জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /অর্ণব সামন্ত

গুচ্ছ কবিতা 
                
অর্ণব সামন্ত 


 খনন 

খুঁড়ে চলি খুঁড়ে চলি আলো যদি পাই অন্ধকার 
কন্ট্রাস্ট না হলে ছবি , চলচ্ছবি নাকি ফোটেই না 
কতটা রসদ , অনুপ্রেরণা , আবেগ থাকলে তবেই 
কুঁড়ি কুসুম হয় , ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ছোটে মারিয়ানা খাতে 
বাইসন উদ্যত হয় আদিম গুহায় , সমুদ্রের ঢেউ ঢেউ 
মন্থনে মন্থনে অমৃত গরল মিশে একাকার একাত্মতায় 
নীলকন্ঠ হয়ে দ্রাঘিমা সমস্ত ধারণ করে , যদিও নীলকন্ঠ 
বিসর্জনের বাদ্যি শুনে ডিগবাজি খায় গোধূলির রেমব্রান্ট 
আগ্নেয়শিলাও আগুন হয়ে কাঁপায় চতুর্দিক অস্তিত্বের সংকটকালে 
বিদ্যুচ্চমকে বিদ্যুচ্চমকে ভেঙে যাওয়া আমিগুলো তুমিগুলো 
নির্জন ছাদ খোঁজে কিংবা অন্তরীণ স্বাধীনতা 
ঘুরে আসো মূলস্রোতে আর কতদিন ছিন্নভিন্ন দ্যাখাবে 
বেজে ওঠো তিলক কামোদ , ইনহিবিশনমুক্ত ঢেউদের গান 
                                                                     


🍂
ad

 মায়াবিনী , সাতজন্ম নাছোড় 

ভুলের জোছনা ফেলে আমি দেরাজে 
সাতজন্ম ছায়া ছায়া মায়া মায়া ঘোরাঘুরি 
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ায় বাহু চাঁদের নতুন জন্মে 
ব্ল্যাকহোল থেকে চাঁদের সমান্তরাল সুখের নয়নদ্যূতিতে 
উৎস থেকে পরিধি ফেরাও , স্রোতস্বিনী বইয়ে দিতে জনগণমনে 
আজীবন সুসময়ের আকাশে আটকে থাকো মুহূর্তগুলি 
পদ্মবুকে টলোটলো আনন্দাশ্রু যেভাবে কোল পায় দ্রাঘিমার 
তুলে রাখো দেরাজে সাতজন্ম , জাতিস্মরতা অনায়াস 
বুকের সৌরভে বকুল এসে থরথর পতনশীল দ্রাঘিমাংশে 
গ্রহণে রাখো বিসর্জনের বাদ্যি , সরগম , প্রাণের অদলবদল 
স্নায়ুতারে ঝঙ্কার তুলে বেহালা নিজেই বাদিকা 
ভুল হয়ে সত্যের অধিক বাঁচার মতন বাঁচায় জোগায় অক্সিজেন !



 পরিক্রমা 

তুমি জোছনাকে মলিন করে এসে বলো ,
আমাদের আছে স্নানঘাট , পুকুর , দুরন্ত অবগাহন 

শব্দগুলো অশ্রুগুলো ভিজে ভিজে পদ্মবুক হয় 
বৃন্তগুলো পাঁকমুক্ত হয়ে আকাশে উড়ান দিতে চায় 

পানকৌড়ি শেখায় ডুবসাঁতার , শিকারী শিকার হয় 
হরিণী সমস্ত জোছনা ঢেলে দ্যায় চিতাবাঘের বুকে 

তুমিও বাকল খুলে খুলে স্তরীভূত বয়সজনিত অভিমান খুলে রেখে 
আদি হয়ে বেরিয়ে আসো ইগোর মেরুদন্ডে লিবিডোর সমুদ্রে 

অরণ্যের মন থেকে মুছে ফ্যালো সভ্যতা , ক্রিয়াপদ 
রহস্য , আশ্লেষ , নাটক , ধারণার ষত্ববিধান ণত্ববিধান 
ব্যাকরণের বুক থেকে তুলে এনে নিজের বুকে বসাও 
সন্ধ্যায় সকালের ফুল ফুটিয়ে এককের সহজিয়া গান হয়ে ঝরে পড়ো 
তখন কি তোমার নয়নতারায় সাতজন্ম জার্নির ছায়া প্রতিবিম্বিত হয় 
সুদে আসলে পুষিয়ে তৃপ্তি আনো নয়নে ঠোঁটে 

কুয়াশার সেতু পেরিয়ে তুমি কখন জোছনা হয়ে যায় 
তুমি নিজেই জানো না , কখন তুমি এক অসমাপ্ত দীর্ঘ কবিতা ...!


 অতিক্রম , দ্রাঘিমারেখা চুপি চুপি 

দ্রাঘিমাও গলে যায় মোমের মতন 
সৌরভ এসে ঢাক্কা মারে ছলাৎছল শব্দে 
সুরভী ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে দুলে ওঠে নৌকার শরীর 

মাঝি অসহায় জানে তাকে ভেসে যেতেই হবে 
নদী ছেড়ে সাগরে ঢেউগুলির উন্মাদনা , উচ্ছ্বাস 
গানে গানে সহজিয়া বাঁশির ধুন 
তানপুরা শরীর হয়ে জাপটায় সমস্তকে জাপটায় 

এ চক্রব্যূহ থেকে মুক্তি পেতে চায় নির্বোধেরা 
কোষে রক্তে স্নায়ুতে সঞ্চারিত করে নব নব পৃথিবী অধ্যায় 

ব্ল্যাকহোলে আলোর চারাদের অঙ্কুরোদ্গম ও চাষবাস 
লালন পালন করে সমান্তরাল নেমে আসা অশ্রু 
পদ্ম হয়ে ফোটে পদপ্রান্তে , খেদ থেকে যায় নৈঃশব্দের শরীরে 
কামনা চোখের অপলকে ক্ষয়ের জয় 
জানি না কখন তুমি আলোর বেগের থেকে বেশি ছুটে 
নীল টিশার্ট , সবুজ স্কার্ট , লাল টাই পরে একান্ত ছাত্রীবেশে 
স্কুলের ঘন্টা শেষে সাত জন্মের কোর্স ও ডিসকোর্স শেষে 
তুলে দাও নিজেকে প্রলয়ের হাতে সৃজনপিয়াসী 
যদি অপত্য কোনোদিন বলে যায় সংযম ও অসংযমের কথা 
আর সেই কাহিনি দ্রাঘিমা পথ ধরে আন্তর্জাতিক , কিংবদন্তি হয় 
এখনও তোমার ঠোঁটে ঠোঁট , বুকে বুক আশ্লেষ জড়ানো 
মুক্তিঝর্ণায় দুরন্ত , প্রাণবন্ত !


       
বোহেমিয়ান   


সুন্দরের বাকল খুলতে খুলতে প্রথম আলো 
হরিণী শিকার করে চিতাবাঘ জ্যোৎস্না রাতে 
শঙ্খ বাজালে শঙ্খগুলো দেয় সুরেলা প্রত্যুত্তর 
ক্যাসুরিনা ভেসে যায় সুনামির উচ্ছ্বাসে 
মিল্কি ওয়ে নেমে আসে পদপ্রান্তে গ্রহণে গ্রহণে
হাওয়ার ফিসফিসানি যুগপৎ সৃজন ও ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে 
কোষের বারুদ জেগে ওঠে , স্নায়ু পুরুষ্টু টলটল 
নয়নপথগামী জীবন ও জগতের কোলাহল
তানপুরা তিলক কামোদের ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে সুখ অনুভব 
আরশিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখে তার অজন্তা ইলোরা 
প্রাগৈতিহাসিক ব্ল্যাকহোলে দাউ দাউ আগুন পোড়ায় জীবন 
আবিষ্কারে আবিষ্কারে বেলা যায় চেনার মধ্যে কত যে অচেনা 
সুন্দর বাকল খুলেছে , খুলতে পেরেছে কি মন ?
বোহেমিয়ান শব্দগুলো উচ্ছ্বাসে ছোটে ইনহিবিশন ফেলে রেখে 
শঙ্খেই যুদ্ধ শুরু , শঙ্খেই যুদ্ধ শেষ 
জয় সমান সমান পরাজয় 
কখনও পরাজয় গ্রেটার দ্যান জয় 
নক্ষত্র মরে গেলেও সুপারনোভা 
নীহারিকা রহস্য চেপে ঠোঁট ঠোঁটে দীর্ঘ ভেজা চুমু দেয় !
                                                                                                                               

Post a Comment

2 Comments