মা-কালীর সৃষ্টি রহস্য
পি.শাশ্বতী
আর মাত্র কদিন পরেই বেজে উঠবে শক্তি আরাধনার মঙ্গলশঙ্খ। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে শক্তমন্ত্রের ধুনী উৎসারিত বৈদিক ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তান্ত্রিক অভিযাত্রীর কণ্ঠে ধ্বনিত হবে কালের কলনকারী দেবী মাতৃকার গুরুগম্ভীর মন্ত্র। আর এই তন্ত্রবিশিষ্ট আচার সম্পর্কে বৈদিক সাহিত্যের মুণ্ডক উপনিষদে প্রথম মা কালীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
মা চামুণ্ডা হলেন মা কালীর এক প্রাচীন রূপ। যদিও তিনি তান্ত্রিক এবং অবৈদিক মাতৃকা। তিনি প্রাচীন সপ্তমাতৃকা। সপ্তমাতৃকার বাকি দেবীরা ইন্দ্র, শিব, ব্রহ্মা-বিষ্ণু সকলের শক্তির আধার হয়ে উঠলেও তিনি কিন্তু সপ্তমাতৃকার অন্যতম মাতৃকা হলেও কখনও কোনও পুরুষ দেবতার শক্তি হিসেবে কল্পিত হননি।
চামুণ্ডা নামটি হয়েছে দেবী মা কালী চণ্ড-মুণ্ড অসুর বধ করেছেন বলে— এরকম ব্যুৎপত্তি আছে শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে। কিন্তু সুকুমার সেন বলেছেন যে, সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মে এরকম নাম হয় না। এই নামে অবৈদিক অসংস্কৃত তান্ত্রিক সভ্যতার ঐতিহ্য প্রতিফলিত। মা চামুণ্ডা কালীই দুর্গাপুজোর কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান সন্ধিপুজোর বলিদানে পূজিত হন। সন্ধিপুজোর বলি গ্রহণ করেন স্বয়ং চামুণ্ডা। মা চামুণ্ডা কালীরই ভদ্রকালী রূপ হলেন দেবী দুর্গা।
মা চামুণ্ডা পালযুগে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর বহু মূর্তি পাওয়া গেছে। তিনি চর্চিকা নামে পূজিত হতেন। সম্রাট নয়পালের সময় বাণগড় শাসনই শুরু হয় মা চর্চিকার স্তবে। তিনি এই সময় সর্বোচ্চ জগন্মাতা রূপে পূজিত হতেন। মা চামুণ্ডার মূর্তিতত্ত্ব পরবর্তী কালে মা কালীর মূর্তিতত্ত্বের উপর প্রভাব ফেলেছে। মা কালীর যে রূপ আমরা বর্তমানে দেখি, অর্থাৎ তাঁর পায়ের তলায় শবরূপী শিব, সঙ্গে ডাকিনী যোগিনী এবং ভূত প্রেত, কণ্ঠে দোদুল্যমান মুণ্ডমালিনী তাঁর কখনও উগ্র, কখনও বরাভয়নী রূপ, আবার কখনও নৃত্যরতা মূর্তি— এ সবই আগে মা চামুণ্ডা কালীর মূর্তিরূপে দেখা গেছে শশাঙ্ক থেকে পালযুগ পর্যন্ত। আজও বাংলা জুড়ে অনেক জায়গাতেই মা চামুণ্ডার প্রাচীন মূর্তি পূজিত হয়। বর্ধমানে মা কঙ্কালেশ্বরী কালী আসলে পাল-সেনযুগের নৃত্যরতা রুদ্রচামুণ্ডা। উত্তরবঙ্গে মা পেটকাটিও আসলে আদিযুগের মা চামুণ্ডা। মা চামুণ্ডা আমাদের জগদকারণ মা কালীর অত্যন্ত প্রাচীন রূপ, যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কালকে কলন করে সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করেছিলেন।
বাঙালির নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক শেকড়ের অন্বেষণ করে এই প্রতীতি জন্মেছে যে, বাঙালির শেকড়ে বেদ ও বৈদিক আর্য সভ্যতার কোনো স্পর্শ নেই। গোড়া থেকেই বাঙালির মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু সভ্যতার আচরাচরণ। আবার নৃতাত্ত্বিক মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা থাকলেও দ্রাবিড় বাঙালির মূল উৎস নয়। বরং অনেকটাই অস্ট্রো-এশিয় এবং টিবেটো-বার্মিজ উপাদান আছে বাঙালি জাতির রক্তে। আবার এটাও মূল নয়। ফলে দেখা যাচ্ছে, বাঙালির ঐতিহ্যে রয়েছে এক মিশ্র সংস্কৃতির পরত।
বাংলা ভাষা ও প্রাগৈতিহাসিক বাঙালির ধর্ম-সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় বাংলা ভাষাটা আর্য সংস্কৃত থেকে এলেও এর মুলগত বৈশিষ্ট্যগুলি সংস্কৃত থেকে কিন্তু পৃথক। আমাদের ভাষা, আমাদের মাতৃধর্ম, আমাদের তন্ত্রাশ্রয়ী চর্যা— এগুলোর উৎসে আছে ‘ব্রাত্য’ অবৈদিক আর্য গোষ্ঠী, গ্রিয়ার্সন যাঁদের আউটার এরিয়ান বলেন। সম্প্রতি টোনি জোসেফ এই আউটার এরিয়ান তত্ত্বকে সমর্থন করে বলে, “পূর্ব ভারতে একটি আর্যভাষী সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যারা বৈদিক আর্য ও আর্যাবর্ত থেকে পৃথক। যাঁরা বৈদিক আর্যদের আগমনের আগেই ভারতে আসেন।” বাঙালি ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় এঁদের ‘Alpine’ বা ‘Brachycephalic’ আর্য বলেছেনন।
ঋগ্বেদে কৃষ্ণবর্ণের আর্যদের কথা বলা আছে যাঁরা বেদ মানতেন না। এরা ব্রতধর্ম পালন করতেন বলে ‘ব্রাত্য’ বলা হত। এদের ভাষা আর্য ভাষাই, কিন্তু বৈদিকদের থেকে আলাদা ছিল। বৈদিক সাহিত্য থেকে জানা যায় যে এঁরা ভারতের পূর্বদিকের বাসিন্দা। আর এই পূর্বিদেকেই ছিলেন পাণ্ডু রাজার রাজত্ব। চার হাজার বছর আগে সেই পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে পূজিত হত বলাকা মাতৃকার মূর্তি।( পরেশ গুপ্ত।) লক্ষ করার বিষয় হল, ঐতরেয় আরণ্যকে বাঙালিকে ‘বয়াংসি’ বলা হয়েছে। আর বয়াংসি থেকেই এসেছে বলাকা। ফলে ঐতরেয় আরণ্যক অনুযায়ী এটাই প্রমাণ হয় যে, বাঙালির পূর্বসূরি বলাকা মাতৃকার উপাসক ছিলেন। আর এই বলাকা মাতৃকা থেকেই এসেছেন মা কালী। মতান্তরে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পালযুগের সৃষ্টি।
যদিও পালযুগের একাধিক মাতৃকা মূর্তি ও তাঁদের উপাসনার কথা জানা যায়। যেমন— নৈরাত্মা বজ্রযোগিনী, মহাচীনতারা, নীলসরস্বতী প্রমুখ। এই সময় কালীর মূর্তিরূপ গঠনের ক্ষেত্রে তন্ত্রসাধক নারোপার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বলেও জানা যায় । বজ্রযান সংস্কার আন্দোলন হিসেবেই সহজযান সৃষ্ট। অতীশ দীপঙ্করের পরম গুরু অর্থাৎ গুরুর গুরু ছিলেন নাঢ়া পণ্ডিত বা নারোপা। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, আজ ছিন্নমস্তা খুব একটা জনপ্রিয় নন। নারোডাকিনীও আজ বাঙালির যাচ্ছে বিস্মৃত। কিন্তু বজ্রযোগিনী ও তাঁর রূপভেদ নারোডাকিনী একদা পালযুগে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন এবং আজকে সর্বময়ী একেশ্বরী মা কালীর উপাসনার পেছনে তন্ত্রের যে দর্শন, তাতে নারোডাকিনীর স্পষ্ট ছাপ আছে।
নারোডাকিনীর কিছু বৈশিষ্ট্য মা কালীর কয়েকটি ভিন্ন চিত্রায়নের সঙ্গে মিলে গেলেও সাধারণ কালীরূপকল্প থেকে ভিন্ন। নারোডাকিনীর আলুলায়িত কেশও কালীর সঙ্গে মিলে যায়। তবে নারোডাকিনী জিহ্বা প্রসারিত করে পদতলে শবশিব দলন করেন না। তিনি দুই পায়ের তলায় দুটি ভিন্ন স্ত্রী ও পুরুষ চরিত্র পদদলিত করেন। যাঁরা হলেন কালরাত্রি ও ভৈরব। এঁরা দু-জন পরস্পর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মায়ের দুই পায়ের তলায় পদদলিত হন। তবে অনেক সময় নারোডাকিনী মূর্তিতে মায়ের পায়ের তলায় মৈথুনরত নারী-পুরুষকেও একত্রে পদদলিত হতে দেখা যায়।
ছিন্নমস্তার ক্ষেত্রে রতি ও মদন বিপরীতরতাতুরা অবস্থায় একত্রে থাকেন এবং মায়ের দুই পায়ের তলায় পদদলিত হন। নারোডাকিনী ও ছিন্নমস্তা মূর্তিতে মৈথুনরত নারী-পুরুষ যুগলকে দলন করার পেছনে তাৎপর্য একটি বিশেষ আছে।
একশ্রেণীর গুহ্যতন্ত্রে প্রকৃতিকে নিছক নারী ভেবে তার থেকে যে স্বতন্ত্র ও আলাদা একটা পুরুষতত্ত্ব তৈরি করা হয় এবং নারী-পুরুষের যৌনমিলনে জগৎসৃষ্টির আদর্শ স্থাপন করা হয়, এই মূর্তি সেই আদর্শ বর্জন করে একমাত্র আদি প্রকৃতিমাতৃকা, যিনি একক ও স্বয়ং জগদকারণ, আদ্যানিত্যা ও অব্যক্ত, যিনি নারী-পুরুষ-জীব-জড়-চেতন-অচেতন নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্বজগতের উৎপত্তি ও তাঁর সর্বোচ্চ ‘একোঅহং বহুষ্যামিঃ’ ঋজুপথ নির্মাণ করেন। তিনি বাক্য ও বুদ্ধির অতীত; আমরা শুধু সেই রূপকে অন্তরে উপলব্ধি করার জন্য ‘মা’ বলে ডাকি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁকে নিছক স্ত্রী বানিয়ে মৈথুনকল্পনা আমাদেরকে তন্ত্রের মূল তত্ত্ব থেকে দিগভ্রান্ত, বিভ্রান্ত ও উদ্ভ্রান্ত করেছে। কালী কেবল মেয়ে নন, মেঘের বরণ করিয়ে ধারণ কখনও কখনও পুরুষও হয়। প্রকৃতি লিঙ্গভেদের অতীত। এবং নারী-পুরুষের মৈথুন মোটেই সৃষ্টির উৎস নয়।
বস্তুত বিশ্বজগৎ, সৌরমণ্ডল, পৃথিবী, আদিতম জৈব প্রাণ— এর কোনোটাই যৌন মিলনে তৈরি হয়নি। যৌনজনন মোটেই সৃষ্টির একমাত্র কারণ নয়, সেটা প্রাচীনরাও জানতেন। তাই মৈথুনাত্মক সৃষ্টিতত্ত্বের গোড়াটিই গলদ থেকে গেছে। নারী ও পুরুষের মৈথুন গুরুত্বপূর্ণ হলেও একচ্ছত্র সৃষ্টিকারণ নয়। আর তাই তন্ত্রে পঞ্চ ম-কারের মধ্যে মৈথুনপ্রাবল্য ও পরবর্তী যুগের আদিশক্তিকে নিয়ে আদিরসাত্মক কদর্যতা দমন করতেই নারোডাকিনীর উত্থান।
প্রসঙ্গত এর উদ্দেশ্য হল, প্রকৃতি-নিরপেক্ষ, স্বতন্ত্র, প্রকৃতির থেকে শ্রেষ্ঠ পুরুষতত্ত্বের আদর্শ এই প্রকৃতিপুরুষ যৌনমিলনে সৃষ্টিরহস্যের যে অর্বাচীন তত্ত্ব, যা আদি তন্ত্র ও সাংখ্যের সর্বময়ী প্রকৃতির প্রাধান্যকে বিকৃত করে, সেই অর্বাচীন ও বিকৃত তত্ত্বকে দলন করা। প্রকৃতি একক স্রষ্টা, প্রকৃতি একক জগদকারণ, তিনি লিঙ্গভেদের ঊর্ধ্বে। মনন বা চেতনাও অবশ্যই প্রকৃতি থেকে জাত, তাই স্বতন্ত্র পুরুষ বা ব্রহ্ম বা চেতন-আত্মা কল্পনা অন্যায্য। প্রকৃতি সমগ্র বিশ্বচরাচর। নারী-পুরুষ, জীব-জড় নির্বিশেষে সবাই তাঁর অংশ। তাঁর বহুযোগ কল্পনা অন্যায়, অন্যায্য এবং তন্ত্রের বিকৃতি। প্রকৃতি মাতৃকাশক্তি একক; তিনিই সৃষ্টি করেন, তিনিই ধ্বংস করেন, আদিতে তিনি ব্যতীত কিছু ছিল না, অন্তে তিনি ব্যতীত কিছু থাকবে না।
এএ মূর্তির রূপ কালীর সঙ্গে বাহ্যিকভাবে অনেকাংশে ভিন্ন হলেও কিন্তু দার্শনিক চিন্তায় কালীর সর্বোচ্চ অবস্থান কল্পনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সেই দিক থেকে বাঙালি জাতি যে পালযুগের সহজ আন্দোলনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছিল, তা এই সর্ববুদ্ধ ডাকিনী দেখে বোঝা যায়। প্রসঙ্গত বজ্রযোগিনীর দুই পাশে থাকা বামে ডাকিনী ও ডানদিকে বর্ণিনী (হিন্দুর ছিন্নমস্তার দুই সহচরী এই নামে অভিহিত), অথবা বামদিকে বজ্রবর্ণনী ও ডানদিকে বজ্রবৈরোচনীর মধ্যে বাঁ-দিকে শ্যামবর্ণা আবরণ মাতৃকা থেকে কালীর বিশিষ্ট মূর্তিরূপের উত্থান ঘটেছে। তাকেই মাতৃ-উপাসনা করি আমরা।
ক্লদ লেভি স্ট্রস বলেন, অজাচার বা অগম্যগমন (ইনসেস্ট) নিষিদ্ধ করা পৃথিবীর সর্বত্র মানবসমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠার ভিত্তি, এটি বিশ্বজনীন নিষেধ। তন্ত্র মানবসমাজের বাইরে নয়। তন্ত্রকে যারা অসামাজিক ও কদর্য বানাতে চেয়েছিল, আজও চাইছে, তারা সৃষ্টির শত্রু।
আমরা প্রকৃতিমাতৃকাশক্তির উপাসক জাতি। আমরা এই প্রকৃতির নানা রূপের উপাসনা করি। সামঞ্জস্যবিধান করে একটি রূপের সর্বোচ্চ অবস্থানকল্পনায় জাতি হিসেবে আমাদের ধ্যানজ্ঞান উৎসর্গ করতে বারবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন আমাদের মহাপুরুষরা। আর সেই ধারাতেই কালী হয়ে উঠেছেন সর্বময়ী।
প্রচলিত যে, সপ্তদশ শতকে ১৬০০ থেকে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে নদীয়ার নবদ্বীপে একজন মহান সাধকের জন্ম হয়, যার নাম ছিল কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। বাংলা তথা ভারতের তখন ও দেবী কালীকে অতি উগ্রস্বভাবা দেবী হিসেবে গণ্য করার কারণে কোনো গৃহে তাঁকে পুজো করা হত না। তার কোনো সাকার মূর্তি তখনও তৈরি হয়নি। গৃহস্থ ঘর ব্যতীত এই দেবীর পুজো হত যন্ত্রমে, শিলাখণ্ডে, গহর অরণ্যে, গ্রামের মোড়ে, কিংবা কোনি নদীর উপকূলে। তখনও না কালী বাংলার ঘরের মেয়ে হয়ে উঠতে পারেননি। কৃষ্ণানন্দের কাহিনি তন্ত্রের সেই উগ্র দেবীকালী থেকে বাংলার ঘরের মেয়ে হয়ে ওঠার কাহিনি। মহাসাধক কৃষ্ণানন্দ চেয়েছিলেন, দেবীকে নিরাকার থেকে সাকার রূপ দিতে। কিন্তু উনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না মাতৃমূর্তির রূপ কীরকম হতে পারে। যত দিন গড়াচ্ছিল সাধক শুধুমাত্র মায়ের রূপ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠছিলেন। সারা দিনরাত ধরে শুধু মায়ের কাছে তাঁর একটাই প্রার্থনা ছিল, মা আমি তোমাকে সাকার রূপে চাই। তোমার রূপ দর্শন করতে চাই।
সন্তানের আকুতি মা ফেলতে পারলেন না। কোনো এক রাতে অর্ধঘুমন্ত অবস্থায় দৈববাণী হল, মহানিশার অবসানে প্রাতঃমুহূর্তে কৃষ্ণানন্দ প্রথম যে নারীমূর্তি দর্শন করবেন, সেই মূর্তিই হবে ইচ্ছাময়ীর যথার্থ সাকার মূর্তি।
পরের দিন ভোরে গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে কৃষ্ণানন্দ দেখলেন, এক দরিদ্র বধূ গাছের গুঁড়ির উপর নিবিষ্ট মনে গোবরের ঘুঁটে দিচ্ছেন। বাঁ-হাতে গোবরের মস্ত তাল, ডান হাত উঁচুতে তুলে ঘুঁটে দিচ্ছে। নিম্নবর্গীয় কন্যা, গাত্রবর্ণ কালো, বসন আলুথালু, পিঠে আলুলায়িত কুন্তল, কনুই দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সিঁদুর লেপ্টে গেছে।
এ হেন অবস্থায় পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটলেন সেই বধু। অবাক নয়নে কৃষ্ণানন্দ কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন সেদিকে। তার পর তাঁর ছবিটিই মানসপটে ভেসে উঠল মায়ের সেই কাঙ্ক্ষিত মূর্তি। গঙ্গামাটি নিয়ে মূর্তি গড়তে বসলেন কৃষ্ণানন্দ। পূজিত হলেন মা কালী তাঁর নবনির্মিত পূর্ণাবয়ব রূপে। কৃষ্ণানন্দের হাতে গড়া সেই মূর্তিই পরবর্তীতে হয়ে উঠল দুই বাংলায় জনপ্রিয় কালিকা মূর্তি।
0 Comments