জ্বলদর্চি

পাঁচটি কবিতা /অসীম ভুঁইয়া


পাঁচটি কবিতা

অসীম ভুঁইয়া

পাথর

একদিন একটা পাথরকে পাশে রেখে
কয়েকটি কবিতা শোনালাম।
একটা কলসিকে পাথরে বসিয়ে 
কিছুটা জল খেলাম 
একটা কুঠারকে পাথরে ছুঁয়ে
একটু আগুন চাইলাম
আর একটা পাথরকে নারী ভেবে
 একটু ভালোবাসলাম। 

প্রথমে পাথরটি তীব্র প্রতিফলনে 
আমার প্রতিটি লাইন ভেঙে চুরমার করে দিল। 
দ্বিতীয়বার সে নিজেকে ক্ষয় করে করে 
বুকে গভীর ক্ষত বানিয়ে নিল
তৃতীয়বার তার আলো ও উত্তাপে
জন্ম দিল "আগুনের পরশমণি"

আর সবশেষে-
সে করুণার সাগর হয়ে
গোটা পৃথিবীটাকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল...


প্রসাদ

পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেললে তুমি
ছোঁড়ো। আমার বুকের দুটি হাড় হয়তো
গুঁড়িয়ে গেল চিরতরে 

সমুদ্রে ঠেলে দিলে ফের
দাও। জলের সঙ্গে লড়াই হয়তো
আমার সমস্ত পোশাক খুলে গেল 

সিঁড়ি থেকে নামিয়ে দিলে তাও 
নামাও। আমার পিছলে যাওয়া আঙ্গুলগুলো হয়তো
দুর্বল হয়ে গেল আজীবন
 
ঘর থেকেও বের করে দিলে শেষে
দাও। খোলা আকাশটা হয়তো
সঙ্গী হয়ে গেল প্রতিটি রাতের

কিন্তু মনে রেখো- 
যদি কোনোভাবে এ পতন থেকে
উঠে দাঁড়াতে পারি-

তবে এক অভিমন্যু বধের ইতিহাসকে যুদ্ধরীতি ধরে
পুরো কুরুক্ষেত্রটাকেই মায়ের প্রসাদ বানিয়ে দেব।


শোকগাথা 

তোর সঙ্গে জলকেলি 
তোর সঙ্গে হাসি 
সন্ধের রঙে শুরু 
ভালোবাসা-বাসি 

তোর সঙ্গে রাত জাগা 
তোর সঙ্গে আলো 
ছুঁতে গিয়ে দেখে ফেলি
কত জমকালো 

তোর সঙ্গে লেনদেন 
তোর সঙ্গে আড়ি 
সুযোগ বুঝেই তাই 
করি বাড়াবাড়ি 

তোর সঙ্গে গাঁটছড়া 
তোর সঙ্গে বিষ 
মৃত্যুটি কী যেন 
বলে ফিসফিস 

তোর সঙ্গে জ্যোৎস্না 
তোর সঙ্গে কথা 
দিনের শেষে তবু
হোক শোকগাথা

🍂

যত্ন 

একটু যত্ন যদি জন্ম দিতে পারে অসংখ্য সাগরের
তাহলে কেন এত অভিমান নিয়ে দূরে থাকা 
কেন এত অন্ধকার মেখে নিছক সময় গড়িয়ে দেওয়া

সময় যে প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলে
সংক্ষিপ্ত স্মৃতি-বৃত্ত
তারই ভেতর গান হতে হয়
ব্যথা হতে হয়
নাহলে যে বৃহতের ভোগ দর্শন
অধরাই থেকে যায়

একটু যত্ন যদি ছেঁড়া পাতাগুলো জোড়া দিতে পারে
তাহলে কেন আগুন হয়ে থাকা...
হরিণ হয়ে বৃথা ছুটে যাওয়া অলীকের দিকে
 
এ আশ্চর্য মায়াজলে
ভাসামানতার মন্ত্র শিখে নিতে হয়
তা নাহলে রোদ ও জ্যোৎস্না, মাটি ও শূন্যতা
বৃষ্টি ও শুকনো ঘাসের চোরা সম্পর্কের সূত্রগুলি
অজানাই থেকে যায়।



দোলনা

বাড়ির বাইরে কে যেন আজ ছড়িয়ে গেছে কয়েক টুকরো স্মৃতি 
হলুদ পাতায় রেখে গেছে সম্পর্কের দানাগুলি
আর এক বিবর্ণ মোড়কে ফেলে গেছে কিছু না-বলা কথাও।

কুকুরের উত্তপ্ত অঙ্গের মতো আমার চোখের কোণে
এখনও লেগে আছে অনিদ্রা পেরোনো বিবস্ত্র ভোর
বেতের দরজা ঠেলে বাইরে আসি আমি
পড়ে ফেলি এই অদৃশ্য ইতিহাস-গাথা
কত কাছে টেনে নিতে পারে এরা

কত যন্ত্রণা লাফিয়ে লাফিয়ে ডিঙ্গিয়েছি এতদিন
সাঁকোহীন গর্তগুলোতে ভরে এসেছি
বিচ্ছেদের মাঙ্গলিক জল
বুঝে নিয়েছি এই সংক্ষিপ্ত সফরের ইতিকথা

প্রতিটি ভুল আঁচড়ের চুইয়ে পড়া রক্তে 
আজও মরীচিকা দর্শন
তাই-
ছিঁড়ে যাওয়া নীল সুতোয় ঝুলে থাকা কষ্ট দুটি

আজীবন দুলতে থাকবে, দুলতেই থাকবে।

Post a Comment

2 Comments

  1. কমলিকা ভট্টাচার্যFebruary 22, 2025

    বেশ নতুনত্ব কবিতা গুলো ,ভালো

    ReplyDelete