জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /গৌতমকুমার ভাদুড়ি

গুচ্ছ কবিতা 
গৌতমকুমার ভাদুড়ি  


সাজ

প্রসাধনে কাজ নেই সুদর্শিনী
তুমি এসে একবার বসো এইখানে
আমিই সাজাবো তোমাকে আজ
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রসাধনে। বসো এইখানে ।
 
তোমার কানের থেকে খুলে রাখি এই মুক্তোদুল
কী হবে বলোত এই তুচ্ছ আভরণে ?
পুবের জানালা খুলে দিয়েছি সকালে
কামিনীর মধুগন্ধ সেই পথে ঘোরে ঘরময়
সেই গন্ধ সারা গায়ে মেখে নাও তুমি 
নিজ হাতে সারা রাত জেগে
গেঁথেছি যে বকুলের মালা, নাও তুমি
ললন্তিকা হার করো তাকে ।
পর্দাগুলো তুলে দাও সব
চন্দনের গন্ধ এসে খেলে যাক ওই ঘন চুলে
বহুদিন ক্যালেন্ডারে সেঁটে রাখা লাল টিপ
একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওই,
এসো আমি নিজ হাতে পরাই তোমাকে
এই যে আয়না নাও, বলো দেখি শুনি  
চিনতে কি পেরেছো নিজেকে, সুদর্শিনী ?



নাম

তোমারই কথায় আমি কাল সারারাত 
আজকের সমস্ত সকাল 
কবিতার খাতা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছি যে নাম 
কি সে নাম সে তো তুমি জানো সুদর্শিনী 
সে নাম যে তবু  দেখো মোছেনা কিছুতে ।
প্রাণপণ ঘষে ঘষে আমি তার বর্ণগুলো যত 
মুছে দিতে চাই, পরক্ষণে দেখি 
অবিকল চেয়ে আছে হাসিমুখ নদীটির মত, 
আর কত চেষ্টা করি বল ?
তবু তুমি অবিশ্বাস করো যদি তাই 
আগুনের কুণ্ড করে আমি যত সুদর্শিনী লেখা 
নিক্ষেপ করেছি তাতে নিষ্ঠুরের মত 
চোখ বুজে থাকি বহুক্ষণ ; চেয়ে দেখি 
একটিও বর্ণ তার পোড়েনি আগুনে ।
তুমি যে নিঃশেষ করে দিতে বলো নাম 
মোছে না যে কিছুতেই, কী করব, বল সুদর্শিনী।                                    
🍂

                                                                                                  
বৃষ্টি

ঘরের ভেতরে তুমি কি করছ সুদর্শিনী 
একবার দাঁড়াও এসে ওই বারান্দায়  
সমস্ত বৃষ্টিফোঁটারা দেখো তোমার দিকে তাকিয়ে 
কত দূর দূর দেশ থেকে 
উড়ে এসেছে তারা তোমার দুয়ারে 
দেখো ওই, তোমাকে দেখতে চেয়ে তারা
ঝুঁকে পড়েছে অস্থিরের মত
ওদের সমস্ত কথা আমি খুব জানি
তোমাকে দেখামাত্র ওরা ঝরে পড়বে খুশিতে 
তোমাকে ভিজিয়ে দিয়ে তোমাকে ডুবিয়ে দিয়ে 
ওদের যে কি আনন্দ শ্রাবণের মাস সেটা জানে।

বাইরে দাঁড়াও এসে সুদর্শিনী, জানো তুমি -
ওইসব বৃষ্টি ফোঁটাদের দলে আমিও যে আছি?



পাখি

তোমার পালক ছুঁয়ে ওম নিই
শস্যকণা কেড়ে নিই ওই ঠোঁট থেকে 
আসলে তো শস্যকণা উপলক্ষ শুধু
তোমার দু ঠোঁট থেকে শুষে নিই মায়া,
তাই দিয়ে আমার এ ঘর দেখো 
রঙে রঙে একাকার আজ । ঘরময় 
বিচ্ছুরিত রঙের মহিমা। 
প্রতিদিন একটি দুটি করে আমি 
করে গেছি বর্ণময় পালক সঞ্চয় 
তোমারই সে উপহার - নরম রঙিন ।
তোমারও কি মনে পড়ে প্রতিদিন সকালে দুপুরে 
নিজ হাতে তুলে দিতে প্রেমমাখা কত উপহার 
ভেবেছিলে কোনদিন তোমার সে দান 
কতখানি অসামান্য ছিল? প্রাণের সমান ।

নতুন নীড়ের দিকে আজ তুমি উড়ে যাচ্ছ ওই
তোমার সমস্ত দান  কিছুই ফেলিনি আমি 
পুরনো নীড়ের কথা মনে পড়ে যদি
ফিরে এসো একবার, দেখে যেও প্রিয় সুদর্শিনী।



সঞ্চয় 

আমার যা কিছু অর্থ যতকিছু ধন 
তোমাকেই দিয়ে রাখি সুদর্শিনী 
যত্ন করে রেখে দাও তুমি। প্রয়োজনে 
আমি ঠিক চেয়ে নেব কৃতার্থের মত ,
তুমি যেন না বোলো না এতে। 
কি করব সুদর্শিনী ,
আমার যে আলগা হাত বড়ো । এলোমেলো। 
আমার যে হারিয়েই যায় সবকিছু 
কোথায় কিভাবে রাখি পরক্ষণে ভুলে যাই বলে 
মাঝে মাঝে কি যে বিড়ম্বনা।  তাই 
তোমার হাতেই থাক জমা সবকিছু ।
আমি খুব জানি 
সুরক্ষার সবটুকু দিয়ে তুমি একে 
তুলে রাখবে লক্ষ্মীমাতা দেবীটির মত 
যেভাবে জমিয়ে রাখো তিলতিল  করে 
জীবনের এত প্রেম, অনুভব, ভালোবাসা এত।

Post a Comment

3 Comments

  1. কবি গৌতম ভাদুড়ী আমার খুব প্রিয় কবি । অনেক অভিনন্দন রইল।

    ReplyDelete
  2. প্রত্যেকটি কবিতা অসাধারণ। বারবার পড়তে ভালো লাগে

    ReplyDelete
  3. কমলিকা ভট্টাচার্যAugust 17, 2025

    সত্যিই সুদর্শিনী কবিতা।

    ReplyDelete