জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ : অসিতরঞ্জন ঘোষ

কবিতাগুচ্ছ : অসিতরঞ্জন ঘোষ


সুখপাখি


খাঁচায় ছিল ধরা, 'সুখ' নামের পাখি।
জীবনের প্রতি পলে, বুকে ধরে রাখি।।
হাসি আর গানে গানে কেটে যেত বেলা।
আদরের পাখি করে কত ছলাকলা।।

খাঁচাটি সোনার হলে, পাখি গেল উড়ে।
গান হাসি উবে গেল, শূন্য খাঁচা পড়ে!
রাত দিন এক করে, খুঁজে ফিরি তারে।
ঘুরে ফিরি তার খোঁজে, এধারে ওধারে।।

দিন যায় রাত আসে, খালি খাঁচাখানি।
উদাসী বাতাস যদি, ধরে দিত আনি।।
নীলাকাশে মেঘ ভাসে, আমি অসহায়।
রাতের আঁধার কাটে,তারার মালায়।।

দিবসে লাগে না ভাল, শুধু কাঁপে বুক।
পাখি, ওরে ফিরে আয়। বাড়াস না দুঃখ। 
স্বপ্নের দিন ছিল, পাখি ছিল পাশে।
খুশির জোয়ার ছিল, তাকে ভালবেসে।।

আনন্দে মগ্ন ছিলাম, তার গানে গানে।
বিরহে বিবশ আমি, তার-ই সন্ধানে।।
ফুলের গন্ধে ভরা সুখপাখি নিয়ে,
জীবন গিয়েছে কেটে, ক্ষীরনদী দিয়ে।।

নাইবা পেলাম তাকে, খাঁচায় আবার। 
স্মৃতির খাঁচায় পাখি আসে বারবার।।
সেই স্মৃতি সুখ দেয়, আদরেই রাখি।
খাঁচায় ছিল প্রিয়, "সুখ" নামী পাখি।


নীল ক্যানভাস

তরঙ্গিত সাগর জল, নিশ্চুপে করে খেলা।
গরান, সুন্দরী  বনে, আসা-যাওয়া সারাবেলা।

তুঁতে নীল, ফিকে নীল, নীল, কালো নীল জল।
মায়ার কাজল টানে, আবেশে নীর মহল।।

দিগন্তে নীলের খেলায় জল আকাশ একাকার।
ডানা মেলে ছবি আঁকে ক্যানভাসে ভাবনার।।

সাদা মেঘের আলপনা, ছায়া তার কাঁপে ধীর ।
নীল জল নীলিমায়, দোলা দেয় সুগভীর।।

অনিমেষে ছবি দেখি, ওড়না ওড়ায় পাখি।
স্বপ্ন ও বাস্তব যেন, পাশাপাশি দুই সখী।।

নীল জল অন্তরালে, মণি ও মাণিক্য ফলে।
রঙিন মাছ খেলে, কোরালের কোলে কোলে।।

আর সে বায়োস্কোপে, অজানার হাতছানি। 
অদেখা বিপুল জগৎ! সম্পদের মহারানী।।

ডুব দিয়ে নীল জলে, যেদিকে দৃষ্টি যায়,
চক্ষে রোমাঞ্চ জাগে, পুলকিত নীলিমায়।।

রঙিন ঝিনুক তায়, লাল সাদা কমলার। 
কোরালের প্লাবনে দেখি, শুধুই চমৎকার। ।

সাঁতারিয়ে মাছ হই, আমি এক ডুবুরি।
 বিস্ময় ও কৌতুহল ভরা, রঙিন স্বপ্নপুরী।।

সুমধুর সঙ্গীতের অজানা সুরটি বাজে।
চিত্তে পুলক জাগে, জল তরঙ্গ রাজে।।

নীলের ভুবনে ভরা জীবনের জয়গান,
ফ্রেমে ফ্রেমে কত ছবি, অনন্ত,  অফুরান।।

🍂



আঁধার পেরিয়ে

সেদিন যখন তলিয়ে যেতে যেতে,
উঠলে ভেসে কী এক স্পর্ধা নিয়ে!
তেমনি তোমার জীবন তরীখানি,
পৌঁছে যাবে অন্য পাড়ে গিয়ে।

আকাশ পাড়ে কালো জমাট মেঘ,
পাগল হাওয়া ছুটছে দিগ্বিদিক।
মাঝি হয়ে ভাবছো কেমন করে,
অপর পাড়ে পৌঁছে যাবে ঠিক!

হঠাৎ কী এক আলোর পরশ পেয়ে,
ডুবতে গিয়েও ডুবলো না আর তরী!
এমনি করেই আঁধার ভ্রূকুটিকে
সামলে নিয়ে, আবার দিলে পাড়ি!

এমনি কতশত বাধা বিপদ শেষে,
হারিয়ে গিয়েও আবার বেঁচে ফেরা,
আঁধার রাত শেষ হবে ঠিক জেনে,
নতুন করে ভোরের আলো ধরা।


নিঝুম সাঁঝে

কেউ নেই কোত্থাও, সন্ধ্যায় ঝিলপাড়।
আঁধার ঢাকে ধীরে, ঝোপঝাড় একাকার।।

বিজন বাতাসে বাজে আনমনা সুরখানি।
গাছে ঘেরা ঝিলটিতে, পাখিদের খঞ্জনি।।

অদূরে থামের আলো জ্বলে ওঠে পলকে।
সাঁঝের আগমনী, রশ্মির ঝলকে।।

বিম্বিত ক্ষীণ আলো, ছবি আঁকে ঝিলজলে।
অদেখা ছোট ঢেউ, পবনের হিল্লোলে।।

হ্রদভূমে সন্ধ্যায়, অগাধ শান্তি নামে।
দৃষ্টিতে বহুতল, আলো-আঁধারী খামে।।

আলো চোঁয় কালো গাছে, রহস্য জাল বোনে।
কপোত-কপোতী আসে, ঝিলটির নির্জনে।।

ছোট ছোট গুঞ্জন,  আরো কারা আসে যায়!
পাখিদের কলরব ধীরে থামে সন্ধ্যায়।।

সেই ফাঁকে গোল করে, জমায়েত একে একে।
সিগারেট শিখা জ্বলে, আর কিছু ভুল বকে।।

ঝিলের আর পাড়ে, কারা বুঝি গান গায়!
স্তিমিত আঁধারে সুর মায়াজাল বুনে যায়।।

ঝিলের কালো জলে, শুকতারা কথা কয়।
মুখোমুখি কত পাখি, নীরবে মৌন রয়।।

নেচে নেচে ফিসফিস কথা আর হাসি গান।
সাঁঝের নীরব ঝিলে, প্রেমের-ই আঘ্রাণ।।

ঝোপে ঝাড়ে সে আঁধারে, ঝিলপাড়ে কয়জন?
মন্দ বাতাস বয়, দেহ মনে শিহরণ।।

Post a Comment

0 Comments