জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি ৫৩ পর্ব চিত্রা ভট্টাচার্য্য (রোমান ফোরাম /এর অন্তিম পর্ব )

পিয়াজ্জা ভেনেজিয়া

বার্লিনের ডায়েরি     ৫৩ পর্ব   চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
(রোমান ফোরাম /এর অন্তিম পর্ব )

মেঘলা আকাশের  ফাঁক দিয়ে বেলা শেষের বিদায়ী সূর্য আধো ঘুম ভাঙা চোখ মেলে তাকালে কোর্ডিলিয়া খুশিতে ঝলমল করে  ,আলো আছে আরো কিছুটা সময় বেড়ানো যাবে। ঘোড়ায়টানা রথ থামলো পিয়াজ্জা ভেনেজিয়ায়। এখানে মেলার মত আয়োজন ! কত জিনিসের বিকিকিনি চলছে। কেউ আবার ''যথা অভিরুচি ''  বিচিত্র' সাজ  পোশাকে হয়তো গ্ল্যাডিয়েটর নয়তো মস্তক হীন কবন্ধ সেজে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে ট্যুরিস্টদের সাথে পোজ দেওয়ায় ব্যস্ত। শ্রী হেসে ঋষভ কে  বলে দেখ -- অনেক টা ঠিক আমাদের দেশে দেখা বহুরূপীর সাজের মত। কিছু ইয়ং ছেলে মেয়েরা  ম্যাজিক দেখায় , একধারে ড্রাম পিটিয়ে কী বোর্ড ,ইলেক্ট্রিক গীটার বাজিয়ে  রোডশো করে দর্শক মনোরঞ্জনে এবং উপার্জনে ব্যস্ত। এই স্কোয়্যার টির একস্থানে ম্যাকডোনাল্ডের বিশাল রেস্তোরাঁ টি দেখে অদ্রিজাদের  মনে পড়লো দুপুরের লাঞ্চ সারা হয়নি। ঘড়ির কাঁটা প্রায় তিনটের ঘরে।  
ট্রাজান মার্কেট

 কয়েক পা দূরেই এক ইতালীয়ান রেস্তোরাঁ ''বেলা ইতালীয়ায় '' বেশ জোরে পা চালিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো ভীড় নেই ,আসলে এটি একটা বার কাম রেস্তোরাঁ যেখানে কিছুপানীয়র সাথে ইতালীয়ান ফুড ও পাওয়া যাবে। ঋষভ ও ক্যাপ্টেনমল্লিক দুজনেই শ্রীময়ীর মুখের অভিব্যক্তি দেখে খুব হোহো করে একচোট হেসে নিল। অদ্রিজা বলে মনে আছে মা ভেনিসে ও আমরা এই ভুলটা করেছিলাম। কোর্ডিলিয়া বিয়ার,ওয়াইন, স্কচ ইত্যাদি পানীয় তে অভ্যস্ত। ওর খুব অস্বাভাবিক লাগে ,অদ্রিজা কে বলে গ্রেট ! ওয়াইনবার নিয়ে এত টেনশান কেন? সেই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ওয়াশরুম ব্যবহার করে শ্রী মেনু কার্ড হাতে চেয়ারে জাঁকিয়ে বসেছে। সুতরাং পানীয় হিসাবে ইতালীয়ান ওয়াইন নেওয়া হোলো এবং স্টার্টারে প্ৰণফ্রাই ও কাপ্রেস স্যালাড,ফোকাসিয়া ইত্যাদি । রেস্তোরাঁর আরাম দায়ক উষ্ণতায় চোখের পাতা জড়িয়ে আসে । 

 অদ্রিজার অর্ডার মত  সারভিংগার্ল ইতালীয়ান পাস্তা ,  স্পেশাল স্প্যাগটি ডিস এবং ভদ্রলোক দ্বয়ের  চিকেন পিৎজ্জা দিয়ে গিয়েছে। সব শেষে কোর্ডিলিয়ার ইচ্ছেতে এলো রোমের বিখ্যাত জিলাতো আইসক্রীম।ওর মতে রোমে এসে এই - বিচিত্র স্বাদের বিস্কুটিয়ো কোনের মাথায়  নানান  রঙের আইসক্রিম জিলাতো না খেলে জীবন তোমার বৃথা। প্রচুর পরিমানে জমাট বাঁধা বরফ খেয়ে মনের সুখে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পর্ব সারা হলে ,শ্রী ফিরে যায় ছেলেবেলায় বলে জিলাতো আইসক্রীম দেখে স্মৃতির পাখিরা ডানামেলে উড়ে যায় সুদূরের অতীতে। লাল কমলা হলুদ সবুজ নানা রঙের গোল সিলিন্ডারের মত  জমানো বরফের মধ্যে পাতলা চ্যাপ্টা কাঠি গোঁজা। ঐ রঙিন আইসক্রীম টি খেতে গিয়ে ঠোঁট টুকটুকে লাল ,কারো কমলা কারো বা সবুজ। দুপুর বেলায় আইসক্রিম এলেই বাড়ির নিষেধ না শুনে সোজা ঠাকুমার কাছে আব্দার। আর আইসক্রিম হাতে পেয়ে আনন্দ অফুরান । পুরোনো রোমনগর

রেস্তোরাঁ থেকে ওরা প্রাণবন্ত হয়ে নতুন উদ্যমে অন্য একদিকে সম্রাট ডোমিটিয়ানের তৈরী ফোরাম অফ নার্ভা ,এবং রোম সম্রাট জুলিয়াস সীজারের পালিত পুত্র সম্রাট অগস্টাসের রাজত্ব কালে নির্মিত ফোরাম অফ অগাষ্টাসের ধ্বংসাব শেষের চত্বরে পৌঁছে গিয়েছিল। এখানে ফিলিপ্পির যুদ্ধে জয়ের পর সম্রাট অগাস্টাস ৪২ খ্রীষ্টাব্দে রোমান যুদ্ধের দেবতা মার্স এর নামানুসারে একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। যার দ্বার উদ্ঘাটন হতে প্রায় ৪০টি বছর লেগেছিল। সে এখন ভগ্ন স্তূপে পরিনত চারটি স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই নেই।সেখান থেকে ঋষভরা ম্যাপ ফলো করে কাছেই সোজা ট্রাজান মার্কেটে এলে ক্যাপ্টেন অবাক বিস্ময়ে বলেন কি নিপুনতায় নির্মিত সম্রাট ট্রাজানের ১০০থেকে ১১০খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে এই পৃথিবীর সর্ব প্রাচীন শপিং মল টি। তৎকালীন সময়ে যত স্থাপত্য ঘরবাড়ি প্রাসাদ ভবন যা কিছু তৈরী হয়েছিল সবের নেপথ্যে উপকরণ ছিল পাতলা ইট চুন সুরকি এবং তারা এখনো এতই মজবুত যে আড়াই হাজার বছর পরেও টিকে আছে।  লাল ইট ও চুন সুরকীতে বানানো ভবনটি তে এখনো ১৫০টি দোকান ঘর সমেত সুরক্ষিত মজবুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।                                                                                                                                                                খৃষ্টীয় প্রথম দুই শতাব্দী ধরে রোম সাম্রাজ্য পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎত্তম রাষ্ট্র ক্ষমতার সর্ব শিখরে ছিল। সামরিক নাগরিক বাণিজ্যিক শিল্প সংস্কৃতি সব দিক থেকে শ্রেষ্টত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত। সামাজ্যের রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্র ছিল ক্যাপিটোলাইন হিল। এখনো সেখানে প্রত্নতত্ত্ব বিদেরা অসীম পরিশ্রমে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। মাটির তলায় চাপা পরে থাকা বিশাল প্রাচীন এক সভ্যতা এক সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ --  সদ্য খনন কার্য্যের ফলে জেগে উঠে ইতিহাসকে গভীর ঝাঁকুনি দিয়ে প্রমান রেখে যাবে বিস্মৃত যুগের কাহিনীর। প্রাচীন  নিদর্শন বুকে নিয়ে অজস্র  মিউজিয়াম ,স্থাপত্য ও স্মারক চিহ্ন গুলো তার স্পষ্ট স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কোর্ডিলিয়া বলে যেদিকে তাকাই পৌরাণিক গল্পের আধার দেব -দেবীকে কেন্দ্র করে স্থাপত্য শিল্প গুলো চোখের ওপর চিন্ময় রূপে জীবন্ত হয়ে ভেসে ওঠে।  সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে বিশ্বের মহতী শিল্প সৃষ্টি কে বারংবার স্মরণ করায় । প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক মিউজিয়ামগুলো আধুনিক কাল পর্যন্ত্য সময়ের অনেক  চিহ্ন বহন করে পৌরাণিক যুগের ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রেখেছে ।                                                                                                                                                             এবার ওরা এসেছে ক্যাপিটোলিয়ান হিলের ক্যাম্পিডো গ্লিওতে অবস্থিত ক্যাপিটোলাইন মিউজিয়ামগুলো দেখতে যেখানে প্রাচীন রোমের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার গুলো সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে। কোর্ডিলিয়া বলে শুনেছি  বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো পরিকল্পিত কোর্ডোনাটা একটি মার্জিত স্মৃতি স্তম্ভের সিঁড়ি। পাহাড়টি টিলার মত উঁচু ,তারই গায়ে লম্বা -চওড়া সেই প্রশস্ত সিঁড়ি বেঁয়ে পৌঁছোলো ক্যাপিটোলিয়ান মিউজিয়ামের প্রাঙ্গণে। শ্রী তিতিরের হাত শক্ত মুঠোয় ধরে বলে  ,পায়ের পাতা দুটো শিরশির করে কাঁপছিল যখনই মনে পড়ছিল সিঁড়িগুলোর নক্সা তৈরী করেছিলেন মহান  শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো। তিতির বলে ঐ , সিঁড়ির ওপরে জ্যামিতিক নক্সা যুক্ত পিয়াজ্জা ডেলক্যাপিডগিলির স্রষ্টা  ও তাঁর কল্পনা প্রসূত। মুখোমুখি তিনটি ভবনের সামনে এসে ওরা দাঁড়ালো যেখানে মিউজিয়াম টি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। 

🍂

পিয়াজ্জা কেন্দ্রে সম্রাট মার্কাস অরলিয়াসের বিখ্যাত ব্রোঞ্জের মূর্তিটি ঘোড়ার পিঠে দন্ডায়মান। সামনেই অপূর্ব ভঙ্গিমায় নেকড়ে বাঘের স্তন্যপান রত শিশু দুটির মূর্তির প্রতিরূপ টি দেখে মুগ্ধ শ্রীর মনে পড়ে এই দৃশ্যটি ইতিহাস বইয়ের পাতায় রোমের কাহিনী পড়তে গিয়ে ছোটো বেলায় কত বার অবাক হয়ে দেখেছে । আর এখন ঠিক সেই মূর্তি টির সামনেই  দাঁড়িয়ে আছে । 

রোমানদের প্রাচীনতম থেকে আধুনিক বৃহত্তম ব্রোঞ্জমূর্তি মূর্তি গুলো সব রিপ্লিকা। আসল গুলো জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে । রোম অসম্ভব শিল্পের সমাঝদার এখানে নামী দামী গ্যালারি ও মিউজিয়াম যথেষ্ট  ছড়িয়ে থাকলেও  রোমের সব চেয়ে বড় শিল্প সম্মত এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ শালা এই মিউজিয়াম টি একটি অমূল্য রত্ন ভান্ডার। সময়ের স্বল্পতা এবং টিকিটের মূল্য ও অধিক হওয়ায় ঋষভ ঠিক করেছিল একটি মিউজিয়ামই দেখবে। এক অবারণ কৌতূহলে ক্যাপিটোলিয়ান পাহাড়ের ওপর নির্মিত জাদুঘরটি  ভীষণ ভাবে শ্রী কে চুম্বকের মত আকর্ষণ করছিল। অন্দরে প্রবেশের পর দেখেছিল বেশ কিছু অপূর্ব মার্বেল পাথরের মূর্তি সাজানো । একটি ঘরে  গ্রীক পন্ডিতদের আবক্ষ মূর্তি --সেখানে  সক্রেটিস এরিস্টটল , ডেমোক্রেটাস , প্লেটো , আর্কিমিডিস ,ইউক্লিড, সোফোক্লেস ,দান্তে , দ্য ভিঞ্চি ,আরো কত স্রষ্টা শিল্পী মনীষী দের মূর্তি রয়েছে। টিশিয়ান , তিনতোরেত্তো ,গুইডো ,রেনিদ আরো বহু জনের প্রতিকৃতিতে ভরে আছে এই অপূর্ব সংগ্রহ শালা টি। 

 প্রাচীন রোমের সৃষ্টির কত স্মৃতি কত সংগ্রাম কত জয় লাভের অবিস্মরণীয় মুহূর্তের স্বাক্ষ্য বহন করছে এই  সংগ্রহ শালা টি।কোর্ডিলিয়া অদ্রিজার মধ্যে আলোচনার শেষ নেই।  একটি ঘরের সামনে এসে  থমকে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন শ্রী কে হাতের ইশারায় ডাকে।ঘর টির বিশাল উঁচু দরজার ওপরে লেখা  the cabinet of venus । ওরা সেখানে Capitolin  of  Venus এর শ্বেতশুভ্র পাথরের অসাধারণ মূর্তি টি  বিস্ফারিত নেত্রে দেখেছিল। ঠিক যেন অপরূপা সৌন্দর্যময়ী এক জীবন্ত আবরণ,আভরণ হীন নারীমূর্তি। এই ক্যাপিটোলিয়ান মিউজিয়াম টি  আদতে একটি ই জাদুঘর দুটি বাড়ির বিরাট এলাকা জুড়ে। পালেজো দেই কনজারভেটরিটি ও পালেজ নিউওভো নামে পরিচিত। অষ্টম শতাব্দীর বিসি থেকে সংগৃহিত নানান ঐতিহ্য পূর্ন সামগ্রী তে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। 

এই ক্যাপিটোলিন হিল ১৭৩৪ সালে বিশ্বের প্রথম জাদুঘর হিসেবে পোপ ক্লিমেন্ট ষষ্ঠ দ্বারা এই বিশ্বখ্যাত মিউজিয়াম টি এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাচীন যুগ থেকে রেনেসাঁ পর্যন্ত রোমের ইতিহাস এবং বিকাশ কে বোঝার জন্য এই জাদুঘরের গুরুত্ব আজো অপরিসীম। বিশাল এই মিউজিয়াম টির একেকটি ঘর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ---পালেজো দেই কনজারভেটরিটি প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন  শিল্পকর্মে প্রসিদ্ধ। সেই সময়ে  এই পাহাড় ক্যাপিটোলিয়ান হিল পরিপূর্ণ ছিল প্রাচীন মন্দিরগুলোর  বিরাট এলাকা নিয়ে। প্রাচীন যুগ থেকে রেনেসাঁ পর্যন্ত রোমের ইতিহাস এবং বিকাশ কে বোঝার জন্য এই জাদুঘরের গুরুত্ব আজো অপরিসীম। বিশাল এই মিউজিয়াম টির একেকটি ঘর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত -- তাদের মধ্যে প্রথমেই মনে করতে হয় রোমের প্রকৃত প্রতীক উল্ফ- ব্রোঞ্জস্থাপত্য টি।  প্রাচিনরোমের প্রতিষ্ঠাতার জীবন দাতা চিতাবাঘ টি ও রম্যুলাস এবং রেমাস এর স্তন্যপান রত ব্রোঞ্জের তৈরী বিরাটাকার মূর্তিটি দেখে ক্যাপ্টেন বললেন এটা কিন্তু আসল ।  

 একটি বড় কাঁচের হল ঘরে ইলস্পীনেরি ,সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের ও সম্রাট কনস্টান্টাইনের   অশ্বারোহী বিশাল ব্রোঞ্জেরমূর্তি। কনসারেটরির ভাস্কোমূর্তি ,মুদ্রা, সিরামিক ও প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র ও অলঙ্কারের প্রদর্শন দেখে ওরা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। রোমান ম্যাজিস্ট্রেটের শিলালিপি ,ঈশ্বর বৃহস্পতি নিবেদিত একটি প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তি এবং ক্রীড়াবিদ দেব ,দেবী, সম্রাট, যোদ্ধাদের অসংখ্য মূর্তি সাজানো রয়েছে । কোর্ডেলিয়া বলে আঙ্কেল দেখ ,এইগুলো সব বারোক শিল্পের অত্যাশ্চর্য্য সংগ্রহ। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার মধ্যযুগীয় রেনেসাঁ ও বারোক শিল্পীদের বহু ছবি ও ভাস্কর্য্য সাজানো রয়েছে।যে ছবি গুলো  বারবার মনে করিয়ে দেয় সেযুগে রোমানরা কত সমৃদ্ধ শালী ঐশ্বর্য্যবান সুরুচি সম্পন্ন ছিল। এই সংগ্রহ শালা ঠিক করে দেখতে গেলে সারাদিন ধরেও দেখা শেষ হবে না। 

 ওরা বাড়িটির তৃতীয় তলায় ক্যারাগাগী ভেরোনি, টিটিয়ান এবং রুবেনের ছবির গ্যালারি দেখেছিল।যদিও  চিত্র ও শিল্পী দের সম্বন্ধে বিন্দু মাত্রজ্ঞান ছিল না  এবং সব নাম ও মনে নেই। এখানের আর একটি বাড়িতে "মারফোরাও" নামক একটি জল দেবতার বিশাল স্তম্ভ মূর্তি দেখেছিল। আজ এতো দিন পর স্মৃতি চারণ করতে বসে টুকরো স্মৃতির গল্প ভেসে আসছে মনের পাতায়।।

মিউজিয়ামের বাইরে এসে ওরা অনুভব করেছিলো সময়  সেখানে থমকে গিয়েছে। জায়গাটিতে এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা। একদল প্রানোচ্ছল কলেজের স্টুডেন্ট  হৈ হৈ করে খুশিতে ক্যাপিটোলিয়ান পাহাড়ের উত্তর পূর্ব দিকের ঢাল বেয়ে মামেরটাইন কারাগৃহের পাশ দিয়ে ট্রাজান স্কোয়্যারে দিকে নেমে যাচ্ছিল। ওদের ফলো করে পাহাড়ি ঢালবেয়ে তাড়াহুড়োয় নামতে গিয়ে শ্ৰীর জুতো স্লীপ করতেই কোর্ডিলিয়া লম্বাহাত বাড়িয়ে ধরে ফেলায়  নিজেকে কোনো মতে সামলে মামেরটাইন কারাগৃহের সামনে দাঁড়ায় শ্রী । এখানে বিখ্যাত সাধু সেন্টপিটার ও সেন্টপলকে বন্দী করে রেখে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল। শীতের সন্ধ্যার ছায়া ঘেরা আবছা আলোয় এক নিঃঝুম ভৌতিক পরিবেশের মত চারধার ঘিরে কারাগারের ছোট ছোট নীচু কুঠুরি। অদ্রিজা ,কোর্ডিলিয়া দেওয়ালের গায়ে কান পাতে , অত্যাচারিত বন্দী সাধুদের যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাসের গুমড়ানো কান্নার আওয়াজ যেন শুনতে পায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় অতৃপ্ত আত্মার করুণ নিশ্বাস ।
রোমের ভাস্কর্য

এবারে ওরা তিনজন পাহাড় ছেড়ে ফোরামের পশ্চিম দিকে সেপ্টেমিয়াস সেভেরাসের তোরণ টির সামনে এসে দাঁড়ালো। ক্যাপ্টেন বললেন মিষ্টার ঋষভ , তোমাদেরই খুঁজতে গেছে। গাঢ় অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে ,চারদিক আলোর প্লাবনে ভাসলেও পাহাড়ের ধুম্রমৌন ছায়ায় এদিকটা বেশ অন্ধকার। অদ্রিজা মাথার ওপর হাত তুলে ক্রস করে নাড়িয়ে বলে ফোরাম দেখার পালায়  the end ..আজকের মত যবনিকা পড়লো।  কাছেই এক ওপেন কফিক্যাফে তে ওরা বসেছিল। গরম ক্রীম মেশানো ঘন দুধের কফিতে চুমুক দিয়ে সান্ধ্যকালীন কফির আড্ডায় ক্লান্তিদূর করার প্রয়াস। ঋষভ বলে আগামীকালের  প্রোগ্রাম ভ্যাটিকান সিটি। ক্যাপ্টেনের শ্রী দের সাথে ভার্তিকান সিটি তে যাওয়া হবে না।সকালে ফ্লাইটে ফ্রান্সে ট্যুরে যাচ্ছেন। ওদের সবার মন খারাপ। সবাই চুপ তিনি বাতাস মাতিয়ে স্বভাব সিদ্ধ হোহো হাসিতে হেসে ওঠেন। বলেন আবার দেখা হবে! চিন্তার কি আছে এই বার্লিনেই দেখা হবে পরের সপ্তাহে। 
না পরের সপ্তাহ আর আসেনি। সদা হাস্যময় আকাশের মত উদার মানুষ ক্যাপ্টেন মল্লিক ফ্রান্সের থেকে ফেরার পথে কোনো এক রোড এক্সিডেন্টে স্পটডেথ হয়ে ছিলেন।সদা চঞ্চল মানুষ টি ইহলোক ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন অন্য আর এক অজানা জগতে। শ্রীময়ী ঋষভ বার্লিনে থাকাকালীনই সেই দুসংবাদ পেয়েছিল।

    সেদিনরোমান ফোরামের ভগ্ন স্তূপ, এই মিউজিয়ামের চত্বরে ঘুরে এক অনন্ত অতীতের বুকের মধ্যে এতটা সময় কাটিয়ে মনে হোলো অনাদি অতীত যেন এতক্ষন  নির্বাক নয় তার সমস্ত সত্বা গরিমা গৌরবজ্জ্বল কাহিনী ঐতিহ্য সমৃদ্ধিতে মুখরিত ছিল। ধীরে ধীরে মোহজাল কাটিয়ে  বর্তমানের কঠিন বাস্তবের মাটিতে পা বাড়ালো। প্রাচীনত্ব কে সঙ্গে নিয়ে তাকে স্বপ্নের চাদরে সযত্নে মুড়ে রেখে আধুনিক রোম তরতর করে এগিয়ে চলেছে আগামী পৃথিবীর নতুন যুগের যাত্রাপথে।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments