জ্বলদর্চি

কবিতার চেরিব্লসম ৯ /স্বস্তিকা ধর

কবিতার চেরিব্লসম ৯
স্বস্তিকা ধর 


মোনোলগের বৃষ্টি
১৩ ই জ্যৈষ্ঠ , ১৪৩২ 

চুপ করে থেকেও , এতো শুশ্রূষা দেওয়া যায় ?
তা, তোমাকে দেখে , আবারো অবাক দেখি - 

একঘেয়ে একটানা নিরলস দাঁড়িয়ে আছো। 
মোহময় বৃষ্টির মধ্যে পাতা টাতা  সব নিম্নমুখী করে, 
ঝুপ দাঁড়িয়ে আছো , তুমি! 

যে মেঘ নেমে এসেছে গ্রামের কোলের খুব কাছে 
তার অতিভার,
               লাবণ্যের,
                     গুমোরের,
                          অভিমানের-
পাতা ঝুপিয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে, স্বীকার করো তুমি। 

মেঘ কিছু বলেনা
মেঘ তো কথা বলেনা
কোনো শোর শারাবা করেনা 

যখনই আসে , তোমাকে জড়িয়ে থাকে , তিনদিন , নীরবে।  

পাখিরা খুব গসিপ চালায় ; আলোচনা , কূটকচালি 

-এই প্রেম কেন টিঁকবেনা 
-এই প্রেমে কত অভিশাপ 
-এই প্রেম কতটা  না - সামাজিক
-উফফ কি অসহ্য এই প্রেম 

এইসব মুখরতায় জঙ্গল মাতে
তিন দিন , তিন রাত্রি 

তোমরা স্থির থাকো যদিও ! 
তোমাদের নীরব জড়িয়ে থাকার ভেতর তিন দিন 'মনকেমন' পালন করে গোটা গ্রাম 

আমিও রোজ সকালে সূর্যের দেখা পাবার আকাঙ্খায় উঠি 
জানালায় একঝলকেই বুঝে যাই ; তোমরা আলিঙ্গনে আছো।  
আমার দিন শুরু করি দীর্ঘশ্বাস ফেলে 
শান্তির , প্রাপ্তির , সম্পূর্ণতার 

আগে খুব বিরক্ত হতাম , জানো? 
আমার হলো গিয়ে উদ্দাম  আফ্রিকান ড্রামবিটের তালে ঝকঝকে সূর্য দিনের কর্মমুখরত। 
এলিয়ে থাকা মাধবীলতার অলস নিশ্চিন্ততায়, জীবন, পথ চলেনি।  
তোমাদের এই তিন দিন তিন রাত্রি ব্যাপী দীর্ঘ আলিঙ্গন আমি বুঝিনি গো ! 

তিন দিন পরে 
মেঘ গলে যায় , জঙ্গলের আদরের ওমে 
সূর্য দর্শন হয় 
পাখিদের ব্যস্ততা - হাসি- খিদে বাড়ে 
আমি দেখি , তোমার পাতারা ঝলমল করছে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে 
মেঘও  হাসিমুখে 
জঙ্গলের ওপর দিয়ে যাবার সময় 
                                   একটু বেশি থমকে 
                                                        একটু বেশি হাসি হাসছে ! 

৭২ ঘন্টার এই প্রেমের আলিঙ্গনের পরে
 ৭২ দিনের জন্য আমার গ্রাম , কি ঝলমলে , কি ঝলমলে আর কর্মমুখর। 

তোমার ডালে ডালে ফুলে ফলে ভরে যায় 
পাখিরা আর আমরা মানুষেরা তোমার প্রেমের সেই ফসল ছিড়ে তোমাকে রিক্ত করি।  

তুমি তোমার পাতাদের নিয়ে আকাশের দিকেই চেয়ে থাকো 
যতদিন না নতুন আলিঙ্গনের বার্তা আসে মেঘের থেকে।

🍂
ad

Post a Comment

0 Comments