জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি (৫৪পর্ব ) / চিত্রা ভট্টাচার্য্য

টাইবার নদী

বার্লিনের ডায়েরি   (৫৪পর্ব )  
 চিত্রা ভট্টাচার্য্য 

ভাটিক্যান সিটি 

ভোরের বেলার কাঁচাহলুদ রাঙা সূর্যের আলো জানলার পর্দার ফাঁক গলিয়ে চোখে এসে পড়ায় শ্রীময়ীর মধুর ঘুম উধাও। সোনালী সূর্য তার ঢলো ঢলো রূপ নিয়ে একেবারে ঘরের মেঝেতে লুটোপুটি খায়।  সুপ্রভাতের স্নিগ্ধ মিষ্টি আদর গায়ে মেখে অনন্ত আকাশের স্নেহ ভরা অসীম নীলের দিকে তাকিয়ে কফিরকাপ হাতে সোফায় বসে শ্রী দেখছিল এক নতুন দিনের আগমনে ধরিত্রীর প্রসারিত কপালে  সদ্যস্নাত উষার উদয়। শীতের সকালের ছন্দ পতন ঘটলো। চিরজাগ্রত বসন্ত কে সঙ্গে নিয়ে রবাহূত হয়ে ফাগুন যেন কড়া নাড়ছে শ্রীর দরজায়। অনেকদিন পর বেড়ানোর এমন মনোরম আবহাওয়া পাওয়ায়  ওরা আনন্দে আত্মহারা।  এক অজানা খুশির স্রোত বয়ে যায় শ্রীময়ীর মনের গভীরে। 

 স্কুল কলেজের পাঠ্য বিশ্ব ইতিহাসের বইটি থেকেই রোমের মত ভ্যাটিকান সিটির সাথে কিশোরী শ্রীর নিবিড় পরিচয় হয়েছিল। বিশেষ করে পরীক্ষার খাতায় ভ্যাটিকান সিটির ওপর ২০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরে কিছু তো লেখা  চাই। এই কারণে ঘটনার ঘন ঘটার সাথে সন তারিখ মনে রাখার বিশেষ কর্তব্যে পাতার পর পাতা রাতজেগে মুখস্ত করার দিনগুলোতে স্বপ্নেও ভাবেনি ,বাস্তবে কোনোদিন রোম শহরে ঘুরবে এবং একদিন এই ভ্যাটিকান সিটি ও দেখতে আসবে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে ওর কল্পনা প্রবন ভাবুক মন ডানামেলে দিয়েছে ঐতিহ্যময়ঐ রূপকথার নগর --ভ্যাটিকান সিটির পবিত্র ভূমির সোপানে।  

গতরাতেই  মারিয়ার রেস্তোরাঁয়  ডিনার টেবিলে বসে প্ল্যান হয়েছিল ভ্যাটিকান সিটি তে যাবার। বেশ মনে আছে তখনো  রোমের সর্বত্র নেট ব্যাবস্থার উন্নত মানের পরিষেবা ছিল না। যখন তখন তিনি ভ্যানিশ হয়ে যান। অদ্রিজার বন্ধুরা বলে হা পিত্যেশ করে বসে থেকে ভগবান কে ডাকলে তিনি সাড়া দেবেন। কিন্তু এ দেশে ইন্টারনেট নৈব নৈব চঃ। সে কখন আসে কখন যায় তার দেখা সহজে পাওয়া যায় না ।  মারিয়াই পরামর্শ দিয়েছিল বেশী রাতের দিকে নেটের সমস্যা কম টিকিট পাওয়া যাবে।এতসব কান্ডতে  ঋষভের একটুও আগ্রহ নেই , ওর অধৈর্য্য লাগে। এ কালের ছেলে মেয়েরা ইন্টারনেটের ব্যাপারে ভারী ধৈর্য্য শীল। তবে ভাগ্য সেদিন অদ্রিজার সুপ্রসন্নই ছিল। ১৫মিনিটের চেষ্টায় ক্রেডিট কার্ডের বৈধ গ্রহণ যোগ্যতা ,যাবতীয় সব ফর্মালিটি ,আইনি ব্যবস্থা ইত্যাদি মিটিয়ে অন লাইনে ভ্যাটিকান সিটি , ভ্যাটিকান মিউজিয়াম ও সিসটিন চ্যাপেল দেখার টিকিট পাওয়া গেল। এখানে টিকিট কেটে  যখন তখন ঢোকার ব্যবস্থা নেই।  টিকিটের টাইম অনুযায়ী প্রবেশ সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে।  পিটার্স ব্যাসিলিকা

  প্রতিদিনের মত সকাল আট্টায় অদ্রিজা কনফারেন্সে চলে গিয়েছে। বেলা সাড়ে দশটার পর রেল ষ্টেশন রোমা টার্মিনাসে ও পৌঁছবে । তার গুরু গম্ভীর সাবধানের বাণী এখোনো শ্রীর কানে বাজছে " তুমি যেন আবার একাকী এডভেঞ্চার করতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলোনা"। শ্ৰীময়ী ভারী বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে বলে না না ছিঃ ছিঃ ,আর কক্ষনো নয় ! নেড়া যে একবারই বেল তলায় যায়।" রোমা টার্মিনাসের পথ  ঋষভের চেনা। এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে  হেলেদুলে হাঁটলেও দশ মিনিট লাগবেনা পৌঁছতে। শ্রীর মনে অপ্রতিরোধ্য আবেগ। অদৃশ্য এক কল্পনার স্বর্গে ভেসে চলেছে ।  রাত থেকেই ও ঝোড়ো হাওয়ার মত উদ্ভ্রান্ত।  বিশ্বের সবথেকে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র টির অজানা অচেনা সড়ক পথ ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।  সেখানে অজস্র মিউজিয়াম  বেশ কয়েক মাইল পথ হাঁটতে হবে ! ও কি পারবে ?    

 রোমের পথে বেড়াতে বেরিয়ে রিচার্ডসাহেব বা ক্যাপ্টেন মল্লিকের কাছে  বারংবার শুনেছে ভ্যাটিকান সিটির গল্প। সে এক  পবিত্র এবং ঐতিহ্যময়  রূপকথার দেশ।২৫শে ডিসেম্বরের বড় দিনের উৎসবে বার্লিন টিভি তে দেখা প্রার্থণা সভায় ভ্যাটিকান সিটির  সেন্টপিটার্স স্কোয়্যারের সেই সাদা গোল শেপের থামে ঘেরা মুক্ত প্রাঙ্গণ। যেখানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী প্রায় এক সাথে বিশ হাজার মানুষের জমায়েত হয়ে প্রার্থনায়  নিভৃত শান্ত স্রোতের ধারা বয়ে যায়।এখানেই আছে পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহ্যে ভরা বিশাল জাদুঘর ,ইতিহাস শ্রেষ্ঠ রেনেসাঁ যুগের চিত্র শিল্পী দের অনবদ্য চিত্রকর্ম এবং সেরা ভাস্কর্য্যের সম্ভার নিয়ে সুসমৃদ্ধ ভ্যাটিকান মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গীর্জা ও সুউচ্চ গম্বুজ --সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা ও তার বিশাল স্কোয়্যার। এবং পৃথিবী বিখ্যাত অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দর ছাদ সিস্টিন চ্যাপেল। মানব সভ্যতার প্রতিভার এমন শৈল্পিক বিকাশ এই রাষ্ট্র টি কে অপার্থিব, এক অনন্য সাধারণ সৌন্দর্য্যময়  শান্তির নিবাস করে তুলেছে। বহু জ্ঞানী গুণী মানুষের প্রতিভা দক্ষ তার স্পর্শে ভ্যাটিকান সিটি  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের খ্যাতি অর্জন করেছে।                                                                                                                                                                                                                  রোম নগরীর বুকের ওপর দিয়ে প্রবাহমানা চঞ্চলা  টাইবার নদীর পশ্চিমপ্রান্তে ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের প্রধান তীর্থস্থান হয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম এবং পবিত্রতম এই রূপকথার দেশটি।  ১৯২৯ সালে ল্যাটেরান চুক্তিতে জন্ম হয়েছিল এই ভ্যাটিকান সিটির। বিশ্বের মধ্যে ক্ষুদ্রতম হলে কি হবে ,এই সিটি নামে রাষ্ট্র টি নিজেই স্বয়ং সম্পুর্ন।  আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সামগ্রী এখানে সবই প্রস্তুত আছে।  এর সর্বেসর্বা প্রভু রোমের বিশপ পোপই হলেন সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিক দের ও  প্রধান ধর্ম গুরু, এবং  সর্বময়কর্ত্তা। তাঁর বিচারই শেষ বিচার। বহিরাগত নারী  বিবর্জিত পোপ শাসিত এই দেশ টির প্রধান  পোপ ফ্রান্সিস যিনি জন্ম সূত্রে আর্জেন্টাইনের নাগরিক ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি খ্রীস্টান দের ২৬৬ তম সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ নির্বাচিত হয়ে এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। এখানকার রাষ্ট্র নেতা রোমান ক্যাথলিক গীর্জার বিশ্ব সদর দফতর হিসাবে কাজ করেন। 

🍂

 ভ্যাটিকান সিটির সীমা পরিধি আয়তন ও  জন সংখ্যার দিক দিয়ে মাত্র ৪৯হেক্টর বা ১১০ একর। ,জনসংখ্যা  প্রায় ১৫০০ জনের মত । শ্রী গাইড বইয়ের ইনফরমেশন লালকালি দিয়ে আন্ডার লাইন করতে থাকে এবং  ঋষভ কে শুনিয়ে বলে ,ভাবতে পারো এই পুচকে  জায়গাটির কত ক্ষমতা ?                                 রোমের মধ্যে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা আপেস্টলিক প্যালেস ,সিসটিন চ্যাপেল ও তৎসংলগ্ন আরো কিছু ঘর বাড়ির সীমা রেখা পর্যন্ত  পোপের সার্বভৌম সাম্রাজ্য এই ভ্যাটিকান সিটি । এই দেশ টির নিজস্ব কোনো সরকারি ভাষা নেই ,ইতালীয় ভাষাই সর্বত্র প্রচলিত কিন্তু রোমান ক্যাথলিক গীর্জার অফিস সংক্রান্ত কাজে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ল্যাতিন ভাষার প্রয়োগ হয়। এই দেশ টির  নিজস্ব সংবিধান,,ডাক ব্যবস্থা ,সীলমোহর এমন কি নিজস্ব পতাকা ও মানচিত্র ছাড়াও সবরকম রাষ্ট্রীয় প্রতীক চিহ্ন রয়েছে !

আজ দশ বছর বাদে বার্লিনের ভ্রমণ কাহিনীর  রচনায় মন দিয়ে শ্রী ভাবে ,ওর দেখা ভাটিক্যান সিটি আজ থেকে দশ বছর আগে। মাঝখানে অনেক গুলো দিন চলে গিয়েছে এই পরিবর্তনশীল আধুনিক পৃথিবীতে নিশ্চয়ই সেখানের ও সংখ্যা তত্ত্বে ,পরিসংখ্যান বা অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়তো আরো নতুনত্ব আরো বদল এসে গেছে। 

 তিতির বলে ,এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র টি তেই আছে  একটি মহাকাশ অবজারভেটরি ,লাইব্রেরী।  পোপের  শাসিত এই রাজত্ব টি তে -- তাঁর  সম্পূর্ণ নিজস্ব এক্তিয়ারের  জায়গা এই গবেষণা কেন্দ্রে সাধারণ মানুষের কোনো ও প্রবেশাধিকারের নিয়ম নেই। এমন কি এর নিজস্ব সেনাবাহিনী টি খুবই ক্ষুদ্র মাত্র ১৩৫জন সুইস গার্ড নিয়ে তৈরী দল টি  সদা সতর্ক থাকে নিত্য প্রহরায়। এই দেশের টেলিভিশন সেন্টার যেমন আছে , তেমনি সরকারি বেতার ষ্টেশন  ভ্যাটিকান রেডিও নামে বিশেষ সংবাদ সংস্থা সারা বিশ্বের দরবারে  প্রসিদ্ধ। যেখান থেকে পোপের কণ্ঠস্বর ধর্মীয় বাণী প্রায় ৪০টি বিভিন্ন ভাষায়  প্রচারিত হয়ে পৃথিবীর দূর থেকে দূরান্তরের আনাচে কানাচে ভেসে যায়। সারা বিশ্বে যত ক্যাথলিক গীর্জা আছে ,--এই পোপের রাষ্ট্র সংস্থা থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জন সংখ্যার তুলনায় এখানে বিদেশী পর্যটকদের আগমন প্রচুর বেশী।  এবং পর্যটন শিল্পই এই দেশটির আর্থিক আয়ের প্রধান উৎস। সারা পৃথিবীর ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বি মানুষ তো বটেই ধর্মীয় কারণ ছাড়াও  দেখা যায় সারা বছরই বহু দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন শুধু দেশ টিকে দেখার আশায়। এক অদৃশ্য ভাললাগার স্পর্শের অমোঘ টানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবছর  প্রায় পাঁচ লক্ষ্য মানুষ এখানে শুধুই বেড়াতে আসেন।                                                                                                                                               ঘড়িতে ঠিক সকাল সাড়ে দশ টা বাজে। কিছু শুখনো খাবার ও জলের ফ্লাক্স সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে ঋষভ ও শ্রী এসে দাঁড়ালো সেন্ট্রাল রেলওয়ে ষ্টেশন রোমা টার্মিনির প্রবেশ পথের সামনে। পাঁচ মিনিট ওয়েট করতেই দেখা গেল দূর থেকে  তিতির  বড় বড় পা ফেলে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে আসছে। আজ ও একাকী কোর্ডিলিয়া বা আলেক্সেই আসেনি। শ্রী ওকে দেখেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে ভাবছিলাম  কোনোমতে আসতে দেরী হলে হয়তো সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে? ঋষভ টিকিট আগেই সংগ্রহ করেছিল  ,সুতরাং তৎক্ষণাৎ ভূগর্ভস্থ টার্মিনি মেট্রো ষ্টেশনে পৌঁছলে ও  ভার্টিক্যানসিটির  ট্রেন ঠিক একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছে তারপর ,আবার আট মিনিট মত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা। এগারো টা বাজতে  চলেছে কোনো ট্রেনের দেখা নেই। তিতিরে র মনে সংশয় , টিকিটে  বারোটা পর্যন্ত সময় সীমা  নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। ওর মনে সংশয় জাগে  ঋষভ কে বলে , টিকিটে লেখা নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে টিকিট যদি বাতিল হয়ে যায় ? শ্রী বলে ,তখন কত গুলো টাকা বরবাদ হবে ভাবতে পারছিনা ! ভারতীয় মুদ্রায় হিসেব করলে দশ হাজার টাকার মত ।  
ভাটিকান সিটি 

 গুগুল সার্চ করে আর রোড ম্যাপ দেখে জেনেছিল ,এখান থেকে ওট্টাভিয়ানো সানপিয়েট্র কিম্বা মুজেই ভাটিক্যানি এই দুটির যে কোনো একটি ষ্টেশনে নামলেই ওরা ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছবে । শ্রী মাথায় ঘোরে , গতকাল রাতে মারিয়া বলেছিল লাল রঙের মেট্রো লাইনে বত্তিসতিনি নামের শেষ ষ্টেশনের অভিমুখে যে ট্রেন যাবে তাতে উঠলেই ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছতে পারবে। এক দৃস্টে  ট্রেন ট্র্যাকের ওপর তাকিয়ে থাকে ,যত ট্রেন আসছে সে কিন্তু  লাল রঙের নয় এবং ওর  কপালে বত্তিসতিনী লেখা নেই  ? বার্লিনের মত রোমের সিটিতে ও  হোপ অন হোপ বাস সার্ভিসে চলছে।  ঋষভ যখন ভাবছিল ট্রেনের পরিবর্তে ঐ বাসেই উঠবে  ঠিক সেই সময়ই  হুশ করে মেট্রো নিজস্ব স্বভাবের জানান দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করলো। শ্রী বলে এগারোটা দশ বাজে। টাইম টেবিলে দেখাচ্ছে  জাস্ট ২৫মিনিট লাগবে সুতরাং ১২টার মধ্যে পৌঁছে যাবো।  

তিতির বেশ অবাক বলে  দেখ রোমের এই মেট্রো ট্রেনটি  ঠিক আমাদের দেশের মতই ,এমন কিছু অসাধারণ বা সুসজ্জিত নয়।কামরাটি টি প্রায় ভরে উঠেছে।  এক স্প্যানিশ ভদ্রলোক নিজের পাশে জায়গা করে দিলেন।  একটু সৌজন্য মূলক হাসির বিনিময়ে আলাপ জমলো।  জানাগেল  তিনি ও ভ্যাটিকান সিটির যাত্রী। শ্রীময়ীর দ্বিধা গ্রস্থ চিন্তিত মুখের দুই একটা প্রশ্নের জবাবে  বললেন তেমন চিন্তার কারণ নেই " আমি ও সেখানেই যাবো। বেশ গম্ভীর ধরণের স্প্যানিশ সাহেব তেমন মিশুকে নন ,তবুও এক ভীষণ দুশ্চিন্তা থেকে ওরা ভরসা পেল। মানসিক শান্তিতে একটু খুশির আমেজ ট্রেনের বদ্ধ কামরার বাতাসে গুনগুন করছিল।  অবশেষে বারোটা বাজার ঠিক সাত  মিনিট আগে এই জানুয়ারীর হিমেল হাওয়ার  শীতের দুপুরে ও হাঁপিয়ে ঘেমে নেয়ে ভ্যাটিকান সিটির দরজায়  পৌঁছেছিল। তবে সহ যাত্রী স্প্যানিশ বাবুটি  কর্পূরের মত কোথায় যে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন তার আর হদিশ পাওয়া গেল  না।                                                                                        শহরের অভ্যন্তরে টিকিট দেখিয়ে প্রবেশ করলে ও বাইরে তখন লম্বা  লাইন সাপের লেজের মত এঁকে বেঁকে গিয়েছে।  শেষ কোথায় কে জানে ? বিশালাকৃতির  সিংহ দুয়ারের ফটকের র গায়ে সাঁটা রয়েছে   নিয়মাবলীর বিজ্ঞপ্তি । বিশেষ নোটিশ টি নাকের ডগায় ঝুলছে  (১) শান্তি বজায় রাখতে নীরবতা পালন করুন  । (২)আরাম দায়ক জুতা পরুন কারণ আপনার অনেক পথ হাঁটার প্রয়োজন আছে। আরাম দায়ক জুতো অবশ্য গেটেই পাওয়া যায়।  (৩) হাফপ্যান্ট বা মিনি স্কার্ট পরা চলবে না। (৪) যথাযথ ভাবে পোশাক পরিধান করুন । (৫) আপনার পকেটটি সাবধানে রাখুন। ইত্যাদি আরো অনেক নির্দেশ। ঋষভ বলে আশ্চর্য্য! এখানে পকেট মার ? শ্রী তিতিরের হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে  বলে এখন শীতকাল তাই হাফপ্যান্ট , মিনি স্কার্টের বদলে মেয়েরা সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক পরিধান করবে । কিন্তু গরম কালে ইউরোপীয়ান বা বিদেশিনী মেয়েরা তো মিনি স্কার্ট ,শর্ট প্যান্ট ,স্বল্প বাস পোশাকেই অভ্যস্ত তা হলে তখন কি হবে ? 

অদ্রিজা বেশ কড়া সুরে এক ধমক লাগায় !   তোমার আমার  আপাদমস্তক ঢাকা আছে তো তা হলেই হবে। অন্যের পোশাক নিয়ে ভাবনার দরকার নেই ? তাকিয়ে দেখো চারিদিক কত সুন্দর ভাস্কর্য্য সাজানো।  শ্রী মেয়ের কাছে বকুনি খেয়ে  অন্য দিকে তাকাতেই  দেখেছিল  বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা "মিউজি ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এক্সপিরিয়েন্স" অপূর্ব সুন্দর একটি  শিল্পকর্ম উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে।                   (ক্রমশঃ )

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments