দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
বেতার, অর্থাৎ যার তার নেই বা তারবিহীন, অথচ এর মাধ্যমে সব কিছু শোনা যায়। যখন বেতার আবিষ্কার হয়, সেই সময়ে মানুষের কাছে একমাত্র বিনোদনের উপায় ছিল বেতার।
ষাট সত্তর দশকের আগে একমাত্র বেতারই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম,যার মাধ্যমে অসংখ্য জনগণের কাছে একসাথে অনেক বার্তা পৌঁছে যায়। শহর গ্রাম এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাস করা মানুষদের যেখানে যোগাযোগ করার আর কোনো মাধ্যম ছিলনা, সেখানে বেতারই ছিল একমাত্র মাধ্যম।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস অর্থাৎ এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ইউনেস্কো তার ৩৬ তম সম্মেলনের সময় ৩রা নভেম্বর ২০১১ সালে দিবসটি নির্ধারণ করে।
বিশ্ব বেতার দিবসের পটভূমি হিসেবে বলা যায় যে,২০শে সেপ্টেম্বর ২০১০ এ স্প্যানিশ রেডিও একাডেমির একটি অনুরোধের পর স্পেন প্রস্তাব করেছিল যে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ড বিশ্ব বেতার দিবসের ঘোষণার একটি এজেন্ডা আইটেম অন্তর্ভুক্ত করবে। প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (A B U), আফ্রিকান ইউনিয়ন অফ বর্ডকাস্টিং(AUB), ক্যারাবিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন(CBU), ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিংইউনিয়ন(EBU),
BBC,URTI এবং Vatican Redio ইত্যাদি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
বোর্ড ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের কাছে সুপারিশ করেছিল যে, এটি তার ৩৬ তম অধিবেশনে বিশ্ব বেতার দিবস ঘোষণা করে এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি দিনটি 'বিশ্ব বেতার দিবস' হিসেবে তারা পালন করে, এছাড়াও এই দিনই ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের বেতার বার্ষিকী পালিত হয়।
🍂
২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্ব বেতার দিবসের ঘোষণা কে অনুমোদন করে, যার ফলে জাতিসংঘের সমস্ত সংস্থা, কর্মসূচি, তহবিল ও তাদের অংশীদারদের দ্বারা ১৩ই ফেব্রুয়ারী বেতার দিবস হিসেবে একটি উদযাপনের দিন হয়ে ওঠে।
২০১২ সালে প্রথম বিশ্ব বেতার দিবসের সম্মানে লাইফ লাইন এনার্জি, ফ্রন্টলাইন এস.এম.এস. এসওএস রেডিও এবং এম্পাওয়ার হাউস লন্ডনে একটি সেমিনার আয়োজন করে। বিভিন্ন প্র্যাকটিশনের শিক্ষাবিদেরা এবং প্রদর্শনকারীরা স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজে যোগদান করেছে। বেতারের মাধ্যমিক সবচেয়ে দুর্বল এবং সবচেয়ে প্রত্যন্ত সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো যায়।
বেতার দিবস উদযাপিত হয়, ব্যক্তি মতামতের স্বাধীনতা, জনবিতর্ক ও শিক্ষার প্রসারে বেতারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে। প্রতিবছর ইউনেস্কো সারা বিশ্বের সম্প্রচারক সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বেতার দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এছাড়াও এই দিনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেতারের গুরুত্ব সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। আরো বলা যায় যে, বেতার এমন একটি মাধ্যম যখন যেখানে অন্য মাধ্যম গুলো কাজ করে না, সেখানে বেতার ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি দুর্যোগের সময়।
শেষে বেতার সম্পর্কে ভারতের কথা বলতেই হয়। ১৯৩৬ সালে ভারতের অফিশিয়াল ইম্পেরিয়াল বেতার শুরু হয়েছিল যা পরবর্তীকালে 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' নামে পরিচিতি পায়। আজও বেতার উত্তরোত্তর তার প্রসার বৃদ্ধি করে চলছে। বেতার প্রসঙ্গে যার নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি বেতার এবং মাইক্রোওয়েভস এর অপটিক্সে কাজ করেছিলেন।
0 Comments