জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/সুদেব কুমার ঘোষ

 গুচ্ছ কবিতা           
        
সুদেব কুমার ঘোষ 

      
আমাদের দেশ

উত্তরেতে হিমের আলয়
দখিনে জলাধিপতি __
পুবে আছে মেঘের আলয়
পশ্চিমে সাগরবতী।
প্রবল শীতের কবল থেকে
রক্ষা করে দেশ,
হিমালয় দাঁড়িয়ে আছে
আড়াল করে বেশ।
পুণ্য গঙ্গা বহে চলে 
কলুষনাশিনী ,
শস্য শ্যামলা করে তোলে
যেন সাক্ষাৎ জননী।
উত্তরেতে গমের ভাঁড়ার
দক্ষিনেতে কফি__
রপ্তানিতে চায়ের কদর
সারা বিশ্বব্যাপী।
শিক্ষা- দীক্ষা প্রাচুর্যময়
জ্ঞান বিজ্ঞানে ভরা।
নোবেল জয়ী আছে দেশে
সবার মনে ধরা।
কল কারখানা ছড়িয়ে আছে
সম্পদে পরিপূর্ণ।
সবাই মিলে পরিশ্রমে
দেশ নয় আর শীর্ণ।
প্রাচীন ভারত ছিল মহান
নগর ছিল সভ্য,
ইতিহাস সেই কথা বলে
যা আজ সহজলভ্য।
রামায়ণ আর মহাভারত
আরো কত মোহিনী।
লেখা আছে যুগে যুগে
ভারতেরই কাহিনী।
নানান ভাষা নানান জাতি
নানান পরিধান
বিদ্বেষ নাই কারো সাথে 
মিলে মিশে  হয়েছি মহান।
ভিন্ন দেশের সাথে মোদের 
সম্পর্ক মধুর__
দেওয়া নেওয়ার মধ্যে তারা
নয়কো মোটেই সুদূর।
একই সূর্য্য একই চন্দ্র
সারা বিশ্বের আলো
এক বিশ্ব গড়ে উঠলে
সবার হবে ভালো।
নয়কো হিংসা নয়কো দ্বেষ
নয়কো যুদ্ধ হানি,
বন্ধু হয়ে থাকবো মোরা
এইতো মোদের বাণী।


বাঙালির খাদ্য
               
আমরা বাঙালি ডাল ভাত খায়
আলু ভাতে মাছ মোয়া ।
ছ্যাচড়া এবং পোস্ত যোগে
কাতলা মাছের কালিয়া ।
  ডাঁটা যোগে শুক্ত যদি
প্রথম পাতেই আসে ---
শুরুটা ভালোই ভোজনে জমিবে
 তিক্ত করোলা  রসে ।
মাছের পদের ঝোল ঝাল টক
আছে কত রকমারি ।
সবার উপরে টেক্কা দেবে
ইলিশ মাছের পাতুরি ।
পাতলা ঝোলের মাংসের পদ
নরম গরম ভাতে ---
কী উপাদেয় স্বাদ আহা মরি !
জল আসে রসনাতে ।
ভাদ্র মাসের শনি - মঙ্গলে
ঘরে ঘরে অরন্ধন ।
পান্তা ভাতের জুড়ি মেলা ভার
কে করিবে খন্ডন।
শীতের সকালে মিষ্টি রোদেতে
পাওয়া যায় যদি পিঠে ---
নলেন গুড়ে ডুবিয়ে মাখিয়ে
ভরপুর স্বাদে মিঠে ।
মশলা মেখে মুড়ি সহযোগে
তেলে ভাজা যদি পায়
বড় উপাদেয় মধুর খাবার
বিশ্বে কোথাও নাই ।
মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের
খেলা যদি হয় ফুটবল ---
চিংড়ি - ইলিশে গোল বেঁধে যায়
হার - জিতে হয় ফয়সল ।
খাদ্য - রসিক বাঙালির পাতে
কত সুস্বাদু ব্যঞ্জন ।
 অবহেলা করে রেখেছে সরিয়ে
আনিছে বিদেশী রন্ধন।
ফ্রায়েড রাইস চাওমিন আর
বিরিয়ানি পিৎজা ।
ইডলি কাবাব ধোসা মোমো 
আর সাথে মোগলাই ভাজা ।
পোশাকের মতো খাবারে এসেছে
বিদেশী রীতির চল ---
দেশীয় খাবার বর্জন করে
কত বাহাদুরি ছল  ।
স্থান কাল ভেদে খাবার হয়েছে ---
প্রকৃতির বৈচিত্র্যে ।
যার যা খাবার মুখে তুলে নাও
তৃপ্তিতে খাও একত্রে।


পালকীর কথা

পালকী ও পালকী ---
অতীত দিনের মেঠোজাহাজ
পথে - ঘাটে উঠত আওয়াজ
ছয় বেহারার কাঁধে চড়ে
ছুটে চলায় ছিল রেওয়াজ।
হুন্ হুনা গান সুরের ধ্বনি
শুনতে তুমি পাওকি ?

পালকী ও পালকী ---
তোমার ঘরে চড়ত বসে
 বৌ - পড়সী বর ও কনে।
হাকিম বদ্যি মহারাজা
তারাও চড়ত তোমার কোণে।
দূর দূরান্তে চলত তারা---
দেখতে তুমি পাওকি ?

পালকী ও পালকী ---
বিয়ের সময় তোমার কদর।
পান সুপারি সাজিয়ে মালা
 নানান তত্ত্বে বরণ ডালা।
অশ্রুসিক্ত কনের চক্ষু 
দেখতে তুমি পাওকি ?

পালকি ও পালকি ---
ছুটতে তুমি গ্রাম ছাড়িয়ে
মাঠ পেরিয়ে ক্ষেত পেরিয়ে
নদী নালা টপকে তুমি
ছুটতে তুমি আগ বাড়িয়ে।
গ্রামের চিত্র কত বিচিত্র
চোখের সামনে ভাসে কি ?

পালকী ও পালকী ---
যন্ত্র  - বাহন এসে তোমায়
স্থান দিলনা এই দুনিয়ায়।
শব্দে ধোঁয়ায় ভরিয়ে তুলে
চতুর্দিকে দূষণ ছড়ায়।
হাঁপিয়ে ওঠে মনুষ্যজন
দুঃখ তুমি পাওকি ?

পালকী ও পালকী ---
অতীত দিনের স্মৃতি তুমি।
অবদানে তুলনাহীন।
গানে - ছড়ায় তোমায় স্মরি ---
বারংবার তোমায় নমি।
 মনে রেখো যেথায় থাকো 
আমরা তোমায় ভুলব নাকো।
    

Post a Comment

0 Comments