হারানোর পথে মঙ্গলকাব্য ও পদাবলী কীর্তন
সুব্রত মাইতি
রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্যে সহজ সরল ভাষায় নিবেদন করেছেন-" আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে "। শ্রীমঙ্গল কাব্য ও পদাবলী কীর্তন পরিবেশনে আমরা দেখেছি শুভ্র বসনে নির্মল ভাবে পালা গান পরিবেশন হত এটাই ছিল মাঙ্গলিক রীতি।খোল করতাল হারমোনিয়াম বাঁশি ছাড়া বেহালা এই ছিল সঙ্গতের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র সমূহ। পরিবেশনায় ভক্তি আর মাঙ্গলিক আচার ছিল মূল বিষয়। সামনে বসে থাকা ভক্তিমতি মায়েরা অন্তর থেকে শুনত এমন কী চোখের জলও ফেলতেন। একাগ্র চিত্তে সহজ সরল মন নিয়ে এই ভক্তির রসাস্বাদন ঘটত।সে এক সুকৃতি যোগ ছিল।
সময় বদলেছে ধীরে ধীরে এই মাঙ্গলিক আয়োজন ভক্ত ভক্তি সব কেমন যেন আধুনিক মানসিকতার বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে খেতে জটিল ধাঁধায় আটকে গেছে। রঙিন আলো রঙিন পোশাক পাশে মুখে রঙকরা কিছু নারীর নৃত্য এসবই মুখ্য।পদাবলী বা মঙ্গলকাব্যের পদকারের কথা বিষয় গান গানের সুর সব বদলে দিয়েছে আধুনিক কীর্তনকারেরা।বদল ঘটেছে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ঝাঁ চকচক আলো রঙিন পোশাক সঙ্গে চটুল নৃত্য। পদকারের বিষয় ভাবনার ধারেপাশে কেউ নেই পরিবেশন ও সেরকম কাঁচা কথার সরস সম্ভার।
পদকর্তা বেঁচে থাকলে আত্মহত্যা করতেন নিশ্চিত। পদকর্তাগণের কাব্যের দশভাগও ব্যবহার হয়না গানের ও ছিটেফোঁটা অংশ রেখে, ব্যবহার করছে সিনেমার গান আধুনিক গান বাজার চলতি চটুল গানও।সঙ্গে কোমর দুলিয়ে অশ্রীল নাচ।অদ্ভুত ব্যাপার এই পরিবেশনা ও সবাই হাঁ করে উপভোগ করছেন।
এমন এক সময়ে এসে উপস্থিত সবকিছুই লোকদেখানো। হয়তো দেব দেবী লজ্জায় ঘৃণায় সন্তপর্ণে কেটে পড়েছেন।ভক্তি আর ভক্তের যে ধারা বইছে তা আর সহ্য করতে পারছে না দেব দেবী। সেই সঙ্গে এই যে অশালীন পরিবেশনা তাতে মঙ্গলকাব্য ও পদাবলী কীর্তনের ধারাকে অমঙ্গল সূচী ধ্বনিত করে। দেব দেবীর বন্দনা মাহাত্ম্য লীলা নিয়ে এই ধরনের বেলাল্লাপনা বন্ধ হোক।তাছাড়া রাধা কৃষ্ণের লীলা কাহিনি কে নিয়ে যেভাবে নোংরা ইঙ্গিত করে পালা উপস্থাপন করা হয় ভাবতে ও লজ্জা লাগে। আসলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূষণ তার সাথে বোধ হয় এই মাঙ্গলিক দূষণ ও সমান্তরাল বহমান।জানি এর না পরিত্রাণ কোথায়?
1 Comments
ভালো হয়েছে
ReplyDelete