জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন /পর্ব -৩৮ /মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

ভাঙা আয়নার মন 

পর্ব -৩৮
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া 

|| আর একটা কলকাতা... ||

               
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া 
 
           
সরস্বতী পুজো মিটলে চার পাঁচ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য শেয়ালদা স্টেশনে এলো ঝিনি আর কলি।কলি যাবে বালিতে ওর বড়দির বাড়ি আর ঝিনি ধরবে বনগাঁ লোকাল। টিকিট কেটে ফাঁকা বেঞ্চ দেখে বসে পড়ল দুজন।
        এই হলো শেয়ালদা স্টেশন! সবসময় গলগল করে এর পেট থেকে মানুষ বেরুচ্ছে তো বেরুচ্ছে।রাত দুটো বা ভোর চারটে স্টেশটা কখনোই ঘুমোয় না কেন রে?কলির কথায়  হেসে ফেলে ঝিনি।টুথপেস্টের মস্ত বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। হাসির কী হলো?থেকে থেকে ন্যালাক্ষ্যাপার মতো হাসি দিস কেন ?কলি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
            বছর তিন আগে এই কথা দিয়েই শুরু হয়েছিল কিনা। কোন কথায় কী শুরু?এমন সর্ট হ্যান্ডের ভাষা বলিস মাথার এক বিঘৎ ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। চ'আগে টিকিট কাটার লাইন দি। লাইনে দাঁড়িয়ে ঝিনি বলল সেদিন ট্রেন থেকে নেমেই দানিও বলেছিল এই হলো শেয়ালদা স্টেশন!আমায় প্রথম কলকাতা চেনাচ্ছিল  ও শেয়ালদার হোর্ডিং দেখিয়ে তা জানিস?
        ঝিনির মনে হলো এই তো সেদিন যেন গোটা কয় সপ্তা পেরিয়েছে মোটে।দানি তাকে বলছিল তন্তুজ আর বোরোলিনের ওই যে বিরাট হোর্ডিং দেখছিস তার এপাশ দিয়ে চলে গেছে আর্ম হার্স্ট স্ট্রিট ওইটে হলো আমাদের মেডিকেল কলেজের রাস্তা আর এদিক দিয়ে গিয়ে মৌলালির মোড় থেকে পার্ক সার্কাস যাওয়ার অনেক বাস পাবি তুই।সিধে তোকে তোর ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে পৌঁছে দেবে।
         সব্বোনাশের মাথায় বাড়ি!খবোদ্দার অরু ওইসব বোরোলিন টিনের হোর্ডিং দেখাস নে।পরের মাসেই শালিমার নারকেল তেল আর আদি ঢাকেশ্বরীর হোর্ডিং দিলে ও তো শেয়ালদাটাই চিনতেই পারবে না! খিক খিক করে হাড় জ্বালানি হাসি দিল ছোড়দা। 
        গত সপ্তা ভর্তির দিনে বাবা তাকে সঙ্গে করে এনেছিল ।দূরত্ব অনুযায়ী হস্টেলে সিট পাওয়া যায় বলে হস্টেল পেতে পেতে মাস তিনেক তো লাগবেই। সে কদিন সে গাঙ্গুলিবাগানে হেমের বাড়ি থেকেই ক্লাস করবে বলে তার জামাকাপড়ের ট্রাঙ্ক,বইপত্তর
 বাপি হেমের বাড়ি পৌঁছেও দিয়ে গেছে। সব বই কেনা হয়নি এখনো। উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রের আ্যনাটমি সে দাদাদের কাছ থেকেই পেয়েছে অবশ্য। তাদের বাকি সব বই  কারা কখন নিজের মনে করে নিয়ে গেছে তারা বলতেও পারেনি। তাছাড়া নতুন এডিশন বেরিয়ে গেছে,ওসব পুরনো বই পড়ে ঝিনির লাভও হতো না:এই মতো যুক্তি দেখিয়ে তারা মার মেজাজ ঠাণ্ডাও রেখেছে।
         সপ্তাখানেক পর ক্লাস শুরু  বলে ঝিনি বাবার সঙ্গে ফেরত গেছিল।আজ দাদাদের ওপর ভার পড়েছে বাড়ি থেকে তাকে পৌঁছে দেয়ার। ওরা কলেজের গেটে তাকে ছেড়ে নিজেদের হস্টেলে ফিরবে আর ক্লাস শেষে বাসে করে সে হেমের বাড়ি চলে যাবে।

🍂

      ট্রেন থেকে নেমেই অবশ্য  কর্তব্য জ্ঞানে  তাকে কলকাতা চেনাতে  শেয়ালদা দিয়ে দানি আরম্ভ করে।যদি কখনো হারিয়ে গেছিস মনে হয় তো শেয়ালদা দিয়েই শুরু করবি।মানে যেখানেই গিয়ে পড়িস প্রথমেই ধরে নিবি তোকে শেয়ালদা পৌঁছতে হবে। মানে কলকাতার যেখানেই  আমার রাস্তা ঘুলিয়ে যাবে সেখান থেকেই শেয়ালদা? অবশ্যই। প্রত্যকবার শেয়ালদা।তারপরও যদি অন্যখানে চলে যাই? আবারও শেয়ালদা!ধুসস। পৌনঃপুনিক দশমিকের মতো  আমি  শেয়ালদার চারধারে খালি খালি ঘুরপাক খাব ?বাঙাল পেইছিস নাকি তোরা?
          আইডিয়া!চ' অরু এই বাঙাল নেংটি ইঁদুরটাকে  হাইকোর্ট দেখিয়ে আনি। বাঙালে মাইন্ড করি না কিন্তু নেংটি বললি কেন?থুড়ি থুড়ি চিংড়ি ;এমন লাফ তো মহামান্য চিংড়িরাইই দেয় তাইতো মহাকবি বলেছেন "গলদা চিংড়ি তিড়িং বিড়িং  লম্বা দাঁড়ার করতাল"
        ছোড়দার কথায় বেদম রেগে সে বলল মোটেও মহাকবি  নন। মহাকাব্য লেখেন যারা তাদের মহাকবি বলে।কালিদাস, মধুসূদন এরা হলেন মহাকবি। এটা বিশ্বকবির লেখা আর  তিড়িং বিড়িং নেই মোটেও। একটা ছড়া পর্যন্ত ঠিক করে বলতে পারে না আবার কলকেতা চেনাতে এয়েছে।
      "গলদা চিংড়ি তিংড়ি মিংড়ি/লম্বা দাঁড়ার করতাল/পাকড়াশিদের কাঁকড়া-ডােবায়/মাকড়সাদের হরতাল"!
            মৌলালি মোড়ে দাঁড়িয়ে হেঁড়ে গলায় দানি দাবড়ে উঠল "পয়লা ভাদর, পাগলা বাঁদর/লেজখানা যায় ছিঁড়ে"।ঝিনিও গলার শির ফুলিয়ে হেঁকে বলল
পালতে মাদার, সেরেস্তাদার /কুটছে নতুন চিঁড়ে।"
 আশেপাশের লোকজন  তাকাতে তাকাতে পেরিয়ে যাচ্ছিল ওদের।সেসব না দেখে একসাথে দু' ভাইবোন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল
"কলেজ-পাড়ায় শেয়াল তাড়ায়/অন্ধ কলুর গিন্নি/
ফটকে ছোঁড়া চটকিয়ে খায়/সত্যপীরের সিন্নি"!
          আ্যয়! দেকিচিস তো!খোদ রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত কলেজ পাড়ার শেয়ালের কথা বলেছেন। মানে কলেজে পড়তে গেলে শেয়ালদা স্টেশনের গুরুত্বই কবি বোঝাতে চেয়েছেন। শেয়াল থেকেই তো শিয়ালদহ নামের উৎপত্তি।
      দুচ্ছাই! যত্ত সব গুলতাপ্পি বলতে বলতেই ঝিনি উল্টো দিকে দৌড় দিয়ে হনহনিয়ে চলে যাওয়া মাঝবয়সী মোটাসোটা একটা লোককে ঠাস করে এক চড় দিয়েই  ফিরে এল দাদাদের কাছে। এইখান থেকেই বাসে উঠব তাহলে? আচ্ছা পার্ক সার্কাস যাওয়ার সব বাসই কি ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে দিয়ে যায়? 
      কেসটা কী হল ?দুম করে অচেনা লোককে মেরে আসার কারণ জানতে পাই? দানি ততক্ষণে দারুণ সিরিয়াস।
       সামলাও এবার!মৌলালি মোড়ে দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে আরো আরো কবিতা করো দুজন!আরো তোল্লাই দাও মাথামোটা এই  কাঁঠালি কলাটাকে! ছোড়দাও বকাবকি শুরু করল। এটা কি তুই কেটেরহাটের গাঁ গেরাম পেইছিস নাকি যা ইচ্ছে করবি তুই। আমরা না থাকলে ঐ লোকটা যদি ঝামেলা করত? যদি কেন ও করতই:বল কী করতিস তখন তুই। সবচেয়ে বড় কথা অকারণ মারপিট করবিই বা কেন?
        কারণ ছিল তো। অকারণে মারব কেন? ঝিনিও গলা তুলল।দু দুজন লোক তোর সঙ্গে যাচ্ছে; দিনে দুপুরে বাস স্টপেজের মুখে কোথাও কিছু নেই  ধাঁ করে উল্টোমুখো দৌড়ে গিয়ে অচেনা এক ভদ্রলোকের গালে ঠাটিয়ে চড় দিয়ে এসে আবার চেঁচাচ্ছিস। মাথা তো পুরোপুরি খারাপ তোর।
        লোকটা মোটেও ভদ্রলোক না। ও যেতে যেতে আমার গায় হাত দিল তাই মারলাম। তোরা না থাকলেও মোটেও কিছু করত না। ব্রততীদি বলে 
খারাপ লোকরা ভিতু হয়।দেখলি না চুপচাপ চলে গেল। ঝামরে উঠল ঝিনি। দাদারা চুপ। 
      আচ্ছা।আগে বলবি তো।গলা ঝেড়ে খানিক পরে ছোড়দা তার পিঠে চাপড়ে বলল ঠিক করেছিস। একটু আগে জানতে পারলে খবর ছিল লোকটার।কিন্তুউউ; তার কপালে টক টক করে টোকা দিয়ে ছোড়দা বলল একটা ব্যাপারে গভীর সন্দেহ আছে। কিসের সন্দেহ? ভুরু কুঁচকে গেল তারও। ফুটোস্কোপ দিয়ে একবার দেখা দরকার তোর মুণ্ডুটায় কতখানি ভস্ ভস্ ঘিলু আর কতখানি ঠকঠকে ফাঁপা।ভালো কথা বললেও  এই যে ফস করে চটে যাস, মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রাথমিক লক্ষণ সব।চাঁ মধ্যদির মধ্যিখানটা বেশ করে চেঁছে মধ্যম নারায়ণ তেল দিতে পারলে কাজ হতো। 
        উহু!গরম গোবরের পুলটিস। দানি এতক্ষণে মুখ খুলল।  দেখছিস না কেমন টোল খাওয়া ছাতাপড়া মাথা, ফাটা মতো মনে হয় যেন। ঈষদুষ্ণ গোময়ের প্রলেপই ওর একমাত্তর দাওয়াই আর একটা কথা চট করে জেনে নিতে হবে।পাগলা কুকুর কামড় দিলে তো চোদ্দটা ইঞ্জেকশন কিন্তু পাগলা ঝিনি কামড়ালে  কটা লাগবে বল দেখি। মানে যে রেটে ধরে ধরে ঠ্যঙাচ্ছে কোনো না কোনদিন ঘ্যাঁক করে কামড়ে ও দেবেই।
          বাড়ি থেকে আসতে এমনিতেই তার মেজাজ খারাপ করছিল। দাদারা যদিও সারা রাস্তায় পেছনে লেগে,খুনসুটি করে তাকে চাঙ্গা করতে চাইছিল  তবু বেজার লাগছিল খুবই। আর এখন বাজে লোকটার ছোঁওয়াটাও কিছুতে মন থেকে যাচ্ছিল না ।গা ঘিনঘিন করছিল। দুহাত দিয়ে ঠেলে সব বার করে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা দিল সে।
     নাকখানা আকাশমুখো তুলে খ্যাসখ্যাস করে সে বিচ্ছিরি হাসি দিল একখানা। এত বচ্ছর পড়েশুনে তোদের ডাক্তারির দৌড় বোঝা গেছে।ফুটোস্কোপ দিয়ে রোগী দেখিস আর আর গরম গোবরের দাওয়াই দিস। শেষে আমাদের গ্ৰামের ফয়িম ডাক্তারের মতো সাইনবোর্ড দিবি মানুষ ও গবাদিপশুর চিকিৎসা করা হয়। বিশেষ করে অর্শ ও ভগন্দর নিরাময়! 
     গতমাসে আমার মুরগি জবার জন্য ওষুধ আনতে গেছিলাম। তখন পড়লাম বোর্ডখানা। অর্শ আর ভগন্দর কী অসুখ বল দেখি?জবার ওই অসুখ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করায় মৌচাকের মতো দাড়ি নিয়ে ফয়িম ডাক্তারের কী হাসি!মুরগিদের ওসব হয় না আর তোমার মুরগিকে তো শেয়াল আঁচড়েছে বললে।শেফা আর একটা অয়েন্টমেন্ট দিল। তোর লেগহর্ণ মুরগিটার অর্শ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলি? দানি বিষম খেয়ে বলল।হ্যাঁ মানে ওইগুলো লেখা দেখে জিজ্ঞেস করলাম মুরগিদের হয় কিনা। তো বলল মানুষের হয়।পড়েশুনে তোরা দুজনে ওরম ডাক্তার হবি। মানুষ ও গবাদিপশুর একসাথে চিকিচ্ছে করবি।তিন ভাইবোন হাসতে হাসতে বাসে উঠে পড়ল।
       কলেজের গেটে তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য ক'পা এগিয়েও ফিরে এল দানি। প্রথম প্রথম কিচ্ছু ভালো লাগবে না বুঝলি; ইংরেজিতে পড়ানো,  বুঝতে অসুবিধে হবে খুব। একগাদা অচেনা মুখের মধ্যে এলিয়েন মনে হবে নিজেকে।  ইটের জঙ্গল এই  শহরটাকেও পছন্দ লাগবে না। আমি তো ফার্স্ট ইয়ারে রোববার বাড়ি যেতে না পারলেই 
বইটই নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে বসে থাকতাম।ধৈর্য্য হারাবি না। আস্তে আস্তে ফিল করতে পারবি শহরের মধ্যে সত্যিই  আর একটা কলকাতা আছে। কাজেই ঘাবড়ে যাওয়ার স্রেফ জায়গা নেই কোনো। এই গেট দিয়ে বেরিয়ে হেঁটে গিয়ে ওই যে রাস্তার ওধারেই বাসস্টপ। রাস্তা ক্রস করে ৪৫/৪৫এ /S14 যে কোনো বাসে চড়ে গাঙ্গুলীবাগানে সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার স্টপেজে নেমে রিকশা নিবি।
         পারবে পারবে। বোকা আর মাথায় ছিট থাকলেও বুদ্ধি ওর আছে। "এ কলকাতার মধ্যে আছে আর একটা কলকাতা"!  ঝিয়াসুদ্দিন গাজী ঝিনঝিনাইয়া ,চোখ কান খোলা রেখে আপনি তাকে দেখতে শিখুন বলে ছোড়দাও খুব পিঠ টিঠ চাপড়ে বেরিয়ে গেল। যতক্ষণ ওদের দেখা গেল দাঁড়িয়ে রইল সে।
        ঝলমলে রোদেলা দুপুরে গোছা গোছা ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেমেয়েরা একই এলাকা বা একই ইস্কুল কিংবা হস্টেলে প্রথমেই সিট পাওয়ার চান্সে কদিন একসাথে থাকা ইত্যাদি পারমুটেশান কম্বিনেশনের লক্ষণ মিলিয়ে রঙিন দল বেঁধে জটলা করছিল। কোন দিকে যাবে না বুঝেই সে ক্যাম্পাসের বাগানের চারধারে একা একা চক্কর দিল গোটা দুই।
                  নাম কী রে? আমি শবরী দেখেই 
বুঝেছি কলকাতার না; আমার মতোই গা দিয়ে মফস্বলের গন্ধ ছাড়ছে শুনেই ধড়ে প্রাণ এল ঝিনির। আমি  ইয়ে স্রোতস্বিনী। বেশ গালভরা নাম। বাবা কিংবা মা টিচার নাকি? হ্যাঁ তো।মা ইস্কুলে আর বাবা কলেজে। ঠিক ধরেছি। অধ্যাপক বা শিক্ষক না হলে এমন বেধড়ক জম্পেশ নাম রাখাই যায় না!আর শবরীর প্রতীক্ষা কে রেখেছেন।ওই যে স্কুল টিচার আমার মা জননী।তারা দুজন বেশ খোলতাই হাসিতে ভয় আর অস্বস্তি তাড়ানোর চেষ্টা দিল।
          বাড়ি মধ্যমগ্রাম। হস্টেল পেতে ঢের দেরি।  একদিকে ভালোই বল। যাতায়াত করে কিছূদিন চালিয়ে দেয়া যাবে। তোর কী অবস্থা । বসিরহাট। আপাতত মাসির বাড়ি থেকে।চল রে সিনিয়র দাদারা ডাকছে। বোকারাম দাদারা সব কেসে সিনিয়রই হয়। হাসতে হাসতে সে শবরীর সঙ্গে পা বাড়ায়।
       ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট ঘুরিয়ে কলেজের দাদারা তাদের সবাইকে নিয়ে এল আ্যনাটমি বিল্ডিং এ।একতলায় থিয়োরি ক্লাসের গ্যালারি ঘুরে দোতলায় ডিসেকশন হলে চলে এল তারা।
         ঢুকতেই ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে ধক করে লাগল। ফরমালিন  আর টেবিলে সংরক্ষিত দেহগুলি থেকে উঠে আসা গন্ধ নাকে লাগতেই অনেকেই তারা নাকে রুমাল চাপা দিল। এক্সকিউজ আওয়ার লাভিং ফ্রেশারস! মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে দাও।মৃতদেহকে সম্মান দিতে শেখো।তোমরা এই শরীর পড়তে এসেছো।দিনের পর দিন যা তোমাদের জ্ঞান চর্চার বিষয় তাকে অসম্মান করলে শিখবে কীভাবে?
        বিমূঢ় লাগল।বিরাট হলের টেবিলে টেবিলে  কোনটির ডিসেকশন হয়েছে,কোনোটির হয়নি এমন নিথর নগ্ন দেহ, তীব্র কেমিকেলের গন্ধ এবং থার্ড ইয়ারের দাদার গমগমে গলার আলোচনার বিষয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ঝিনির ।
       বাসে চেপে হেমের বাড়ি পৌঁছলে স্কুল ফেরত সানা আর মহুল ঝাঁপিয়ে পড়ল। ভেজিটেবল চপ নিয়ে ঢুকেছিল সে।গা ধুয়ে  আসতে আসতে মহুল মুড়ি মেখে চা বানিয়ে ফেলল।হাসি গল্পে জমে গেল তারা। হেম অফিস থেকে ফিরে আর এক দফা চা করে বলল মরা মানুষের হাড়গোড় শাশুড়ি মাকে দেখাস না। আগের কালের মানুষ।।অস্টিওলজি পড়তে ভার্টিব্রাল কলাম কিনেছে সে কলেজের স্টোর থেকে। সে সব ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে ফিজিওলজি বার করে বসল সে। নিঃশ্বাস ফেলে ভাবল আগে আগে হস্টেল পেলেই বোধহয় ভালো হতো তার।
      এই ঝিনি এই, থেকে থেকে ভেবলির মতো কোথায় যে হারিয়ে যাস। ঠেলাগাড়ি চাপা পড়লেও টের পাবি বলে মনে হয় না।কলির ডাকে সাড় ফিরল তার।কী বলছিস?তোর ট্রেন আসছে তো সাত নাম্বারে। অ্যানাউন্সমেন্ট শুনলি না?করেছে নাকি?কী ভাষায় যে কথা বলে অ্যানাউন্সে তিনটের কোনোটাই কিছু বুঝি না!তালে ট্রেনে উঠিস কী করে?ওই বোর্ড দেখে আর নয়তো এনকোয়ারিতে ধাক্কা ধাক্কি করে জেনে আসি। তুই আছিস বলে আজ  আর হাঙ্গামায় যাইনি।
        বেশ করেছিস।তোর গাড়ি আগে ঢুকছে।চ'তোকে তুলে দিয়ে আসি। লেডিসে ওঠ নয় তোর পকেটমার হবেই। কী করে জানলি লেডিসে পকেটমার হবে না। মেয়ে পকেটমার আমি অন্তত দেখিনি। ওরে ভগবানের ভালবাসার মতো প্রতিভাবানরা সবখানেই  আছে আর মেয়েরাও তো পেশা বদলাচ্ছে। প্লেন চালাচ্ছে আর পকেট মারতে পারবে না?তবে ওসবে লাভ নেই পকেট আমার ঢুঁ ঢুঁ।যাই রে। বুকনির জাহাজ এত বকবক পারিস আর আসি বলতে পারিস নে। কিছুই  শিখলি নে জীবনে।আচ্ছা পিসিমাতাঠাকুরাণী শ্রীমতী আদ্যা সুন্দরী দেব্যা আজ তবে আসি...?

Post a Comment

0 Comments