জ্বলদর্চি

যাপন এগোবে/পুলককান্তি কর


চিত্র- শুভম দাস
যাপন এগোবে 

পুলককান্তি কর

  দরজাটা যেন বড্ড জোরে বন্ধ হল। বিরক্তিতে রঞ্জু মুখটা একটু বিকৃত করে বলল, ‘দেবলটার চক্ষু লজ্জা বড় কম। এই তো দু-চার দিন সবে বিয়ে হল। এত দুড়ুম দাড়ুম করে কেউ দরজা লাগায়? আমাদেরও তো বাপু দিন ছিল!’
   প্রসূন মৃদু হেসে বলল, 'দোষটা দেবলকেই বা দিচ্ছ কেন? ওর বউও তো হতে পারে! 
- যাঃ। মেয়েরা এই ব্যাপারে অন্তত একটু লজ্জা দেখায়! 
  প্রসূন কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘আলোটা নিভিয়ে দাও।’
- তুমি যে বললে, অফিসের কী সব কাজ আছে, রাতে জেগে করবে? 
- থাক। এখন আর ইচ্ছে করছে না। ভোরে উঠে করে নেব না হয়। 
- এমন কিছু তো রাত হয়নি বাপু! করে নাও না! তুমি তো আবার ভোর ভোর উঠতে পারো না। 
- থাক রঞ্জু। তোমার ঔষুধ টষুধ গুলো টেবিলে গুছিয়ে রেখেছি। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো। 
  প্রসূন কোলবালিশটা টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুলো। দরজার ফাঁক দিয়ে ওদের বাড়ীর সামনের কদম গাছটা দেখতে পাওয়া যায়। গাছটার ফাঁক দিয়ে কয়েকটা তারা চোখে পড়ল। বড় অনুজ্জ্বল তারা সব। গাছটাও যেন বড্ড বেশি নৈর্ব্যক্তিক। পৃথিবীর কোনও কিছুতে ওর যেন কিছু যায় আসে না। দেয়ালের ওপাশে দেবলের শোওয়ার ঘর। রাতের নিশুতিতে ওদের হাসি ঠাট্টা বড্ড বেশী কানে লাগছে। একবার ওর মনে হল, কানে বালিশটা চেপে রাখে। কিন্তু পাছে রঞ্জু আবার আস্কারা পেয়ে আরও দু-চার কথা বলতে শুরু করে, প্রসূন চুপ করেই রইল যেন কোথাও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। 
    রঞ্জু একটু বাদেই খাটে এসে আদুরে গলায় বলল, ‘অ্যাই আমাদের বিয়ের পরের দিনগুলোর কথা মনে আছে?’ 
 প্রসূন কোনরকমে বলল ‘হুঁ।’ 
- হুঁ কী? ভালোমত কথা বলতে পারো না? তখন তো তোমার কথার ফুলঝুরি ছুটতো। 
  রঞ্জু জানে এরকম কিছু একটা বললেই প্রসূনের মুখ থেকে পিলপিল করে কথা ফোটে; কিন্তু আজ আর বিশেষ কিছু বলল না সে। শুধু বলল, 'ঘুম পেয়েছে। শুয়ে পড়ো প্লিজ'। রাগে গজ গজ করতে করতে রঞ্জু পাশ ফিরে শুলো। 
🍂

     পরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রসূনের চোখ গেল দেবলের ঘরের দরজার দিকে। স্বভাবতই বন্ধ। ও দ্রুত পায়ে বাথরুমে ফ্রেশ হতে গেল। অফিসের অনেক কাজ পড়ে আছে। ওগুলো শেষ করা দরকার। প্রসূনের একটা নিজের কাজ করার ঘর আছে, দোতলার একদম কোণে। একটু বাদে হালকা পায়ের শব্দে চোখ মেলে দেখল ছোট বউ নীতু, ও অনুচ্চ স্বরে বলল, 'গুড মর্নিং'। 
- গুড মর্নিং। এত সকাল সকাল উঠেছেন যে?
- অফিসের কিছু কাজ আছে। 
- চা বানিয়ে দেব, খাবেন? 
- খেতেই পারি, কিন্তু এখন তুমি আর শোবে না? 
- একবার ঘুম ভেঙে গেলে, আর ঘুমোতে পারি না। সেই ছোটবেলায় পড়তাম যখন, তখনকার অভ্যাস। 
  প্রসূন হাসল। বললো, ‘অভ্যেসটা ভালো। আমারও ছিল। এখন নষ্ট হয়ে গেছে।’ 
- কী করে গেল? 
- কথায় বলে না, আহার নিদ্রা ভয়, যত বাড়বে তত হয়। 
- ঠিক কথা। আমি যাই, চা করে আনি। 
- থাক নীতু। তুমি যাও। না শোও তো বিশ্রাম করো গিয়ে। 
- আচ্ছা ।
  নীতুর চলে যাওয়া এতক্ষণ তাকিয়ে দেখল প্রসূন। জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল দূরের নারিকেল গাছটার উপর সূর্য উঠে পড়েছে। না, না এখন এসব দেখার সময় নেই। কতদিন বাদে সকাল দেখল সে, অথচ উপভোগ করার উপায় নেই। বসের মুখটা মনে পড়ল হঠাৎ। আজ ফাইলটা না ছাড়তে পারলে সত্যিই সমস্যা। হঠাৎ দেখল, রঞ্জু চা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। 
- কী ব্যাপার তুমি উঠে পড়েছ যে? 
- পাশে হাত বাড়িয়ে দেখলাম তুমি নেই। ঘুমটা ভেঙে গেল। ভাবলাম, সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস নেই তোমার। ঘুম পাবে, তাই চা করে আনলাম। 
- মিছিমিছি করতে গেলে। রাতে কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়েছ, যাও শুয়ে পড় গিয়ে। 
- আজ অনেকদিন পরে জানলা দিয়ে আকাশ দেখতে গিয়ে খুব ভালো লাগলো, জানো! সেই বিয়ের পরে পরে হরিদ্বারে গিয়ে সকালে গঙ্গার ঘাটে যেমন অনুভূতি হয়েছিল - আজকে যেন তেমন মনে হচ্ছে। 
- তোমার শরীর খারাপ হবে রঞ্জু। যাও শুয়ে পড়ো। 
- তোমার কাজ না থাকলে আজ একসাথে সকাল দেখতাম। বাবলু, আর একবার আমাকে হরিদ্বার নিয়ে যাবে? 
- যাবে? কবে যাবে বলো? 
- চলো না, কোনও একদিন যাই, খুব শিগগিরি। 
- যাবো। খুব তাড়াতাড়ি যাব সোনা। 
- শুনেছি ওখান থেকে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স যাওয়া  যায়। ওখানে নিয়ে যাবে? 
- অনেকখানি ট্রেক করতে হয় শুনেছি। পারবে? 
- নিশ্চয়ই পারবো। 
- ঠিক আছে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। তুমি একটু শুয়ে পড়ো; আমি একটু কাজ করি? 
                                                                  (২)
  আজ বাড়িটা বড্ড চুপচাপ। দেবল আর নীতু হানিমুনে গেছে সিঙ্গাপুর। আজকাল তো মানুষরা চাইলেই বিদেশ ঘুরে আসতে পারে। মানুষের সাধ্যটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। রঞ্জু বলল, ‘বাব্বা, ঘরটা মনে হচ্ছে একেবারে  শ্মশানপুরি।’ 
    প্রসূন বলল, ‘তুমি খুশী হচ্ছ না কষ্ট পাচ্ছ, তাই তো বুঝতে পারছি না।’ 
- ও মা! খুশি হব কেন? বাড়ীর দুটো লোক নেই - সবসময় হৈ হুল্লোড়, আমার তো ভালোই লাগে। 
- বিরক্তও তো হও। 
- সে তো বাড়াবাড়ি করলে। সবকিছু লিমিটের মধ্যে করাই ভালো। যা বলো বাবলু, নীতু মেয়েটি কিন্তু ভালোই। পাশের পাড়ার মেয়ে বলে মা আপত্তি করেছিলেন, এমনিতে  কিন্তু খারাপ না। 
- না, না খারাপ হবে কেন। ভালো মেয়েই তো! 
- ওপর ওপর দেখলে একটু অহংকারী মনে হয়, আদতে কিন্তু তা নয়। কী যেন তুমি বলো, নারিকেল? কী যেন, বলো না! 
- নারিকেল সমাকারাঃ দৃশ্যন্তেপি হি সজ্জনাঃ ...
- হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পড়েছে, বাইরেরটা নারকেল মালার মত শক্ত, ভেতরটা নরম। প্রথম কয়েকদিন মনে হচ্ছিল খুব স্নবি, বেয়াড়া টাইপ। 
- এখন ধারণা বদলালো কেন? 
- থাকতে থাকতে তো মানুষ চেনা যায়, না কি? তুমি, দেবল তো কখন অফিস চলে যাও। ও কিন্তু ঠিক আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমার তো জানোই দিন শুরু হয় দেরী করে। সব কিছু শেষ করে নীচে যেতে যেতে প্রায় আড়াইটা বেজে যায়। নন্দা কতবার তাড়া দেয় ওকে খেয়ে নেওয়ার জন্য। ও কিন্তু তা করে না। 
- ব্যস। এতেই ধারণা বদলে গেলো? 
- কেন, তোমার কি খারাপ মনে হয় ওকে? তুমি তো নিশ্চযই ছোট থেকে দেখেছ। 
- না, না খারাপ না। তবে মায়ের সাথে বোধ হয় বনছে না। 
- তোমার মায়ের যেমন ট্যাঁকস ট্যাঁকস কথা! আমি বলে সয়ে নিই। ছোট বউ শুনবে কেন? ওর বাবা পটাস পটাস কথা। ওর সাথে কথায় পারা মুশকিল। এই তো অপরশু মায়ের সাথে লেগেছিল। ওর দাদার বউ নিয়ে মা কী একটা বলেছিল, ও দিয়েছে আচ্ছা করে। 
- তোমার মনে মনে নীতুর প্রতি প্রশ্রয় আছে মনে হচ্ছে? নিজে শাশুড়িকে কিছু বলতে পারো না বলেই বোধহয় মজা লাগছে? 
- তা নয়। তোমার মায়ের কথাগুলোই জ্বালা ধরানোর মতো। ছোট বউ সইবে কেন? মা তো কিছুটা গায়ের ঝাল মেটানোর জন্য ওর পেছনে লাগে। 
- গায়ের ঝাল কেন? 
- ছোটছেলের বিয়ে মনের মতো দিতে পারল না। তোমারও প্রেমের বিয়ে। ভেবেছিল ছোট ছেলের বেলা একটু বাজিয়ে টাজিয়ে মেয়ে ঘরে আনবে। পাত্রী দেখতে যাবে, তার ইন্টারভিউ নেবে - সব গুড়ে বালি পড়ে গেল। দেবল যে তলায় তলায় পাশের পাড়ার মেয়ের সাথে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল সে তা আর কেউ বুঝতে পারেনি। আচ্ছা বাবলু, তুমি তো বাইরে বেরোতে। তুমি জানতে না? 
- না। দেবু বলার আগে জানতাম না। পাড়ায় টাড়ায় ঘুরতো না বোধ হয়। অন্য পাড়ায় গিয়ে দেখা করে আসতো হয়তো। 
- তা হয়তো হবে। 
- তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে রঞ্জু। দেবু ওকে পটালো কী করে? 
- কেন? পৃথিবীতে কি তুমি একা প্রেমিক পুরুষ? আর কেউ প্রেম করতে পারে না? 
- না, সে কথা বলছি না। ওদের সাবজেক্ট এক নয়, এক ক্লাসেও পড়তো না ... 
- তাতে কী হল? আমাদের দুজনের কি সাবজেক্ট এক ছিল নাকি এক ক্লাসে পড়তাম? 
- এক কলেজে তো পড়তে! রোজ দেখা তো হত! 
- আহা কত দেখা করতে! আমাকে দেখলেই লুকিয়ে পালাতে। মিষ্টি করে হাসলো রঞ্জু। 
    অনেকদিন পরে হাসিটা ভালো করে দেখলো প্রসূন। বলল, ‘পুরনো কথা ছাড়ো।’ 
- ওই তোমার এক কথা। আমাকে বিয়ে করে খুব পস্তাচ্ছো, না? 
  রঞ্জুর এই এক সমস্যা। চারপাশের পরিবেশ আরও বেশী জটিল হওয়ার আগে প্রসূন বলল, ‘দেবুর সাথে নীতুর পরিচয় কীভাবে হল?’ 
- জানিনা যাও। ওরা এলে তুমি জিজ্ঞেস করো। 
- আহা রেগে গেলে কেন? 
- তুমিই বা পুরোনো কথা তুললে পাস কাটিয়ে যাও কেন? 
  প্রসূন চুপ করে রইল। হঠাৎ একটা সম্ভাবনার কথা মনে করে মুখটা হাসি হাসি করলো রঞ্জু। বলল, ‘পুরনো কথায় তুমি লজ্জা পাও, না বাবলু?’ 
  প্রসূন তাড়াতাড়ি করে বলল, ‘হুঁ।’ 
  রঞ্জু নিজের মনে খুব হেসে নিল একচোট। ‘যেদিন তোমাকে আমার কথা প্রথম বলল সঞ্জনাদি, সেদিন তুমি খুব ব্লাশ করছিলে। আমি আড়াল থেকে দেখেছি। তারপরও কতটা সময় ধরা না দিয়ে কাটিয়ে দিলে বলতো বাবলু! জীবনে দুটো বছর তোমাকে আরও বেশী পেতাম।’ 
  প্রসূন ধীরে ধীরে রঞ্জুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নীচে দেয়াল ঘড়িটায় শব্দ করে বারোটা বাজলো। প্রসূন বলল, 'ঘুমের ওষুধ খেয়েছো, ঘুমিয়ে পড়ো সোনা।' 
- কতদিন গল্প করিনা। পাশের ঘরের আওয়াজের চোটে তো নিজেদের কথা বন্ধই হয়ে গেছে কতদিন! 
- তা বলে শরীর খারাপ করবে? 
- চিন্তা করো না। ওষুধ খাইনি। শোওয়ার আগে খেয়ে নেব। যাই হোক, কী যেন জানতে চাইছিলে? 
- কী ব্যাপারে? 
- ও মনে পড়েছে। দেবলের সাথে নীতুর প্রেম কী ভাবে হল। ওরা দুজনে একই কোচিং সেন্টারে চাকরীর জন্য পড়তে যেতো। 
- তা নীতু চাকরী পায়নি? 
- করতো তো। ওদের কোম্পানি বলল দু'বছর হল্যান্ড এ যেতে হবে - কী সব ট্রেনিং ফ্রেনিং নিতে। তখন ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে - 
- তাই বলে চাকরিটা ছেড়ে দিল? 
- অতশত তো জানিনা বাপু। ছেড়ে দিল নাকি পরে জয়েন করবে, ঠিক জানিনা। তবে তোমার ভাই যা বউ ন্যাওটা, বউকে বাইরে ছাড়বে বলে তো মনে হয় না। ছোট বউ সেদিন বলেছিল দেবল নাকি লাস্ট বছর দুয়েক ওর পেছনে আদা জল খেয়ে লেগেছিল। 
- ওটা সব মেয়েরাই বলে রঞ্জু। ওতে মেয়েদের স্বাভিমান বাড়ে। 
- কই আমি তো বলি না! আমি তো সবাইকে বলি তোমাকে রাজী করাতে আমি যত সাধ্য-সাধনা করেছি, তাতে আমার ভগবান পাওয়া হয়ে যেত। 
- ভগবানই তো পেয়েছ। প্রসূন মজা করে বলল। ওর বুকে মুখ গুঁজে রঞ্জু বলল, ‘ঠিক তাই। ঈশ্বর তোমাকে দীর্ঘায়ু করুন, আমার প্রতি তোমার স্নেহ অক্ষয় রাখুন! 
  কথা ঘুরোতে প্রসূন বলল, ‘দেবু ফিরছে কবে?’ 
- এগারো দিনের ট্যুর। পরের পরের সপ্তাহের মঙ্গলবার ফিরবে। 
- ওঃ! আচ্ছা, নীতুর সাথে দেবুর ক' বছরের আলাপ? 
- চার বছরের মতো। 
- প্রেমটা তাহলে শেষ দু'বছর? 
- দেবল এফোর্ট দিয়েছে চার বছরই। তবে শেষ দু-বছর একটু বেশি মাত্রায়। ছোট বউ নাকি রাজি হয়েছে লাস্ট মাস তিনেক। 
- সেজন্যই দেবু আর চান্স নেয়নি। যদি মত বদলে যায়, এইজন্য একদম এমার্জেন্সী লাগিয়ে দিল ঘরে। 
- জানো, ছোট বউ কালকেই আমাকে জিজ্ঞেসা করছিল, আমরা বাচ্চা নিচ্ছি না কেন? 
- তুমি কি বললে?  
- কী বলব আর! বললাম 'হচ্ছে না'। তখন উল্টে জিজ্ঞেসা করল, ‘দাদা ঠিকঠাক তোমাকে আদর-টাদর করে তো?’ 
  প্রসূন রাগ করে বলল, ‘তোমাদের মেয়েদের না! তুমি উত্তর দিলে?’ 
- কি বলবো, করে না? 
- চুপ করে থাকতে পারতে। 
- ও তুমি বুঝবে না বাবলু। মেয়েদের এটাই সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। মেয়েরা এটাই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলতে চায়। যার স্বামী একটুকুও ভালোবাসে না, সেও সাত কাহন করে বলে। 
- তুমি কি সেই ধরনের মেয়ে? আর বলিহারি! নীতুরই বা রুচি কেমন? একথা জিজ্ঞাসা করতে মুখে বাধলো না? 
- এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন বাবলু? কথার পিঠে কথাগুলো এসেছে। আন্তরিকভাবেই কথাগুলো বলেছে। কোন অভিসন্ধি নিয়ে বলেছে বলে তো মনে হয় না। মেয়েদের ঘরোয়া আড্ডায় বেশীরভাগ কথাই তো দাম্পত্য সম্পর্ক জুড়ে। 
- তুমিও বুঝি জিজ্ঞাসা করলে ওকে? 
- আমি ঠিক করিনি। ও নিজেই বলেছে। দেবল নাকি সারারাত... 
- থাক না রঞ্জু। লোকের বিছানায় উঁকি দিতে আমার প্রবৃত্তি হয় না। চুপ করে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়। 
  চারপাশটা বড্ড ভ্যাপসা মনে হল প্রসূনেরর। কেমন একটা চাপ চাপ গরম। সব জানালাগুলো খোলা, তাও যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। মানুষ নিজেদের গোপনীয়তাগুলোকে এভাবে প্রকাশ্যে টেনে আনে কেন? কোন আনন্দ এখানে কাজ করে? শুধু কি লোককে দেখানো - দ্যাখো আমার মূল্য কত! নাকি কোথাও একটা ঈর্ষার বীজ পুঁতে দেওয়া অন্যের মনে? সর্বোপরি নীতু দশ বারো দিন সবে বিয়ে করে এসেছে। বড় জা এর সাথে এত নৈকট্য হয়ে গেল যে আগবাড়িয়ে এত শত কথা বলে ফেলল? ভালোই হয়েছে, যেমন পঁচা কাঁঠাল, তেমনি মুচি খদ্দের। দেবুটার তো এইসবে প্রখর উৎসাহ। ছোটবেলায় লুকিয়ে চুরিয়ে ইংরেজি ম্যাগাজিনের ফটো দেখতে প্রসূন ওকে বহুবার দেখেছে। এবার হাতে জ্যান্ত পুতুল পেয়েছে, সেই বা ছাড়বে কেন? 
  রঞ্জু বলল, 'যাও বাথরুম করে এসো'। 
- পরে যাবো। 
- যাও না। এমনি ভাত ঘুম চটকে গেছে। বাথরুমটা ঘুরে এলে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে। 
(৩)
  অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরেছে প্রসূন। রঞ্জু গত পরশু বাপের বাড়ী গেছে। শাশুড়ির শরীরটা নাকি একদমই ভালো নেই। ও তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে স্নান টান করে ঘরে এল। এসে দেখল নীতু দাঁড়িয়ে আছে। 
- কী ব্যাপার নীতু, কেমন আছো? 
- ভালোই আছি। আপনার জন্য চা করে আনি? 
- কেন নন্দা কোথায় গেল? 
- ও একটু বাজারে গেছে মা কে নিয়ে। 
- আচ্ছা নিয়ে এসো। 
- এখনও দু চামচ চিনি দেওয়া দুধ চা খান, না কি অভ্যাস বদলেছে? 
- এক চামচ। বাকি আর সবকিছু একই রকম। 
- চিনি কমালেন কেন? সর্তকতা নাকি একঘেয়েমি? 
- 'সব কিছু যে আছে নিপুন মাপা/ সব্জিতে নুন, আর চায়ের জলে চিনি/সাদা জীবন, কালোয় পৃষ্ঠা আঁকা/ আয়না দেখি, আমার সঙ্গে তিনি।’ 
  বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীতু বলল, ‘বুঝলাম না।’ 
- অ্যাজ ইউজুয়াল। থাক আর বুঝে কাজ নেই। তোমার এই আঠাশ বছর বয়সে এসে কাব্যবোধ নতুন করে গজাবে না নীতু। 
- আমাকে তবে শোনালেন কেন? 
- মনে এল তাই। 
- দেবল কিন্তু এই রসে বঞ্চিত। আপনার ভাই বলে মনে হয় না। 
- তোমার জন্য তো ব্যাপারটা ভালোই হয়েছে নীতু। 
- হ্যাঁ। রাজজোটক! 
  নীতু আর দাঁড়ালো না। চা বানাতে নীচে নেমে গেল। শেষ শব্দটা কোন অর্থে বলল বোঝা গেল না। কথাটিতে একটু কি শ্লেষ ছিল? 
  একটু পরে দু- কাপ চা নিয়ে ফের ঘরে এল নীতু। চা-এ চুমুক দিয়ে প্রসূন বলল, ‘খুব ভালো বানিয়েছো চা টা।’ 
- ওটা চায়ের গুণ। আপনাদের বাড়ির চা ভালো। 
- আমি এটা স্পেশালি আনাই, জানো তো নীতু? আমার তো ওই একটাই ফ্যাসিনেশন। 
  নীতু চুপ করে রইল। একটুক্ষণ পরে বলল, ‘এখন দেখি আপনি খুব দেরী করে ঘুম থেকে ওঠেন। আগে যখন পড়াতেন, ঠিক ছ'টার মধ্যে না ঢুকতে পারলে নীল ডাউন করিয়ে রাখতেন। আমাকে সওয়া পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতে হত।’ 
  প্রসূন কিছু না বলে হাসল। নীতু আবার বলল, ‘জানেন, সেই সকালে ওঠার অভ্যাসটা আমার এখনও আছে!’ 
- আমার নেই নীতু। আস্তে আস্তে জীবনের সব অভ্যেস বদলে ফেলেছি। 
- পড়ানোটা ছাড়লেন কেন? 
- অফিসের দায়িত্ব বেড়েছে, সংসারেরও। সময় আর পাই কোথায় বলো? 
- এখনকার ছেলেমেয়েরা অভাগা। তারা আপনার মতো টিচার পেল না। 
  প্রসূন হাসল। অনেক কথার উত্তর হয় না। তবু কিছু না বললে কেমন দেখায়। বলল, ‘তখনকার দিন বড় ভালো ছিল নীতু।’ 
- এমনটা উপলব্ধি হওয়ার কারণ? 
- আবার একটা কবিতা বলতে হয় তাহলে। 
- কাব্যের মুখোশ নিয়ে আপনাকে কথা বলতে হয় কেন? গদ্যতে কি সহজ হয়ে যাওয়ার ভয়? 
- আজকাল তুমি বড় বাঙ্ময় হয়ে গেছো নীতু !
- মানে? 
- সন্ধি বিচ্ছেদ করো, বাঙ্ময় কিভাবে হয়? 
- ওঃ। বাচাল বলছেন?
-  বাচাল আর বাঙ্ময়তার তফাত আছে। এখন তুমি যেন বড্ড বেশি শব্দময় হয়ে গেছো। তোমার চলাফেরা, তোমার অস্তিত্বটা বাড়ীর মধ্যে যেন বড্ড বেশী। যেন কিছু জানান দিতে চাইছে। 
  নীতু খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘আপনি কী বলতে চাইছেন সোজা বাংলায় একটু বুঝিয়ে বলবেন? আপনি কি বলতে চাইছেন, আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কিছু করছি?’ 
  প্রসূন চুপ করে রইল। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘দেবুকে কি তুমি এই জন্য বিয়ে করেছ?’ 
- এই জন্য, মানে? 
- মানে আমার ভাই বলে? 
- তাহলে কি আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন আমি অন্য কারোর সাথে শুতে গেলে, আপনার গায়ে জ্বালা ধরে? 
  প্রসূন আবার চুপ করে রইল। নীতু আবার খোঁচা দিল, 'কী হল? উত্তর দিলেন না যে বড়! আমি তো ভাবতাম আমি আপনার কাছে ম্যাটারই করি না। আপনি অনেক উঁচু দরের মানুষ। সাধারণ মানের, কাব্যবোধহীন মিডিওকার ছাত্রীর ভালোবাসায় কি অতখানি জোর আছে, যা আপনাকে স্পর্শ করতে পারে?' 
- তাহলে হঠাৎ দেবু কেন? বাজারে তো ছেলের অভাব ছিল না! 
- দেখুন স্যার... 
- তুমি তো আমায় প্রসূনদা বলেই ডাকতে। তাই ডাকো না কেন? স্যার স্যার করলে অনর্থক সমস্যা বাড়বে। 
- সে যাই হোক, একটা কথা পরিষ্কার ভাবে আমি আপনাকে বলতে চাই, দেবল যে আপনার ভাই আমি বিয়ের দিনের আগে পর্যন্ত জানতাম না। 
- তুমি বাড়ীতে পড়তে আসতে, দেখো নি কোনদিন? 
- আপনার ভাই কি আপনার মত? না দেখতে, না স্বভাবে। জীবনে কোনওদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছে? আমাদের পড়া শেষ হত সাড়ে সাতটায়। আমি তো কোনওদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না। 
- মানুষ বিয়ের আগে কোর্টশিপে পরিবারের ছবিটবি দেখায়। শুনেছি তোমাদের চার বছরের রিলেশন, তাতে তুমি তোমার হবু বরের বাবা-মা-ভাই-জা এর ফটো দেখতে চাইবে না? 
- দেখুন স্যার, দেবলের সাথে আমার চার বছরের পরিচয় বলতে পারেন, তবে রিলেশন যদি বলেন সেটা বিয়ের দিন থেকে। 
- মানে? 
- মানে পরিষ্কার। আপনি তো আঁতেল মানুষ, বুঝে নিন। 
- তুমি বলতে চাও, তুমি ভালো না বেসেই ওকে বিয়ে করেছ? 
- হ্যাঁ। 
- জীবন একটাই নীতু। একবার যাচাই না করেই লাফ মেরে দিলে? 
- ছবি দেখলেই কি যাচাই হ'ত স্যার। আর একটা জীবনের কথা বলছেন? তার জন্য সবথেকে ভালো এবং পছন্দের লোকটাকেই তো মন দিয়েছিলাম। তবে কিনা তারও তো একটাই জীবন! সেও সেই জন্য বেষ্টটাকেই খুঁজবে। আমি কাউকে দোষ দিই না স্যার। 
- তাই বলে তুমি দেবুকে বিয়ে করলে? ও তোমার সাথে কোন ভাবে মিশ খায়? একটা হিপোক্রিট, সবজান্তা পারভার্টেড... 
- সে যেমনই হোক স্যার। বিয়ে যখন করেছি এইসব কথা কি আমার শুনতে ভালো লাগবে? আগে আপনি যা বলতেন, আমি অম্লান বদনে মেনে নিতাম; ভাবতাম এর চেয়ে খাঁটি আর যুক্তিপূর্ণ কিছু হতেই পারে না। কিন্তু আজকে আপনি যা বলছেন, সেসব কথা বলার জায়গায় আপনি আছেন কি? 
- আমার প্রিয়ত্বটা আমি হারিয়ে ফেলেছি বলো? 
  এই কথার উত্তরে নীতু কিছু বললো না। প্রসূন বলল, ‘স্যরি। আসলে আমার কাছে তুমি আগের মতোই প্রিয় বলে ভাবলাম তোমার ভালোমন্দ নিয়ে দু চার কথা বলার অধিকার আছে। কিছু কথা খারাপ বললেও তুমি শুনবে।’ 
- আপনার কাছে এই প্রিয়ত্বের মাপকাঠিটা কীভাবে রেগুলেট হয়? 
- বুঝলাম না ঠিক। 
- না মানে কে কখন বেশী প্রিয় হয়ে যায় - সেটা বুঝতে পারা যায় না কিনা। 
  প্রসূন বুঝলো, নীতু রঞ্জুর সাথে বিয়ের কথাকেই ইঙ্গিত করছে। সর্বোপরি ও যখন রঞ্জুকে বিয়ে করলো, নীতুকে জানায়নি পর্যন্ত। অথচ নীতুর সাথে তখন ভালো একটা সম্পর্ক। হয়ত সবটুকু ব্যক্ত নয়, তবে পরস্পর পরস্পরকে বুঝতে পেরেছে। তখন প্রসূন এম.টেক করছে। নীতুও সবে মাত্র  হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে বি এস সি তে ঢুকেছে। হায়ার সেকেন্ডারির পর নীতু ওর কাছে পড়তে আসতো না, কিন্তু সপ্তাহের শেষে কোথাও একবার দেখা হতো ঠিকই। ওর রাগ হওয়াটা অন্যায় নয়। বলল, ‘প্রিয় যে, সে প্রিয়ই থেকে যায় নীতু, তকে রেগুলেট করে বেশি কম করা যায় না।' 
- তাহলে কাজের বেলায় সে প্রায়োরিটি পায় না কেন স্যার? 
- পরিস্থিতি। সময় একটা বড় ফ্যাক্টর নীতু। 
- আপনি দেবলের স্বভাব নিয়ে কথা বলছেন, আপনার বিয়ের তাড়াও কি কিছু কম ছিল? এম. টেক শেষ হতেই চাকরী পেয়ে গেলেন, তার মাছ দুয়েকের মধ্যে বিয়ে। কিছুদিন অপেক্ষা করলে আমারও তো পড়াশোনা শেষ হতে পারতো! বিয়ে টিয়ে করে একদিন দেখা করে জানিয়ে দায়িত্ব খালাস করে দিলেন।  
- সেদিন তো কারণ জানতে চাওনি নীতু, কেন বিয়ে করলাম বা করে ফেললাম? 
- এখনও জানতে চাইনা স্যার। আপনার মনে হয়েছে, আপনি করে নিয়েছেন। আমাকে আপনার যোগ্য মনে হয়নি - এই নিয়ে কথা বাড়িয়েই বা কী হতো? 
- তা ঠিক, তবে বোধ হয় এতদিনে তোমার ক্ষোভ হয়ত কমে যেত। 
- ক্ষোভ আমার এখনও নেই স্যার। আর ব্যাপারটা তো দ্বিপাক্ষিক, আপনার যদি সত্যি কিছু বলার থাকতো, আপনি নিজেও তো বলতে পারতেন! বললেন না কেন? ইগো? 
- তা নয় নীতু। তা নয়। তোমার ওই মেঘে ঢাকা চোখের দিকে চাইতে আমার ভয় করছিল। আমি জানি, তুমি শক্ত মনের মেয়ে, তবু তখন যেন মনে হচ্ছিল, আমি নিজে তো ভেসে গেছি, তুমিও ভেসে যাবে কোনও ঝড়ে। 
- সেই ভাসা কি আপনি আটকাতে পারলেন স্যার? 
- না। 
- একটা কথা বললেন, ঠিক বুঝলাম না। আপনি ভেসে গেছেন মানে? 
-  রঞ্জুর সাথে তোমার অনেক গল্প হয় শুনি, ও তোমাকে কিছু বলেনি? 
-  কী ব্যাপারে? 
-  ওর শরীরের ব্যাপারে? 
-  না তো! কী হয়েছে দিদিভাই এর? 
- সে অনেক কথা। পুরো গল্পটাই শোনো তাহলে। রঞ্জু আমার জুনিয়ার ছিল জানো তো? 
- হ্যাঁ। 
- ও একে ওকে অনেককে দিয়ে বহুবার আমার কাছে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি কখনো সম্মতি দিইনি। ওকে এড়িয়ে চলতাম। আমি তখন পাশ করে বেরিয়ে গেছি। একবার ওর এক জন্মদিনে দেখি ও চুপ করে বসে আছে। আমি উইশ করে যখন বললাম, 'মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে', ও বলল, 'থাক - এমন উইশ করো না প্রসূনদা। তোমার কথা ফলবে না'। 
- কেন? 
-  থাক। ওসব শুনে লাভ নেই তোমার। 
- আরে বলোই না! কী হয়েছে? 
- জানো নীতু, যা শুনলাম, চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল। ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে ওর। ডাক্তার বলেছে বছর চার পাঁচ ম্যাক্সিমাম। ওর কান্না ভেজা চোখ দেখে বড় মায়া হল। ও আকূল হয়ে বলল, ‘এই কটা বছর কি আমি তোমার স্নেহ ভালোবাসা পেতে পারি না প্রসূনদা?’ কী করব তখন আমি? একদিকে তুমি। সবে বি.এস.সি পড়ছো। একদিকে রঞ্জু, যে প্রতিদিন দিন গুনছে। 
- এখন দিদিভাই কেমন আছে? 
-  কেমোথেরাপি করাতে এবার বেশ কিছুদিন ভালো আছে দেখছি। তবে ওর এই ভালো, এই খারাপ। 
-  আগে কেন আমায় বলনি প্রসূনদা। 
- কী করতে তবে? 
-  অপেক্ষা করতাম। 
- সে কি ভালো হতো নীতু? প্রতিদিন অন্যের আয়ু ফুরানোর দিন গুনতে হলে নিজেদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যেত। আমি জানি তুমি আমি কেউই হয়তো ওর মৃত্যু কামনা করতাম না। তবু আমরা তো মানুষ। কোনওদিন যদি এই দীনতা ভুল করেও আমাদের স্পর্শ করতো, আমাদের সম্পর্কটা সেদিনই ভেসে যেত। 
- হয়তো তুমি ঠিক। কিন্তু আমি যদি এমনটা ভাবতাম যে তুমি দিদিভাইয়ের থেকে মুক্ত হলে তোমাকেই বিয়ে করবো, তখন না হয় এমন ভাবনা হত। বিয়ে না করেও তো থাকতে পারতাম! 
-  তা ঠিক, কিন্তু বিয়ে যদি করলেই একটু দেখে শুনেও তো করতে পারতে! 
- কী আর দেখতাম! কাউকে না কাউকে যদি করতেই হয়, যে চার বছর পেছনে পড়ে আছে, সেই সই। আর তার ভালো মন্দ আমি কিছুই দেখতে চাইনি প্রসূনদা। জীবনে আমি একদিনের জন্যও দেবলকে ভালোবাসিনি। 
- এতো আত্মহত্যা নীতু !
- তুমিও কি আত্মহত্যাই করো নি প্রসূনদা? তবে তোমার আত্মহত্যায় আত্মত্যাগের গরিমা আছে, আমারটায় শুধু কাদা আর গ্লানি। 
  বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো নীতুর। প্রসূন উঠে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলল, 'শক্ত হও নীতু। এবার তো আসল পরীক্ষা'। 
- হ্যাঁ, সংযম এবং সহ্যের! প্রতিনিয়ত আমাকে ভান করতে হবে তোমাকে না চেনার। তোমাকেও তাই। 
-  আমি কোনভাবে চাই না, রঞ্জু জীবনের শেষদিনগুলো কোনও গ্লানি নিয়ে বাঁচুক। 
- এতদিন তো না বলা কথাই ভালো ছিল প্রসূনদা। একটা বিরোধিতা করারও শক্তি পাওয়া যেত। এখন আমি কী করবো? 
  একটু মলিন করে হাসলো প্রসূন। নীতুর থেকে সরে এসে স্বাগতোক্তির মত বলল ‘প্রতিদিন পৃক্ত হব আকাশ ঘুমালে/ প্রতিদিন পৃক্ত হবো রুদ্ধ বায়ু টেনে/ আড়াল খুঁজবো রোজ নিজের আদলে/ যাপন এগোবে তবু শর্তবলী মেনে...’

Post a Comment

2 Comments

  1. মন ছুঁয়ে যাওয়া এক গল্প পড়লাম।

    ReplyDelete
  2. AnonymousJuly 27, 2025

    আবেদনশীল এক লেখনী।

    ReplyDelete