জ্বলদর্চি

বাপ্পাদিত্য/ পুলককান্তি কর

চিত্র- শুভম দাস
বাপ্পাদিত্য
পুলক কান্তি কর

  মেয়ের ঘোর লাগা মুখের দিকে তাকিয়ে খানিকটা উদাস হয়ে গেল মৈরেয়ী। উঁকি দিয়ে দেখল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাস্পাদিত্যের শেষ পাতাটি খোলা । ওদের কালে এটি দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যক্রমেই ছিল, আজকাল ছেলেমেয়েদের পড়ার ভাষা ইংরেজী, বোর্ড আলাদা, সিলেবাস আলাদা – কী আর করা যাবে! তবে মৈরেয়ী সাধ্যমত মেয়েকে বাংলা পড়াবার চেষ্টা করে, নানান গল্প উপন্যাসের বই কিনে দেয়। কিছুদিন আগেই রাজকাহিনী কিনে দিয়েছিল সে, মেয়ে রাতের খাবার খেয়ে শুতে যাওয়ার আগে গল্পটা নিয়ে বসেছে। এবং কি আশ্চর্য সমাপতন; আজও শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা, কিছুক্ষণ আগে বেশ ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে ওদের কসবা এলাকায়। তবে এই মুহূর্তে আকাশ খুব বেশি গোমড়া নয়। মাঝে মাঝে মেঘের ফালি উড়ে এসে চাঁদের গায়ে বসছে বটে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। সত্যি সত্যি এমন রাতে বটগাছের ঝুরিতে বানানো দোলনায় দোল খেতে খেতে যদি সই-সাথীরা গান ধরে 'আজ কী আনন্দ, আজ কী আনন্দ, ঝুলত ঝুলনে শ্যামর চন্দ!’ তবে দোষ কী! মৈরেয়ী মেয়ের গায়ে আলতো ঠেলা মেরে চলল, 'কীরে এত বিভোর হয়ে কী ভাবছিস? 
  মেয়ে একটু চমকে বলল, 'কই কিছু না তো'।
  মেয়ের বয়স এবার তেরো হল। ভরপুর পিউবার্টির লক্ষণ সারা গায়ে। মৈরেয়ী বোঝে সব। তারও তো এই বয়স  ছিল। মনে পড়ে বাষ্পাদিত্যের গল্পটি পড়বার দিনের কথা। ওদের কৈলাশ স্যার বাংলা পড়াতেন। উনি যেদিনই ক্লাসে মুখবন্ধটি শুরু করেছিলেন, সেদিনই বাড়ি গিয়ে এক নিশ্বাসে সে পড়ে ফেলেছিল গল্পটি। সেদিন সারা চোখ জুড়ে কি অব্যক্ত এক আনন্দময় স্বপ্ন – যা কেবল  উপভোগ করা যায়, ছবির মতো দেখা যায় না, ভাষায় কাউকে প্রকাশ করা যায় না। মৈরেয়ী আলো নিভিয়ে দিয়ে বলল, 'নে শুয়ে পড় এবার। সকালে স্কুল আছে'।
– মা কাল তুমি আমাদের পি টি মিটিংয় এ যাবে তো?
– হ্যাঁ যাবো । তবে তুই জিজ্ঞেস করছিস কেন? আজ পর্যন্ত একটা পেরেন্ট টিচার্স মিটিং হয়েছে কি, যাতে আমি যাইনি?
– না, তা নয় ! তোমার কালকে সকালে নাচের ক্লাস আছে তো! তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমি ক্লাস শিফ্ট করিয়ে দিয়েছি।
🍂
ad

– আচ্ছা মা! বাষ্পাদিত্য বলে কি সত্যি সত্যি কেউ ছিল, নাকি পুরোটাই কল্পনা?
– সত্যি সত্যি ছিল। রাজকাহিনী বইটা মোটামুটি ভাবে কর্ণেল টডের রাজস্থানের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইটার ওপর ভিত্তি করেই অবন ঠাকুর লিখেছিলেন। তাঁর লেখার গুণেই সত্যিকারের চরিত্ররা কল্পকথার নায়কের মতো স্বপ্নের দেশে ঘোরাফেরা করেন। আসলে মানুষটি বড় চিত্রশিল্পি ছিলেন জানিস তো?
– হ্যাঁ
– বল দেখি ওঁর দু একটা ছাত্র-ছাত্রীর নাম?
– ছাত্রীর নাম জানি না, তবে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ – এঁদের নাম শুনেছি।
– হ্যাঁ; ঠিকই বলেছিস। তা অবনঠাকুর এতবড় আঁকিয়ে ছিলেন বলেই বোধহয় তাঁর হাতে শব্দেরা রঙের  সাথে মিশে ছবির আকার ধারণ করতো। ভারী চমৎকার সব লেখা! তা তোর এই বইটা কেমন লাগছে?
– দারুণ। আচ্ছা মা, শোলাঙ্কীর রাজকুমারীর সাথে সত্যি কী হয়েছিল? সে সন্ন্যাসিনী হয়ে গেল কেন?
– তা তো জানিনা কুহু।
– কেন? ইতিহাসে তার কথা লেখা নেই?
– ওটা বোধ হয় কল্পনা, আমি ঠিক জানি না রে। কর্ণেল টড তো আমি পড়িনি। বা অন্য কোনও প্রামাণ্য ইতিহাস বইও আমি পড়িনি। দাদু থাকালে হয়তো বলতে পারতো। 
  উত্তর মেয়ের মনঃপূত হলো না বোঝাই গেল। সে যে স্বপ্ন জগতে এখন ভাসতে চায় সেখানে বাষ্পাদিত্যের রাজমহিষী বা মুসলমান বেগমের তুলনায় সন্ন্যাসিনীর জগতটা অনেক বড়। একজন রাজকুমারী, কিসের মোহে যে এক রাখাল বালককে বিয়ে করল খেলার ছলে – তারপর সারাটা জীবন তাকে মনে মনে ভালোবেসে গেল! সন্ন্যাসিনীর জীবন পালন করেও সেই ভালোবাসার টানে সেই ছেলেটির মৃত্যু দিনে এসে তাকে সবার অলক্ষ্যে নিয়ে চলে গেল, এক অপার জগতে! সেটা যদি সত্যিকারের অস্তিত্বের স্বীকৃতি পেত, মনটা আরো বেশী কল্পনাপ্রবণ হয়ে পড়ত। মৈরেয়ী বলল, এবার কথা বন্ধ, শুয়ে পড়ো।
–তুমি শোবে না?
–না, তুই শো। আমার দেরী হবে। নীচে খাবার-টাবার গুলো গুছিয়ে তুলতে হবে। ঘুমো।
    মেয়ের ঘরে আলো নিবিয়ে নীচে এলো মৈরেয়ী। ওর মনটা হঠাৎ ভারী হয়ে গেল। ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ। সত্যিই তো, এই সন্ন্যাসিনীর চরিত্রটা তাকে কেন এত আন্দোলিত করে? এ কি কেবল অপার ত্যাগের মহিমার জন্য, নাকি দুর্বার সেই ভালোবাসা – যা তার সন্ন্যাস জীবনের কঠোর অনুশাসনও ভোলাতে পারেনি। যে বালিকা রাজকুমারী হয়েও নিছক খেলার ছলে এক বনের রাখালের গলায় মালা পরিয়েছিল, তাকে কি এত সিরিয়াসলি সারাজীবন বওয়া যায়? হয়তো সেই সন্ন্যাসিনীর জীবনে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছিল। যাতে তাকে সন্ন্যাস নিতে হয়েছিল, হয়তো তার বিয়ে হয়েছিল, হয়তো বা হয়নি – কে জানে সে সব! এইসব ভাবনার সাথে টুকটাক কাজকর্ম সারছিল মৈরেয়ী। সেসব কাজ সেরে চুল বাঁধতে গিয়ে ফোন এলো অলর্কের। ও ওর নাচের স্কুলের ম্যানেজার কাম কোরিওগ্রাফার কাম কস্টিউম ডিজাইনার– মাল্টিপারপাস কাজ করে। প্রোগ্রামে প্রপের কাজটা ওই দেখে। কয়েক দিন বাদেই ওদের একটা শো আছে, সেই সংক্রান্ত।
–ম্যাডাম ব্যস্ত নাকি ?
–না বলো ।
–রাত হয়ে গেল অনেক। ভাবছিলাম আপনি শুয়ে পড়তে পারেন, তাই...
–ঠিক আছে বলো। 
–ওই প্রোগ্রামের ডিজাইনটা করছিলাম। 
–তো?
–ম্যাডাম আজকের আকাশটা দেখছেন?
– কেন বলতো?
–না মানে আজকের চাঁদনী রাতটা ভারী চমৎকার!
  মৈরেয়ী খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘এটা কি আমাদের জন্য কাজের?’
–হ্যাঁ ম্যাডাম! ওই যে রাধাকৃষ্ণের ব্যাপারটা আছে, ওটা যদি একটা ঝুলন পূর্ণিমার রাতের মতো স্টেজে সাজাই  কেমন হয়? একটা বটগাছ থাকবে, দোলনা থাকবে তাতে ...
–তুমি বাষ্পাদিত্যের গল্প জানো? 
–না ম্যাডাম!
  মৈরেয়ী মনে মনে ভারি আশ্চর্য হল, আজ ঘুরে ফিরে  এই ঝুলনটাই কেন ফিরে আসছে! অলর্কের গল্পটা পড়া থাকলে নিশ্চয়ই প্রপ সাজাতে সুবিধা হত। অবশ্য ও বেশ আর্টিস্টিক মেজাজের। মনে হয় না, দৃশ্যতে রোমান্টিকতার কোনও অভাব হবে। মুখে বলল, ‘তোমার দোলনা ছিঁড়ে পড়বে না তো?’
-না ম্যাডাম ওসব কোন ভয় নেই। আপনি মত দিলেই ব্যাপারটা নিয়েই ভাববো।
–বেশ তো, করো।
–ম্যাডাম একটা অনুরোধ করব?
–বল ।
–একটিবার বারান্দা গিয়ে চাঁদটা দেখুন, মনটা জুড়িয়ে যাবে।
   এসব কথায় প্রশ্রয় দিতে নেই, মৈরেয়ী বেশ বোঝে। ও বলল, ‘ঠিক আছে; কাল বিকেলে এসো, এ নিয়ে কথা বলা যাবে।’
    মৈরেয়ী হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল খানিকটা। মনের মধ্যে অলর্কের বিগত বেশ কিছু দিনের ব্যবহার তলিয়ে দেখার চেষ্টা করল, লোকটা কি হঠাৎ তার প্রতি বেশি দুর্বলতা দেখাচ্ছে? দেখালেও প্রতিটাই মর্জিনাল – বোঝার উপায় নেই। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুতে চলে গেল সে।
(২)
–আপনি মৈরেয়ী সেন, পৌলমীর মা, তাইতো?
–হ্যাঁ স্যার!
–আপনার মেয়ের সেকেন্ডটার্মের রেজাল্ট তো খুব পুওর, ঘরে পড়াশুনা করে না?
–করে তো। তবে ইদানীং খুব অন্যমনস্ক লাগছে।
–দেখুন মিসেস সেন, বারো তেরো বছর তো মেয়েদের জন্য ভালো নয়। এই সময় হরমোনাল চেঞ্জ হয়, আর তাছাড়া নানান মানসিক চাঞ্চল্যও আসে – একটু খেয়াল রাখবেন। 
–স্কুলে ও কি অ্যাটেনটিভ থাকে ?
–আমি তো এখানে কয়েকদিনই জয়েন করেছি, সুতরাং... ওর আগের স্ট্যাটিসটিক্স দিতে পারবো না – তবে ও খুব টকেটিভ, ডিস্টার্বিং। ফার্স্টটার্মে রেজাল্ট যদিও ভালো, আপনারা বাবা মা মিলে ওকে টাইম দিন। বয়সটা তো ভালো নয়, বোঝেনই।
–ঠিক আছে; আর কি কিছু বলবেন, না কি উঠবো?
–আচ্ছা যান। সামনের পি-টি-তে দেখা হবে। 
  মৈরেয়ী উঠতেই ভদ্রলোক একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কি খুব তাড়া আছে?’ 
–কেন বলুন তো?
–না মানে দশ মিনিট একটু অপেক্ষা করতে পারবে? যদি পারো তবে ওই করিডোরটার ওদিকটা গিয়ে দাঁড়াও। আমি নেক্সট দুজন গার্জেনকে ছেড়ে আসছি।
–সেটা কি খুব দরকারী?
–দরকার? না না দরকারী মোটেই না! আমার অনুরোধ। 
  সব সময় সব কথায় রূঢ় হওয়া যায় না। মৈরেয়ী বাইরে গিয়ে করিডোরে অপেক্ষা করতে লাগল। দূরে স্কুলের মাঠে দেখা যাচ্ছে পৌলমী খেলছে। ব্যাডমিন্টন। ও এত ক্ষিপ্র ভাবে লাফিয়ে নড়াচড়া করতে পারে, ঘরে বোঝাই যায় না। মৈরেয়ী অনেকবার নাচ শেখানোর প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু পৌলোমী উৎসাহ দেখায়নি। এই স্কুলের সামনে অনেকখানি জায়গা আর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো বেশ কিছু গাছ। ঠিক গেটের দুপাশে দুটো অশ্বত্থ গাছ চোখ টানে। একটা কাক এসে এক মনে একটা ডালে বসে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু একটা করছিল, ভদ্রলোকের ডাকে ওর দৃষ্টি সেখান থেকে সরে এলো।
–খুব বোর হয়ে গেছ বুঝি?
–কী দরকার বলে ফেলুন।
–বললামই তো, দরকার কিছু নয়। 
–তবে?
–এভাবে তুমি কাটাকাটা শব্দ বসাতে থাকলে আমার কিছুই বলা হবে না মৌরী! সেরকম হলে চলে যাও। 
–বেশ তো বলুন।
–বলব আর কী? দীর্ঘদিন বাদে দেখা – একটু কুশল সংবাদ নেওয়াই উদ্দেশ্য। এর বেশি কিছু না।
–আমি ভালো আছি।
–তা তোমার বিয়ে কবে হল জানালে না তো!
–সুযোগ হয়নি।
–ওঃ! পৌলমীর ডায়েরিতে দেখলাম তোমার বাপের বাড়ির ঠিকানাই দেওয়া আছে, তা তুমি কি ওখানেই থাকো?
–হ্যাঁ। 
–কিছু যদি মনে না করো, তুমি তো কখনো তেমন আল্ট্রামড ছিলে না – তোমার বিয়ের সুবাদে সিঁদুর লোহা কিছু দেখছি না তো!
 মৈরেয়ীকে চুপ করে থাকতে দেখে ভদ্রলোক আবার বললেন, ‘কই আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলে না ?’
–কেমন আছেন ?
–আমাকে ‘আপনি আজ্ঞে’ করছো কেন মৌরী? 
–মেয়ের শিক্ষককে কী বলা উচিত?
–এখন তো আমি ওর শিক্ষক হিসেবে কথা বলছি না। পুরনো বন্ধু হিসেবেই তো দেখতে পারো! 
 –আসলে সবকিছু এত পুরনো যে আজকাল বড় ঝাপসা লাগে। স্পষ্ট অবয়র না পেলে তাকে ডিফাইন করতে কষ্ট হয়।
–ঝাপসা কাঁচের দেয়াল তো তুমিই তুলেছ মৌরী!
–ছাড়ুন ওসব কথা। আজ বরং আসি। 
–তুমি সত্যি সত্যি ভালো আছো তো, মৌরী?
–আছি। আসি এবার। আর একটা কথা, আপনি যে আমাকে চেনেন, মেয়ে যেন না জানতে পারে।
–কেন? তোমার স্বামী সন্দেহপ্রবণ বুঝি!
–বেশ তো! ইচ্ছে হলে মেয়েকে জানিয়ে দেবেন।
–এভাবে কথা বলছ কেন মৌরি? এত এত বাঁকা কথা বলছ। আমাকে নিষেধ করেছ যখন নিশ্চই বলবো না, কিন্তু এভাবে তেরিয়া হয়ে বলছো যেন মস্ত অপরাধ করেছি আমি। বেশ তো, তোমার যখন আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, চলে যাও।
  মৈরেয়ী আর দাঁড়ালো না। তাকিয়ে দেখল পৌলোমী তখনও খেলছে ধীর পায়ে। সে সেদিকেই এগিয়ে গেল। 
  (৩)
     সারা প্রেক্ষাগৃহ যখন হাততালি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ালো, সারা শরীরে যেন অপূর্ব এক শিহরণ খেলে গেল মৈরেয়ীর। একজন শিল্পি আর কীই বা চাইতে পারে? এ হল গন্ধর্ব বিদ্যা। সমাঝদার ছাড়া এর বৃংহণ হয় না । সাজঘরে যখন ফিরে এল, দেখলো অলর্ক ওর দিকে অপলক তাকিয়ে। বলল, ‘খুব ভালো হয়েছে ম্যাডাম!’
  এর অনেকটা কৃতিত্ব তোমার অলর্ক। এত ভালো মঞ্চসজ্জা বোধহয় তুমি আগে করোনি। কী মায়াবী সিকুয়েন্স । বিশেষ করে ওই চাঁদনী রাত আর ঝুলন – মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি বুঝি রাধাকৃষ্ণ নেমে এসেছেন এই মঞ্চে ।
–আপনি চাইলে আপনার বেডরুম এমন করে সাজিয়ে দিতে পারি।
–সত্যি পারো? 
–হ্যাঁ ম্যাডাম! প্রপ গুলো তো সব আছেই। আমি কালকেই সব পাঠিয়ে দেবো আপনার বাড়ী।
–না থাক অলর্ক ।
–কেন ? এই যে বললেন আপনার পছন্দ হয়েছে!
–স্বপ্নের জগত সব সময় মনেই থাকা ভালো; বাস্তবে সেই জগতে থাকলে প্রথমত ঘোর লেগে যায় আর দ্বিতীয় কথা – পরে আর তারা আবিষ্ট করে না।
–সে ঠিক কথা!
–অলর্ক, আজকের জন্য তোমার একটা স্পেশাল ট্রিট পাওনা। কবে খেতে চাও বলো।
–আমার আর কী ম্যাডাম! আপনি যবে বলবেন তবেই ফ্রি। আমি একা থাকি– কোনো বিধি-নিষেধ নেই– একেবারে বনের পাখি।
–বেশ তো! চলো আজই যাই।
–পৌলমী?
–আয়াকে ফোন করে দিচ্ছি। ও দেখে নেবে। 
    খানিকক্ষণ পরে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে এল। এখানকার অ্যাম্বিয়েন্সটা খুব ভালো। অনেকটা জঙ্গল সাফারির মত। অলর্ক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সব কাজের মাপজোখ। তার তো এসব নেই কাজ! কবে কোন কাজে লেগে যায় ঠিক নেই। মৈরেয়ী বলল, ‘নাও এবার এসে বস এখানে।’ 
  স্টার্টার খেতে খেতে অলর্ক বলল, ‘ম্যাডাম আপনার নামের মানে কি ?’
–মানে নেই কিছু। 
–যাঃ। আপনার বাবার আমলে ‘প্রপার নাউন’ বলে যা কিছু নাম রাখার চল ছিল না। কিছু নিশ্চয়ই মানে আছে। কিন্তু আমি গুগল করে মৈরেয় শব্দটা পেয়েছি, মৈরেয়ী পাইনি।
–মৈরেয় কথাটার অর্থ দেখেছো? 
–হ্যাঁ ।এক প্রকার মদের নাম।
–আমার বাবা নামটা রেখেছিলেন। ডিক্সনারিতে দেখেছি, এটা পুলিঙ্গ শব্দ। বাবা বোধ হয় ‘ঈ’ যোগ করেই এটাকে স্ত্রী রুপ দিয়েছিলেন – কিছুটা চাপিয়ে দেওয়া।
–আপনার নামকরণ সার্থক।
–কী করে?
–আপনার সৌন্দর্য বা ব্যবহারে একপ্রকার মাদকতা আছে।
–সেটা বুঝি আমি চাপিয়ে দিই?
–উল্টো ভাবে ভাবুন। আপনি সবার কাছে অধরা বা বলতে পারেন আপনার পার্সোনালিটির জন্য সবাই আপনার কাছে যেতে ভয় পায়। কিন্তু এর মধ্যে এমন একটা বাধ্যতামূলক অবসেশন আছে যে সে অন্যকে প্রভাবিত করবেই।
   মৈরেয়ী এসব কথা বিশেষ পাত্তা দেয় না, কিন্তু আজকে মনটা কেন জানে না বেশ নরম এবং মদীভূত হয়ে আছে। সে বলল, ‘কী খাবে বলো।’
–আমি সব খাই ম্যাডাম! আপনি যেটা ঠিক করবেন তাই সই। 
–আরে বলোই না! আজ তোমার অনারে তোমার ইচ্ছেমতো হবে।
–মৈরেয় মদ কি পাওয়া যায় ম্যাডাম? বা তার মতয় কিছু? যদি ইচ্ছা বলেন, আমি সেই সুরা পান করতে চাই। 
  মৈরেয়ী কঠোর হতে চাইল। হতে পারল না। ওর মনে হল, প্রসঙ্গ যখন উঠেছে এর শুরুতেই বিনাশ ভালো। অলর্ক ভালো ছেলে, কাজ বোঝে, ওকে ছাড়া স্টেজ ম্যানেজ করা কঠিন – কিন্তু ও যদি সবসময় এরকম মুগ্ধতা নিয়ে থাকে, বেশী দিন টানা মুশকিল হবে। ও কিছুটা অভিব্যক্তিহীন ভাব মুখে নিয়ে বলল, ‘তুমি কি ড্যুয়াল মিনিং করছ কথাটার?’
–আমি কি আপনার জন্য খুব খারাপ?
–তুমি আমার থেকে অন্তত পাঁচ বছরের ছোট। 
–পাঁচ নয় ম্যাডাম,  তিন বছর  নয় মাস।
–সেটাই বা কম কি?
–ওটা আজকাল কোনও ম্যাটার করে না। 
–পৌলমী আছে, ও কী ভাববে।
–ও আপনার অ্যাডপ্টেড চাইন্ড – এটা সবাই জানে। আজ না হোক কাল সেও জানবে। আর তাছাড়া আমি ওকে বাদ দিয়ে তো কিছু চাইছি না!
–দেখো অলর্ক, আমি তোমাকে বাদ দিয়ে আমার নাচের স্কুল ভাবতে পারি না – ঠিক কথা। কিন্তু তুমি এভাবে চললে আমার পথ আলাদা করে নিতে হবে।
– সমস্যাটা কী ম্যাডাম? আমি তো রোজগার কম করিনা। পুজোর সময় আমি যে কটা প্যান্ডেলের কাজ নিই– তার টাকা ঠিকমতো গুছিয়ে রাখলে আমার কয়েক পুরুষ চলে যাবে। আমি মদ  সিগারেট খাই না। সর্বোপরি আপনি আমাকে অপছন্দ করেন, এমনও মনে হয় না।
–কাউকে পছন্দ করলেই কি হৃদয় দিতে হয় অলর্ক?
–তা নয়। তবে এভাবে আপনিই বা একা একা জীবন কাটাবেন কেন ম্যাডাম? আমি যতদূর খবর রাখি, আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ডের নামও তো শুনিনি কখনও। আপনার চৌত্রিশ বছর বয়স হল, এবার তো থিতু হওয়ার কথা ভাবুন!
–সে হবে না অলর্ক। আমি এই বেশ আছি।
–আপনি কি মনে মনে কাউকে ভালোবাসেন?
  মৈরেয়ী চুপ করে রইল। অলর্ক বলল, ‘বেশ আমি আর কোনওদিন আপনাকে এই নিয়ে বিব্রত করব না, আপনি শুধু এই একটা দিন আপনার মনের কথা শেয়ার করুন। ধরে নিন এটাই আমার ইচ্ছা আর আপনি আজকে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।’
   এক একটা দিন আসে, যেদিন নিজের ওপর কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে অন্য অনেকের মতো নিজের কথা শেয়ার করতে। সেই রবি ঠাকুর বলেছেন না, 'ওলো সই, ওলো সই! ইচ্ছে করে তোদের মত মনের কথা কই'। অলর্ক ছেলেটি বিশ্বাসী – সর্বোপরি আজ কেন জানে না মৈরেয়ী, তার সব কথা ওকে বলতে ইচ্ছা করছে। তবু খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল, ‘তোমার খাবার ইচ্ছে পূরণ করার কথা বলেছিলাম অলর্ক, অন্য কিছু নয়।’
–এটাই তো আমার গত দুবছরের ক্ষুধা ম্যাডাম! দেহের নয় মনের। আমি একটু হলেও আপনার মনের একটা কোণে ছুঁতে চাই। জায়গা না দেন ক্ষতি নেই, স্পর্শ করতে পারবো, আপনি চাইলে কিছুটা শীতল করতে পারব– এটা ভাবলেই ভালো লাগে আমার।
–বেশ, কী জানতে চাইছ?
–আপনি অধিকাংশ সময়ে খুব রিজার্ভড থাকেন। তবু কেন জানি না আমার মনে হয় আপনি আমাকে বেশ পছন্দ করেন। ভাবতে ভালো লাগে সেটা আপনার প্রশ্রয়, একটু গভীরভাবে বললে 'ভালোবাসা'। কিন্তু সচেতন মন বলে সেটা ঠিক নয়। আপনি কি একটু হলেও আমাকে ভালোবাসেন না?
–ভালোবাসবো না কেন? তবে আমি তোমাকে স্নেহ করি। অনেকটা ছোট ভাইয়ের মতো, বয়সে ছোট বন্ধুর মতো। এর বেশি ভেবোনা।
–আপনি কি আদৌ কাউকে ভালোবাসেন ম্যাডাম? 
  চুপ করে রইল মৈরেয়ী। ওয়েটার এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে খাবারটার অর্ডার করা দরকার। অলর্কের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার কোন ফ্যাসিনেশন আছে?’
–না ।
–রাইস খাবে, নাকি নান টান?
–সামনে যা পড়বে তাই, আমার সব চলে। 
  ওয়েটারকে দু-তিনটে আইটেমের অর্ডার করে বসে বসে নিজের নখ দেখতে লাগলো মৈরেয়ী। অলর্ক বলল, 
‘কী ম্যাডাম; কিছু বললেন না তো!’
–কি জানতে চাও? কাউকে ভালবাসে কিনা? 
–হ্যাঁ। 
–বাসি। একজনকে বাসি।
–কে সে? 
–রামানুজ। রামানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়।
– কে তিনি? কোথায় থাকেন?
–আমার মেয়ের স্কুলের টিচার
–ওঃ। কী লাক লোকটার মাইরি! এই দু-তিন বছরে কয়েকবার পেরেন্টস টিচার মিটিং করে আপনাকে পটিয়ে ফেলল?
  অলর্কের বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলল মৈরেয়ী। বলল 'তা নয়। অনেকদিন আগের সম্পর্ক।'
–বেশতো তাকেই বিয়ে করে নিন। ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন?
–তুমি হঠাৎ বিয়ে পাগলা হয়ে গেলে কেন অলর্ক? বিয়ে ছাড়া কি সম্পর্ক হয় না?
–সম্পর্ক হয় ম্যাডাম, কিন্তু টেকে না। এর জন্য আমাদের হিন্দুদের বিয়ের কনসেপ্টটা আমার বেশ ভালো লাগে। বিয়ে মানে এমন একটা মন্ত্রপূত বাঁধন পড়ে গেল যে সেই বাঁধন হয়ে যায় দায়িত্ব। সে আপনি খেলাচ্ছলে বাল্যকালে বিবাহ করুন মিছিমিছি পুতুল খেলার মতো বা বড় হয়ে নিয়ম মেনে। গন্ধর্ব মতে বিয়ে করুন বা মনে মনে... বিয়েটা করতেই হবে।
–বেশ! তুমি তাই করো। আমি কোন প্রকার বিবাহেই আগ্রহী নই।
–কিন্তু একটা খটকা ম্যাডাম। আপনি আমার সুতো কাটার জন্য মিছিমিছি ওই টীচারের গল্প বানাচ্ছেন না তো?
–না রে বাবা! সত্যি!
–কিন্তু এত বড় কথা, আমার র‍্যাডারে কিছু ধরা পড়লো না কেন? আপনাকে বিগত এক বছরে কারোর সাথে দেখা করতে বা ঘুরে বেড়াতে তো দেখিনি। আপনারা কি ফোনে ফোনে প্রেম সারেন আর পেরেন্টস মিটিংয়ে চোখের দেখা সারেন?
–ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই প্রায় বারো বছর। আমি জাস্ট কিছুদিন আগে মেয়ের স্কুলে গিয়ে ওকে দেখলাম।
–এক দশক কোনও মানুষ হারিয়ে গেলে – তার শ্রাদ্ধ পালন করে বাড়ীর লোক ভুলে যায় – আর আপনি তাকে বয়ে বেড়াচ্ছেন এত দিন?
–কী আর করা যাবে! মনের উপর তো মানুষের নাগাল নেই!
–তা উনিও কি আপনাকে এখনও ভালোবাসেন?
–তা জানিনা। আমার কোন খবরই তার কাছে ছিল না। বুঝতে পেরেছি ইনফ্যাক্ট আমাকে দেখেই সেদিন সে খবর নেওয়ার কথা ভাবলো।
–অবশ্য তার মানে এই নয় যে তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না ।
–তা ঠিক।
–উনি কি বিয়ে করেছেন?
–না বলেই তো জানি।
–ওনার বান্ধবী আছে? 
–সেরকম কোনও খবর নেই আমার কাছে । সম্ভবত না।
– তা হলে আর কী! বিয়েটা করে ফেলুন। রাস্তা যখন পরিষ্কার, ফালতু সময় নষ্ট করার দরকার নেই।
–আবার বিয়ে বিয়ে করছ?
–আপনি বা এর বিরোধী কেন?
–অনাবশ্যক দায়, হেডেক! কত রকম ঝক্কি ঝামেলা জানো?
–তাই যদি হতো ম্যাডাম, আপনি কি বাচ্চা অ্যাডপ্ট করতেন? আজকাল একটা বাচ্চা সিঙ্গেল মাদারের পক্ষে হ্যান্ডেল করা কি কম ঝক্কির?
  মৈরেয়ী চুপ করে রইল। অলর্ক বললো, ‘স্যরি, এটা যদি এসব্যারাসিং কোয়েশ্চেন হয়ে থাকে আমি ক্ষমা চাইছি। আপনি চাইলে এর জবাব নাও দিতে পারেন।’
  মৈরেয়ী কিছুটা স্বগতোক্তির ঢঙে বলল, ‘পৌলোমীর বিষয়টা খানিকটা প্রায়শ্চিত্ত বুঝলে?’
  অলর্ক চুপ করে রইল। খানিকক্ষণ উদাস চেয়ে কিছুটা নিজের মনে বলে চলল মৈরেয়ী – ‘তখন আমি মাস্টার্স করছি। রামানুজ আমাদের সিনিয়র ছিল। আমাদের বাড়ী আসতো মাঝে মাঝে, আমাকে পড়া দেখিয়ে দিত। মনের আদান প্রদান বাড়লো, ভাব গভীরতা বাড়লো। একদিন ছিল দোল পূর্ণিমা। রাতে আমাদের বাড়ির ছাতে বসে চাঁদ দেখছিলাম। তুমি তো জানো আমার মা মারা গেছিলেন আগেই।বাবার অনেক ব্যস্ততা ছিল। ফাঁকা ঘর, নিজেকে হারিয়ে  ফেলেছিলাম। ও সেদিন একটা বড় লাল টিপ আমার কপালে পরিয়ে বলেছিল ‘তোকে বিয়ে করে ফেললাম বুঝলি’ ... রিস্ক নিতে পারিনি ... অ্যাবরশন করিয়ে নিলাম সবাইকে লুকিয়ে – রামানুজ জানতেও পারেনি আমি কনসিভ করে ফেলেছিলাম।’
–ওকে আপনার জানানো উচিত ছিল।
–তা হয়তো ছিল, কিন্তু তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। কেমন পাপ বোধ কাজ করতো।
–রামানুজদার সাথে ছাড়াছাড়ি কী ভাবে হল?
  অ্যাকচুয়ালি ওকে আমি পরেরদিনই বলে দিয়েছিলাম ও যেন আর আমার সাথে যোগাযোগ না করে। ও অনেকবার চেষ্টা করেছিল নানান বন্ধুদের থ্রু দিয়ে– আমি খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি প্রতিবার।
–এমনটা কেন করলেন?
–ওই যে বললাম পাপ বোধ। জানো তো লজ্জা একবারেই ভাঙে। এরপর ছুতোনাতায় এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারতো– সেটা আমি একদমই চাইনি।
–এরপর রামানুজদা কী করল?
–ও এর পরই ব্যাঙ্গালোর চলে যায় চাকরী নিয়ে। বছর খানেক আগে কলকাতায় ফিরেছিল শুনেছিলাম, কিন্তু মেয়ের স্কুলে জয়েন করেছে কিছুদিন আগে– সেটা জানতাম না।
–মেয়েকে অ্যাডপ্ট করলেন কেন?
–ওই যে বললাম, পাপস্খালন! নিজের সুখের জন্য একটা প্রাণ আমি এনেও নষ্ট করেছি। তুমি বলতে পারো পৌলোমীকে অ্যাডাপ্ট করা– আমার সেই অপরাধের বোঝা হালকা করারই একটা চেষ্টা।
–যাই বলুন ম্যাডাম, আমি আপনার অনুগত হয়েও কিন্তু আপনার পক্ষ নিতে পারছি না। আপনি কোথাও রামানুজদার সাথে অন্যায় করেছেন!
–কিন্তু সে তো ওর ভালোর জন্যই।
–এতে ওর ভালো কী দেখলেন? ও সারা জীবন বিয়ে করল না, হয়তো সারা জীবন মেয়েদের প্রতি একটা ভুল ধারণা নিয়েই কাটাবে – সেটা কি ওর প্রাপ্য ছিল?
–ভুল ঠিক ধারণাটা মানুষের নিজস্ব শিক্ষা, অলর্ক। আমি জানি আমার সাথে ওর সম্পর্কটা দাঁড়াতো না। এই পাপবোধের ছায়াটা আমাদের মাঝখানে এসে দাঁড়াতো। আমি ওকে সুখী করতে পারতাম না। এটা কি তার জন্য আমারও আত্মত্যাগ নয়?
     অলর্ক খানিকক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল 'আপনার কথা বা ভাবনা আমি যে একেবারেই বুঝিনি, তা নয় ম্যাডাম! কিন্তু কোথাও এই ভাবনায় বোধহয় একটা ফাঁকি আছে। আপনি বিনা দোষে ওঁকে যে কষ্ট দিচ্ছেন তাতেও একটা পাপ হচ্ছে।’ 
  সময় খুব শক্তিশালী অলর্ক। দীর্ঘ বারো বছর রাগ অভিমান করতে করতে তার আজ নিশ্চয়ই আর নতুন করে রাগ হয় না – এগুলোও এক ধরনের অভ্যাস। এই এবার আমার সাথে দেখা হল, কিছু বাক্য বিনিময়ও হল – আবার একবার মনের ঢেউ উঠবে নিশ্চিত। কিন্তু আগের মত হবে না। সর্বোপরি সে আমাকে বিবাহিতা ভেবে নিয়েছে – পরে ভালো করে খোঁজখবর যদি নেয়ও, সে ধারণা বিশেষ বদলাবে না। আমাদের কমন ফ্রেন্ডের সাথে ওর যোগাযোগও নেই।
–এ দুনিয়ায় সেটা এমন কিছু কঠিন নয় ম্যাডাম। সে জানতে চাইলে সবই জানতে পারবে। তার চেয়ে আপনি যদি অনুমতি দিন আমি গিয়ে দেখা করি।
–না অলর্ক। সে যা জানে জানুক, আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাবো না।
–তাহলে ভালোবাসেন কেন ওকে?
–ওটাও একপ্রকার অভ্যাস। যে অন্যায় ওর সাথে করেছি, মনে মনে ভালোবেসে তাতে প্রলেপ লাগাই ...
–আপনাকে আমি বুঝিনা ম্যাডাম !
–আর বুঝে কাজ নেই। খাবার নিয়ে আসছে, মন দিয়ে খাও। রবীন্দ্রসদনে দ্যাখো এই প্রজেক্টটা যেন এরকমই মানুষের ভালবাসা পায়। আজকাল আমার এইসব কল্পজগতের কুশীলব হয়েই বাঁচতে ভালো লাগে অলর্ক। তুমি বরং সেই সব মায়াজগৎ বুনে দিও ভালো করে। আমি ভেবে রেখেছি আমাদের পরের প্রজেক্টটা করবো বাপ্পাদিত্যের উপর। খুব ভালো খাবে লোকজন।
–বাপাদিত্য কে?
–এই যে কদিন আগেই বললাম? 
–ভুলে গেছি।
–ঠিক আছে এখন খাও, পরে একটা বই গিফট করবো তোমায়। পড়ে নিও তখন।

Post a Comment

0 Comments