বার্লিনের ডায়েরি ৫২ পর্ব চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(রোমের পথে। /ফোরামের পরবর্তী অংশ )
স্বর্গ থেকে শ্বেতশুভ্র পাখায় ভর করে নেমে এলেন প্রেমের দেবী ভেনাস। সোনার কাঠির ছোঁয়া লাগলোশ্রীর নিদ্রাহীন চোখের পাতায় । সেদিনের মত ঘুম জড়ানো চোখে কলম বন্ধ হলেও আবার মনোনিবেশ করেছে ফোরামের নতুন গল্পে। মাথায় গিজগিজ করছে রাশিরাশি ঘটনা বার্লিনের ডায়েরির পাতায় সাজিয়ে না রাখা পর্যন্ত ওর সৃজনী মনের শান্তি নেই। বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় এই রোমানদের শুধু যে লড়াকু যুদ্ধ প্রিয় জাতি ও তাদের বীরত্বের পরিচয় পাওয়া যায় তাই নয় তাদের স্থাপত্যকীর্তি শিল্প দক্ষতার কথাও প্রশংসনীয়।সেদিনের এই রোমান ফোরামের প্রাচীন ভগ্নাবশেষে পা দিয়ে সেই যশ কীর্তি স্মরণে আসায় ইতিহাস সংগ্রহে ও আবার পুরোনো ডায়রির পাতা উল্টোয়।
প্রাচীন রোমের স্থাপত্য।
ফোরামের চত্বরে পা দিয়ে বিস্ময়ে মুগ্ধ শ্রী মুখর হয়ে উঠেছে , ওর কথা শোনার একনিষ্ঠ শ্রোতা কোর্ডিলিয়া ,অদ্রিজার সাথে ঋষভ ,ক্যাপ্টেন মল্লিক ও আছেন । ফোরামের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের ভগ্নপ্রায় অবস্থা থেকে কয়েকটি থাম তোরণ স্থাপত্যের কিছু অংশ ও হাজার বছর পরে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভগ্ন স্তূপগুলো দেখে সহজেই অনুমান করাযায় এই সভ্যতার শুরু থেকেই রোমানরা বিশেষ স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ ছিলো। এরা যে কত সুকৌশলে বিশাল এবং মজবুত স্থাপত্য নির্মাণে পারদর্শী ছিলেন। তাই রোমানরা ইউরোপের যেখানেই পদার্পণ করেছেন সেখানেই তাঁদের স্থাপত্য কুশলতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিহাস তার স্বাক্ষী হয়ে যথেষ্ট প্রমান ও রেখে দিয়েছে। রোমানদের সেই স্থাপত্য প্রেম সৃষ্টি ও নির্মাণ কৌশল রোমান ফোরামে ইতস্তত সর্বত্র ছড়ানো রয়েছে।
🍂
ফোরামের ধ্বংস স্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন মল্লিক আবেগ তাড়িত হয়ে বলতে থাকেন ,রোমে যত বার আসি বারবার বিশেষ করে এই ফোরাম এবং কলোসিয়াম আমায় এক অদৃশ্য আকর্ষণে টানতে থাকে। অনাদি অতীত গর্জে উঠে আমার কণ্ঠ সোচ্চার করে তোলে। রোমের এই জায়গা গুলো মোটেই পুরোনো হয় না প্রায় বার চারেক এলাম তবুও যেন মনে হয় সব নতুন করে দেখছি। একটু খানি জোরে পা চালিয়ে তিনি ওদের মাক্সেন্টিয়াসের তৈরী ব্যাসিলিকার সামনে নিয়ে এসেছিলেন। খ্রিষ্টীয় প্রথম কয়েক শতাব্দীতে সামন্ত তান্ত্রিক প্রভাবে রাজনীতি ও সামাজিক শক্তি হিসাবে এক শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রাবল্য দেখা দেওয়ায় রোমের পদানত জাতিদের মধ্যে ইহুদিরা ছিল সর্বাপেক্ষা দলিত নিপীড়িতএবং সবচেয়ে প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী। রোমের স্বৈরাচারী রাজ শাসনে সাধারণ মানুষদের জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তখন তাঁদের শেষ নির্ভর যোগ্য আশ্রয় স্থল হয়েছিল এই ইহুদিদের খ্রীষ্ট ধর্মের ছত্র ছায়া। অত্যাচারের মাত্রা যত বাড়তে থাকে খৃস্ট ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা ততই প্রসারিত হয়।
হাউজ অফ ভেস্টাল ভারজিন
এই আলোচনায় শ্রীও যোগ দিয়ে বলে ধর্ম গুরু পোপের নিষ্ঠুরতায় অবশেষে সম্রাট কনস্টান্টাইন ৩১২খ্রীষ্টাব্দে স্বয়ং খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফোরামের এই যে সব বিখ্যাত নিদর্শন গুলো দেখা যাচ্ছে এই গুলো সম্ভবতঃ সব তার আগের যুগের। সম্রাট মাক্সেনটিয়াস ৩০৮ খ্রীস্টাব্দে এই ব্যাসিলিকা টির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর পতনের পর সম্রাট কনস্টান্টাইন ৩১২খ্রীষ্টাব্দে এর নির্মাণ কার্য্য সম্পন্ন করেছিলেন। এর নির্মাণে ও পাতলা ইটের চুন সুড়কি দিয়ে মোটা দেওয়াল, তিনটি প্রকোষ্ঠ সহ বিরাট উঁচু ,ও তোরণাকারে তৈরী দেখেই অনুমান করা যায় স্থাপনা টির কত বিশাল আকারের ছিল। কোর্ডেলিয়া বলে ফোরামময় চতুর্দিকে ছড়ানো রয়েছে শুধু ধ্বংস স্তূপ তবু মনে হয় এক প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্যের মাঝে ঘুরে চলেছি ।
এখানে একটি প্রাচীরের সামনে ক্যাপ্টেন মল্লিক ঋষভকে নিয়ে এসে দেখালো যেখানে রোমান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের মানচিত্র টি পরিষ্কার রয়েছে।এরপরে ওয়েস্টামন্দির বা পবিত্র অগ্নি রক্ষক রোমের প্রাণ শক্তির প্রতীক দেবী ভেস্ট্যার একটি ছোট্ট মঠে যেখানে অতন্দ্র প্রহরায় চির কুমারী দেবীরা জাগ্রত থাকতেন।এবং একমাত্র প্রধান পুরোহিত ছাড়া এখানে দ্বিতীয় পুরুষ ব্যক্তির প্রবেশ নিষেধ ছিল। কুড়িটি কোরিন্থিয়ান স্তম্ভ দিয়ে ঘেরাছিল এই দেবীর পূর্বমুখী গোলাকার ব্যাসিলিকা টি।কয়েকটি উঁচুউঁচু থাম যা বেশীর ভাগ ভেঙে গিয়েছে এবং কোনোমতে ভাঙা থাম গুলো ছাদ টিকে বহন করছে। এখানে রোমান হরপে খোদিত কয়েকটি লাইন কোর্ডিলিয়া পড়ে ইংলিশে শোনায় যার বাংলা অর্থ করে - শ্রী নোটবুকে লেখে ''১৯১ খ্রীষ্টাব্দে আগুনে পুড়ে এই মন্দির ভস্মীভূত হওয়ার পর সেই সময়ে এর কিছুটা সংস্কার করা হয়েছিল। এর বহুবছর পরে বিংশ শতকে এই মন্দিরের যে আংশিক পুনর্গঠন করা হয় সেই অংশ টি ই এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ''
গাইডম্যাপে দেখানো পাশেই ছিল ভেস্টাল ভার্জিনহাউস টি ক্যাপ্টেন মল্লিক বলেন এটি ছিল পুরোহিত দের ঘর। আয়ত ক্ষেত্রাকার একটি পুকুরের চারপাশে প্রায় এক ডজন মূর্তি রয়েছে। রোমান পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী এদের মধ্যে অনেকের ''মাথা ঘুরে বেড়ায় '',যা ভেসাল ধর্মাবলম্বীদের উচ্চ ধর্মীয় পরিচয়ের কিছু চিত্র তুলে ধরে। অদ্রিজার ঠোঁটের কোণে অবিশ্বাসের হাসি ,কণ্ঠে ও সংশয়ে ঋষভের মনে সন্দেহ বলে "মাথা ঘুরে বেড়ায়"? সে কেমন করে ! তাও কি সত্যি !সম্ভব ?
তবে এই মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রী র মনে হয়েছিল অগ্নির দেবী ভেস্টার অগ্নিশিখা আজ বহু শতাব্দী আগে নির্বাপিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রোমানদের জীবনী শক্তি প্রাণের আবেগ আজ ও চঞ্চল ধারায় সমান প্রবাহমান। এর সামনেই ক্যাষ্টর ও পোলাক্সের ব্যাসিলিকা সম্ভবতঃ প্রথম শতকের শেষ দশকে তৈরী হয়েছিল। বিবর্ণ ভগ্ন ধ্বংস স্তূপের মাঝে ঋষভ দেখিয়েছিল তিনটি স্তম্ভ সম্বলিত বিদ্যমান শুধু বাঁধানো মেঝেটি। দেবতা জুপিটার বা জিউস এবং তাঁর স্ত্রী লেডারের বীর যমজ পুত্র অশ্বারোহী ক্যাস্টর ও পোলাক্সের উদ্দেশ্যে এই ব্যাসিলিকা টি উৎসর্গীকৃত ছিল।
এরপর সেখান থেকে ওরা প্রায় ২৯ খ্রীস্টপূর্বাব্দে নির্মিত জুলিয়াস সীজারের মন্দিরের পাশেএসে দাঁড়িয়েছিলো। এতক্ষণে ঋষভ বলে বার্লিন টিভিতে হিস্টোরিক্যাল চ্যানেলে সেদিন দেখেছিলাম সীজারের মন্দিরের পাশেই তাঁর মৃতদেহ দাহ করা হয়েছিল। ক্যাপ্টেন ভগ্ন প্রাপ্ত মন্দিরটির পাশের একটি জায়গা দেখিয়ে বললেন এখানে সীজারের সমাধি দেওয়া হয়েছিল। চারিদিকে তাকিয়ে সেখানে শুধুই মাটির একটি উঁচু মত ঢিবি ছাড়া অন্য কিছুই দেখতে পাওয়া গেল না। কিছু ইতালীয়ান ভ্রমণার্থীরা আজো বিনম্র চিত্তে সীজারের সমাধির ওপর ফুল ও মুদ্রা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলেছেন।
কুয়াশা ছন্ন মেঘলা দিন মেঘে ঢাকা আকাশে একটি বারের জন্য ও মাথার ওপর সূর্য্য দেবের মুখ দেখা যায়নি।ভারী বিষণ্ণ আকাশ ; তীব্র ঠান্ডা হাওয়া বইছে কিন্তু অদ্রিজা কোর্ডিলিয়ার কঠিন পণ বৃষ্টি যখন নেই , ঠান্ডা হাওয়ার দৌরাত্ম্য যতই চলুক না কেন ,যত দূর সম্ভব দেখা যায় দেখেই আমরা ফোরাম চত্বর ছাড়বো। এবারে ফোরামের সর্বপশ্চিম প্রান্তের ক্যাপিটোলিয়ান পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্যাটার্ন বা শনি মন্দিরের ধ্বংসাব শেষের সামনে পৌঁছলো। মন্দিরের সামনের বারান্দায় আটটি স্তম্ভ ,ত্রিভূজা কার পেডিমেন্ট মাথার ওপর মুকুটের মত এখোনো ধারণ করে আছে। এখানে দামিয়ানো চার্চ ভবনের এক পাশের সঙ্গে কয়েকটি মূল রোমান ভবন সংযুক্ত রয়েছে। চার্চের প্রবেশ পথে চতুর্থ শতকে নির্মিত যে গোলাকার ভবন টি দেখাগেল সেই স্থাপত্য টি সম্বন্ধে ধারণা করা হয় সম্রাট ম্যাক্সেন্টিয়াস তাঁর মৃত পুত্র ভ্যালেরিয়াস রোম্যুলাসের স্মরণে উৎসর্গ করেছিলেন। এমন কত ইতিহাসের স্মরণীয় কাহিনী কে মূল্য দিয়ে সেইসময়ে রোমান ফোরাম গড়ে উঠেছিল। ওদের প্রত্যেকের চোখে ঘোর বিস্ময় ! এই ধ্বংসাবশেষ জুড়ে ছড়িয়ে আছে এত চমৎকার কারুকীর্তি যা দেখে স্তম্ভিত হতে হবেই।
গাইড ম্যাপ ফলো করে ফোরামের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে দেখেছিলো যেখানে ১৯৪ থেকে ১৯৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পার্থিয়ানের যুদ্ধে সম্রাট সেপ্টিমিয়াস সেভেরাস তার দুই পুত্র কারাকালা ও গেটারের জয়লাভের স্মরণে ২০৩ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট সেপ্টিমিয়াস সেভেরাস নামাঙ্কিত সাদা মার্বেল পাথরে তৈরী একটি অনিন্দ্য সুন্দর তোরণ দ্বার নির্মাণ করেছিলেন। এই তোরণ টিতে বেশ কয়েকটি রিলিফ প্যানেল ও মূল দ্বারের উপরদিকে দুটি পাশে পাখা যুক্ত বিজয়শ্রী দেবীর দুটো মূর্তি দিয়ে সুসজ্জিত ছিল। তেমনি তোরণ দ্বারের পাশের স্তম্ভের ওপর পার্থিয়ান যুদ্ধে বন্দীদের মূর্তি রিলিফ প্যানেলে খোদাই করা দেখে শ্রী বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এই ছবি গুলো ওর খুব চেনা। মনে পড়ে কলেজের ক্লাস শেষ হলে নীলাঞ্জনার সাথে ন্যাশানাল লাইব্রেরী তে এনসাইক্লোপিডিয়ার পাতায় এইসব ছবি কত বার দেখেছে। ফোরামের পশ্চিম প্রান্তে ক্যাপিটোলাইন পার্কে অবস্থিত আটটি কলাম যুক্ত বিশাল স্যাটার্ন বা শনির মন্দির ও কনকর্ডিয়া মন্দিরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল ভেসপাসিয়ান ও টাইটাসের মন্দির।
শ্রীর সাথে দুই কন্যা ও ঘুরে ঘুরে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ নজরে পড়লো প্যালাটিয়ান পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একটি সটান খারা রাস্তা ধরে ঋষভ এবং ক্যাপ্টেন এগিয়ে চলেছে। সব ক্লান্তি মুছে ফেলে অদ্রিজা ও কোর্ডিলিয়া ওদের পিছন ধাওয়া করে পাহাড়ে উঠতে শুরু করে। শ্রী ও অগত্যা ধীরে ধীরে সেখানে পৌঁছে আশ্চর্য্য হয়ে দেখেছিল রোমান সম্রাটদের এককালের বিলাস বহুল সারি সারি প্রাসাদ গুলো কঙ্কালের চেহারা নিয়ে জরাজীর্ন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। এবড়ো খেবড়ো রুক্ষ পাহাড়ি পথে চলার সময়ে মার্বেল পাথরের নারী মূর্তি শোভিত সিমেন্ট বাঁধানো এক অপরূপ ঝর্ণার ঝির ঝিরিয়ে স্বচ্ছ জলের ধারার দৃশ্যে মোহিত হয়ে ওরা সেখানেই জিরোতে বসে গিয়েছিল ।
পাহাড়ের গায়ে অজস্র মানুষের ঘর বাড়ি নিশ্চিন্তের সংসার গড়ে উঠেছে। এবং ধাপে ধাপে সিঁড়ির মত স্টেপ থাকায় চলার বেশ সুবিধা। এই পাহাড়টি রোমান ফোরাম থেকে ১৩০ ফুট উঁচুতে। শ্রীর প্রথমে মনে হয়েছিল ওর অবশ পা দুটো নিয়ে অতো উঁচুতে ওঠা অসম্ভব । তিতিরদের ক্লান্তি নেই ওরা এগিয়ে গিয়েছে। শ্রী ও ক্রমশ পৌঁছলে অপরূপ এক সৌন্দর্যের দর্শন সেই মুহূর্তে উপভোগ করেছিল। ঋষভ ডানহাতের তর্জনী দিয়ে অনেক দূরের আবছা মেঘের আড়ালে জেগে ওঠা একটি চার্চের দিকে নির্দেশ করে শ্রীকে বলে ম্যাডাম চোখের থেকে সানগ্লাস টি খুলে এবারে খালি চোখে সামনের ঐ দিকে তাকিয়ে দেখুন একবার। শ্রী সানগ্লাস কপালের ওপর তুলে হেসে ফেলে ঋষভ কে বলে ,আরে ! এত সম্মান দিচ্ছ যে ? ঋষভ বলে সামনে তাকিয়ে দূরের গীর্জাটির মাথা দেখছো ঐ সুন্দর গীর্জাটি হচ্ছে ভ্যাটিকান সিটির সেন্টপিটার গীর্জা। কোর্ডিলিয়া বলেআগামীকাল আমরা ভ্যাটিকান সিটিও দেখতে যাবো।
প্যালাটিয়ান পাহাড়ের উত্তর দিকে ফোরাম এবং দক্ষিণ দিকের পাহাড় টির ঠিক নীচের তলের দিকে সার্কাস ম্যাক্সিমা রয়েছে।শ্রী প্রচণ্ড উৎসাহে পাহাড়ের নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ক্যাপ্টেন মল্লিক বলেছিলেন প্রায় দেড় লক্ষ দর্শকের উপস্থিতি তে সেই প্রাচীন সময়ে বিশাল দিগন্ত প্রসারিত এই সার্কাস ম্যাক্সিমার মাঠে টিতে এক সময়ে রথের দৌড় প্রতিযোগিতা হতো এবং নানা প্রকার বিনোদন মূলক উৎসব অনুষ্ঠান পালন হতো। পাহাড়ের ওপর থেকে নীচের ঐ সার্কাস ম্যাক্সিমার বিশাল ওভাল শেপের মাঠ টি তে তাকিয়ে শ্রীময়ী যেন মানস চক্ষে দেখতে পেয়েছিলো লক্ষাধিক দর্শকের জমায়েত হৈ হৈ হট্টগোল জয় ধ্বনি হর্ষ ধ্বনিতে কেঁপে উঠছে ধরাতল। তারই মাঝে ,রাঙা ধূলো উড়িয়ে আকাশ কালো করে দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে রাশিকৃত রথ চক্র মাটি কাঁপিয়ে ঘর্ঘর শব্দে ছুটছে। প্রতিযোগিতায় নামা বিভিন্ন ধরণের সুসজ্জিত যুদ্ধ রথের ধ্বজা বাতাস কাঁপিয়ে উর্দ্ধ হয়ে উড়ছে।
কলোসিয়ামের পাশদিয়ে এবারে সোজা রাস্তা টি চলে গিয়েছে -ভিয়া ডেল ফোরি ইম্পেরিয়ালি হয়ে সোজা ট্রাজানের কলাম বা ঐতিহাসিক স্তম্ভের দিকে। ট্যুরিস্ট সমাগমে পিয়াজ্জা ভেনেজিয়ায় স্থান গমগমে। রাস্তার ধার ঘেঁষে কয়েকটি সখের বেশ সুন্দর সাজানো ঘোড়ায় টানা চাকাওয়ালা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কোর্ডিলিয়া ও অদ্রিজার মত শ্রীর ও গোপন শখ ঐ ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে আশেপাশের রাস্তা প্রদক্ষিণ করার। দুই বন্ধু তড়িঘড়ি এক গাড়ির চালকের সাথে আলাপ করে রুপালি পাতের সুসজ্জিত গাড়িটিতে চট করে উঠে বসে মহোল্লাসে শ্রী ,ঋষভদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। সেইমুহূর্ত শ্রীর কাছে ঘোড়ার গাড়িএবং রোম নগরের রাস্তায় বেড়ানোএক অবিস্মরনীয় চমকপ্রদ ঘটনা ।
রোমান ফোরাম
ঘোড়ারগাড়ি ছুটছে শ্রী যেন প্রাচীন রোমের সেই বিজয়ীনী রানী। ওর পরনে স্বর্ণকাতান সোনালী জরির শাড়িতে কারুকার্য্যে গাঁথা ঝলমলে সোনালী আঁচল হাওয়ায় উড়ছে। ঘোড়ায় টানা রথে সভাসদ দের নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে বেরিয়েছে শহর পরিক্রমায়। কোর্ডিলিয়া মহাখুশি হয়ে অদ্রিজাকে জড়িয়ে ধরে বলে সংসারের বিশ্বাসঘাতকতায় একাকী জীৱন যখন বিষময় লাগছিল তখন তোমার মত বন্ধু পাশে পেলাম। মম চলে যাবার পর এই প্রথম আবার মাতৃ স্নেহের সান্নিধ্য পেয়েছি আন্টির কাছে।আমার রোম বেড়ানো সার্থক হয়ে উঠলো। শ্রী ভাবে মানুষই যে মানুষের প্রকৃত বন্ধু হয়ে মনের কষ্ট লাঘব করতে পারে । আধঘন্টার মতসময় সাত পাহাড়ির রোম নগরের রাস্তায় টগবগ ঘোড়া ছুটছে ।ঋষভ ও ক্যাপ্টেন দুজনেই প্রাণ খোলা হাসিঠাট্টায় মশগুল। তিতির বলে তোমাদের খুশি টুকু এই মুহূর্তের এমন সুন্দর দৃশ্যের ছবি আমার কাছে এক অমূল্য সম্পদ ।
0 Comments