মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ১৪৪
সুদীপ দে (অধ্যাপক, মেদিনীপুর)
ভাস্করব্রত পতি
'দিন গুণবার অছিলায় পেয়ে যাই
একফালি বাঁকা চাঁদ.
বিলম্বিত লয়ে পাগলের হাসি।
শব্দের ইট সাজিয়ে বানাই প্রেমের সমাধি,
আবেগ সাক্ষী,
কবিতা সাক্ষী।
হাওয়ায় ভেসে যাওয়া
ছেঁড়া একটুকরো কাগজ আঁকড়ে ধরি,
বার বার লিখি-
এখনও স্বপ্ন দেখছ কি'?
-- পেয়ে যাওয়া প্রশ্ন, সুদীপ দে
মেদিনীপুরের বিধাননগরে ১৯৭১ এর ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক সুদীপ দে। ক্ষনজন্মা মেদিনীপুরের এই মানুষ রতনকে আমরা হারিয়েছি ২০১২ এর ৩০ শে জুন। বাবা প্রভাসচন্দ্র দে এবং মা ছিলেন মীনাক্ষী দে। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে মাধ্যমিক এবং বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ (বালক) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর চন্দননগর গভর্নমেন্ট কলেজ (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতক হন। এরপর কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পি এইচ ডি লাভ করেন।
সুদীপ দের সম্পাদিত 'কসমিক জোন' পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা
প্রথমে তমলুকের চাঠরা কুঞ্জরাণী বাণীভবনে (১৯৯৭ - ২০০৩) সহশিক্ষক পদে যোগদান করেন। এর আগে স্বল্পকালীন সময়ের অধ্যাপক ছিলেন মেদিনীপুর কলেজে (১৯৯৬ - ১৯৯৭)। এছাড়াও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপকের দায়িত্ব সামলেছেন (২০০১)। পরবর্তীতে স্কুলের চাকরি ছেড়ে ত্রিপুরার উইমেন্স কলেজে (২০০৪) অধ্যাপনা শুরু করেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে ডিসেম্বর মাসে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০০৪ - ৩০.০৬.২০১২)। এখানেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অধ্যাপনা চালিয়ে যান।
তিনি ছিলেন ডিসাস্টার অ্যাডভান্সেস (সম্পাদক মন্ডলী) এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় নিরীক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। নিজেও যুক্ত ছিলেন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ছিল 'দি কসমিক জোন'। এছাড়াও শিল্পবিষয়ক সম্পাদিত পত্রিকার নাম 'ইমন কল্যাণ'।
কাব্যগ্রন্থ
২০০৪ সালে ত্রিপুরা কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেওয়ার পর NAGI র জাতীয় সেমিনারে যোগদান করে সেই বছর জাতীয় পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন প্রফেসর এন পি আইয়ার ইয়ং জিয়োগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড। তাঁর লেখা ৩৪ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। এছাড়াও জাতীয়, আন্তর্জাতিক সেমিনার, কনফারেন্স অথবা সিম্পোসিয়ামে উপস্থাপন করেছেন ২১ টি প্রবন্ধ।
ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত (সেতার) তাঁর প্রিয় পছন্দ। সিনিয়ার ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন এতে। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সেতার বাদক। মেদিনীপুর শহরের প্রতিষ্ঠিত সেতার শিল্পী জোয়েল ফ্রান্সিসের কাছে সুদীপ ১৩ বছর বয়স থেকে তালিম নিয় সেতার শিল্পীর তকমা অর্জন করেছে। ১৯৯৯ তে চণ্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্র থেকে সেতারে 'সঙ্গীত বিশারদ' উপাধি লাভ করে।
জাতীয় পুরস্কার
সুদীপ দে কেবল কেবল একজন গবেষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন উদ্ভাবক ও বলিষ্ঠ চিন্তাবিদ। ভূগোল চিন্তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলিকে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করার প্রয়াসে একজন নিরন্তর সৈনিক। স্ত্রী জয়া দের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রকাশ করেছেন 'এখন দু'জনে আমরা মেঘের ভেলায়' (১৯৯৯) কাব্যগ্রন্থ। এখানেই মিলবে তাঁর পেছন দিকে ফিরে তাকানোর আর্তি --
'আমি একবার,
ফিরে তাকাবো পিছনের দিকে।
মনের মেঘ কেটে গেছে,
আকাশ এখন অনেকটাই ফিকে।
বারবার, এ সুযোগ হয়ত আসবে না,
পরোয়া কি? নাই আসুক,
রক্ত ঝরবে নয়, ঝরুক,
একবার ফিরে তাকাবো,
কোনো ক্ষোভ থাকবে না।
একবার শুধু সমস্ত প্রশস্তি
প্রত্যাখ্যান করে। একেবারে কানকাটা
হয়ে গালি দেব।
তাই,
শুধু একবার
পিছন ফিরে তাকাতে চাই'।
🍂
0 Comments