জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ বিশ্বজিৎ কর

গুচ্ছ কবিতা 
বিশ্বজিৎ কর 


কবি ও কলম


স্বপ্নমাখা রাতগুলো ফিরে আসে 
সুঘ্রাণ নিয়ে,রাম-রহিমের আলিঙ্গনের!
অল্পতে খুশি না হওয়া দামোদর শেঠের দল,
ত্রাণ সংগ্রহের লাইনে।
স্বপ্নসুখ হল না স্থায়ী, বজ্রপাতে স্বপ্ন খানখান!
কবিতা চাইল সঙ্গ, শব্দগুলো বিভ্রান্ত........
মোমবাতির মৌনমিছিলেও শব্দ,
শব্দ এনে দিল শব্দের ঠিকানা!
কবিতা বাঙ্ময় হল,কবি-র বলিষ্ঠ ছন্দ-
দিন আনি দিন খাই, 
তবুও আমরা বিচার চাই!
লড়াই করে বাঁচতে চাই-
হুজুর, আমরা বিচার চাই!



বলতে মন চায় 


"আবার আসিব ফিরে 
ধানসিঁড়িটির তীরে 
এই বাংলায়....."
ভালোবাসার ফাগুনবেলায়
মন উড়তে চায় 
"তোমার খোলা হাওয়ায়.... "
কিন্তু বিদ্রোহী তো 
হয়নি রণে ক্লান্ত 
চিঠির বোঝা কাঁধে নিয়ে 
হয়নি রানার ক্ষান্ত 
তবুও নেচে বেড়ায় 
মমির দেশের মোমের পুতুল 
শোলোক-বলা কাজলাদিদির জন্য 
আজও ঘুম চোখে খোকা আকুল 
অমলের দল অসুস্থ 
রাজার চিঠির অপেক্ষায় 
রাজার নেই কাপড় 
দুর্নীতির খাঁচায় 
মিনি এখন মডেল গার্ল 
কাবুলিওয়ালা পথে 
জীবন খুঁজছে বনলতা সেন 
কেউ নেই সাথে 
প্রজার দল ভোটের লাইনে 
খেয়ে প্রতিশ্রুতির খিচুড়ি 
বাবা বলতেন - "মানুষ হও"
হ্যাঁ, আজও মনে করি। 

মাথা নত থাকুক! 

মাথা নত থাকুক, কবিতার কাছে -
জীবনের আল্ বরাবর হেঁটে যাওয়া সংসারের কথাগুলো, প্রতিধ্বনিত হোক ভালবাসার পাথরে, পাষাণ হৃদয়ে! 
থৈ থৈ বৃষ্টির জলে দিকভ্রান্ত ঝরাপাতার দল, 
অভিমানের চড়াই-উৎরাই পথে থেমে গেছে! 
ঝড় এলে ওদের সামলে নিও, তোমার আশ্বস্ততায়! 
মাথা নত থাকুক, কবিতার কাছে -
প্রতিহিংসার ধিকিধিকি আগুনে মশাল জ্বলুক সৃজনের, অভিজ্ঞতা জমা হোক মানুষ চেনার! 
অপপ্রচারের মাটিতে এসো কবর খুঁড়ে ফেলি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার! 
সৎকার হোক দানবীয় আচারে! 
ঝড় এলে বিক্রি হয়ে যেও না, উচ্ছিষ্টের আশায়! 



রাতের কবিতা 

চলে যাওয়া দিনগুলো,আগামী দিনগুলো সোনার খাঁচায় না পারি,মনের খাঁচায় রেখে দেব-কথা দিলাম!অবহেলা,অকারণ সমালোচনা আমার চলার পথের অলংকার!হৃদয়ের ক্যানভাসে আঁকা আছে!
তুমি প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখো মনের মন্দিরে,
আমি প্রদীপের পাহারায় থাকব!
একসাথে নাই বা চলা হল,
একমনে গানে সুর বাঁধব আমরা...!
তোমার মাতৃত্বের জঠরে আমার শিশুকাল আছে,
তোমার সিঁথির সিঁদুরে আমার ভালবাসা আছে, 
তোমার সন্ধ্যাপ্রদীপের আলোয় দেবদাসী দেখা দেয়,
তোমার বিনিদ্র রাতে আমি কবিতা হয়ে যাই !
মা আমার প্রকৃতি, বাবা ঈশ্বর.... 
জ্ঞান আমার আকাশ, হৃদয় ক্যানভাস..... 
ছবি আঁকি অভিজ্ঞতায়! 
ঐ শোন, উদাস বাউল গান ধরেছে.... 
সকাল হল!



মা'কে মনে পড়ে 

যে আকাশ-চেরা বিদ্যুতে তুমি আজও চমকে ওঠো-
সেই আকাশেই আমার মা আছে,
লোকে তাই বলে!
হয়তো সে কারণেই আকাশ আমার প্রিয়!

যে কালো চুলের বিনুনিতে আমার গোলাপ সযত্নে রাখো আজও 
সেখানে আমার মায়ের গন্ধ থাকে,
আমি পলকহীনতায় তোমাকে দেখি!
হয়তো সে কারণেই বিনুনি আমার প্রিয়!

যে সন্ধ্যাদীপের আলোয় তোমার শঙ্খধ্বনি আলোড়িত হয়-
সেই আলোড়নে আমার মায়ের আকুলতা আছে,
আমি আজও স্পন্দিত হই!
হয়তো সে কারণেই শঙ্খধ্বনি আমার প্রিয়!



অকবিতার কাটাকুটি! 

আবার ফিরে আসতে হবে, 
আসলে আসতেই হবে। 
তুমি তো জানোই, 
পাতা ঝরে পড়লেই নতুন পাতা আসে, গাছে! 
জেনেছ কি, কেন আসে!! 
প্রাণের স্পন্দনে,হয়তো বা পরিচর্যায়! 
মা নতুনের গল্প শোনাত, উল-কাঁটা হাতে নিয়ে! 
চলো যাই একদিন নকশি কাঁথার মাঠে, 
দু'হাত ভরে ছেলেবেলা তুলে নেব স্মৃতির ঝাঁপিতে, 
আকন্ঠ পান করে নেব দাঁতে দাঁত চাপা সংগ্রামের বিশুদ্ধ জল, তেষ্টা মিটবে সর্বহারার পিপাসা! 
ঐ দেখ বনলতা সেন, জীবনের আনন্দ খুঁজছে! 
দেখতে পারছ কি, জানালার গরাদে মাথা রাখা অমলকে, আজও রাজার চিঠি পায়নি। 
সবাই বলে, রাজা নাকি গারদে দুর্নীতির দায়ে। 
অবনীর দল বাড়ি থাকে না, ওদের ভোটার কার্ড "ওদের" হাতে! 
"বেণীমাধব, ও বেণীমাধব" ,যাঃ! চলে গেল! জানো, বেণীমাধব এখন লটারীর টিকিট বিক্রি করে, নেতাদের মাসোহারা দিয়ে! 

কি হল! আঁৎকে উঠলে কেন? 
বুঝতে পেরেছি, এ বদহজমের ঢেকুর! 
নাও , অবাক জলপান করো। 



অপমৃত্যু 

সময় আসবেই
সময় কথা বলবেই 
ধানসিঁড়ি নদীর তীরে বনলতা সেনের মতো!
তুমি বলেছিলে, বাঁধন বড় শক্ত.......
আসলে "বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান!" 
নীরা হতে পারোনি,বিমলাও উঁকি দেয়নি হৃদয়ের ক্যানভাসে। পরিচ্ছন্ন অভিনয়ে প্রেম হারিয়েছে ঠিকানা!
ভালোবাসার পাঁচমাথার মোড়ে প্রয়োজন প্রকট হয়েছে, প্রিয়জন হারিয়ে গেছে!
লক আউট কারখানার মতো নির্জীব........!
কবির কবিতা আজ মুচকি হাসে,
মেকি সাহিত্যপ্রেমে!
আজও তুমি মঞ্চে, আজও তুমি সন্ত্রস্ত... ‌!
কৃষ্ণকলিও হাসে , সুধা অবাক হয়ে যায়, বনলতা সেন নির্বাক!
অভিনয়েও গলদ, তুমি ধরা পড়ে গেছ!
কয়েদজীবন শুরু হোক তোমার!


প্রকৃতির চরিত্র 

এই প্রকৃতি, এই চরাচর আমার অপু..... 
এই বর্ণ, এই গন্ধ আমার কৃষ্ণকলির হাসি..... 
এই মুগ্ধতা, এই সৌন্দর্য আমার অমলের বিস্ময়....
এই উন্নত হৃদয়, এই আপোষহীনতা আমার অবনীর লড়াই........ 
এই সাধারণতা, এই স্বচ্ছতা আমার হরিপদ কেরাণীর আবেগ...... 
এই স্নিগ্ধতা, এই হিমেল পরশ আমার নকশি কাঁথার মাঠের স্মৃতি....... 
এই অনুভূতি, এই ছন্দ আমার নীরার ভালবাসা...... 
এই আলো, এই শিহরণ আমার রানারের কর্মচঞ্চলতার আলাপন....... 

মাগো, এখন আর লিখতে পারি না কবিতা..... 
আমায় ছন্দ দাও, আমায় ভাষা দাও, আমায় বর্ণ দাও.....

Post a Comment

0 Comments