জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি - ৬৯ পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য ( সমাধি নগরী পম্পেইয়ের পরবর্তী অংশ )

সমাধি নগরী পম্পেই

'বার্লিনের ডায়েরি    ৬৯ পর্ব    চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
( সমাধি নগরী পম্পেইয়ের পরবর্তী অংশ )

 আগ্নেয়গিরির জঠর থেকে উৎসারিত হয়ে চলেছে অগ্নিলাভা গন্ধক পোড়া রাশিরাশি কালো কালো ধোঁয়া। সহস্র কালনাগিনীর বিষাক্ত ফণার মত পেচিয়ে পাক খেয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে বিশাল আকার ধারণ করে প্রায় এক হাজার ফিট উপরে উঠে তড়িৎগতিতে গ্রাস করছে সমস্ত বায়ুমণ্ডল। শ্বাসরোধ কারী গ্যাসে কালিমা লিপ্ত হয়ে অমানিশার ঘোর অন্ধকার ছেয়ে গেছে  দ্বিপ্রহরের আকাশের দিক -দিগন্ত। অসহায় নগরবাসী তখনো বাঁচার আশায় কাতর প্রার্থনা করেছিল অদেখা ঈশ্বরের কাছে। মনে ক্ষীণ আশা সামুদ্রিক বাতাস হয়তো দূরে সরিয়ে দেবে ভস্ম আর ধুম্র মেঘের ভয়াল জটাজাল।'                                                                                      
স্তূপীকৃত রাবিশের মাঝে স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে থেকে ভিসুভিয়াসের বীভৎস জেগে ওঠার দৃশ্য শ্রীর কল্পনায় ভেসে ওঠে। পাহাড়ি ঢালের ওপর থেকে নীচের দিকের বাড়িটির এক লোমহর্ষক করুণ দৃশ্য মানুষের জীবনের অসহনীয় পরিণতি-,ওর মন কে শুধুই বিমর্ষ করে তুলছে। ছাদহীন বাড়িটির বাগানের আঙ্গুরের লতায় এখোনো সবুজ হলুদ পাতার ফাঁকে থোকাথোকা আঙ্গুর। ক্ষুদে নীলরবিনের ঝাঁক নির্ভাবনায়  সুরেলা গলায় শিস দিয়ে নেচে সুপ্ত পুরীর কালঘুম ভাঙাবে পণ করেছে। ফেন্সিঙের ধারে নিষ্পত্র চেরীর ডালে কঙ্কালের মত হাত পা ছড়িয়ে দাঁত বার করে দাঁড়িয়ে আছে , কুঁড়ি আসে নি ডালে । প্রাচীন সময়ের সাক্ষী সে বাগানে কোনো দ্বিপ্রাহরিক অনুষ্ঠানে অতিথি অভ্যাগতবর্গ সমবেত হয়ে ভোজের আয়োজন  চলছিল। বিষাক্ত গ্যাসের আক্রমনে লোকজন এমন আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করল যে, প্রত্যেকে স্বস্থানে বসেই লাশ হয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে ও লাঞ্চ টেবিলে সাজানো ছিল সারিসারি নানা রকম আহারের সম্ভার। ওয়াইনের সুদৃশ্য মূল্যবান রুপার পানপাত্র । যেন তারা এক্ষুনি প্লেটে কাঁটাচামচ ডুবিয়ে কেউ বা মুখে ঝলসানো মাংসের টুকরো টি  তুলবে। কেউ তার স্বাদ আস্বাদনে আগ্রহী ,আমেজে চুমুক দেবে মদিরার সুদৃশ্য গ্লাসে। 

আড্রিক ডান দিকের রাস্তাটি ইরিনা কে দেখিয়ে বলে এদিকের মার্কারি স্ট্রিটের বিশাল বাড়িটি তে বাস করত এক ধনী রোমান ব্যক্তি। দেখো এই খন্ডহার টি প্রমান করে তার বাড়িটি  সেকালে কত শৌখীন রুচির এবং  সুন্দর ছিল। আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় এই বসতবাড়ি ছেড়ে তিনি প্রাণ নিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করে  পালাতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেন। বাড়ির সামনেই রাস্তায় তিনি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন। আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত, গলিত লাভা বৃষ্টিসিক্ত, আঠালো ভস্ম স্তূপের মাঝে নিমেষে তাদের জীবন্ত সমাধি হয়েছিলো। ইতস্তত ছড়িয়ে পড়লো তার অলঙ্কারাদি, টাকা-পয়সা সমেত প্রিয়তমা স্ত্রীর নিষ্প্রাণ দেহটির সাথে প্রসাধনের সরঞ্জাম সহ রুপালি আয়নাটি। এবং  তার সর্বক্ষণের সঙ্গী তিন পরিচারিকার দেহ। শ্রী তিতির কে বলে কী দূর্বিষহ দৃশ্য ! এদিকে অন্ধকার আকাশ থেকে অবিরত বৃষ্টির মতো ঝরছে পাথরের খন্ড ,ছাই ভস্ম। গন্ধক ধূমে দৃষ্টিহীন হয়ে আসছে পলায়মান মানুষের চোখ। বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস-প্রশ্বাস। সারি সারি শব দেহের শায়িত মিছিলে সড়ক পথ পূর্ণ।মৃত্যুর সাথে লড়াই করার সুযোগ টুকুও পেল না তারা। মৃত সৈনিকের মত বিনাযুদ্ধে পথের ওপর ধূলি শয্যায় নিমেষে লুটিয়ে পড়েছিলো।  
সমাধি নগরের দৃশ্য।

  তিতির সামনে তাকিয়ে দেখছিল আরেকটি বাড়ির দরজায় শেকলে বাঁধা পোষ্য কুকুর টির কঙ্কাল। ঘরের ভেতর খাটে শোয়ানো বালিকার নিথর দেহ। আরেকটি ঘরে মনিব ও তার সর্বক্ষণের সঙ্গী বিশ্বাসী ভৃত্য। যেন সবাই অসময়ে ঘুমিয়ে আছে। এমনি অসংখ্য সব অবর্ণনীয় করুণ দৃশ্য মৃত্যুপুরীর সর্বত্র।  ছাইয়েরগাদার তলে চাপা থাকায় একটুও অবিকৃত হয়নি। ইতালী সরকারের তত্বাবধানে সংরক্ষিত এক বিশ্বসেরা মিউজিয়ামে পরিণত হতে চলেছে পম্পেই। বর্তমানে  এই রোমান শহরটির ভগ্নাবশেষ দেখতে বছরে লক্ষ্যাধিক পর্যটকরা দলে দলে দারুণ আগ্রহী হয়ে আসে। প্রত্নতাত্বিকদের কাছে পম্পেই নগর যেন এখন গবেষণার উৎসস্থল। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো পম্পেই নগরীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। 

🍂

  ডায়েরির পাতার ঝাপসা লেখনীর সাথে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে  রোম পম্পেই এর অ্যালবামের ছবিগুলো ও ।অবশ্য  চিন্তার তেমন কারণ নেই। তিতির ভরসা দিয়েছে বেশীর ভাগ ছবি ওর ল্যাপটপের থেকে ইতিমধ্যেই শ্রী কে শেয়ার করেছে। অবসর সময়ে একান্তে নিরালায় বসে শ্রীময়ী ভাবে, বেড়ানোর এত সব ঝুড়িঝুড়ি গল্প আরো অন্ততঃ পাঁচ বছর আগে যদি সংরক্ষণ করতো ,বড্ডো দেরী হয়ে গিয়েছে।পম্পেই ,হারকুলেনিয়াম ইট কাঠ ছাই পাথরে মোড়া শহর দুটির কত দৃশ্য চোখের সামনে আজো দেখতে পায় । বয়সের সাথে দূর্বলস্মৃতিরা ব্ড্ড বিশ্বাস ঘাতকতা করছে । ঋষভ পাশে এসে বসে এলবামের আবছা ছবি দেখিয়ে বলে,তোমার মনে পড়ে কি ? এরপর আমরা কিন্তু পৌঁছেছিলাম হাউস অফ দ্য ড্যানসিংফন নামে সমৃদ্ধময় আর একটি বাগান বাড়িতে ?

হাউস অফ দ্য ড্যানসিংফন --যেখানে উদ্যান পরিবেষ্টিত ঝর্ণা ধারার সামনে পশুপাখির দেবতা ফনের নৃত্যরত একটি ছোট ব্রোঞ্জের মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। যা দুই হাজার বছর ধরে জ্বলন্ত লাভা শক্ত ঝামা হয়ে যাওয়া পাথরের নীচে থেকে ও অক্ষত ঝকঝকে ছিল। এখানে একটি অসাধারণ দৃষ্টি নন্দন মোজাইকের কাজ দেখে ব্রানটা বলে এটা ''ব্যাটল অফ ইস্যুস'' যেখানে সম্রাট আলেকজান্ডার যুদ্ধ রত  ছিলেন ইরানের সম্রাট দারিউসের সঙ্গে। যদিও প্রত্নতত্ত্ব বিদদের মতে এই মোজাইকটি আসলে একটি গ্রীক চিত্রকর্মের রিপ্লিকা ছিল। 
হাউস অব দ্য ট্র্যাজিক পোয়েট বাড়ির প্রবেশ পথে যেমন মোজাইকে খোদাই করা ভীষণ দর্শন কুকুর চোখে পড়েছিল। এ ছাড়াও ছিল ট্রয় যুদ্ধের গল্প এবং গ্রিক পুরাণের নানা চিত্র। অদ্রিজা মিস ব্রানটা কে প্রশ্ন করেছিল কিন্তু এ বাড়ির নামটি কেন হাউস অব দ্য ট্র্যাজিক পোয়েট হলো ? তার অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা মিস গাইড দিতে পারেনি।                                                                                                                                                                                                        

সেখান থেকে কিছুটা দূরে হেঁটে বারবনিতাদের সব চেয়ে বড়ো ভবন '' দ্যা লুপানারে ''এসে দল নিয়ে দাঁড়ালো ব্রানটা। কালো চশমায় চোখটি ঢেকে ,লালচে রঙের টুপি রীতিমত স্টাইল করে কপালের দিকে হেলিয়ে বলে আগেই বলেছি এই নগরীটির নীচু স্থানটি পম্পেই এবং উঁচু অংশটি হারকুলেনিয়াম। চারপাশে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আর নান্দনিক দৃশ্যের হাতছানি তে সমৃদ্ধশালী শহর দুটি সেই প্রাচীন যুগের থেকেই রোমান সাম্রাজ্যের বিশিষ্ট নাগরিকদের মনোরঞ্জন , অবসর যাপন  ও শ্রেষ্ঠ চিত্তবিনোদনের স্থান।  প্রাচীন গ্রিক,ও  রোম সহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ যাতায়াত চলতো সেই সময়ের পৃথিবীর সব থেকে সুখি এই নগরীটিতে। জলপথে বিশ্বের  যে কোনো কোণ থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ এসে ভিড়তো এর বন্দরে।  টুরিস্টদের জন্য স্বর্গ রাজ্য এই শহর টি তে সেযুগে অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, প্রাসাদ,ফোরাম এম্পিথিয়েটার ,বাজার ইত্যাদির অভাব ছিল না। বিলাস বৈভবের সাথে যৌবনের অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা তাদের প্রকট ব্যাভিচার ,সমকামিতা পতিতা বৃত্তি এবং অসৎ জীবন যাপনে অভ্যস্ত নগরীর অধিকাংশ মানুষ ছিল যৌবনমদে মত্ত ,কামাসক্ত এবং মদের নেশাগ্রস্থ, দুশ্চরিত্র এবং অত্যন্ত বর্বর।  

তৎকালীন অভিজাত মানুষদের আখড়ায় সমাজে গণিকাদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদেরই প্রতিষ্ঠিত পাড়া এই 'দ্য লুপানার '। রোমের সব বিত্তবান মানুষের অবসর কাটানোর শহর দুটি সেকালের নিত্য দিনের জমজমাট বিলাস ব্যসন সম্ভোগের আয়োজনে থাকতো সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ। যৌনতা আর সমকামিতা ছিল তাদের জঘন্য পেশা। এই পরিবেশে নানা ধরণের মানুষের দৈহিক ব্যবসার বিনোদন কেন্দ্রগুলো তে কোনো আড়াল ছিল না। দিনের আলোর মত প্রকাশ্যেই চলতো এই পতিতালয়ের রমরমা কারবার। মিস ব্রানটা এদের জীবন যাত্রা বর্ণনার প্রসঙ্গ তুলে বলে সেই সময়ে সামাজিক জীবনে এই পতিতালয়ের চাহিদা ছিল অপরিহার্য্য। দ্য লুপানারগুলো ছিল দোতলা বাড়ির যার সারিসারি ঘরগুলো ছিল খুবই ছোট এবং আলো বাতাস বিহীন। ওপরে নীচে সারিসারি ঘর সব একই রকম । মাটির তল থেকে এখানে প্রায় ৩৫ টি দ্যা -লুপনার অর্থাৎ পতিতালয় পাওয়া গিয়েছে।

শ্রী অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে ঘরে ঢুকে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল। আলোবাতাস হীন ছোট্ট কুঠুরি পাথরের খাটে শয্যা এবং বিবস্ত্র নর নারীর দেহ সব অন্তিম শয্যায় শায়িত। দেওয়াল ভরে আছে সভ্য সমাজের সংস্কৃতি বহির্ভুত নানা প্রকার অরুচিকর উত্তেজক অশ্লীল দৃশ্যের ফ্রেস্কো চিত্রে। অত্যন্ত বিসদৃশ্য ,দৃষ্টিকটূ যা মুহূর্তকাল ও তাকিয়ে দেখা অসম্ভব।  তিতির বা পুত্র কন্যা সমা ওর বন্ধুদের সামনে সে চিত্র শিল্প দেখা ভারী লজ্জার ও অস্বস্তিকর। সেখান থেকে সেই মুহূর্তেই ওরা বেরিয়ে এসেছিল। এবং মনে হয়েছিল এই অশ্লীল দেওয়াল চিত্রগুলো কামোন্মত্ত এক প্রাচীন যুগের স্বাক্ষর। ঋষভ কে ও  বলেছিল মনে পড়ছে আমাদের ভারতবর্ষের মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহোর মন্দির গাত্রের সেই বিখ্যাত কামোদ্দীপক ভাস্কর্য্যের দৃশ্যাবলী। 

ঐতিহাসিক সত্য যে উত্তর আফ্রিকা এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সদ্য কিশোরী ও যুবতী মেয়েদের ধরে আনা হতো এবং এখানে ও চলতো ভোগ লালসা শোষণ ও অত্যাচারের নির্মম কাহিনী। ঋষভ বলে, সেক্স স্লেভারি কে তারা  বিলাস বৈভবের সাথে যৌবনের অবাধ স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দিত।
তাদের প্রকট ব্যাভিচার ,সমকামিতা পতিতা বৃত্তি এবং অসৎ জীবন যাপন কোনো কিছুর অভাব ছিল না সে নগরীতে। সবেতেই ছিল ব্যাপক স্বাধীনতা।আমলা শাসক দল বা  ধনবান শ্রেণীর উশৃঙ্খলতা ও সর্বগ্রাসী মানসিকতা শৌর্য্যের অহঙ্কার অস্থিরতা কালক্রমে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে সমাজ জীবন কে কলুষিত দূষিত অসহনীয় করে তুলে প্রতিনিয়ত অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়ে রাজ্যের  শান্তি শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। 

নাগরিক জীবনের ওপর অন্যায় অত্যাচার ,নির্যাতন কামোন্মত্ত তা ও অশ্লীলতায় যৌবনমদে মত্ত তারা কামনেশায় অন্ধ হয়ে উঠেছিল। নিজেরা তো সংযমী ছিলই না এমন কি পর্যটক বা বণিক সম্প্রদায়ের মনোরঞ্জন ,দৈহিক সুখ  বিনোদনের ব্যাবস্থার জন্য অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আশায় নিজের বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের যৌন দাস-দাসী নিযুক্ত করতে ও ভাড়া দিতে কোনো সংকোচ বোধ করতো না। 

এমন কি তাদের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্য পোষ্য জন্তু জানোয়ার টিকে ও রেহাই দিত না। এই সব নিষিদ্ধ কামুক ঘটনা ও চিত্রের পরিচয় রয়েছে নানা ধরণের দেওয়ালের চিত্রে। শ্রীময়ী বলে ,ঋষভ তোমার মনে আছে রোমে আসবার কিছুদিন আগেই  ব্রিটানিকার 'পাতায় বিশদ ভাবে পম্পেই এর এই নাগরিক জীবনের ইতিবৃত্ত পড়ে শুনিয়ে ছিলাম। এখানে দেখছি সে অশালীনতার নির্লজ্জ প্রকাশ।
মর্মান্তিক দৃশ্য

অড্রিক ইরিনা ভারী উত্তেজিত। নিজেদের মধ্যে কোনো দেওয়াল চিত্র নিয়ে ঘোরতর আলোচনার সময় অদ্রিজা কে বলে , অনেক ঐতিহাসিকের মতে যৌনক্ষম নারী-পুরুষরা এই সব ‘ফারটিলিটি গড’-এর মূর্তি ক্রয় করতো এবং মূর্তির সাথে যৌনকর্মের মাধ্যমে দেবতার পূজা করত। তারা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিল। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ও বিচ্যুত হতে থাকে। ফলে সকল ধর্মযাজক এই অনাচারে নগরী ছেড়েপালিয়ে যেতে বাধ্যহয়। এই  অসংযত উম্মত্ত জাতির স্পর্ধা,ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে ভয়ানক যন্ত্রণাময় এবং পীড়াদায়ক হওয়ায় ক্রমে  শহর পরিত্যাগ করেছিলেন নির্লোভ সৎ মানুষ ও  ধর্ম যাজকেরা। সর্বং সহা ধরিত্রী ও ক্ষমা করেনি এই বর্বর সমাজ কে। তাই বুঝি চরম রোষে ৭৯ খ্রীষ্টাব্দে ঘুমন্ত আগ্নেয় পর্বতমালা ভিসুভিয়াস রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিল। মহাপ্রলয় নেমে এসে ধ্বংস লীলা চলেছিল  --এই  বেসামাল উদ্ধত্ত জাতি কে চরম শিক্ষা দিতে ।  খৃষ্টীয় প্রথম শতকে যে শহর কৃষ্টি সংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল। প্রকৃতির এক ইশারায় চোখের পলকে আগুনের লেলীহান শিখায়  লাভার স্রোতে পুড়ে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে সমাধি বরণ করেছিল।       

 শ্রী যত দেখছে নিজের মনের মধ্যে এক কাঁপন ভয় শিহরণ অনুভব করছিল। এই শহর নগর পথ ঘাট মাঠ প্রান্তর এই মৃত্যুপুরীর স্থবিরতা ! ঐ ভিসুভিয়াস পাহড়ের সাথে শান্ত সমাহিত রূপ সারনো নদীর নীরবে নিশ্চিন্তে ছলছল বয়ে যাওয়া সব কিছুই যেন ওর কাছে অবাস্তব, মিথ্যা মায়া --অবিশ্বাস্য লাগছিল ।                                                                                                                    ক্রমশঃ

Post a Comment

1 Comments

  1. বাইবেলের (old testament) এ উল্লেখিত সোদম ও ঘোমরা ঘটনার সঙ্গে লেখাটি মিলে যাচ্ছে। সেই সময় যৌনতা ও নানা রকম পাপাচারে এই দুই জায়গা এমন ভাবে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে কথিত আছে এই দুই জায়গার উপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে এসেছিল। গন্ধক লাভার অগ্নুৎ্পাতের ফলে এই দুটো দেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছিল।
    আপনার লেখাতে আমি শুধুই মুগ্ধতা অনুভব করি।

    ReplyDelete