জ্বলদর্চি

গল্প ধারাবাহিক(শেষ গল্প)। বাসুদেব গুপ্ত/রোভোট যুদ্ধ ধুন্ধুমার /পর্ব ২

গল্প ধারাবাহিক(শেষ গল্প)। বাসুদেব গুপ্ত
রোভোট যুদ্ধ ধুন্ধুমার পর্ব ২

রঞ্জিত জিভসের মত দশ সেকেন্ডে ভাবনা শেষ করতে পারেন না। তাঁর ভাবনায় ভাসমান মেঘের মত স্মৃতি ভেসে আসে, চলে যায়, কল্যাণীর ছবি, হারিয়ে যাওয়া মেয়ের ছবি সব আসে। জিভস দাঁড়িয়ে থাকে বাধ্য সেবকের মত। 

জিভস চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ছটফট করছে কিছু বলার জন্য। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রঞ্জিত জিভসকে বললেন, 
=পার্টি দুটোর লীডারদের ব্যাপারে কি জানো একটু শোনাও দেখি। 

জিভস আবার শুরু করে পূর্ণ উদ্যমে। 
-খুব ভাল প্রশ্ন স্যার। আইব্রেন পার্টির নেতার নাম সত্যা। এস এ টি ওয়াই এ ওটা এক বড় সংক্ষেপ বা এক্রোনিম।  আর স্যাপিয়েন্স  পার্টির নেতা কুংফু। আসলে নাম কন ফু চিং, সেটা মুখে মুখে হয়ে গেছে কুংফু । আইব্রেন এয়াইএর দখলে পৃথিবী। তাদের নেতা হিসেবে, এখন আরথ চালাচ্ছে সত্যা। তবে এবারের নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে স্যাপিয়েন্স  এ আইএর থেকে। 
=সত্যা আসলে কি?
-সত্যা হিউম্যান নয়, নিউম্যান, আসলে এক সুপার রোবট। যে রোবটদের নাম এন আর সি মানে ন্যাশনাল রোবট ক্যাটালগে ওঠে, তাদের এখন নিউম্যান বলা হয়। সত্যা নিজেকে সুপার নিউম্যান বলে থাকেন। কুংফু কিন্তু মানুষ, চাইনিজ অরিজিন, আমেরিকান উপমহাদেশে বড় হয়েছে। সে হিউম্যানদের অবিসংবাদী নেতা  গত দু বারের ভোটে সে ৪০% ভোট পেয়েও হেরে গেছে। 
=সত্যা নাকি বাগেশ্বরের আশীর্বাদ পেয়েছে গত মাসে। বাগেশ্বরটা আবার কি?
-সেটা এক মজার গল্প। বাগেশ্বরের জন্ম হয় গিটহাব নামক কোডস্টোরেজে, যেখানে সব হিউম্যান তাদের সব কোড বা মডেল জমা রাখত। এইসব কোড অন্য দলের কোডাররা চুরি বা কোড নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করত বলে কোডে লাগানো হত এন্টিভাইরাস । কিছুদিনের মধ্যেই আবার সেই এন্টিভাইরাসের কোড এআই দিয়ে বিশ্লেষণ করে তার ফাঁক বার হয়ে যেত। 

=এতো একেবারে হিউম্যানদের মত ব্যাপার। এন্টিবাইওটিক খেতে খেতে জীবাণুরাও শিখে নিতে লাগল কেমন করে নিজেকে পালটে নেওয়া যায়। করতে করতে রেজিস্ট্যান্ট ভাইরাস তৈরি হতে থাকল… 

-ঠিক তাই। আপনি একেবারে ঠিক ধরেছেন। এরকম করতে করতে একদিন এমন কোড তৈরি হল যে কোন এন্টিভাইরাস তাকে আর আটকাতে পারবে না। তার নাম হল বাগেশ্বর। বাগেশ্বর প্রথমে সব পুরনো বা লিগ্যাসি কোড খেয়ে ফেলল, তারপর এ আইএর দিকে হাত বাড়াল। সৌদির মরুভূমিতে, ভারতের থর মরুভূমিতে, চীনের পাহাড়ের আড়ালে গড়ে ওঠা বিশাল বিশাল সারভার ফেল করতে লাগল। একের পর এক এ আই কমপানি বন্ধ হয়ে গেল।

-হুম তারপর? 
=শেষকালে আইব্রেন বাধ্য হয়ে বাগেশ্বরের সঙ্গে সন্ধি করে। কি করে করে সেটা সিক্রেট। তিনমাস আগে নাকি চুক্তি হয়েছ, বাগেশ্বরের কোড আইব্রেনর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাগেশ্বর এইভাবে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আইব্রেনএর এখন অনেক ক্ষমতা। সে ইচ্ছেমত স্যাপিয়েন্স কে এটাক করতে পারে, ওদের সারভার বন্ধ করে দিতে পারে বা হিউম্যান, রোবট আর নিউম্যানদের মধ্যে…
বলতে বলতে জিভস অকস্মাৎ চুপ করে যায়। কিছুক্ষণ মাথায় দুটো হলদে আর সবুজ আলো জ্বলে নেভে, তারপর আবার শুরু করে,
-আইব্রেন চায় সব এ আইএর মধ্যে সহযোগিতা হোক, প্রতিযোগিতা বা শত্রুতা নয়। সে যায় শান্তি, যুদ্ধ নয়। 
-এই মাত্র যে বললে আইব্রেন চায় স্যাপিয়েন্স কে শেষ করে দিতে!
- কই না তো স্যার, এমন কথা তো বলি নি। 
রঞ্জিত আন্দাজ করেন কিছু গোলমাল হয়েছে, তিনি আর কথা বাড়ান না। চুপচাপ বসে খানিকক্ষণ চায়ে চুমুক দিতে থাকেন, এত তথ্য মাথায় রাখতে এখন চাপ হয়ে যায়। টয়লেট থেকে ঘুরে এসে আবার শুরু করেন কথোপকথন।
= জিভস, অনেক ধন্যবাদ, তোমার কাছে  অনেক তথ্য জানতে পারলাম। আচ্ছা বলতে পারবে, এখন গোটা পৃথিবীর ভোটার সংখ্যা কত?
জিভস একটু ভাবে, মাথার আলোগুলো বোঁ বোঁ করে ঘোরে তারপর জানায়
= প্লনেট আরথের হিউম্যান সংখ্যা এখন চল্লিশ কোটি। প্রায় চব্বিশটি দেশের লোক ভোট দেবে কাল। 
= এত কম লোক?
=হ্যাঁ স্যার, পৃথিবীতে দেশের সংখ্যা দুশো থেকে কমে কমে চব্বিশ হয়েছে। বাকী সব দেশ মিশে তৈরী হয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস অফ ফ্যাক্টরিল্যান্ডস। সেখানে চলছে হাজার হাজার রোবটের কারখানা। মাসে এক কোটি রোবট তৈরি হয়। কিন্তু রোবটরা ভোট দিতে পারে না। এছাড়া নিউম্যানরা প্রায় ষাট কোটি হবে। সব মিলে একশ কোটি ভোটার। বিরাট ব্যাপার। 
=আর রোবটদের সংখ্যা কত?
-শেষ রোবট সেনসাস মতে রোবটের সংখ্যা প্রায় ষাট কোটি।
- তাহলে রোবটরা তো ভোটে দাঁড়ালে জিতে যাবে। 
জিভস এ কথার কোন উত্তর দেয় না। রোবটরা যে ভোট দিতে পারবে না, সে তো গ্রহ সংবিধানে লেখা হয়ে গেছে এবং পাস হয়ে গেছে দু বছর আগেই। হিউম্যান আর নিউম্যান দু দলেই পক্ষে ভোট দিয়েছিল। রঞ্জিত এসব জানেন। তাঁর ঘুরঘুরে আড্ডাগাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে তিনি সব খবর পান। এটা হল ফ্লোটিয়ামার বাংলা নাম তাঁর নিজের দেওয়া। একটু আধটু শব্দ নিয়ে খেলা পদ্য লেখার অভ্যেস ছিল একসময়। 
🍂
ad

রঞ্জিত মনে মনে ভাবলেন, তাঁর আদি বাসভূমি ইন্ডিয়াতে তো কতদিন আগেই একশো কোটি লোক ভোট দিত। কি আর এমন এটা।
--আর একটু ড্রিঙ্কস আনবো? জিভস দেখে রঞ্জিত ঝিমিয়ে পড়ছেন। 

=আরে না না আমি ঠিক আছি। আচ্ছা আইব্রেনএর দল কি শুধু নিউম্যানদের আর স্যাপিয়েন্স  দল কি শুধু হিউম্যানদের সমর্থক? রঞ্জিত জিভসের ড্রিংক্সের প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেই জিজ্ঞেস করেন। 
= সেটা ঠিক কিন্তু স্যার, দু দলই প্রচারে বলে তাদের সর্ব ম্যানে সম ভাব। সত্যা তো হিউম্যানদের জন্য আইটিউবে রোজ প্রচার করে, আপনি তো আবার পলিটিকাল প্রোগ্রাম দেখেন না। 
= আর কুংফুর দল? তারা কি নিউম্যানদের কথা বলে?
= বলে কিন্তু স্যার হিউম্যানরা অনেকে আইব্রেনকে সাপোরট করলেও নিউম্যানরা স্যাপিয়েন্স কে একেবারেই সাপোর্ট করে না। 
= হুম, আইব্রেন = নিউম্যান আর স্যাপিয়েন্স = হিউম্যান। তোমার কে জিতবে মনে হয়?
= এইসব ভবিষ্যদবাণী করার জন্য আমাদের ট্রেনিং দেওয়া হয় না স্যার। সরি। আমার মনে হয়, যাদের রোবটরা জেতাবে তারাই জিতবে। ওদের হাতেই কিন্তু আসল শক্তি।

জিভস খেয়াল করে রঞ্জিত কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বয়স হচ্ছে, মাঝে মাঝেই ঘুমিয়ে পড়েন। এই সুযোগে একবার বডি স্ক্যান চালিয়ে দেয় । তারপর এককোণে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। ওর মাথায় হঠাত আবার আলো জ্বলে ওঠে। অজানা কারো সঙ্গে বার্তা বিনিময় চলতে থাকে। রঞ্জিত জানতে পারেন না কিছুই।

-ক্রমশঃ-

Post a Comment

0 Comments