শাম্ভবী পাল
সম্পর্ক
সম্পর্কগুলো
আগুন মাখায় গায়ে।
ফোসকা পড়ে,
বেরিয়ে পড়ে শরীরের লাল দগদগে মাংস।
দূরদূরান্তে ভেসে যায়
হৃৎপিন্ডের আধপোড়া গন্ধ।
লালা ভরা মুখ নিয়ে ছুটে আসে
মাংসলোভীর দল।
তবুও একটু উষ্ণতার লোভে
সেই সম্পর্কের কাছেই ফিরি।
তবুও
ঘামে ভেজা জীবন-ক্লান্ত মানব অস্তিত্ব।
লোনা জল শরীরের অন্ধকার অলিগলি বেয়ে
পৃথিবীর দিকে নামতে থাকে।
পায়ের সীমানা ছাড়িয়ে ঢুকে যায়,
শুকিয়ে যেতে থাকা হলুদ ঘাসের শিকড়ের ফাঁকে।
শিকলে বাঁধা বিপন্ন DNA;
বোবা যন্ত্রণায়
তবুও মানুষ খুঁজে ফেরে,
একমুঠো মহাজাগতিক আলো।
নষ্টনীড়
ক্ষয়ে যাওয়া দাম্পত্যের
বেসুরো গান গাইতে গাইতে
ক্লান্ত দম্পতিরা ...
রাতের অন্ধকার—
টিকটিকিরা দেওয়ালে কান পেতে শোনে
বিষণ্ণ দম্পতির দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।
আপাত নিরীহ কুনোব্যাঙের দল
বেরিয়ে পড়ে শিকারের খোঁজে ।
বীভৎস শব্দে মাতিয়ে বেড়ায়
অন্ধকার ঘরের স্যাঁতসেঁতে কোণ।
দম্পতিরা চমকে চমকে ওঠে,
বিরতি পড়ে যান্ত্রিক সঙ্গমে।
অসুস্থ শরীরী শীৎকার থেমে যায়
আরশোলার সাবধানি চলাফেরায়।
সঙ্গম শেষে
এঁটুলির মতো আটকে থাকা শরীরগুলো যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
মশারির মধ্যে জমতে থাকে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘন বাষ্প।
তবুও
ভাঙাচোরা গলায় জীবনের বেসুরো গান তারা গেয়েই চলে...
একজনের জন্য
মানুষটি জানে না,
তার সামনে দাঁড়ালে
আমি ত্রয়োদশী হয়ে যাই।
ষোড়শী নয়, অষ্টাদশীও নয়,
শুধুই ত্রয়োদশী––বড্ড আদুরে-অবুঝ।
সে মানুষ জানেই না,
সে কাছে এলে আমি নদী হয়ে যাই।
পাহাড়ের তিস্তা নয়,
বর্ষার কংসাবতীও নয়,
শুধুই স্বচ্ছতোয়া এক ছোট্ট নদী– অসহ্য স্বচ্ছ।
সে অবুঝ বোঝে না,
তার বেহিসেবি ছোঁয়ায়
আমি শ্রাবণের ধারা হয়ে
উর্বরা করে দিতে পারি পৃথিবীর বুক।
মানুষটা
হয়তো কোনদিনই জানবে না,
তার অনুভবে আমি তৈরি করতে পারি
আরও একটা সৌরজগৎ।
0 Comments