চিত্র- শুভম দাস
খোলা জানালার ধারে বসে থাকা ছেলেটি
সন্দীপ দত্ত
একশো বাইশ নম্বর সেলের কাছে এসে ভেতরে তাকাতেই খানিক বিরক্ত হলেন সাহেব। অফিসার বুঝতে পেরে জড়তা কাটিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললেন,"স্যার,আপনি নিশ্চয়ই এই কয়েদিটির ব্যাপারে একটু অসন্তুষ্ট হলেন?"
সাহেব রাশভারি গলায় বললেন,"হ্যাঁ। ও চোখে মুখে ওরকম ঢাকা নিয়ে রয়েছে কেন? কাপড়টা মুখ থেকে সরাতে বলুন। আমি দেখব।"
"আর বলবেন না স্যার। মুখ থেকে কাপড়টা সরা বলতে বলতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। কিছুতেই সরায় না। কোনওমতেই সরায় না।"অফিসার বললেন।
"কেন?"
"সরাতে বললেই খালি বলে,দু'চোখ ভরে দেখলেই আবার গন্ডগোল!"
"মানে?"
"কী জানি স্যার,মাথায় ছিট টিট এসেছে কিনা! কথাবার্তার ধরনধারন শুনলে তো বেশ শিক্ষিত বলেই মনে হয়। শিক্ষিত হয়েও কেন যে কয়েদি হয়ে গেল,কে জানে।"
"মুখ থেকে ওকে কাপড়টা সরাতে বলুন।" সাহেব অফিসারকে আবার বললেন কথাটা।
আসামি কিছুতেই তার মুখ থেকে কাপড় আর সরাতে চায় না। শেষে অফিসারের কড়া ধমক খেয়ে মুখ থেকে কম্বলটা নামাল নামাতেই সাহেব স্তম্ভিত। "সুরথ তুই এখানে! কী করেছিলি,যে একেবারে হাজতবাস হয়ে গেল?"
অফিসার চমকে গেলেন। "স্যার,আমায় মাপ করবেন। আপনি এই কয়েদিটাকে চেনেন?"
"হ্যাঁ। ছেলবেলায় আমরা একই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। একই ক্লাসের। ও খুব ভাল ছবি আঁকতে পারত। আর খোলা জানালার ধারে বসে দু'চোখ মেলে দেখত উন্মুক্ত পৃথিবী। ও বলত,উন্মুক্ত প্রকৃতি মানুষকে সত্যবাদী হতে শেখায়। সত্য সকল শক্তির আধার।"
"বলেন কী!"সাহেবের দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকেন অফিসার।
🍂
সাহেব এবার গলা তুললেন। "আমায় চিনতে পেরেছিস সুরথ? আমি বীরেশ্বর। বীরেশ্বর গুহ। তোর ক্লাসমেট।" বলে সাহেব আবার অফিসারের দিকে তাকালেন। "এর ব্যাকগ্রাউন্ড কী ছিল?"
"ব্যাকগ্রাউন্ড?" অফিসার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন সাহেবের দিকে।
"বলছি কাজ টাজ কী করত?"
"সরকারি চাকরি স্যার।"
"সরকারি চাকরি?" বলে সুথের চোখে চোখ রাখলেন বীরেশ্বর। "কী রে,সরকারি চাকরি করতিস তুই? তা,সুখে থাকতে অমন ভীমরুতি ধরল কেন? কী এমন অপরাধ করে বসলি, যে চালান হয়ে এলি এখানে?"
"স্যার,ও সরকারের দোষ ধরে দিয়েছিল।"
"দোষ?"
"হ্যাঁ স্যার। সরকার যা ধামাচাপা দিতে চায়,সেটা ও পাবলিকের সামনে নিয়ে আসে। সেই কারণেই ওকে গ্রেপ্তার করতে হয়।"
"ছেলেটা আজও শুধরোলো ন।" বলে আবার গলা তুললেন সাহেব। "সরকারি চাকরি করলে যে সাদাকে সাদা,কালোকে কালো বলতে নেই,তা তুই জানতিস না সুরথ? মেরুদন্ড যদি বাঁকাতে না পারবি,সরকারি চাকরি করবি কেন?"
সাহেবের কথা শুনে মুচকি হাসলেন অফিসার।
সেলের ভেতর সুরথ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সাহেবের দিকে। মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে ঠিকই,তবে বীরেশ্বর নামটা আজ আর তার মনে নেই।
0 Comments