কমলিকা ভট্টাচার্য
কবে থেকে এই ভাবনার সূত্রপাত
সে প্রশ্ন আজও ভাসে অলিখিত নিয়ম ইতিহাসের ঢেউয়ে।
হয়তো তখনই,
যখন মানুষ কেবল মানুষ ছিল,
ভিতর থেকে উদ্ভাসিত,
দেহে ছিল দেবতার মতো নির্মল আলো।
আমরা চেয়েছিলাম শুধু জানতে
এই বিশ্ব কি করে উঠল গড়ে
কে প্রথম আলো জ্বালালো মস্তিষ্কে,
কে প্রথম স্বপ্ন দেখেছিল আকাশ ছোঁয়ার?
আসলে তখন সব কিছুই ছিল সমান
জল, মাটি, বায়ু, শ্বাস
সবাইয়ের প্রাপ্য ছিল, সবাই আপন ছিল।
কিন্তু ধীরে ধীরে,
সেই জ্ঞানের আগুনেই জ্বলে উঠল লোভের জিহ্বা,
ক্ষমতার কাঠামো গড়ল মানুষই,
আর সমাজকে ভাগ করল শাসক আর শাসিত।
নিয়মের নামেই তৈরি হল ফাঁদ
দরিদ্রের জন্য জারি আইন,
ধনী আর প্রভাবশালীরা সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে
নিজস্ব নীতির বাঁধন গাঁথে।
ধর্ম, জাত, ভাষা, গাত্রবর্ণ
সবই হয়ে গেল টুলকিট
একটা বিভাজনের প্রজেক্টে।
আজকাল আমরা ড্রোনে ফসল দেখি না,
দেখি কার গায়ে কী পোশাক, কপালে কী চিহ্ন।
কোথায় স্বপ্নের আস্তাকুঁড়
কোথায় লুকোনো ধ্বংসের গুহা
লক্ষ্য বানাই মানুষকে — কারণ তার ধর্ম ভিন্ন।
একটা ছেলে বাইরে গিয়েছিল ফেরেনি
মাথা কাটা শরীরটা পাওয়া যাবে কোনো ক্ষেতে
নিকোনো আলপনা আঁকা উঠোনে সাজানো লাশ বাড়ির আপনজনের।
মানুষের মুখোশে কোনো হিংস্র দানব ছিঁড়ে খাবে নারী শরীর
পৃথিবীর স্বর্গের উপত্যকায় নরক যন্ত্রণার হাহাকার
হিংসার আগুনে পুড়ে যায় শেষ প্রার্থনাও।
আচ্ছা এ কোন সময়?
এ কি প্রযুক্তির জয়যাত্রা সময়?
এ কি ডিজিটাল বিপ্লবের উৎসবের সময় নাকি শব গোনার?
আমরা AI বানাই,
কিন্তু নিজের AI, আত্মিক ইন্টেলিজেন্স তো আজও লোডিং…
আমরা ভিন গ্রহে পা রাখার স্বপ্নে মশগুল
কিন্তু পাশের ঘরে কে?
কি খাচ্ছে ?সেটা দেখি কি?
এত লজ্জা লাগে যে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না,
আবার এই লজ্জাই তো আমার কলমের কালি।
কারণ যেদিন আমরা প্রশ্ন করা ভুলে যাব,
সেদিনই তো সত্যিই হারিয়ে যাবো কালের অতলে।
আমরা কাঁদি যখন বড় কিছু ঘটে,
কিন্তু চোখ ফিরিয়ে নিই
যখন প্রতিদিন সমাজে ঘটে অসংখ্য ছোট ছোট অবিচার।
এই ভণ্ডামি, এই উদাসীনতা
আমাদের সবচেয়ে বড়ো পরাজয়।
কারণ যখন মানুষ ভাবা বন্ধ করে,
তখন সভ্যতা চুপচাপ তার নিজস্ব কবর খোঁড়ে।
তবু আজও কিছু মন রয়ে গেছে,
যারা প্রশ্ন তোলে
এই কি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ?
এই কি আমাদের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত পৃথিবী?
তাদের ভাবনার শিখায়
হয়তো একদিন গলে যাবে এই জংধরা সমাজ।
হয়তো আবার মানুষ ফিরে পাবে
তার সেই হারিয়ে যাওয়া দেবত্বের আলো।
🍂
0 Comments