জ্বলদর্চি

কবির জন্মদিবসে কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য তাঁকে মনে করে .../কমলিকা ভট্টাচার্য

জীবনানন্দ দাশ
১৭/০২/১৮৯৯-----২২/১০/১৯৫৪

কবির জন্মদিবসে কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
তাঁকে মনে করে ...
কমলিকা ভট্টাচার্য

জীবনানন্দ দাশ আমার খুবই প্রিয় একজন কবি।নিজেকে কবি বলতে আমার খুব সমীহ হয়, তাও মনের গভীর থেকে উঠে আসা ভাবনা গুলো এক করে যা লিখি সেই লেখায় আমার প্রিয় কবির ভাবনার ছাপ ফুটে উঠে। কবির প্রেমের কবিতা আমার বর্ণ পরিচয়।  কবির ক্যাবিক গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই।কবির কবিতায় আমি বোধের খোঁজ করি আর সেই বোধ থেকে জন্ম নেয় আত্মবোধ। সেগুলোকে লিখে ফেলি ,জানিনা কবিতা হয় কিনা।।সেই রকম কবির কিছু কবিতার পঙক্তি আমাকে আলোড়িত করে ভাবনায় অতলে নাড়া দেয়। সেইরকম কয়েকটি কবিতার মধ্যে  "রাত্রিদিন" কবিতাটি তার মধ্যে একটি।
যতবার কবিতাটি পড়ি ভীষণভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। সময়ের চিরন্তন প্রবাহে কাছের মানুষের হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া যে একাকিত্বের অনুভূতি জাগায় আবার হৃদয়ের গভীরে তুলে রাখা প্রেমের অনুভূতি একই সাথে আলো অন্ধকারের মত বিরাজ করে।
কবির ভাবনাকে কতটা  অনুধাবন করতে পেরেছি জানিনা তবে এই কবিতাটি পড়ে আমার মধ্যে যে ভাবনার ঝড় উঠে আর সেই ঝড়ে এলোমেলো আমার আবেগগুলো শব্দে বেঁধে মনের ঝড় থামাবার চেষ্টা করেছি। আবার যখন মনে করি "অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,"
আজ কয়েক দশক আগে বসেও কবি কিছু ক্ষমতা লোভী ,স্বার্থপর মানুষের হাতে আমাদের চিন্তার,সৃজনশীলতার ,
মানবিক বোধের দাসত্বের কথা বলেছেন।আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা নিদারুণ ভাবে সত্য। আমরা আজ ধৈর্যহীন ,সহানুভূতিহীন যন্ত্রে পরিণত হয়েছি। 
"আবার আসিব ফিরে" কবিতা কবির প্রকৃতি প্রেম, দেশপ্রেম ,জীবনের প্রতি প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

কবির জন্মদিনে কবির  মননের আলোয় আলোকিত  আমার ভাবনায় রচিত কয়েকটি কবিতা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে উৎসর্গ করলাম।

তাঁকে মনে করে ...

একদিন স্বপ্নেরা ছিল স্পষ্ট,আকাশ ছুঁয়ে ছিল মন
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম রোদ-মেঘের মিলন। 
ডানা মেলে ছিলাম তোমারই সাথে 
আজ ছায়াহীন আমি একলা পথে।

একদিন ছিল শিশিরের স্নানে স্বচ্ছ জীবন
 নীল সাগরের গভীরে চুপচাপ দুটি মন।
তুমি ছিলে বটের ছায়া ঘরে আমি ঝিনুক সাগর পাড়ে।

মনের উথাল কোন সে ঝড়ে   মুক্তির খোঁজে গেলে মুক্তো ছেড়ে
সংসারের শক্ত নোঙরে সুন্দর সেজেছি মুক্তো মনিহারে।

প্রতি মুহূর্তে জীবনের গায় 
নতুন নতুন দাগ কেটে যায়

তবু সময় বয়ে যায় অনন্ত ধারায় 
অবহেলায় ছবি গুলো প্রেমের রং হারায়
শুধু ভঙ্গুর সাদা  পাতা থেকে যায়।

তোমাকে ভালোবেসে মুহুর্তেই সব অভিমান যায় ভেসে 
কেন তা
বুঝেছি আজ ,
যে সুতোয় বাঁধা হৃদয় অকূলে 
সে পথে না পা বাড়ায় সময় না মহাকালে।

🍂


সত্তার জবাই

কত সাধনায় পাবো বল দেখি
নিজের মনের দখল?
প্রতিদিন ডাহা ফেল,
বোধের হারিয়ে যাওয়া
সামনে ফিরে, কেবলই পিছনে হাঁটা।

আলকাত্রাজে সত্তা বন্দী
জড়িয়ে জড়িয়ে চিন্তার পরাশ্রয়ী 
খুঁটে খুঁটে কাঁকর খোঁজার ধৈর্য
কর্পূর বাতির মতো উবে যায়
টিকে থাকার চাবুক হাতে পাহারায় সময়।

ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট সহনের মরণ,
আমিও তো সেই ভিড়েরই এক অংশ,
বসন্ত ভুলে যাই, শরৎও ফিকে হয়ে আসে,
কেবল একটার পর একটা কাজ,
নির্বাক ,অনুভূতিহীন যন্ত্রের
গোঙানির আওয়াজ।

সময় ধাক্কা মারে,
আমরা পুতুলের মতো নাচি,
ক্ষোভে, ক্লান্তিতে, ভয়ে,
মাঝে মাঝে গর্জন করি, 
সম্পৃক্ত জীবনে চামচ নাড়া বন্ধ হলেই 
থিতিয়ে পড়ে সব উপরি চাওয়া
একফোঁটা সহানুভূতিও কি
নেই বেচেঁ , কেবল বিবেকের ধাওয়া।

শেষমেশ, আমরা কি?
কসাইখানায় ঠাসা পশুর মতো
নামহীন, সত্তাহীন অনুভূতিহীন যত 
একেকটা ছিন্ন শিরার ছায়া
জবাইয়ের পোষা যত্নের হৃষ্টপুষ্ট কায়া?


আবার আসবো ...

বিদায় নয়, এ কথা বলবো না আর,
বিদায় তো শুধু সময়ের উপত্যকায় প্রতিধ্বনি,
নদী থামে না সাগরের বুকে—
সে বলে, “আবার আসবো,”
মেঘ হয়ে ভাসে তার আত্মা আকাশের গহীনে।

চিতার শেষ সোনালি আভায়,
ছাই উড়ে যায় বাতাসে বীজ হয়ে,
জন্ম দেয় নতুন জীবনের শব্দ,
যা মাটির গহীন প্রাণে গেঁথে যায়।
আমি হবো কচি সবুজ গাছের পাতায়,
যেখানে বাতাস দোল খায় রোদ্দুরের ছোঁয়ায়।

কেঁদো না, কারণ আমার যাত্রা এক অনন্ত বৃত্ত,
নক্ষত্রের সিঁড়ি, ওঠা-নামার এক চক্র।
আমি পাহাড়ে বিশ্রাম নেওয়া পালক-শুভ্র কবুতর,
মোহনার আকাশে ভেসে থাকা অস্থির মেঘ,
যে বারবার খোঁজে তার নতুন রূপ।

হাওয়ার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমার কণ্ঠ আছে,
নদীর প্রতিটি ঢেউয়ে আমার ছোঁয়া,
ঘণ্টার প্রতিটি ধ্বনিতে জেগে ওঠে আমার ছায়া,
জীবনের এই পাঠশালায় বারবার শিখি।

আমি আসবো ভোরের গান হয়ে,
বর্ষার হাসি, কোনো নব প্রেমের আগুন—
এক অনন্ত শুরু আর শেষের মিছিল,
যেখানে কবি কখনও সম্পূর্ণ বিদায় নেয় না।

তাই, যখন যাবো, সেটি শেষ নয়।
আমার প্রতিশ্রুতি ধরে রেখো বসন্তের মৃদু ফিসফিসে—
“আবার আসবো, আমি বারবার আসবো,”
তাদের মাঝে যারা এখনো ফুটবে।

Post a Comment

3 Comments

  1. ভাস্কর সেনFebruary 18, 2025

    'তাঁকে মনে করে...' কবিতাটি খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. কমলিকা ভট্টাচার্যFebruary 18, 2025

    আপনি যে আমার কবিতাগুলো মন দিয়ে পড়েন ও মতামত জানান খুব ভালো লাগে,উৎসাহিত বোধ করি।
    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো এই কবিতা দুটি এবং আপনার জীবনানন্দ বোধ

    ReplyDelete