বার্লিনের ডায়েরি -- ৪৫ পর্ব চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(রোমের পথে পথে / ত্রেভিফন্তানা।)
অতীতের তীর থেকে নিশুতি রাতে ধেয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসের মত স্মৃতিগুলো শ্রীময়ী কে তাড়িয়ে বেড়ায়। ঝোড়ো ভেজা বাতাস খোলা জানলা দিয়ে আছড়ে পড়ে ওর লেখার টেবিলে। এক পশলা বৃষ্টি শ্রীময়ীর সুচিন্তিত রোমান ইতিহাসের গল্প লেখা খাতার পাতা এলোমেলো করে ভিজিয়ে দিচ্ছে। রাত বাড়তে থাকে শ্রী জানলা বন্ধ করে আপন ভাবনার সাগরে অবগাহন করে তলিয়ে যায় অতলে। সমগ্র বিশ্বের দরবারে ইতালী মূলত প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির সংমিশ্রনে গঠিত এক প্রাচীন সভ্যতা। বহু সহস্রাধিক বছরের সংস্কৃতির প্রাচুর্য্যের নিদর্শন ও প্রাচীন ইতিহাস বুকে বয়ে নিয়ে ও এ সাম্রাজ্য স্তব্ধ মূক বধির নয় বরং ভারী প্রাণবন্ত।
ভূমধ্য সাগরের বিশালতার পাশে সপ্ত শৈলীতে আবরিত ইউরোপের রোমনগরীর সমৃদ্ধ শালী ঐতিহ্য প্রাচীন শিল্প ও সংস্কৃতির শুধু ধারক নয় ও বাহক ও বটে। স্থাপত্যে ও অহংবোধে উজ্জ্বল এর অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। অন্ততঃ আড়াই হাজার বছর আগের পুরোনো রোমান সভ্যতা ছিল ইউরোপের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ একটি ঐতিহ্যশালী সমৃদ্ধশালী নগরী। অতীতে যেমন রোম ইতালীর প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমানে ও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। প্রাচীনত্ব কে বয়ে নিয়েই আধুনিক রোম কালের যাত্রার পথে এগিয়ে চলেছে। কোথায় যেন মিশে আছে নতুনের সাথে পুরোনোর এক অবিচ্ছেদ্য মেলবন্ধন। সাত পাহাড়ি প্রহরায় সুরক্ষিত এ শহরের চড়াই উৎরাই পার হয়ে ত্রেভিফন্টনার স্পট দেখার উদ্দেশ্যে পথে চলতে গিয়ে শ্রীময়ীর সেদিনের পথ বিভ্রাটের কথা মনে পড়ায় একাকী আপন মনে কলম হাতে হো হো করে হাসিতে মাতলে , ঋষভ চারদিকে তাকিয়ে ভারী ব্যস্ত হয়ে ওঠে। খোঁজে হঠাৎ এমন হাসির কারণ ? রহস্যের সমাধান হয় না ,বিরস মুখে ফিরে যায় । বাইরে অঝোর ধারায় শ্রাবণরাতে বৃষ্টির ঝমঝমানির সাথে অসময়ে শ্রীর স্মৃতিচারণ চলতে থাকে খাতার পাতায়। যদিও ওর পরিচিত পৃথিবী তখন সুপ্ত অচেতন। প্রাচীন রোম নগরের ঐতিহ্য। সেদিন রোমের বাস টার্মিনাসের সামনে রাস্তার মোড়ে যেখানে ছোটো বড় পাঁচ পথের মোড় একত্রিত হয়েছে সেখানে ছিল কারুকার্য্য ময় দৃষ্টি নন্দন শহরের একটি বিশাল প্রাসাদ ভবন। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল রোমের ঐ নিখুঁত অপরূপ স্থাপত্য শৈলী থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব। সম্ভবতঃ এই ভবন টি সমগ্র রোমের পরিবহন সংস্থার গুরুত্ব পূর্ণ কার্য্যালয় বা অফিস ছিল। বিশাল প্রাসাদটি বাইরে থেকে কিছু অংশ প্রদক্ষিণ করে ওরা অলিগলি পেরিয়ে শহরের ত্রেভিফন্টোনার দিকে চলেছিল। চতুর্দিক থেকে এলোমেলো পাহাড়ি ঠান্ডা হাওয়ায় ওর সম্বলপুরী সিল্কের শাড়িতে পা জড়িয়ে যাওয়ায় বারবার পিছিয়ে পড়ছিল।এবং আদ্রিজাদের দেখতে না পেয়ে সামনের অপ্রশস্ত সরু বাঁকাগলি পথে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। প্রায় দশ বারো মিনিট কেটে গিয়েছে হতাশ হয়ে অলিগলি ঘুরে জনমনুষ্য বিরল বড়ো রাস্তায় এসে ওর চোখ ফেঁটে জল উপচে পড়তে চায় ,গলির গোলোক ধাঁধায় কোন পথে এলো ও ঠাওর করতে পারে না। বুঝতে পারে স্রেফ পথ হারিয়েছে।
ত্রেভি ফন্তানা
রাস্তায় যে কয়েক জন ইতালীয়ান পথচারি ছিল তাদের কে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই ওরা ভাষা বোঝে না। সেই মুহূর্তে শ্রীময়ীর ভয়ার্তস্বরে মাতৃভাষার উচ্চারণে উচ্চারিত ইংলিশ শব্দরাশি ওরাই বা কেমন করে বোঝে ? খুব দুশ্চিন্তায় গলা শুকিয়ে কাঠ। টেনশনে রাস্তার নাম টা ও ভুলে গিয়েছে । ভয়ে দ্বিধায় উৎকণ্ঠায় চোখে শুধু জল আসছে। হতাশ হয়ে এক রোমানিয়ান বয়স্কা ভদ্রমহিলার দেখা পেয়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় সদ্য তোলা প্রাসাদ ভবন ও বাসষ্ট্যান্ডের ছবি দেখাতে তিনি ইশারায় অপর দিকের গলি ধরে পিছিয়ে গিয়ে রাইট টার্ন নিতে বললেন। শ্রী যেন অগাধ সমুদ্রে ভাসতে থাকা নাবিকের মত খড়কুটো অবলম্বনে তীরের সন্ধান পেয়েছিল। উদ্ভ্রান্তের মত সেদিকেই চলতে শুরু করলে এবং পাঁচ সাত মিনিট পরই দূর থেকে ঐ বিল্ডিংটির সাদা মাথা দেখতে পেয়ে মন টা ভরসা পেলো। বেশ খানিকটা পথ এগোতেই লাল কোট ব্রাউন টুপি মাথায় তিতির কে দেখলো মাথার ওপর হাত তুলে সাদা রুমাল উড়িয়ে রেসকিউ বাহিনীর সদস্যের মত ছুটে আসছে। রাগে দুশ্চিন্তায় ওর ফর্সা মুখটি পাকা টমেটোর মত লাল। শ্রীময়ীর বুক তোলপাড় করা ধুকপুকুনি একটু কমলে বলে , সরি-সরি তিতির , আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
🍂
আরও পড়ুন 👇
ভীষণ হাঁপিয়ে বেচারা তিতির কোনো মতে দম নিয়ে বলে ,তুমি কেমন করে এ পথে চলে এলে? এতো সহজে মোটেই ছাড়া পাবে না তুমি ।" দাঁড়াও তোমার খুব শাস্তি পাওনা। অদ্রিজার ভেজা চোখথেকে জল গড়িয়ে পড়ে। শ্রীময়ী মৃদু হাসে। ওরই শাসনের পুনরাবৃত্তি যে মেয়ের গলায় । সে যাত্রায় ঋষভ নিজের রাগ কন্ট্রোলে রেখেছিল। স্বভাব সুলভ গাম্ভীর্য্য বজায় রেখে বলেছিল ,হাতে বেশী সময় নেই চল সামনেই ত্রেভিফন্টানা স্পট। একটু জোরে হাঁটলেই পৌঁছে যাবো।
শ্ৰীময়ী আস্তে হাঁটলেও বেড়াতে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে শহর পরিক্রমায় বেশ অভ্যস্ত। যেমন প্রাগের শহরটি ওরা সারাদিন এমনকি রাত পর্যন্ত সানন্দে হেঁটে দেখেছিল। তবে প্রাগ ছোট্ট শহর আর দ্রষ্টব্য জায়গা গুলো বেশ কাছাকাছি এবং অন্বেষণ সাথে থাকায় একটুও অসুবিধা হয় নি। কিন্তু রোম বিশাল বড় শহর। এই শহরের রাজপথ তেমন বিরাট চওড়া বা খুব প্রশস্ত নয় ,রাস্তাগুলো ও দেখতে একই রকম। ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। অদ্রিজার স্বগতোক্তি-- এ শহর পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে দেখার চিন্তা অকল্পনীয়। এখানকার স্থানীয় লোকের ভাষা বোঝার উপায় নেই। গুগলের সহজ নির্দেশ বুঝে ম্যাপ ফলো করে অপরূপ কারুকার্যে সাজানো ভিঞ্চলির সেন্টপিটার্স গীর্জার সামনে ওরা এসেছিল। সেখানে মাইকঞ্জেলোর অপরূপ সৃষ্টি মোজেসের মূর্তিটি ভারী মনোগ্রাহী। ঋষভ বলে এই মূর্তি টি অবশ্য পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের সমাধির জন্য নির্মিত হয়েছিল।
এখানে রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ প্রাইভেট কার। তারই মধ্য দিয়ে পাবলিক বাস ও চলছে। শহরের কত দৃশ্য বাড়ি গুলো সটান রাস্তা থেকেই খাড়া উঠে গিয়েছে। উঁচুবাড়ির মাঝে ঢালু ও অপ্রশস্ত পথ টি ইউরোপের অন্যান্য শহরের মতই কোবল্ড পাথর দিয়ে বাঁধানো।স্ট্রীটগুলো ঝকঝকে বাঁধানো মসৃণ। রং বেরঙের গরম পোশাক মাথায় টুপি চোখে সানগ্লাস হাতে ক্যামেরা নিয়ে ভ্রমণার্থী মানুষেরা চলেছে ত্রেভিফন্টানা দেখতে। অদ্রিজা ওদের ফলো করে প্রায় পাঁচ মিনিট মত হাঁটার পর একটি পিয়াজ্জার বা প্রশস্ত চত্বরের কাছে এলো। এক স্থানে অনেক লোকের ভীড়। ছোটো ছোটো সব স্টলে কত গিফ্টের জিনিস --পুতুল ,আয়না ,পর্দা ,লেসের কাজ , শো পিস্ খেলনা ঘর সাজানোর ফুল। এই ঐতিহাসিক শহরের মেমেন্টো। রাস্তার ওপর ছাদ খোলা রেস্তোরাঁতে লোক জন কফি স্নাক্সের আড্ডায় টাইম পাশে মত্ত। ফুটপাতের ধার ঘেঁষে চেয়ার টেবিল পেতে স্ট্রীটফুডের দোকান , খাবারের গন্ধ নিজেদের প্রিয় চেনা শহরের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে ওরা বেশ খুশি হয়েছিল।
প্রাসাদ নগরী রোম।
অল্প সময় পরেই ওরা তিনটি রাস্তার সংযোগস্থলে ত্রেভি অর্থাৎ তিন রাস্তার মোড়ে স্থাপিত ত্রেভিফন্টনা ইতালীর বিশেষ দর্শনীয় স্থানটিতে পৌঁছলো। একটা বেশ উঁচু বাড়ির দেওয়ালে নানা রকম ভাস্কর্য্য অনেক গল্প গাঁথা কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে। প্রায় ৮৬ ফুট উঁচু এবং ১৬১ ফুট চওড়া এই ঝর্ণা ধারাটি দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বিশালতায় এবং শিল্প নৈপুণ্যে চমৎকার।ওপর থেকে সিঁড়ির মত করা ধাপে ধাপে উচ্ছল জলরাশি গড়িয়ে পড়ছে। শ্রী ভেবেছিলো কোনও রুক্ষ পাহাড়ের গা বেয়ে প্রাকৃতিক নির্ঝরের নিরন্তর ঝরে পড়া দেখবে। তবে তা নয় ,১৭শতকের মধ্যবর্তী সময়ের গ্রীক পৌরাণিক চরিত্রদের নিয়ে বারোক নক্সা করা স্থাপত্য শিল্পের একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া চমৎকার নিদর্শন।
জলাশয়ের গভীরের থেকে সমুদ্রের দেবতা নেপচুন উত্থিত হলেন। তার দুই পাশে বিশ্বাস ভাজন ট্রাইটনেরা। যার বাম দিকে প্রাচুর্য্য ও দক্ষিণে সুস্বাস্থ্য মূর্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। রোম নগরীর ব্যারোক শিল্পের ফোয়ারা গুলোর মধ্যে সুবৃহৎ এবং জনপ্রিয় অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই ফাউন্টেনটি। প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক স্বরূপ বিশাল গুরুত্বপূর্ণ। দেশ দেশান্তর থেকে প্রতিবছর অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন এই জলধারা দেখতে। এবং নিজেদের আশা আকাঙ্খার পূর্ণ করার জন্য স্বীয় বিশ্বাসে স্থির থেকে মানত করেন এখানের জলকুন্ডে ।
মাথার ওপরে হালকা মেঘের খেয়ালী আনাগোনা শীতের জোরদার হাওয়া বইলেও পথ চলার পরিশ্রমে সে বেশ আরাম প্রদ। ওরা সামনেই এক ফাঁকা জায়গায় বসলে ঋষভ মজা করে শ্রী কে বলে এখানে যেন আবার কোনো নতুন এডভেঞ্চার করতে অজানা পথে হাঁটতে যেও না। এত ভীড়ে রাস্তা হারিয়ে ফেল্লে আর খুঁজে পাবো না।' শ্রী ও প্রত্যুত্তরে বলে,স্যার ! ভারী বয়ে গেল আপনার। চিন্তা নেই,এখানে কত জন বাংলাদেশী রয়েছে দেখেছেন ? ওরা ঘুরে ঘুরে জিনিস বিক্রি করছে।ভাষার সমস্যা মোটেই হবেনা, ওরা সব রাস্তা চেনে।আমি যেই বলবো আমার তিতির ,ঋষভ হারিয়ে গেছে খুঁজে দাও ! ওরা ঠিক খুঁজে এনে দেবে। শ্রীর বলার ধরণে অদ্রিজা হেসে কুটিপাটি।
শ্রীর অভিযোগ করে,আমাকে এক তরফা দোষ দিও না। তোমরা ও সমান দোষে দোষী। বেশ কেয়ারলেশ ছিলে। নিজেদের খেয়ালে এগিয়ে গিয়েছো পিছন ফিরে তাকাও নি। আমি আসতে হাঁটি জেনেও তোমরা দেখোনি আমি আসছি কি না? প্রথমেই যদি খেয়াল করতে তা হলে কেউ পথ হারাতাম না। তর্কের দরকার নেই বরং ত্রেভিফন্টনার গল্প বলি শোনো ! তিতির বলে জুনেভের কাছে কিছু শুনেছিলাম ,বরং তুমি বলো।
শ্রী ততক্ষণে ওর নোট খাতায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে , মানস চক্ষে কল্পনায় ছবি আঁকে । সেই ১৭৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই ফাউন্টেনটির নির্মাণ কার্য্য সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাঁর মূল নক্সাকারী শিল্পী এবং স্রষ্টারা ছিলেন নিকোলা সালভি এবং পান্নিনি। রোম সৃষ্টির সেই আদি কালে রণ ক্লান্ত বিধ্বস্ত রোমের তৃষ্ণার্ত সৈন্যদল পাহাড় ডিঙিয়ে এই পথে ঘোড়া ছুটিয়ে ফেরার সময় এসেছিল একটু তৃষ্ণার জলের সন্ধানে। পথিমধ্যে একজন সুবেশা সুন্দরী যুবতী কন্যার সাথে দেখা হলে সে জলের সন্ধান দিয়ে এই ঝর্ণা ধারার উৎসর সামনে তাদের মায়াজালে জড়িয়ে নিয়ে এসে স্নিগ্ধ শীতল জলপান করিয়ে পরম তৃপ্তি দান করে ছিলেন। সেই থেকে প্রাচীন রোমের সমস্ত রাস্তার মোড়ে এই ফন্টনা ছিল পথিক দের জলপানের উৎস। তৃষ্ণার শান্তি জীবনদাত্রী দেবী র স্নেহ স্পর্শে ধন্য পানীয় জলের ধারা। এবং শহর ব্যাপী সর্বত্র নির্ভর যোগ্য পানীয় জলের উৎস হিসাবে প্রচুর কৃত্রিম ফন্টানা বা ফোয়ারা দিয়ে শহর সাজানো হয়েছিল। তবে এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ এবং সুন্দর এই ত্রেভিফন্টানা।
কিছু টা দূর থেকে অদ্রিজা লক্ষ্য করলো কত উৎসাহী মানুষের মাথা সেখানে জলাধারের সামনে জড়ো হয়ে রয়েছে। সবাই ঝুঁকে আছে কুন্ডের দিকে চেয়ে। ঐ জলাশয়ে বহু দর্শনার্থী কেমন খুচরো মুদ্রা ডান হাতে নিয়ে বাম বাহুর ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে একটি বিশেষ কায়দায় মুদ্রাটি জলে নিক্ষেপ করছে। ওদের চিরন্তন বিশ্বাস ত্রেভির জলে মুদ্রা ফেললে আবার তারা রোমে ফের বেড়াতে আসতে পারবে। তবে তা কত টা সত্য কে জানে ? শ্রী ইচ্ছে হয়-- বলে,চলো ঠিক ওমনি করে রোমে আবার আসার জন্য আমরাও মুদ্রা ফেলবো। তিতির ও হেসে বলে এখন বেকার মা মুদ্রা ফেলে লাভ নেই। শুনেছি নেক্সট কনফারেন্স ও রোম নগরের কাছেই কোথাও আসতে হবে। ঋষভ বলে সারা ইতালী জুড়ে এতো সুন্দর দেখার জায়গা থাকতে ও রোমে বারবার মানুষ কেন ফিরে আসতে চায়.?
শ্রীময়ী ফিরে চলেছে অতীতের বর্ণ হীন ইতিহাসের পাতায়। প্রাচীন কালে এখানে যে ছোট্ট জনপদ টি গড়ে উঠেছিল যাকে সুসভ্য গ্রীকরা ইতালীয়া বলে ডাকতো। ইতালীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সেই সময় থেকেই ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশ ব্যতিক্রমী ছিল। রোমান্টিক রোম সাম্রাজ্যটি টি তখন ও স্বর্গীয় সৌন্দর্যময় ভ্রমণের আদর্শ রাজ্য ,ঐতিহ্যশালী শিল্প সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে এ শহর অপরূপা। পাহাড় নদী ঝর্ণা বন সমুদ্র যা কে দেখতে চাও সব যেমন দেখতে পাওয়া যাবে , তেমনি বিশ্ব ঐতিহ্যের ইতিহাস বিজড়িত স্থান গুলো আপন মহীমায় ভ্রমণ পিপাসু মন কে চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। প্রাচীন সভ্যতার এই অনন্য নগরীতে আত্মবিস্মৃত হয়ে অনায়াসে হারিয়ে যাওয়া যায়। রোমনগর দেখার প্রবল আকাঙ্খায় দর্শনার্থীরা তাই বারবার এখানে ফিরে আসতে চায় শিকড়ের সন্ধানে । পিতা কন্যা নীরব শ্রোতা।শ্ৰীময়ীর ইতিহাসের গল্প কান পেতে শোনে। ক্রমশঃ
1 Comments
অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ কাহিনী। না গিয়েও মনে হচ্ছে চোখের সামনে সব ভাসছে এমনই বর্ণনা। ভীষণ ভালো ধারাবাহিক।
ReplyDelete