কলেজে ভর্তি : শুধুই অনিশ্চয়তা?
সজল কুমার মাইতি
প্রায় মাসাধিক কাল হলো হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে। অন্যান্য বোর্ড – যেমন সিবিএসই, আই এস সি ও অন্য বোর্ডগুলির রেজাল্ট আরও আগে বেরিয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা আশা আশঙ্কায় রয়েছে নিজেদের পছন্দের কলেজে নিজেদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু সুরাহা আশা বিশ বাঁও জলে। ছাত্র অভিভাবক সবাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। প্রশ্ন অনেক। সদুত্তর দেওয়ার আপাত কেউ নেই।
প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হতে ই কেটে গেল মাসাধিক কাল। এই কাল বিলম্বের জন্য সরকারি সিদ্ধান্তের গড়িমসিকে দায়ী করা যেতে পারে। এই বিলম্ব দুরকমের সমস্যা তৈরি করেছে। এক- ওবিসি সংক্রান্ত সমস্যা আর সরকারি ও সরকার পোষিত কলেজ গুলির পক্ষে ভাল ছাত্রছাত্রী পাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়া। দেশের সুপ্রিম কোর্টের ও রাজ্যের হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষা করা একরকম ধৃষ্টতা। এই টালবাহানার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনীতি যতটা ছাত্রস্বার্থ ততোধিক কম। বলির পাঁঠা গোবেচারা ছাত্রছাত্রী। এক ভর্তি না হতে পারার টেনশন, অন্যদিকে ক্লাসের দিনের সুযোগ কমে যাওয়া।
ভাল ছাত্রছাত্রী যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি গেছে। তাদের ক্লাস ও সিলেবাস অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পেছিয়ে রইল দুর্ভাগা না ভর্তি হতে পারা ছাত্রছাত্রীরা। একে ভর্তির টেনশন দুয়ে ক্লাস দিন হারানো ও সিলেবাস না শেষের অবসম্ভাবি সম্ভাবনা। বলি এরাই। আর দুর্ভাগা সরকারি ও সরকার পোষিত কলেজগুলি বঞ্চিত হলো উৎকৃষ্ট ছাত্র ভর্তির সুযোগ থেকে। এরপর তো থাকবে সেই চিরন্তন সীট খালি থাকার সমস্যা। সেই অজুহাতে একের পর এক ভর্তির তারিখ বাড়ানো হতে থাকবে। সেই সুযোগে নতুন ছাত্র ছাত্রীতো আর পাওয়া যাবে না, কেবল শাসকদলের ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী জোড়াগের সুযোগসুবিধা বেড়ে যাবে।
আর এই সীট খালি থাকার আসল কারন তো অন্য। কেন না এই কলেজে কলেজে এই বর্ধিত সীটের যদি একটু অনুসন্ধান করা যায় তবে দেখা যাবে যে এই সীটগুলি আসল সীটের থেকে অনেক বেড়ে গেছে সরকারি এক অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে। ছাত্র চাপের অজুহাত দিয়ে বছর বছর টেন পার্শেন্ট সীট বাড়িয়ে যাওয়ার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত আর হয় না। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো চোখ বন্ধ করে আছে। আসলে এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাভজা প্রশাসকরা কর্তাকে তুষ্ট রাখতে চোখ তো বন্ধ রাখবে! কারণ, উপযুক্ত পাঠদানের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে কোনোমতে কম্প্রোমাইজ করা যায় না, উচিত ও নয়। অথচ, বছরের পর বছর সীট বেড়ে যায় কিন্তু পরিকাঠামো যা ছিল তার কোনো পরিবর্ধন হয় নি। এর ফল ভুগছে বেচারা ছাত্রছাত্রীরা। যাদের টাকা আছে তারা ভালো বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা লাভের যে সুযোগ পায়, দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এই গনক্লাসের পাল্লায় পড়ে। এর হাতে প্রমাণ, কলকাতার এক কলেজে যেখানে এক সেকশনে ছাত্র সংখ্যা কিছু বছর আগে ছিল ষাট, এখন বছর বছর বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে নিরানব্বই। ক্লাসে না আছে বসতে দেওয়ার জায়গা, না সঠিকভাবে পাঠদানের সুযোগ।
এইসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে চাই আন্তরিক ও সৎ চিন্তা ভাবনা। সরকারের তরফ থেকে তো বটেই, এমনকি ছাত্র ও অভিভাবক সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সুস্থভাবে না হলে, প্রতিবাদ প্রতিরোধের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করতে হবে সবার ভালর জন্য। ভবিষ্যতের সুনাগরিক পেতে হলে এইভাবে চোখ বন্ধ করে রাখলে চলবে না।
2 Comments
OBC সমস্যার আগেও কলেজগুলোতে স্নাতক স্তরে স্টুডেন্ট ধারাবাহিক ভাবে কমছিল।কলেজের সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত লেখা পড়তে চাই।
ReplyDeleteবিজ্ঞান বিষয়ে এই ক্রমাগত হ্রাসের কারণ জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষায় লাগামহীন র্যাংকিং। এরফলে ছাত্ররা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের তুলনায় কিছু স্বল্প মাইনের হলেও চাকরির সুযোগের আশায় ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং এ চলে যায়। যদিও এটা ও ঘটনা যে বহু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ও সীট খালি থাকছে। তার ওপর বহু বছর এসএস সি পরীক্ষা না হওয়া ও ছাত্রছাত্রীদের জেনারেল কোর্সে পড়ার উৎসাহ কমিয়ে দিয়েছে।
Delete