অজিত দেবনাথ
ধাইমা
কোথায় খুঁজে পাবো তোমাকে...
পাহাড়ি পথে গিয়ে দেখেছি
নির্বোধ পাথরের কিছু ম্রিয়মান মুখ
আর কালো পিঁপড়ের সার বেঁধে রহস্য সন্ধান
মেঠো আলপথ ধরে হিমানী সকালে ফসলের মাঝে গিয়ে দেখি
পাকা ধানের শিরা বেয়ে নেমে আসা বাক্যহীন বিষাদ ও ব্যথা
ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে স্মৃতির রোদ্দুরে ক্যানভাস
হে ক্ষিপ্র খরস্রোত, তোমার রিনরিনে ধ্বনির ভেতরে ঢুকে আমি তো খুঁজেছি আয়ুপথ
কোনো কলতান নেই আজ, এখনও খাদের কিনারে আছড়ে পড়েনি ঘর-গেরস্তালির গোছানো আলপনা,
আকাঙ্ক্ষার মেঘ জমে, জমে কোনো গোপন অছিলায়
নিঃসঙ্গ জোৎস্নার আঁচড়ে উইঢিপির
প্রাচীন আঁধার ভেঙে যায়, চেনা উৎসবের ঢেউয়ে
কোথায় খুঁজে পাবো তোমাকে....
আমি নষ্ট হয়ে যাই ধর্মান্ধের চিৎকারে
ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যাও রেলিং ধরে ফিরে আসে অপ্রাপ্তির নিদ্রিত সাজঘরে
পাখিরাও উড়ে যেতে যেতে বলছে,
ফিরে আসো, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকো না,
জীবনের ফসল ঘর আজ প্রসবযন্ত্রণায় কাতর
ধাইমা, তুমি ফিরে আসো....
🍂
স্মৃতি
এখনও রয়েছ, মসৃণ দেয়ালের উপর দাঁড়িয়ে
ঝুলকালি-মাখা দীর্ঘশ্বাস ও নৈকট্য নিয়ে, দূরের জানালা থেকে একফালি রোদচ্ছায়া অবাক তাকায়
রয়েছ ঘরের ভেতরে, ছায়ার আড়ালে অস্পষ্ট মুখ, প্রচ্ছদের ভেতরে আটপৌরে প্রাণের ব্যাকুলতা
দেখি, এক নিঃশ্বাসে হেঁটে যায় খড়খড়ির সমীপ বেয়ে-
মুহূর্তে ঘরের আনাচ-কানাচ জেগে ওঠে মহাসমারোহে।
ছারপোকার তোশকে কাটানো জীবন খুঁজে
পায় না তোমার হাঁ-মুখের রেখায় মিশে আছে
কতটুকু অপলক দৃষ্টি
অথৈ অন্ধকারে সর্বস্ব বাজি রেখে কীভাবে বুভুক্ষু টিকটিকি ঝাঁপিয়ে পড়ে
স্থির হয়ে বসে থাকা মূক ও বধির অন্ধকারের ওপর
এসব জানে না, যাদের আত্মজীবনীর ভেতরে অনূদিত হয়নি গোপন অশ্রুবিন্দু।
ঘুড়ি
ওই যে ঘুড়িটি আকাশে উড়ল
ধৈর্য ধরে অনেকক্ষণ শূন্য হাওয়ায় ঘুরপাক খেল
কেউ ওকে ওড়া শেখায়নি
তবু সে উড়ে যায়, কত রং তৈরি হয় ওই পক্ষিবলয়ে
রংগুলো এদিক-ওদিক উড়ে ঋষির চোখ ছুঁয়ে
নেই স্মৃতি, নেই ঠিকানা, ফিরে আসার দ্যোতনা নেই খ্যাপা বাউলের আখড়ায়
একটাই জীবন ওই হাপরের মতো কেবলই ওঠানামা করে
ধুলোর ঝড় ওঠে, বিশ্বাসে ভ্রম তৈরি হয়
ঘুড়ির উপর ধুলোর দিকচিহ্নহীন ঝাঁক নেমে আসে
তারপর ক্ষিপ্র হাওয়ায় লাট ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে
কেমন যেন অন্যমনস্ক, ধুলোমাখা, বিবর্ণ
ওই রং, ওই আবর্ত এক মুহূর্তে বিসর্জনের তারানা হয়ে ওঠে
সবাই চিৎকার করে বলে
কীভাবে এই চলচ্ছবির মৃত্যু হল
সমস্ত নিসর্গচিত্রের বর্ণশ্লোক ভেঙে!
আমি নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে থাকি উৎসব-সমারোহের শেষেও
0 Comments