জ্বলদর্চি

এক মুঠো রোদ /পর্ব- ৪০/স্বপন কুমার দে

এক মুঠো রোদ
পর্ব- ৪০


স্বপন কুমার দে

আজকাল আর কোনোকিছুই ভালো লাগে না সম্পূরকের। অফিস থেকে পিকনিকে গিয়েছিল। একটু দূরে পাহাড়, জঙ্গল আর ঝিল।সারাদিনের ট্যূর, সকাল থেকে বেরিয়ে যাওয়া, পিকনিক করা আবার বিকেলে ফিরে আসা। নিজেদের একঘেঁয়েমি, কাজের চাপ, ক্লান্তি, অবসাদ দূর করতে এগুলোর প্রয়োজন আছে। অনেকে অনেকবার সম্পূরককে বলেছিল, কিন্তু সে যায়নি।  এখন তাকে কেমন যেন উদাসীন মনে হয়। মনে স্ফূর্তি নেই, কারও সাথে আড্ডা নেই। অফিসে যতক্ষণ থাকে কাজের মধ্যে ডুবে থাকে। নিজের কাজ শেষ হয়ে গেলে অন্যের কাজ চেয়ে নেয়। অফিস থেকে ফিরে টিভির পর্দায় কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে; কখনও মনে স্থিরতা নেই, একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টে যায়। কখনও ফোনটা হাতে তুলে নেয়, বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে কথা বলে, তাদের শরীরের খবরাখবর নেয়। রাতে সামনের হোটেলে রুটি অথবা ভাত খেয়ে নেয়। বিছানায় অনেক সময়ই ঘুম আসে না। এভাবেই কেটে যায় দিন, কেটে যায় রাত।

মনের ভেতরে নিয়মিত যুদ্ধ চলতে থাকে। মল্লিকার কথা মনে হয়। তার কাছে মল্লিকা শুধুই এক নারী নয়, সমগ্র নারীসত্তার অখণ্ড প্রতিমূর্তি মল্লিকা। তার আচরণ, কথা বার্তা, সহিষ্ণুতা, লড়াকু মানসিকতা এবং অদম্য জেদ মল্লিকাকে সম্পূরকের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। সম্পূরক জানে, এটা তার ক্ষণিকের দুর্বলতা নয়, এ যেন চির অনুসন্ধিৎসার জাগরণ মন্ত্র।

তার ইচ্ছা হয়, সমগ্র সত্তা দিয়ে নিজেকে মল্লিকার কাছে সঁপে দেয়। ভয় হয়, মল্লিকা যদি গ্রহণ না করে।  বিশেষত সেদিন তার উদাসীনতা সম্পূরককে আহত করেছে। তারপর তার কাছে যেতে সংকোচ বোধ হয়।  রূপসা সম্পূরকের কাছে ক্ষণিকের চমকমাত্র, চোখ ঝলসে দিয়ে চিরতরে হারিয়ে যায়। মল্লিকা তার কাছে দূর আকাশের স্থির নক্ষত্র। তার আলো হয়তো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় না, কিন্তু তা চির জ্যোতির্ময়। দূর থেকে তার দিকে চেয়ে থেকেও অপার শান্তি।

সব শনি-রবিবার সম্পূরক বাড়ি যায় না। কখনও দু'সপ্তাহ ছাড়া, কখনও বা তারও বেশি। মা চিন্তা করেন, বাবাও কিছুটা। ওদিকে মন্টির পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সুদেষ্ণা। বাড়ির কাজ যতটা সম্ভব দেখভাল করেন শাশুড়ি। আর একজন কাজের লোক বাড়ানো হয়েছে; সে রান্নাটাও করে দিয়ে যায়। মন্টির টিউশন, স্কুল নিয়ে জেরবার হয় সুদেষ্ণা। মল্লিকা ছেড়ে যাওয়ায় ম্যাথের আরও একজন টিচার রাখা হয়েছে। তিনি একটি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের টিচার। মাঝখানে সুদেষ্ণা তার শ্বশুরকে একবার শুনিয়ে দিয়েছে," বাবা, মন্টির এই স্যারও খুব ভালো। মন্টির খুব পছন্দ হয়েছে। আপনারা তো মল্লিকা মল্লিকা করতেন।"
শ্বশুর মশাই বলেছেন," দিদিভাইয়ের যাতে ভালো হয়, সেজন্য তো তুমি দেখছো বৌমা। তুমি মা, তুমি তোমার সন্তানের যতটা ভালো বোঝো, অন্যেরা কি ততটা বুঝবে? দিদিভাইয়ের ভালো হলে, তার চেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে?"
সুদেষ্ণা বুঝল, শ্বশুরমশাই মল্লিকার অপমানের ব্যাপারটা এখনও ভুলতে পারেননি। তবে সে নিজে এ বিষয়ে অনুতপ্ত নয়। তাই কথা না বাড়িয়ে কাজের অছিলায় ওখান থেকে সরে গেল।

                        * * * * *

আজ প্রফেসর বি এন সিংহের বাড়িতে মল্লিকা। স্যারই ফোন করে ডেকেছিলেন," মল্লিকা, তুই আজ একবার আমার বাড়িতে আসতে পারবি? অনেকদিন তোকে দেখিনি। তোর কাকিমাও তোকে দেখতে চেয়েছে।"
" কবে স্যার? আজ?"
" হ্যাঁ। তোর কোনো অসুবিধা আছে?"
" না স্যার। আপনার বাড়ি যাবো, এ তো আনন্দের ব্যাপার। আমার কোনও অসুবিধা নেই।" মল্লিকার মনে আনন্দের সঙ্গে শ্রদ্ধা মিশে মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠল। প্রফেসর সিংহ তবুও বললেন," না মানে, তোর কোনো কাজও তো থাকতে পারে।"
মল্লিকা আবেগঘন গলায় উত্তর দেয়," তীর্থ দর্শনের জন্য অন্য কাজ ফেলে ছুটতে হয় স্যার। আপনার বাড়ি আমার কাছে তীর্থস্থান।"
" ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর অতো কথা বলতে হবে না। তুই তাহলে বিকেলে আসছিস?"
" হ্যাঁ স্যার।"

🍂

সেই কথা। তারপর বিকেলে সটান হাজির হয় মল্লিকা। পড়াশোনার খবর ছাড়াও ব্যক্তিগত সুবিধা অসুবিধার কথা আলোচিত হয়। ইতিমধ্যে স্যারের স্ত্রী অনেকরকম খাবার সাজিয়ে মল্লিকাকে খাবার টেবিলে ডাকলেন। খাবারের আয়োজন দেখে মল্লিকার চক্ষু চড়কগাছ।
" কাকিমা এতসব কী করেছেন! আপনি এগুলো তুলে নিন। আমাকে চারটি মুড়ি দিন।"
বজ্রনিনাদ স্যার গলাটাকে মৃদু করে বললেন," তুই আসবি বলে তোর কাকিমা সেই কখন থেকে রান্নাঘরে ঢুকে এসব করেছে। এখন তুই না খেলে ঐ মানুষটার কত খারাপ লাগবে জানিস?"
লজ্জা পেয়ে যায় মল্লিকা। খারাপও লাগে, একজন বয়ষ্ক মানুষের এত কষ্ট দেখে।
" কাকিমা, আপনি এই বয়সে কেন এত করতে গেলেন বলুন দেখি? এতে বুঝি আমার কষ্ট হয়না?"

এবার উত্তর দিলেন কাকিমা," আমারও ইচ্ছে হয়, ছেলেমেয়েদের মাঝেমাঝে কিছু করে খাওয়াই, কিন্তু উপায় নেই। তারা সব দূরে দূরে থাকে। ছ'মাস ন'মাস ছাড়া কেউ কেউ আসে, আবার নাও আসতে পারে।" কাকিমা আঁচলে চোখ মুছলেন। মল্লিকা অবাক হয়ে চেয়ে রইল; তারও চোখে জল।
" আপনিই আমার মা। ধরে নিন, আপনি আপনার এক মেয়েকে খাওয়াচ্ছেন। এই দেখুন আমি খাচ্ছি।" বলে খেতে শুরু করল।
" আমার কিন্তু আবদার বেড়ে যাচ্ছে। আমার ইচ্ছে করছে, আমার মাকে আমি নিজে হাতে খাইয়ে দিই।"
" ওরে আমার দুষ্ট মেয়ে। আচ্ছা তোদের আগে খাওয়া হোক, তারপর আমার পালা।" কাকিমা আবার একবার কাঁদলেন।
ব্যাপারটা ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে দেখে প্রফেসর সিংহ সেটাকে হালকা করার চেষ্টা করলেন," দেখছিস মল্লিকা, তোর কাকিমা আমার কথা ভুলেই গেছে বুড়োটারও যে লোভ হয়, তারও যে একটু আধটু চেখে দেখতে ইচ্ছে করে সেটা কারও মনেও পড়ছে না।"
" দিচ্ছি, দিচ্ছি। বুড়ো বয়সে এত নোলা কেন? সবই দিচ্ছি সামান্য সামান্য।" কাকিমার গলায় ভালোবাসার ধমক।
খেতে খেতেই কাকিমা জিজ্ঞেস করছিলেন," কি রে মল্লিকা, এবার আমরা জামাই দেখবো, না কি তুই কাউকে দেখে রেখেছিস?" মল্লিকা ঈষৎ লজ্জা পায়। প্রফেসর সিংহ বলে ওঠেন," না, না। ওর এখন ওসব ভাবলে চলবে না। ওতে মোটিভেশন নষ্ট হয়। আগে কেরিয়ার তারপর অন্য সব।"
মল্লিকা হেসে ফেলে ওঁদের কথাবার্তায়। বলে," সময় হলে আমিই আপনাদের বলবো।" তারপর কত রকমের গল্প হল। কাকিমা কত যত্নে কত স্নেহে পাশে বসিয়ে সুখ দুঃখের গল্প করে গেলেন। সময় যে কত তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায় এই তিনজন বুঝতেও পারল না।

ঘন্টা দুয়েক গল্প করে ওখান থেকে বেরোতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল। বহু পুরাতন সঙ্গীর মত তার বিশ্বস্ত বাহন সাইকেলটিকে সঙ্গে নিয়ে মল্লিকা রওনা হল বাড়ির পথে। একটা বড় ফাঁকা মাঠের পাশ দিয়ে যেতে হয়। বিকেলে ঐ মাঠটাই ছোট খাট পার্কের চেহারা নেয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আসে মায়েরা। বাচ্চারা খেলে, মায়েরা গল্প করে। বয়স্করা বৈকালিক আড্ডায় বসে পড়েন। উদাসীন সংসারীরা কখনও কখনও এসে বসেন সাময়িক শান্তির আশায়। এখন পড়ন্ত বিকেল। লোকজনের ভিড় একটু কম। মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে হঠাৎ একজনকে দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়াল মল্লিকা।
" সম্পূরক!" অস্ফুটে একটিমাত্র শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে এল। ঘাসের ওপর একা বসে রয়েছে। সামনে কোনও কিছুর দিকে দৃষ্টি স্থির নয়, ভাবলেশহীন ক্লান্ত পথিকের মতো। মল্লিকা দূর থেকে একবার ডাকল," সম্পূরকবাবু!" উত্তর পাওয়া গেল না। হয়তো শুনতে পায়নি, কোনও গভীর চিন্তায় মগ্ন, হয়তো। সাইকেলটা রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মল্লিকা। ঠিক পেছনে গিয়ে দাঁড়াল, মৃদু হেসে বলল, কার জন্য অপেক্ষা করছেন, সম্পূরকবাবু? কেউ কি কথা দিয়েও এখনও এসে পৌঁছায়নি?"
পিছন ফিরে সম্পূরক দেখল মল্লিকাকে। খানিক হতভম্ব হল, তারপর ম্লান হেসে বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, " ওহ্, মল্লিকা দেবী আপনি?"
" দেখুন, আমি কোনো দেবী টেবী নই, সামান্য নারী। দেবী বললে আমার রাগ হয়।" বলে মিষ্টি হাসি হাসল।
" কিন্তু আপনার কর্মস্থলে, সভায়-- সকলে তো দেবীই বলবে।"
" অন্য যে যা বলে বলুক, আপনার মুখ থেকে দেবী ডাক আমার মোটেই ভালো লাগে না।"
" ঠিক আছে ম্যাডাম, আর হবে না, বসুন। আপনি হঠাৎ এই সময়ে, এখানে?"
" স্যারের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। তারপর আপনাকে এখানে দেখে কৌতূহল জাগল। ভাবলাম, কে সেই ভাগ্যবতী নারী, যার জন্য আপনার মতো মানুষ অপেক্ষা করছে। এ তার ভারী অন্যায়, আপনাকে বসিয়ে রেখে আসছে না।" মল্লিকা একটু তফাৎ রেখে বসে পড়ল।
" আমার কেউ নেই মল্লিকাদেবী। নাহ্, শুধু মল্লিকাই বলি। আমি সম্পূর্ণ একা। একজন আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে এমন একটা দ্বীপে নির্বাসন দিল যে সেখানে মানুষের চিহ্নমাত্র নেই।"
" সম্পূরকবাবু, নিজেকে এতটা মূল্যহীন ভাববেন না। আপনার মধ্যে যে গুণ আছে, অনেকের মধ্যেই তা নেই। আসলে অন্যেরা আপনার উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে না বলেই আপনার কাছে আসে না।"
" তুমি তো আমার থেকে অনেক উঁচুতে মল্লিকা। আমি যদি তোমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিই, তুমি কি আমাকে টেনে তুলতে পারবে না?"
মল্লিকা চুপ হয়ে যায়। হঠাৎই গাম্ভীর্য নেমে আসে তার মধ্যে। তারপরেই হালকা হয়ে হেসে বলে," বাবা রে! আমার মতো একটা রোগা পটকা মেয়ে আপনার মতো একজন বলিষ্ঠ মানুষকে টেনে তুলবে কী করে? বললে বরং লোক ডেকে দিতে পারি।" বলেই খিল্ খিল্ করে হেসে উঠল।
" আমার কথার উত্তর কিন্তু আমি পেলাম না মল্লিকা।"
" সব কথার উত্তর কি সব সময় পজিটিভ হয় সম্পূরকবাবু। আমি একজন অতি সাধারণ মেয়ে। আমার না আছে পায়ের তলার মাটি, না আছে মাথার উপর শক্ত পোক্ত ছাদ। আমাকে আশ্রয় করে আপনি কী পাবেন? সারা জীবন দুঃখই পেতে হবে। তাছাড়া আমি এসব নিয়ে এখন ভাবছি না। ছোট থেকেই লড়াই করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার একটা লক্ষ্য আছে। সেই স্বপ্নকে বাদ দিয়ে আমি অন্য কিছু ভাবতে চাই না। কাঠিন্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমার নরম অনুভূতিগুলোই মরে গেছে। আর তাছাড়া, ..."
" তাছাড়াও?"
" তাছাড়াও আপনার পরিবার আমাকে মেনে নেবে না। আপনার বাবার বয়স হয়েছে,; তার কথা গ্রাহ্য হবে না। এছাড়া আপনার পাশে আর কেউ থাকবে না।" কথাগুলো প্রায় হাঁপাতে লাগল মল্লিকা। এর আগে এমনভাবে মনের গোপন অনুভূতি সে আর কারও কাছে প্রকাশ করেনি। বিশেষত কোনও আপনজনকে এভাবে কঠিনভাবে এড়িয়ে যায়নি। মনে বিড় বিড় করতে লাগল," কেউ আপনার পাশে থাকবে না।"
" আমার মা?"
" মা দোটানায় পড়বেন। একদিকে সন্তানস্নেহ অন্যদিকে সমাজ, সামাজিক অবস্থান, সংসারের অশান্তি।"
" অমন সমাজকে আমি পরোয়া করি না।"
" কিন্তু আমি করি। এ বিষয়ে আমি আপনার কোনও কথা শুনতে রাজি নই।" মল্লিকা কাঁদল। কাঁদল নিজের জন্য, কাঁদল সম্পূরকের জন্য। সম্পূরক এ কান্নার অর্থ বুঝতে পারল না। সে ভাবল, মল্লিকা তাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। মল্লিকা তাকে পছন্দ করে না। সে উঠে পালাতে চাইল। মল্লিকা তাকে হাত ধরে বসাল। কিছুক্ষণ কোনও কথা বলল না। ততক্ষণে মাঠটা অনেকটা ফাঁকা হয়ে এসেছে। আবছা অন্ধকার নামছে। রাস্তার লাইটগুলো জ্বলে উঠল। সম্পূরক যদি মল্লিকার চোখের দিকে দেখতো তাহলে দেখতে পেত, অনর্গল অশ্রুধারা মল্লিকার দু'চোখ বেয়ে ঝরে চলেছে। সম্পূরকের মুখ চোখ কালো হয়ে গেল। হতাশার অন্ধকার নেমে এল। মল্লিকা আস্তে আস্তে বলল, "সম্পূরকবাবু, আমি আপনাকে কোনও দিন ভুলবো না আপনি চিরদিন আমার ভালো বন্ধু হয়ে থাকবেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ। অন্ধকার হয়ে আসছে। এবার বাড়ি যান, প্লিজ।"
" মল্লিকাদেবী!"
" না, মল্লিকাদেবী নয়, শুধু মল্লিকা।"
" মল্লিকা!"
" আমার সারাজীবনের সঞ্চয়। আমার জীবনের অমূল্য প্রাপ্তি।" মল্লিকা পা বাড়াল নিজের গন্তব্যে।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

 

Post a Comment

0 Comments