জ্বলদর্চি

অবিস্মরণীয় ‘গন্ উইথ দি উইন্ড’/মৌসুমী ভট্টাচার্য্য

অবিস্মরণীয় ‘গন্ উইথ দি উইন্ড’
মৌসুমী ভট্টাচার্য্য

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ক্রীতদাস প্রথা অবলুপ্তি নিয়ে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের  দক্ষিণদিকে তুলা চাষ হত। সেখানেই ক্রীতদাস প্রথা ছিল। নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার চরম  ব‍্যবহার পেত এই ক্রীতদাসেরা। 
যুক্তরাষ্ট্রের  উত্তর দিকের রিপাবলিকানরা  এই প্রথার অবলুপ্তি ঘটাতে চায়।  আব্রাহাম লিঙ্কন তখন প্রেসিডেন্ট। সেই প্রেক্ষাপটে লেখা এই কালজয়ী উপন‍্যাস। 

  বইপ্রেমী আমি,প্রথম যৌবনে মার্গারেট মিশেলের অপরূপ সৃষ্টি  ‘গন উইথ দি উইন্ড’ নেহাত কৌতূহলবশতঃ পড়ি। মুগ্ধ হয়ে যাই ,গভীরভাবে ভালবেসে ফেলি  প্রধান নারী চরিত্র স্কারলেট ও হারা কে। তার সব  দোষগুণ নিয়েই।  সে  যে অপরূপা,অসামান্যা নারী। তাকে জানার পর একাত্ম হয়ে গেছি তার যন্ত্রণার সাথে,তার অপ্রাপ্তি,তার ব্যর্থতার সাথে। কতবার এই কালজয়ী উপন্যাস পড়েছি,গুনেও বলতে পারব না। রাতে ঘুমুতে গিয়ে দু 'পাতা পড়ে নিতাম। এক অমোঘ আকর্ষণে আমি পড়তাম ,পড়ে চলি এক অষ্টাদশী তরুণীর প্রেম,হতাশা,ঈর্ষা,হঠকরী সিদ্ধান্ত ,তার নিষ্ঠুরতার বৃত্তান্ত। 

মেনে নিতে পারি না যখন দেখি স্কারলেট  অ্যাশলীর প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে রেট বাটলারের অনুরাগ,ভালবাসাকে পদদলিত করেছে,তাচ্ছিল্য করেছে।  তার অন্ধ অনুরাগ তাকে বুঝতে দেয়নি  যে অ্যাশলী এক দুর্বল পুরুষ। ঈর্ষা তাকে বুঝতে দেয়নি যে মিলেনীর মত শুভাকাঙ্খী আর কেউ ছিল না। 
একমাত্র মহিলাবন্ধু,যে ঢাল হয়ে সবসময় স্কারলেটের  পাশে থেকেছে। পড়তে পড়তে চোখের সামনে চরিত্রদের দেখতে পাই সেই আটলাণ্টার রাস্তা,ঘোড়ার গাড়ি করে স্কারলেটের   আসবাবের দোকান,কারবার সামলানো ! পুরুষদের সাথে টেক্কা দিয়ে ব্যবসায় সাফল্যলাভ যা কিনা উনবিংশ শতাব্দীতে বিরলতম ঘটনা। 

 বিশাল এক পরিারের ভরণপোষণের দায়িত্ব যা একা সামলানো,সমস্ত বিরূপ পরিস্থিতিতে মেরুদণ্ড সোজা করে মুকাবিলা করা যা তাকে অসামান্য নারীতে পরিণত করেছে। যখন ইয়াঙ্কি আর্মি  ‘তারা’তে আসে,তখন স্কারলেট অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় তাদের সম্মুখীন হয়। মাথা উঁচু করে তাদের অধিনায়কের সাথে কথা বলে,সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করে।  সেই পরিস্থিতি যে কোন সাহসী পুরুষের নার্ভাস ব্রেক ডাউন হবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
স্কারলেটের  জীবনের আদর্শ ছিল তার মা,কিন্তু নিজে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথেই হেঁটেছে । আইরিশ ধূর্ততা ছিল তার রক্তে। মায়ের ফরাসী অভিজাত জিন থেকে বাবার আইরিশ জিন বেশি কার্যকারী ছিল। 

‘তারা’ ছিল তার প্রিয়,তাকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে বিক্রি করার মত অসম্মানজনক প্রস্তাবও ভেবেছিল। রূপসী স্কারলেট,তার রূপমুগ্ধ স্তাবকদের খেলাত। মাতৃত্বও তাকে স্নিগ্ধতা,কোমলতা দিতে পারেনি। সে ভাল মা,ভাল স্ত্রী হতে পারেনি।  

🍂

 যখন অনুভব করি স্কারলেটের  সন্তানদের যন্ত্রণা ,মন দুঃখে ভরে যায়।  ছেলে ওয়েড, মেয়ে এলা ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত। পিতৃহীন দুটো শিশু ন্যায্য মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল। একদিকে তার কঠোরতা,নিষ্ঠুরতা,অন্যদিকে তার সাহসিকতা,দেশপ্রেম,দায়িত্ববোধ তাকে এক অসাধারণ নারীতে রূপান্তরিত করেছে।  তবুও 
স্কারলেটকে  তার দোষগুণ নিয়েই বড্ড ভালবাসি । 
আমার মত কোটি কোটি মানুষ তাকে ভালবেসেছে বলেই  ‘গন উইথ দি উইন্ড’ এক কালজয়ী অমর সৃষ্টি হয়ে আছে।

যে প্রধান পুরুষ চরিত্রের কথা না লিখলেই নয়, সে হল র‍্যাট বাটলার। এক বোহেমিয়ান বিলাসী পুরুষ যে নারী আসক্তি, বিলাস বৈভবেই জীবন কাটাতো। ভদ্রসমাজে সে গৃহীত ছিল না। সেই ব‍্যক্তি নিজের থেকে প্রায় আঠারো বছরের ছোট এক তরুণীকে ভালোবেসে ফেলে। বহু কাঠখড় পুড়িয়েই সে স্কারলেটের তৃতীয় স্বামী হয়। " আমি তোমার স্বামীদের জন‍্য অপেক্ষা  করতে পারব না",  স্কারলেটের দ্বিতীয় স্বামী কেনেডি যখন মারা যায়,  র‍্যাট সাথেসাথেই বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ভালোবাসায়,  ঐশ্বর্যে স্কারলেটকে ভরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। তার কঠিন দুঃখের অতীত মুছে দিতে চেষ্টা করে। 
কিন্তু  অপরিণত স্কারলেট তা কখনও  বোঝেনি। বুঝেছে যখন, তখন তার সংসার নেই। র‍্যাট বিবাগী হয়ে  বেরিয়ে যাচ্ছে। 
তবুও  আশাবাদী স্কারলেট আশায় বুক বাঁধে,  কখনও  হয়তো র‍্যাট ফিরে আসবে। যে ভালোবাসা নিয়ে সে গর্বিত ছিল, তা ছিল তার  মোহ। তা কেটে যায় শেষে। প্রকৃত ভালোবাসার মর্ম উপলব্ধি করতে বড্ড দেরী হয়ে  যায় স্কারলেটের। 
এত বৃহৎ উপন‍্যাসের পুরোটা তুলে ধরা সম্ভব নয়। দুটি প্রধান চরিত্রের আলোচনাই করলাম।

Post a Comment

1 Comments

  1. Very nice introduction to the novel. we would like to see something on the film also and also some discussion on the slaves and their representation in the stories.

    ReplyDelete