৫ই সেপ্টেম্বর কে একটি বিশেষ দিন হিসেবে উদযাপন করার অনুমতি চান তাঁর কাছে। তখন তিনি সমাজের শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ৫ই সেপ্টেম্বর কে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করার জন্য তাদের অনুরোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, শিক্ষকদের দেশের সেরা মান হওয়া উচিত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে নাচ, গান ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে থাকে। এমনকি যারা স্কুল বা কলেজে নেই, তাদেরও জন্য শিক্ষক দিবস  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং শিক্ষকরা তাদের জীবনে যে গভীর প্রভাব ফেলেছে, তার স্বীকার করার একটি দিন হিসেবে সুন্দর নিদর্শন শিক্ষক দিবস। শিক্ষকরা মানসম্পন্ন শিক্ষার ভিত্তি। এবং প্রায়শই তাঁরা শিক্ষার্থীদের সাফল্যে গর্বিত হন।
শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক দিবস হল, এমন একটি দিন, যা তাদের ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকল শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর দিন শিক্ষক দিবস।  জ্ঞান এবং মূল্যবোধ প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষকরা ছাত্রদের গাইড করে এবং তাদের শক্তিশালী করে তোলে। শিক্ষকরা আমাদের ভবিষ্যৎ গঠন করে এবং আমাদের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।। 
এই দিনটি বিভিন্নভাবে স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে উচ্ছ্বাস ও উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। এই দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরা হয় এবং শিক্ষকদের সম্মান করে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী এই দিনে তাদের শিক্ষকদের একটি হৃদয় গ্ৰাহী নোট বা হাতে তৈরি কার্ড ইত্যাদি দিয়ে থাকে ।এই দিনটি সেই সমস্ত মহান শিক্ষকদের স্মরণ করে চিহ্নিত করা হয়, যাঁরা তাদের কাজের মাধ্যমে একটি চিহ্ন রেখে গেছেন এবং প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

প্রত্যেকটি দিবসের একটি করে থিম থাকে। ২০২৪ এর শিক্ষক দিবসের থিম হল, "শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন, স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করা"
শিক্ষক দিবস গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কারণে, এই দিবসের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি,কঠোর পরিশ্রম এবং শিক্ষাবিদদের মানুষের পাশাপাশি সমাজের উপর যে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে, তা সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ দেয়। এটি জোর দেয় যে, শিশুদের মন এবং ভাগ্য গঠনে শিক্ষাবিদরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
 আমি আমার সকল শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাতে চাই,আমার জীবনের রোল মডেল হিসেবে কাজ করার জন্য এবং আমাদেরকে ভালো মানুষের পরিণত করতে সাহায্য করার জন্য শিক্ষক দিবসে তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই।
আজকের দিনে এই লেখার মাধ্যমে প্রণাম জানাই আমার সকল শিক্ষকদের।

Post a Comment

0 Comments