পারমিতা রায়
সৃজনশীলতার মধ্যে থাকতে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। ছেলেবেলাতে যখন বুদ্ধিমতী বান্ধবীদের দেখতাম তাদের নানান বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরগুলি যখন বিদ্যালয় এর-শিক্ষিকাদের সামনে দিতে শুনতাম তখন বুঝতে পারতাম সৃজনশীলতা , তাদের মধ্যে খুব সুন্দরভাবে বাসা বেঁধে আছে। আবার আমার এক বান্ধবী খুব সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতো, নিজের মন থেকেই নানা রকম প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি, কখনো বা খুব সুন্দর ফুল পাতায় ভরা গাছের ছবি, কখনো বা নানান আলপনার ছবি আঁকতো, তার সৃজনশীলতা ছিল নতুন চিত্রকে গড়ে তোলার ভিত্তিতে। আমার এবং আমার আরো কিছু বান্ধবীদের সৃজনশীলতা ছিল কিছু নতুন লেখালেখির উপর , আমি ছোট থেকেই টুকটাক লিখতে ভালবাসতাম। স্কুলের ম্যাডাম দেয়াল ম্যাগাজিনে ও লিখতাম। স্কুলে যে ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো তাতেও লেখা দিতাম এবং শুকতারা
বইয়েও আমার লেখা অনেক ছোট গল্প বহুবার প্রকাশিত হয়েছিল। আমি বর্তমানে চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। চেন্নাইয়ে তথা তামিলনাড়ুতে সৃজনশীলতা প্রতি ঘরের সামনেই প্রভাত ফেরির মতই যেন দেখতে পাই, ভোরবেলা হলেই। আসলে চেন্নাই তথা তামিলনাড়ুতে গৃহবধূরা ভোরবেলাতেই গৃহের সম্মুখে জল দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে খুব সুন্দর রঙ্গোলি দেয় অর্থাৎ নানার আলপনা আঁকেন সাদা রঙের এবং নানান রঙের এক ধরনের মিহি পাথরগুড়োর ছোঁয়ায়।
যা সত্যিই খুব নিখুঁতভাবে তারা করেন এবং দৃষ্টি আকর্ষণীয়ও বটে। আমি আঁকতে খুব ভালোবাসি ছোটবেলা থেকেই তাই জন্য সকালবেলায় সকল গৃহের সম্মুখেই এই আঁকা গুলি দেখে মন ভরে যায় আমার। আমার স্কুলের কোন অনুষ্ঠান হলেও আমরা সকল শিক্ষিকা মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এই ধরনের রাঙ্গোলী বিদ্যালয়ের আঙ্গনে দিই।
সৃজনশীল মুলক কাজকর্মের মধ্যে থাকলে সত্যিই মনও খুব ভালো থাকে এটা আমার ধারণা। সৃজনশীল কাজের মধ্যে থাকা অর্থাৎ সৃষ্টিমূলক কাজের মধ্যে থাকা ভগবানের আশীর্বাদ বটে। লেখালেখির কাজও অত্যন্ত সুন্দর একটি সৃজনশীল কাজ। যারা বিভিন্ন ম্যাগাজিন পত্রিকার কর্ণধার প্রকাশক তাদের দায়িত্বভার অনেক বিভিন্ন লেখক লেখিকাদের সৃষ্টি মূলক কাজের সাথে তারা নিজেদেরকে যে জড়িত রাখেন এটি পূণ্যের কাজ বলে আমি মনে করি এবং এটি ভগবানের আশীর্বাদও বটে সেই সকল পত্রিকা ম্যাগাজিদের কর্ণধারদের উপর। আজকাল বই পড়ার চল বেশ কমে গেছে মোবাইল এবং ইন্টারনেটের এবং ল্যাপটপের দৌলাতে। কিন্তু বিভিন্ন ম্যাগাজিন পত্রপত্রিকার কর্ণধারেরা আজও বিবিধ লেখক লেখিকাদের সৃষ্টিমূলক কাজগুলিকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে চলেছে নিরন্তর প্রতিদিন তাই আমি তাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। লেখালেখি মূল্যবোধ যারা দিতে জানেন তাদের কাছে রয়েছে মা সরস্বতীর অসীম কৃপা এবং আশীর্বাদ। আজকাল অবশ্য নানা অ্যাপের মাধ্যমেও ইন্টারনেটের সাহায্যে নানান রকম সৃজনশীল কাজ বহু মানুষ করছেন এবং উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করছেন। এটিও অবশ্য একটি ভালো দিক বটে এই নতুন যুগের ক্ষেত্রে।
এখন যেমন চলছে গিবলী অ্যাপের ট্রেন্ড। এটাও বেশ মন ভালো করা একটা কার্টুন অ্যাপ নানান ছবিগুলি বেশ অন্যরকম ভাবে আমরা দেখতে পাই। দেখতেও বেশ এই গিবলি আপের ছবিগুলি মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। তাই সৃজনশীল মূলক কাজকর্ম ইন্টারনেটের মাধ্যমেও, মোবাইলের নানান অ্যাপের মাধ্যমেও চলছে যা বেশ দৃষ্টি আকর্ষণীয়। সৃজনশীল মূলক কাজ আমাদের পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশেও যেন পাড়ি দিয়েছে। কিছুদিন আগে মহাকাশযাত্রীরা সুন্দরভাবে মহাকাশে দিনগুলি কাটিয়ে যখন পৃথিবীর বুকে সুস্থ ভাবে ফিরে এলেন তখন তাদের সেই মহাকাশে থাকাটাও , এবং তাদের সুস্থ থাকাটাও তাদের সাহায্যকারীদের এবং অনুপ্রেরণা যোগদানকারীদেরও , সৃজনশীল কাজেরই উদাহরণ। মহাকাশচারীদের সুন্দরভাবে মহাকাশ ভ্রমণের এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের যারা প্রতিপদক্ষেপে সাহায্য করেছেন তাদের সৃজনশীলতা বোধ সত্যিই অবিস্মরণীয় । সুনিতা উইলিয়াম যিনি ভারতীয় মহিলা মহাকাশ ভ্রমণ করে পৃথিবীর বুকে তার গণেশের মূর্তিকে নিয়ে পুনরায় সুস্থ ভাবে ফিরে এসেছেন তা সৃজনশীল মনোভাবকেও আমি সম্মান জানাই। আমার এই লেখাতেও যারা উৎসাহ দিয়েছেন যারা এই জলদরচী পত্রিকার কর্ণধার,প্রকাশক তাদের সুন্দর মনোভাব কেও আমি সম্মান জানাই কারন আমি বাংলা থেকে বহু দূরে চেন্নাই শহরে বসবাস করেও এই পত্রিকার হাত ধরেই নিজের লেখালেখির কাজে অর্থাৎ সৃষ্টিমূলক কাজে, সৃজনশীলতার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। তামিলনাড়ুতে চেন্নাই শহরে আমি হিন্দি শিক্ষিকার পরিচয় কিছুটা হলেও পেয়েছি আমার এলাকায়। দৈনন্দিন ছোট ছোট আমার ছাত্র-ছাত্রীদের হিন্দি শিক্ষা দিতে গিয়েও বুঝেছি শিক্ষকতা সৃষ্টিমূলক সৃজনশীল কাজ অবশ্যই। শিক্ষকদের, শিক্ষিকাদের হাত ধরেই ছোট ছোট শিশুরা তাদের সুন্দর জীবনের পথের সূচনা ঘটায়। শিক্ষক শিক্ষিকা দের হাত ধরেই, ছোট ছোট শিশুদের অক্ষর জ্ঞান অর্জন শুরু হয়। শিক্ষামূলক কাজ, সে নিত্য শিক্ষকই হোক, অংকনের শিক্ষা কি হোক অথবা সঙ্গীতের শিক্ষক-শিক্ষিকাই হোক তারা অবশ্যই সৃজনশীল কাজের সাথে অর্থাৎ, সৃষ্টিমূলক কাজের সাথে জড়িত।
🍂
তাই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি আবার এই লেখার মাধ্যমে।
দীর্ঘ বছর তামিলনাড়ু শহরে থেকে এখানকার অনেক শিশু শিল্পী এবং কিশোর কিশোরী শিল্পীদের দেখলাম অপূর্ব সুন্দর ভরতনাট্যম নাচের সৃজনশীলতাকে ধরে রাখতে। এখানে বহু বাঙালি শিল্পী দাও আছেন যারা রাবীন্দ্রিক এবং ভরতনাট্যম নৃত্যকে সমবেত ভাবে মিলিতভাবে যুগল ভাবে পরিবেশন করেন, এই সৃজনশীল , অপূর্ব নৃত্যের ভাবনাকে, কেন্দ্র করে যেসব শিল্পীরা রয়েছেন তাদের মনো মুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনকে আমি সম্মান জানাই। কলাক্ষেত্র চেন্নাই শহরের বুকে তামিলনাড়ুর বুকে ভরতনাট্যম নৃত্যের সৃজনশীলতাকে ধরে রাখার মূল প্রেক্ষাপট। যেখানে বহু তামিল ভাষার শিল্পীরা, বহু বঙ্গভাষার শিল্পীরা, এবং ভারতবর্ষের বিভিদও ভাষাভাষীর শিশু শিল্পীরা, কিশোর শিল্পীরা, কিশোরী শিল্পীরা, তাদের নৃত্য কৌশলের মাধ্যমে তাদের সৃজনশীল কাজগুলির চিহ্ন তাদের দৈনন্দিন জীবনে রেখে যাচ্ছেন, যা সত্যি প্রশংসা পাবার যোগ্য। আমাদের চেন্নাই শহরের বুকে অনেক সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মঞ্চে । তখন উপভোগ করি বিভিন্ন সৃজনশীল , সৃষ্টি মূলক মানুষদের সৃজনশীলতাকে এবং তাদের সৃষ্টির কাজ গুলিকে। আমি নানারকম ফেব্রিকের জুয়েলারি এবং মাটির জুয়েলারীও বানাই। এই গহনা বানানোর হাতের কাজগুলি সত্যিই মন ভালো করে এবং টুকটাক হাত খরচা জোগান ও দেয়। আমি নানা রকম কাপড় কাটাকাটি করি আঠা দিয়ে জুড়ে তার উপরে আঁকি-বুকি করে এবং কৃত্রিম মাটির সাহায্য এও নানান গহনা বানাই , প্রতি মুহূর্তেই তখন মনে হয়, যে আমি সত্যি বেশ সুন্দর সৃষ্টিমূলক সৃজনশীল কাজের মধ্যে নিজেকে যুক্ত রাখতে পেরেছি। মনটাও বেশ খুশিতে ভরে যায়। তাই আমার অনুরোধ হিংসা না করে একে অপরের প্রতি , একে অপরকে নিন্দা না করে সকলেই কিছু না কিছু সৃষ্টিমূলক কাজে অর্থাৎ সৃজনশীল কাজের মধ্যে নিজেদেরকে যুক্ত রাখুন। তাতে মন ও ভালো থাকবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে। প্রতিনিয়ত সকালবেলা সকলেই শুরু করুন কিছু প্রাণায়াম এর সাহায্যে এই প্রাণায়াম গুলি ও কিন্তু যোগব্যায়াম কারীদেরই সৃষ্টিমূলক কাজের , সৃজনশীল কাজের উদাহরণ যা আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে সাহায্য করছে । দেখতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সর্বদাই সুন্দরভাবে সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। প্রত্যেকের কাছেই অনুরোধ রাখবো সকলে কবিতার মধ্যে থাকুন লেখার মধ্যে থাকুন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পাঠের মধ্যে থাকুন। সকলে মন ভালো রাখার জন্য সৃষ্টিমূলক, সৃজনশীল মূলক কাজের ভিতর থাকুন।
0 Comments