জ্বলদর্চি

সুদর্শন নন্দী ও মিলি ঘোষ-এর অণুগল্প


 সুদর্শন নন্দী ও মিলি ঘোষ-এর অণুগল্প

উপকার                
সুদর্শন নন্দী

উপকার করে পূণ্যের ঘরে ভালো রেটিং পাবার আশায় অনিচ্ছুক অন্ধমানুষকে জোর করে রাস্তা পার করে দেবার ঘটনা শুনেছি।  তাই, রাস্তার পাশে এক যুবক এক হাতে থলি আর এক হাতে লাঠি নিয়ে পথ খুঁজছে দেখে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করি- রাস্তা পেরোবে নাকি?
সে বললে, হ্যাঁ দাদা, রাস্তার ওদিকে যাব রেশন আনতে। 
তার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলাম। আমি এগবো, সে ডাকলে।  বলল, আমার টাকার ব্যাগটা থলিতে ছিল, নেই দেখছি?
রাস্তায় পড়ে গেল ভেবে রাস্তায় খুঁজে কোন টাকার ব্যাগ পেলাম না বলে জানালাম।  
সে বললে, ভুল করে আপনি--
আমি নিজের পকেট উল্টে দেখালাম আমি নিই নি।
উত্তর এল, আমি অন্ধ, আমি কি আর দেখব !
আমি মানি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা দিয়ে বললাম, এই টাকাগুলো রাখ। 
লাঠিটা আমার হাতে দিয়ে সে আনন্দে টাকাটা ব্যাগে রেখে হাঁটতে লাগল। বুঝতে পারলাম না সে লাঠিটা নিতেই ভুলে গেল নাকি মানুষ চেনায় আমি অন্ধ ভেবে সে আমাকে দিয়ে গেল। 
                            
🍂


নারী-ঝাঁপি
মিলি ঘোষ  

মহিলা সমিতির সভাপতি শ্রীমতি তনিমা চ্যাটার্জি জানতে চাইলেন, "সবাই নারী-ঝাঁপির টাকা পেয়েছেন? না পেলে হাত তুলুন।" 
এক মিনিট নীরবতা।
"সবাই পেয়েছেন দেখছি।"

   "আমার স্যালারি ঢুকলেই তো তোমার অ্যাকাউন্টে কুড়ি হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। তারপরেও নারী-ঝাঁপি থেকে টাকা নিতে লজ্জা লাগে না তনিমা?"
   "না, লাগে না। সে তুমি কম দাও ত্রিদিব। অসুবিধা নেই। কিন্তু নারী-ঝাঁপি আমার লাগবেই।"
   "কম দেবার কথা আসছে কেন?"

   অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ চোখ গেল, "তনিমা না? আরও অনেক মহিলা দেখছি।" 
পায় পায় এগোল ত্রিদিব। স্টেশন চত্বরে যত ভিখিরি, সবার হাতে হাজার টাকা করে দিচ্ছে ওরা।
তনিমা পেছন ফিরতেই ত্রিদিবকে দেখে এগিয়ে এলো। 
   "তোমার স্যালারির টাকা না। আমাদের নারী-ঝাঁপির টাকা।"
  তারপর বাঁকা হেসে বলল,  "ওদের তো আর ভোটার কার্ড নেই।"

Post a Comment

0 Comments