জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ গৌতম কুমার গুপ্ত

গুচ্ছ কবিতা
 
গৌতম কুমার গুপ্ত

অবিবাহ 

এই প্রখর বসন্ত গোধূলি অবিবাহ ডাকে 

কামক্ষরা লুব্ধ শিশিরবীর্য সোনা সোনা মুখ
সূতোয় জড়িয়ে সাবালিকা শারীরিক লজ্জা
এ তো গোপন নয় সত্যপ্রসূত কামসূত্রগুলি
রূপোলী মোড়কে রাখে তার ধনী অজ্ঞাতবাস।

মালাটি দ্যাখো দোলে গৌরী মাধবী তনয়ার
পৌরুষে জুলফির মাস্তানি খেলে
জাঙ্ক জুয়েলারী রভসে ডাকে প্রেম 
জুটে যায় খ্যাতনামা পদবাচ্য পাদদেশ অবধি
কাগুজে শিক্ষানবিশী প্রণয় প্রতিভাসে।

তাকে শঙ্কিত রাখে নষ্ট প্রহরে
পেটে রক্তমাংস ঘুণ
চান্দ্র জোয়ারে নৌকাটিও দুলে ওঠে যদি
  যৌবন চেখে ডুবে থাকা অবধি।


ক ক্ষ প থ

আমারো তো কোন অ-কক্ষপথ নেই, ঘুরে ঘুরে একশা,নিজস্ব বলয়েই সেটাই কক্ষপথ ধরি
রাঙা চাঁদ ধরে রাখি,প্রলয়ের শ্বাস
জলের বান্ধবজনিত কথা বলি।

মেরুতে তার স্বকীয় আভাস, উপজীব্য যা কিছু
কেউ নিয়েছে তাপ, দিয়েছি প্রয়োজনমতো
বলেছি এই দ্যাখো ভগ্নদশা রাস্তা, এখানেই হেঁটে আসো।

এই দ্যাখো স্বল্প জলবাহী নদী,
নিতে পারো জল যে টুক পিপাসা নিজে রাখি,তুমিও রাখো তাই এই দ্যাখো সিন্থেটিক আকাশ যে টুকু নীল, তবু অনন্ত গরিমায় চোখ রাখো।

এই দ্যাখো, কোথাও ফুটেছে অর্কিড,কোথাও ক্যালেনডুলা,টিউলিপ, নিতে পারো সুগন্ধী অর্জন, এখানে চিৎকার আছে, প্রচুর আর্তনাদও, প্রভূত কান্না  আছে,এ তুমি নেবে না জানি, ভয় পাবে দুঃসহ পলায়নপর্বে রেখে যাবে আমার অতীত স্মৃতি ও সত্তা অবশ্যই ভবিষ্যত নয়।

তবুও তো পরাক্রান্ত ছিলাম,আছি,থাকবো
এবং নিজস্ব নির্ণয়ে,মেরুপথে একাকী এককে।


🍂
ad

পদাবলী


মাঝে মাঝে লুকিয়ে ফেলি 
রক্তমাংসের ভেতর
গোপন করি নিজেকে
অন্তঃসারশূন্য একটা অবাকের ভেতর ঢুকে যাই। 

আমার পদার্পণ অঞ্চল জুড়ে থাকে
দু একটি হাসি কয়েক ফোঁটা কান্না নীরব অভিমান 
থাকে নিমিত্ত ক্রোধ ঈর্ষা দোষারোপ।

হিংসার র্দুগন্ধও খুঁজি 
প্রেমকথাও থাকে কখনো সখনো
ভালবাসতে দোসর খুঁজি অলিন্দে আয়নায়
ছবি আমাকে চিনে নেয়
সেই চোখমুখ চুলের পার্শ্বরেখা 
অনিশ্চিত প্রত্যয়ে দোলে অ-গ্রীক নাসা।

চারপাশের বিষাদ বাতাস নামিয়ে রেখে
এগিয়ে যাই স্বাভিমান দেহপাশে
স্বয়ম্ভূ হতে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে
আবির্ভাবের বলাকা দিন
তিরোভাবের অস্ত অবকাশ।

মাঝে মাঝে লুকিয়ে ফেলি নিজেকে
আদৌ কি লুকোই এই ত্বকের প্রাচীন পুরুষে
আসলে খুলে যায় দৃশ্য অদৃশ্যের আলোছায়া
অমার্জিত বন্ধনী জড়িয়ে থাকে তো
খাইদাই দুধ বিছানায় যাই
প্রতি পদার্পণে ফিরে আসে সত্যমিথ্যার প্রহেলিকা।


ক্রম

এই যে প্রতিদিনই ক্রম শিখছি এক দুই তিন
যোগ হতে হতে মেদ বাড়ছে ক্রমান্বয়ের
রেশনে, চিকিৎসায়,ব্যাঙ্কে, পোষ্ট অফিসে
নগরে বাজারে যখন যেখানে যাই
আজন্ম এক ক্রম হাজার চুরাশির মতো
জীবন্ত লাশ হয়ে আমিকে বয়ে বেড়াই
পথে বেরোলেই নামে নয় ক্রমাংকে পরিচয় হয়।

এই যে আবাসগৃহে ক্রমাংক ধরে ডেকেছিল কেউ
পায়ে পায়ে পদাতিকে প্রতিদিন ক্রম হই একে একে
চিমটি কেটে দেখি আমি আজ শুধু নামে নই
সংখ্যাবাচক বিশেষণে সহজেই বুঝে নেয় অবস্থান
এক একটি লোকের বিশেষ্যে দেখা হয় কখনো
জানি সংখ্যাতীত হতে হবে একদিন প্রকৃত প্রস্থানে
ক্রমাঙ্ক সম্পূর্ণ হলে গাছ ও পাখিরা নিভৃতে নীরব হবে।


অভিবাসন

লিখবো না বলে গুটিয়ে নিয়েছিলাম হাত
খাতার পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলেছিলাম
তারপর কেটে গেল ঊননব্বই হাজার সেকেন্ড
ঊনত্রিশ হাজার মিনিট এবং
ঊনসত্তর ঘন্টার উপনিবেশ।

অন্য বদ্বীপে ছিলাম
সেখানে চাঁদ সূর্য ছিল না গাছপালাও ছিল না
কবিতার সম্ভার কিছু ছিল না
শুধু নিজের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম
ভক্ষণ রক্ষণ উপভোগ বিনোদন। 

বারো আনা মাত্র জীবন চার আনা ছিল না
অনিদ্রা নির্ঘুম স্বপ্নহীন এক বেয়াড়া নির্বাপণ
খাক্ হয়ে পুড়ে গেছি কখন অন্তরে বাহিরে।

অগত্যা নেমে পড়লাম জলাশয়ের ঘোলা জলে
ছেঁকে নিলাম বর্ণের সুমহান তালিকা
মগজ খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে দিলাম কাগজের মাংস
ঝরণা কলমে তখন অবিমিশ্র ঝরণারক্তজল
আঁজলা পেতে নিলাম দু হাতে
তৃষ্ণার আর্তনিদানে ফিরে পেলাম কলমের রক্তকালি
খসখস করে লিখে ফেললাম আত্মরতির কয়েকটি নিরক্ষর।

Post a Comment

1 Comments

  1. কমলিকা ভট্টাচার্যJune 10, 2025

    খুব ভালো করলেন লিখে ফেললেন,তাই আমরা কিছু ভালো কবিতা পড়তে পারলাম।🙏

    ReplyDelete